Pages

প্রকাশিত গ্রন্থ-সমূহ

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৬

পশ্চিম বাড়ী (পার্ট 2)





Image: Ishfaq Qurashi &Mr. Nurul Islam Nahid, Minister, Ministry of Education.

২.২.৪ ইমাম উদ্দীন আহমদ চৌধুরী


খান বাহাদুর গৌছ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও সারা খাতুন চৌধুরীর চতুর্থ পুত্র ইমাম উদ্দীন আহমদ চৌধুরী মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাঁর ডাকনাম কয়ছর। ১৯২৬ সালের ১০ ডিসেম্বর সিলেট জেলার দক্ষিণসুরমা উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হজরত শাহজালালের(রঃ) সহচর পবিত্র মক্কা হতে ১৩০৩ সালে আগত দরবেশ হজরত শাহদাউদ কুরেশির(রঃ) ১৮তম বংশধর।

তিনি আসামের মিডল ইংলিশ স্কুল থেকে মেট্রিক এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হতে আই.এস.সি বৃত্তিসহ  প্রথম বিভাগে পাশ করেন। তারপর ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমান বুয়েট) থেকে প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসাবে বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা দিয়েই ১৯৫১ সালে তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তান সরকারের যোগাযোগ ও ইমারত  বিভাগে এসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে সরকারি চাকুরিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে পরীক্ষার ফল  প্রকাশ হলে প্রথম শ্রেণিতে পঞ্চম স্থান পান।

তিনি ১৯৫২ সালে পাকিস্থান সেন্ট্রাল ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করে ১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তান রেলওয়ে সার্ভিস অব ইঞ্জিনিয়ার্স এ চাকুরি লাভ করেন ও রেলওয়েতে কৃতিত্বের সাথে বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধে বিধ্বস্ত হার্ডিঞ্জ  সেতু, মেঘনা সেতু,  তিস্তা  সেতু, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র সেতুসহ ৩০১টি রেলসেতুর পুনর্বাসন চিফ ইঞ্জিনিয়ার/ প্রধান সেতু প্রকৌশলী পদে থাকাকালীন তাঁরই দায়িত্বে সুসম্পন্ন হয়। প্রজেক্ট ম্যানেজার  হিসেবে রেলওয়ের আধুনিকীকরণে, বিশেষভাবে রেলের শর্ট ওয়েলডিং, লং ওয়েলডিং, কনটিনিউয়াস ওয়েলডিং, ইলাস্টিক ফাসেনিং ও সেতু নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগে তাঁর অবদান অপরিসীম। ১৯৭৯ সালের বাংলাদেশ সরকারের সিনিয়র  সার্ভিসপুলের  সিলেকশন  পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সরকারের পরিকল্পনা  মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য, রেলওয়ে বিভাগের সচিব এবং সবশেষে পুর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর নেয়ার পরপরই সরকার তাঁকে অগ্রণী ব্যাংক এর পরিচালনা  পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করেন।

১৯৯০ সালে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাব উদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পদে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদায় তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। অতঃপর তিনি পুনরায় দুই মেয়াদে আট বছর জনতা  ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে কাজ করেন।

তিনি ১৩৫০ বাংলার চৈত্র মাসের প্রভাতী পত্রিকার ‘মুকুল সংখ্যা’ সম্পাদনা করেন। ইমাম উদ্দীন আহমদ চৌধুরী পাঠ্যাবস্থায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ আমলের শেষের দিকে তৎকালীন তুখোড় যুবনেতা মাহমুদ আলী  ও তসদ্দুক আহমদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও বিখ্যাত সাহিত্যিক শাহেদ আলী সম্পাদিত  ‘প্রভাতী’ পত্রিকার শিশু বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্র ভাষা  আন্দোলনে  তিনি গ্রেফতার হন।

কর্মজীবনে তিনি তাঁর এলাকার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন। তাঁর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় দাউদপুর চৌধুরী বাজার থেকে দাউদপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্র পর্যন্ত  রাস্থাটি পাকা করা হয়। ১৯৮৬ সালে তাঁরই উদ্যোগে দাউদপুর গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ  দেয়া  হয়। সিলেট ভাদেশ্বর সড়কের দূরত্ব কমাবার লক্ষ্যে তাঁর উদ্যোগে  দাউদাবাদ রেলস্টেশন থেকে বাবুরবাড়ি ও দাউদপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়ে একটি পাকা  সড়ক নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়।

ইমামউদ্দিন চৌধুরী ২০০৬ সালে  বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন ইঞ্জিনিয়ার্সের বি. এম. আব্বাস মেমোরিয়েল স্বর্ণপদক পান।

ইমামউদ্দীন আহমদ চৌধুরী ১৯৫৯ সালে হযরত শাহ তাজউদ্দীন কুরায়শীর  বংশধর হবিগঞ্জের সাবেক গভর্নমেন্ট প্লিডার ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আথানগিরির জমিদার খান সাহেব আব্দুল মতিন চৌধুরীর (১৮৯৩-১৯৭২) দ্বিতীয় কন্যা  সুরাইয়া চৌধুরীর সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।

সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফরকালে টরেন্টোতে কানাডার জালালাবাদ এসোসিয়েশন ও এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার্স অব ওনটারিও, কানাডা তাঁকে সংবর্ধণা দেয় এবং ক্রেস্ট অব অনার’ প্রদান করে। দুটো সংবর্ধনা খবর   টরেন্টোতে সর্বাধিক  প্রচারিত বাংলা পত্রিকা ‘দেশের আলো’তে প্রকাশিত হয়। কাবাব হাউস এর হলরুমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ও সচিব সিলেটের কৃতি সন্তান জনাব ইমাম উদ্দীন আহমদ চৌধুরীকে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব টরেন্টোর পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব  করেন সংগঠনের সভাপতি আহাদ খন্দকার, সভার কার্যক্রম পচিালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রনি আহমদ চৌধুরী, সভার প্রধান অতিথি জনাব ইমাম উদ্দীন চৌধুরীর বক্তব্যে ১৯৪৭ এর রেফারেন্ডম থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন এবং উনার কর্মজীবনের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা করেন।

তিনি দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে সবাইকে বৈধভাবে দেশে টাকা পাঠানোর আহবান জানান। সভার শুরুতে পিলখানার বিডিআর হেড কোয়ার্টারে ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সর্বসম্মতভাবে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় এবং শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। (দেশের আলো’  টরেন্টো, ১০/৩/২০০৯)।

ইমাম উদ্দিন চৌধুরীর লিখিত আত্মজীবনী “স্মৃতির সমুদ্র” একটি সুখপাঠ্য গ্রন্থ। এই বইতে তাঁর সমকালের সরকার, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা চিত্রিত হয়েছে। তিনি জীবনের শেষবেলায় সিলেট শহরের হাউজিং এস্টেটের বাসা ইমাম মহলে বসবাস করেন।

এই বাসায় ২০২৩ সালের ২৪ অক্টোবর রাত ৩ ঘটিকায় ৯৭ বৎসর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। ২৭ অক্টোবর ২০২৩ শুক্রবার সকাল ১০টায় দাউদপুর জামে মসজিদে প্রথম জানাজা এবং বাদ জুমুয়া শাহজালালের(রঃ) দরগায় দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে দরগাহ ইবাদাতখানার পশ্চিমে তাকে চিরশায়িত করা হয়।

তিনি বৃটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এই তিনযুগের বিরল সাক্ষী ছিলেন। সুস্থ্য শরীরে ও প্রশান্ত মনে তিনি দীর্ঘ জীবন বেঁচে ছিলেন। এই অবসর সময় তিনি আল্লাহের উপাসনা ও জনসেবায় ব্যয় করেন। তাঁর মৃত্যু একজন সৎ ধার্মিক মেধাবী দেশপ্রেমিক ব্যক্তিত্বের সুদীর্ঘ ৯৭ বৎসরের সফল ও সার্থক জীবনের চির অবসান ঘটায়।

মহান আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমিন।

২.২.৪.১ ডা: নিয়াজ আহমদ চৌধুরী



কিছু মানুষ থাকেন খুবই ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম চাল-চলনে, আচার-ব্যবহারে। এই ব্যতিক্রম পেশা, নেশা ও কর্তব্যকর্ম সম্পাদনেও দেখা যায়। এই ব্যতিক্রমী মানুষজন তাঁদের ব্যতিক্রমী চরিত্রের জন্য সমাজে স্মরণীয় হয়ে থাকেন। মানুষ তাঁদেরকে দীর্ঘদিন মনে রাখে, দীর্ঘ্যদিন তাঁদের অভাব অনুভব করে। ডাঃ নিয়াজ আহমদ চৌধুরী এরকম একজন ব্যতিক্রমী মানুষ। তিনি একজন ব্যতিক্রমী বিশেষঞ্জ চিকিৎসক। ডাক্তারি লেখাপড়ার সঙ্গে মানবিক গুণাবলী ও মানুষ্যত্ববোধের সমন্বয় ঘটলে সেটা হয় অপূর্ব, সোনার সোহাগা। এসবের অকৃপণ সমন্বয় ঘটেছে ডাঃ নিয়াজ আহমদ চৌধুরীর চরিত্রে। তাঁর মুখে সব সময় অনুপম হাসি লেগে থাকে। তাঁর কাছে কেউ গেলে বা কারো সাথে দেখা সাক্ষাৎ হলে তিনি প্রথমেই একমুখ হাসির ঝিলিক উপহার দেন। পরিচিত ও অপরিচিত সব রোগীকে তিনি সুন্দর হাসি দিয়ে বরণ করেন। অনুশীলন বা চেষ্টা করে তিনি এসব অভ্যাস রপ্ত করেন নি, বলা যায় প্রকৃতিগত এসব নান্দনিক গুণের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে তাঁর প্রাত্যহিক চালচলনে।
ডাঃ নিয়াজ আহমদ চৌধুরী একজন বড়মাপের বিশেষঞ্জ চিকিৎসক। তিনি নিজ যোগ্যতায় সবকটি পদোন্নতি পেয়ে অল্প বয়সে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু মেড়িকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হওয়া সত্বেও বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতির শিকারে পরিণত হন। পেশার প্রতি তিনি নিবেদিত প্রাণ ও যত্নশীল। রোগীদের প্রতি তিনি খুব বিশ্বস্ত। জীবনে অর্থভিত্তের প্রয়োজন আছে এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা কিন্তু ডাঃ নিয়াজ আহমদ চৌধুরী অর্থ উপার্জনকে ধ্যানজ্ঞান করে এই পেশাকে ব্রত হিসাবে নেননি। অর্থভিত্তের পাহাড় গড়া নয় বরং ডাক্তারি পেশাকে তিনি সেবা ও মহৎ কাজ হিসাবেই গ্রহণ করেছেন। ইমাম উদ্দীন আহমদ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে ডাঃ নিয়াজ আহমদ চৌধুরীর ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিলেট সরকারি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হতে ১৯৮৫ সালে এম.বি.বি.এস পাশ করে সরকারি চাকুরিতে যোগ দেন। ১৯৮৭ সালে জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে জাপান যান এবং সেখান থেকে ১৯৯২ সালে ভাসুকলার সার্জারিতে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজে সরকারি চাকুরিতে পুনরায় যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল  বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারির অধ্যাপক। ভাসকুলার সার্জারিতে জাপান ছাড়াও আমেরিকা ও থাইল্যান্ডে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি এশিয়ান ভাসকুলার সসাইটির কাউন্সুলার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশ বিদেশে তার প্রচুর গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ রয়েছে। চিকিৎসা শাস্ত্রের পাশাপাশি সামাজিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৭ সালে থাইরাজার পক্ষে রাজকন্যার কাছ হতে একটি পদক গ্রহণ করেন। তিনি প্রায় অর্ধশত দেশ ভ্রমণ করেন। দাউদপুর  গ্রামে তাদের পৈত্রিক জমিতে তাঁর উদ্যোগে এবং জাপানি সহায়তায়  ‘জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ স্কুল’ স্থাপিত হয়। তাছাড়া তিনি “সারা” নামক  একটি  এন.জি.ও প্রতিষ্ঠা করেন। সুনামগঞ্জের ভাটিপাড়ার জমিদার মরহুম আবুল হাসনাত  চৌধুরীর  মেয়ে মাহরুবা চৌধুরীর সাথে তাঁর বিয়ে হয়।  তিনি দুই মেয়ে  নাইমা চৌধুরী ও  নাজিমা  চৌধুরী এবং একমাত্র ছেলে নাজিব আহমদ চৌধুরীর জনক। তার ছেলেমেয়েরা যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে লেখাপড়া করছে।

২.২.৪.২ হালিমা সিদ্দিকা চৌধুরী

ইমাম উদ্দীন আহমদ চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে হালিমা সিদ্দিকা চৌধুরীর স্বামী মঞ্জুর  হায়দার চৌধুরী একজন বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ার। তিনি আমেরিকা থেকে এম.বি.এ পাশ করার  পর  চট্টগ্রামে কাফকো ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে একজন পদস্থ কর্মকর্তা পদে চাকুরি  করতেন। তাঁর দুই ছেলে সামীন হায়দার চৌধুরী ও সাফওয়ান হায়দার চৌধুরী এবং এক মেয়ে  সামিকা শারাফ চৌধুরী। বর্তমানে তাঁরা কানাডার টরেন্টোতে বসবাস করছেন। তাঁর বড় ছেলে নূরে সামীন হায়দার চৌধুরী ক্লাস ইলেভেনে উঠেছে। ছোট ছেলে নূর সাফওয়ান চৌধুরী ক্লাস ফোরে উঠছে।


২.২.৫ নাসির এ. চৌধুরী



‘তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই পংক্তি রচনা করেছিলেন মোঘল সম্রাট শাহজাহানকে উদ্দেশ্য করে। কিন্তু মহৎ কবিতার বড় গুণ  হচ্ছে তা যুগে যুগে কালে কালে মানুষের চরিত্রের সাথে হুবহু মিলে যায়।

বাংলাদেশের কিংবদন্তি বিমা ব্যক্তিত্ব নাসির এ. চৌধুরী সে রকম একজন ব্যক্তিত্ব, যার সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনের নানা কীর্তি প্রমাণ করে ;তার কীর্তির চেয়ে তিনি আর মহৎ’। দীর্ঘ্য কর্মময় জীবনে তিনি বাংলাদেশের বিমা শিল্প প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে একজন পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভূমিকা রাখেন এবং এখনও রেখে চলেছেন।

বৃদ্ধ বয়সেও একজন তাজাপ্রাণ তরুণের মত পরিশ্রম করে যান জনাব নাসির এ. চৌধুরী। এ দেশের শিল্প, বাণিজ্য, পুঁজিবাজারসহ সকল  খাতকেই নানাভাবে  সহযোগিতা প্রদান করছে বিমা শিল্প। সেই সাথে লাখ লাখ মানুষ  বিমা শিল্পর্কে অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

নাসির এ. চৌধুরী বিমা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট হন সেই সময়, যখন বংশীয় শিক্ষিত ছেলেরা সবাই প্রশাসনিক সরকারি চাকুরির পেছনে ছুটতেন।

কিন্তু সেই কর্মজীবনের শুরুতেই বিমার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন নাসির এ. চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়   থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৫৮ সালে  সেপ্টেম্বরে তিনি পাকিস্থান ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় করাচিতে অফিসার হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। তখন চাকুরি ক্ষেত্রে সব সুযোগ সুবিধা পশ্চিম  পাকিস্থানিদের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু অসাধারণ মেধা ও দক্ষতার জন্য একজন  পূর্ব পাকিস্থানি হয়েও নাসির এ. চৌধুরী   ইংল্যান্ডে বছরব্যাপী বিমা ও পুনঃবিমা  বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পান। 

পরবর্তীতে জার্মানির মিউনিখ থেকেও  তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এ দুটি প্রশিক্ষণ তাঁর কর্মজীবনের মজবুত ভিত্তি হিসেবে  কাজ করে এবং পরবর্তীতে গ্রীণ ডেল্টার মতো বৃহৎ বীমা কোম্পানির নেতৃত্ব প্রদানের পথকে সহজ করে দেয়। স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশের বিমা  খাত পুনগঠনে একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভূমিকা পালন করেন জনাব নাসির এ. চৌধুরী। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের নানা সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে আশির দশকের গোড়ার দিকে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজারের পদ থেকে স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণ করেন এবং ’৮২ থেকে ৮৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির ঈধৎষড়রি ঈড়সঢ়ধহু- এর বাংলাদেশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি বেসরকারি  খাতে বীমা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং ১৯৮৬ সালে গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিমা শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তিনি একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে অর্ধশতেরও বেশী বিমা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এই খাত বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন জনাব নাসির এ. চৌধুরী। বাংলাদেশে বিমাশিল্প যতদিন থাকবে এর ইতিহাসে নাসির এ. চৌধুরীর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

সিলেটের দক্ষিণসুরমা উপজেলার দাউদপুর গ্রামে এক ঐতিহ্যবাহী জমিদার পরিবারে ১৯৩৪ সালের ১লা ডিসেম্বর নাসির এ. চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন।

নাসির এ. চৌধুরী তাঁর ভাইদের মধ্যে পঞ্চম। তিনি গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির একজন উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং নাসকম (প্রাঃ) লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়াও তিনি ডেল্টা ব্রাক হাউজিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিঃ (ডিবিএইচ), জালালাবাদ টেলিকম লিঃ, গ্রিন ডেল্টা ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা পরিচালক। তিনি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান। একুশে টিভির উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে ক্রান্তিকালে এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। জনাব নাসির এ. চৌধুরী জার্মান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির প্রাক্তন সভাপতি, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর কমিটি মেম্বার, চট্টগ্রাম স্টক একচেইঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান, একজন রোটারিয়ান এবং ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব ও কুর্মিটোলা গলফ্ ক্লাবের সদস্য।

পিতা খান বাহাদুর গৌছ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী এবং পূর্বপুরুষদের অনেক মহৎ গুণাবলি নাসির এ. চৌধুরীর মধ্যে আছে। তাঁর অসংখ্য কর্মচারী, এলাকার  লোকজনসহ যে কেউ কোন বিপদে পড়ে তাঁর কাছে গেলে তিনি সহযোগিতার হাত  বাড়িয়ে দেন। তিনি তাঁর এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, মাজার  প্রভৃতির উন্নয়নে যথেষ্ট দান করে থাকেন। ছাত্রজীবনে লেখালেখি ও পত্রিকা  সম্পাদনার  সাথে তিনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন। আসাম মুসলিম লীগের জেনারেল  সেক্রেটারি মাহমুদ আলীর সম্পাদনায় ‘নওবেলাল’ নামে যে সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হত, তাঁর ছোটদের বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন নাসির এ. চৌধুরী। পরে এ পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগেও তিনি কাজ করেন। পড়াশুনার পাশাপাশি মুকুল ফৌজ করতেন। সে সময়কার গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য পত্রিকা ‘নিশানা’র তিনি ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা। সেই সূত্রে সাহিত্য সংস্কতির উন্নয়নে তিনি তাঁর সহযোগিতার হাত সব সময় বাড়িয়ে রাখেন। শিক্ষা উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে তিনি অর্থায়ন করে থাকেন। ক্রীড়া ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান আছে। তাঁর অর্থায়নে দীর্ঘদিন গ্রীন ডেল্টা হকি লীগ পরিচালিত হয়েছে। সদালাপী, নিরহঙ্কার, সৌম্য দর্শন নাসির এ. চৌধুরী একজন পরিশ্রমী কর্মপুরুষ। বয়সে প্রবীণ হলেও তিনি একজন তরুণের মতোই পরিশ্রম করে চলেছেন। বিমা খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন, দেশের মানুষের উন্নয়ন, সর্বোপরি দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করছেন জনাব নাসির এ. চৌধুরী। আমরা তাঁর কর্মব্যস্থ দীর্ঘজীবন এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল হুজ হু হিস্ট্রিক্যাল সোসাইটি ২০০৭ সালে বাংলাদেশের বিশিষ্ট বীমা ব্যক্তিত্ব জনাব নাসির এ. চৌধুরীকে হুজ হু ভুক্ত ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। হুজ হু হিস্ট্রিক্যাল সোসাইটির নিউইয়র্কস্থ প্রধান কার্যালয় থেকে গত ২১ মে ২০০৭ প্রদত্ত এক নিউজ রিলিজে এই ঘোষণা দেয়া হয়। নিউজ রিলিজে বলা হয়, বাংলাদেশের গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও তাঁর দীর্ঘ কর্মময় জীবনে বাংলাদেশের বেসরকারি ইন্স্যুরেন্স খাত বিকাশে বিশাল ভূমিকা রেখেছেন,যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং জিডিপিতে এই খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে, এ জন্যে নাসির এ. চৌধুরীকে হুজ হু ব্যক্তিত্বে হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।নিউজ রিলিজে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট এবং নাসির এ. চৌধুরীর জীবনী তুলে ধরা হয়।

নাসির এ. চৌধুরীর সহধর্মিনী মিসেস খুরশীদা চৌধুরী চট্টগ্রামের মাইজভান্ডার পীর বাড়ির কন্যা এবং একজন মহীয়সী নারী। নাসির এ. চৌধুরীর আজকের অবস্থানে আসার পেছনে এবং তাঁর সন্তানদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে খুরশীদা চৌধুরীর অবদান অপরিসীম। খুব অল্প বয়সে বৈবাহিক সূত্রে চৌধুরী বাড়িতে এসে তিনি সকল পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেন এবং স্বামীকে বৃহৎপরিসরে কাজ করার ক্ষেত্রে সব সময় বুদ্ধি পরামর্শ এবং অনুপ্রেরণা যুগান। একই সাথে খুরশীদা চৌধুরী তাঁর সন্তানদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করেন। সন্তানরা যাতে সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক এবং নৈতিক শিক্ষা লাভ করে নিজের এবং দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করেন খুরশীদা চৌধুরী। ব্যবসা অঙ্গনের তরুন তারকা ওয়াকার চৌধুরী ও ব্যস্ত ব্যাংকার ফারজানা চৌধুরী তাদের মা সম্পর্কে বলেন, আমাদের মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা এবং আমাদের সমস্ত কাজের প্রধান অনুপ্রেরণা তিনি। আর নাসির এ. চৌধুরী বলেন, জীবনের এই যে এতোটা পথ এসেছি, এতোটা পথ এগিয়ে এসেছি, সব সময় তাঁর অনুপ্রেরণা সাথে থেকেছে।


২.২.৫.১ ওয়াকার এ. চৌধুরী উদীয়মান বিজনেস স্টার

গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্স কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও জনাব নাসির এ. চৌধুরীর একমাত্র পুত্র ওয়াকার এ. চৌধুরী বাংলাদেশের একজন উদীয়মান বিজনেস স্টার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।তিনি গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর একজন ডায়রেক্টর এবং বিজনেস হাউস নাসকম-এর ডাইরেক্টর। বর্তমানে মূলত তিনিই নাসকমের ব্যবসা দেখাশুনা করেন। নাসকম প্রাইভেট লিমিটেড একটি বৃহৎ বহুমুখী বিজনেস হাউস। টেক্সটাইল শিল্পের ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ছাপানোর জন্য সিকিউরিটি কাগজ সরবরাহসহ নানা ধরনের ব্যবসা নাসকম পরিচালনা করছে।

ওয়াকার এ. চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডেলফা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিংয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর দেশে ফিরে ব্যবসা-বাণিজ্যে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর ব্যবসায়িক জীবনের সময়কাল প্রায় দেড় যুগ হয়ে গেছে। বয়সে এবং কর্মস্পৃহায় তুমুল তরুণ।নাসকম এবং একই সাথে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরিশ্রম করে চলেছেন ওয়াকার এ.চৌধুরী। ওয়াকার এ. চৌধুরী একজন লব্ধ প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত শিল্পী। যদিও তিনি শৌখিন শিল্পী কিন্তু ইতিমধ্যে তাঁর অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু গান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর সার্বিক সাফল্যের পেছনে কার অনুপ্রেরণা কাজ করেছে জানতে চাইলে ওয়াকার এ.চৌধুরী বলেন, নিঃসন্দেহে আমার বাবা এবং মা। আমার বাবা এদেশের বীমা শিল্প তনা শিল্প বাণিজ্যের উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে পরিশ্রম করেন। আমি যখন ব্যবসায় আসি আমার বাবা আমাকে বলেন, “দেখো টাকা সবাই বানাতে পারে, কিন্তু ইজ্জত হলো বড় কথা, সততা নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা করবে, তাতে দু’পয়সা কম আয় হয় তাও ভালো।” এটাই তাঁর জীবন দর্শন।ওয়াকার বলেন, আমার বিবেচনায় আমার বাবাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। এরকম একজন বাবার সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত।আমার বাবার যে চারিত্রিক গুণাবলি আছে তার ২৫ শতাংশও যদি আমি অর্জন করতে পারে নিজেকে ধন্য মনে করব। তিনি সারা জীবন সততা নিষ্ঠা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। নিজেকে বড় ব্যবসায়ী, বড় নির্বাহী হিসেবে গড়ে তুলেছেন, সেই সাথে দেশকে এবং দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়েছেন। আমিও আমার বাবার আদর্শ অনুসরণ করতে চাই।


২.২.৫.২ সাফল্যে সমুজ্জ্বল ফারজানা চৌধুরী 



গ্রিনডেল্টা ইন্সুরেন্স কোম্পানির এম ডি নাসির এ.চৌধুরীর কন্যা ফারজানা চৌধুরী একজন উদীয়মান নারী ব্যাংকার ও বিমাবিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তিনি দেশের দ্রুত বিকাশমান ব্যাংক ব্রাক ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাংকটির চমকপ্রদ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ফারজানা   চৌধুরী ঢাকা    বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে   ফিন্যান্সে অনার্সসহ মাস্টার্স  এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে এমবিএ ডিগ্রি  কৃতিত্বের সাথে অর্জন করেন। বাংলাদেশের  ব্যাংকিং সেক্টরে বর্তমানে অনেক নারী  কর্মী কাজ  করেন কিন্তু শীর্ষ পর্যায়ে খুব কম কর্মকর্তাই আছেন। ব্র্যাক ব্যাংক এসএমই  ব্যাংকিংয়ের  উপর সবচেয়ে  বেশি জোর দিয়ে থাকে, সেই বিভাগের প্রধান হিসেবে দক্ষতা এবং যোগ্যতার সাথেই দায়িত্ব পালন  করেন ফারজানা চৌধুরী। বর্তমানে তিনি জুনিয়র  চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের  ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট।   
ফারজানা চৌধুরী এখন গ্রিন ডেল্টা ইন্সুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে এখন সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এই সাফল্যের পেছনে কার অনুপ্রেরণা কাজ করছে জানতে চাইলে ফারজানা চৌধুরী বলেন, অবশ্যই বাবা মা। আমার বাবা দেশের  শিল্প বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। আর আমার মা আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে  প্রতিকূল  পরিবেশ মোকাবিলা করে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে হয়।


২.২.৬ শফি উদ্দীন আহমদ চৌধুরী



খান বাহাদুর গৌছউদ্দিন আহমদ চৌধুরীর ষষ্ঠ পুত্র এবং ছেলেমেয়েদের সর্ব কনিষ্ঠ শফিউদ্দীন আহমদ চৌধুরী ১৯৩৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর তারিখে দাউদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করে ১৯৬০ সালে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি লন্ডন গমন করেন। সেখানে থাকাকালে বুঙ্গি এন্ড কোম্পানি নামে একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঢাকা অফিসে চাকুরি লাভ করে ১৯৬৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দীর্ঘ দশ বছর এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পর নিজে স্বাধীনভাবে আন্তর্জাতিক ব্যবসা আরম্ভ করেন এবং অল্প দিনের মধ্যে নিজের কর্মদক্ষতার বিশেষ সাফল্য অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি এ্যালবার্ট ডেভিড (বাঃ) লিমিটেড নামক একটি ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এবং এ. এ. এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ইনডেনটিং কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি এবং তাঁর দুইপুত্র পূবালী ব্যাংক লিমিটেড এর পরিচালনা পরিষদের পরিচালক ছিলেন।
সিলেটের কোম্পেনিগঞ্জ উপজেলায় তাঁর ছয় শত বিঘা জায়গায় ২৫টি দিঘি বিশিষ্ট মৎস্যখামার রয়েছে। তিনি শতাধিক কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ঢাকার তেজগাঁওয়ে একটি বহুতল জায়ান্ট ভবনের মালিক। গুলশানে তাঁর কয়েকটি বহুতল বাসা রয়েছে। শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ছাড়াও শফি আহমদ চৌধুরী একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ। তিনি দক্ষিণসুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। দাউদপুর গ্রামে নিজের অর্থে নিজস্ব জায়গায় তিনি সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবন নির্মাণ করেন। অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে দক্ষিণসুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি দুইবার পার্লামেন্টে সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সিলেটের  দক্ষিণসুরমায় লতিফা শফি চৌধুরী মহিলা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এই কলেজে দুই সহস্রাধিক ছাত্রী লেখাপড়া করছেন। এলাকার মেয়েরা হাইস্কুল পর্যন্ত পড়ে শিক্ষাজীবন হতে ঝরে যেত। তাঁর এই মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার কারণে রেঙ্গার সব মেয়েরা আজ উচ্চশিক্ষিত হচ্ছে।
তিনি এমপি থাকাকালে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দক্ষিণসুরমা উপজেলা বাস্তবায়িত হয় ও বর্তমান নৈখাই মৌজার দাউদাবাদে উপজেলার প্রধান কার্যালয় স্থাপিত হয়। দক্ষিণসুরমা তাঁর সাধনা ও প্রচেষ্টায় উন্নয়নের পথে ধাবিত হয়।
১৯৬৭ সালে প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রাক্তন মন্ত্রী শেরপুরের জনাব খোন্দকার আবদুল হামিদের কন্যা লতিফা চৌধুরীর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। তার পত্নী লতিফা চৌধুরী ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে বি.এ (অনার্স) এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের একজন প্রথম শ্রেণির সংগীত শিল্পী।তাঁদের ঔরসে দুই যমজ পুত্র আরিফ আহমদ চৌধুরী ও আসিফ আহমদ চৌধুরী এবং একমাত্র কন্যা সায়রা চৌধুরীর জন্ম হয়। দুই পুত্রই আমেরিকা থেকে কৃতিত্বের সাথে এম.বি.এ/ এম.এস ডিগ্রি লাভ করে কিছুদিন নিউইয়র্কে আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে কাজ করেন। তার বড় ছেলে আরিফ আহমদ চৌধুরী এ দেশের একাধিকবার রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বনামধন্য গীতিকার ও চলচ্চিত্র প্রযোজক জনাব গাজী মাজহারুল আনোয়ারের একমাত্র কন্যা দিঠি আনোয়ারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির দুইজন পুত্র সন্তান আদিয়ান আহমদ চৌধুরী ও আকিব আহমদ চৌধুরী। আসিফ আহমদ চৌধুরীর সাথে শেরপুরের জনাব জলিল বক্স এর বড় মেয়ে সুমনাকে বিয়ে করেন এবং তাদেরও দুই পুত্র সন্তান আয়ান আহমদ চৌধুরী ও আদিব আহমদ চৌধুরী। শফি চৌধুরীর একমাত্র কন্যা সায়েরা চৌধুরী সুমি যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট ভারনন উইমেন্স কলেজ থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইন ও এডভারটাইজিং বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করে বর্তমানে ওয়াশিংটনে ডিসিতে আছেন। আরিফ আহমদ চৌধুরী ও আসিফ আহমদ চৌধুরী দুইজনই পূবালী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন।
শিল্পী লতিফা শফি চৌধুরী একজন দক্ষ লেখিকা, তিনি আমাকে তাঁর লেখা একটি সুখপাঠ্য আত্মজৈবনিক গ্রন্থ "ফেলে আসা দিনগুলি" উপহার দেন। বইটি পড়ে খুব আনন্দ ও অনুপ্রেরণা পাই।


২.৩ কমর উদ্দীন আহমদ চৌধুরী

মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরীর তৃতীয় পুত্র কমর উদ্দীন আহমদ চৌধুরী বাড়ীতে বিষয় সম্পত্তি দেখাশুনা করতেন। কুড়া শিকারে তাঁর খুব শখ ছিল। দাউদপুরের দক্ষিণ চৌধুরীবাড়ির আব্দুস সালাম চৌধুরীর মেয়ে আজিজুন্নেছার সাথে তাঁর বিয়ে হয়। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মেসবাহ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী তরুন বয়সে অবিবাহিত অবস্থায় মারা যান। তাঁর দুই মেয়ে ছকিয়া খাতুন চৌধুরী ও মরিয়ম খাতুন চৌধুরী মারা গিয়েছেন। তৃতীয় মেয়ে জাহানারা (ফাতুন) এর তিন ছেলে মঞ্জুর আলম, মছরুর আলম ও মুশফিক আলম এবং এক মেয়ে রাহেলা।


২.৩.১ মঈন উদ্দীন আহমদ কুরায়শী

কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরীর দ্বিতীয় ছেলে মঈন উদ্দীন আহমদ কুরায়শী ১৯২৬ সালের ৩রা ডিসেম্বর দাউদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাকনাম আনজির। ১৯৬৬ সালে তিনি লন্ডন গমন করেন। তিনি যুক্তরাজ্যে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সিলেট শহরের সাগরদীঘিরপার তাঁর বিরাট বাড়ি রয়েছে।

সিলেট শহরের আম্বরখানায় “পূরবী মার্কেট” এবং ‘কুরায়শী এন্টারপ্রাইজের’ তিনি স্বত্ত্বাধিকারী। তিনি দশবিঘা আয়তনের খাদিম শিল্পনগরের শাহজালাল অটো রাইসমিলেরও স্বত্ত্বাধিকারী। তাঁর দুই পুত্র শাহ্রুজ্জামান কুরায়শী ও বদরুজ্জামান কুরায়শী।

তিনি কানিশাইল গ্রামের আব্দুস সালাম চৌধুরীর কন্যা শামসি খানমের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর বড় ছেলে শাহ্রুজ্জামান কুরায়শীর জন্ম ১৯৫৮ সালে। তিনি দরগামল্লার মুফতিবাড়িতে বিয়ে করেন। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যার জনক। তিনি ব্রিটেনে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ে নিয়োজিত ।

ছোট ছেলে এনামুজ্জামান কুরায়শী ১৯৬১ সালের ১৬ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সিলেট সরকারি পাইলট স্কুল হতে তিনটি বিষয়ে লেটারমার্কসহ এস এস সি(বিজ্ঞান) পাশ করে বৃটেনে চলে যান। তিনি যুক্তরাজ্যে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বি.এস.সি (অনার্স) ডিগ্রি নিয়ে ১৯৮৭ সালে ব্রিটেনের জি.ই.সি কোম্পানিতে চাকুরি করার পর যুক্তরাজ্যের “থেমস্ পাওয়ার লিমিটেড” এর ডি.সি.এস. কনসালটেন্ট পদে কাজ করতেন। তিনি ২০২২ সালের জুলাই মাসে লন্ডনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মাত্র ৬১ বছর বয়সে চার পুত্রসন্থান রেখে মারা যান। ইস্টলন্ডন জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে এনামুজ্জামান কুরায়শীকে ইংল্যান্ডে দাফন করা হয়। তিনি সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও বিচারপতি লংলার মিসবাহ উদ্দিন চৌধুরীর মেয়ে তামান্না চৌধুরীকে বিয়ে করেন। তাঁর চার ছেলেই বৃটেনে সুপ্রতিষ্ঠিত।

মইনউদ্দিন চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে সেহেনা চৌধুরীর সহিত জুড়ির আলাউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ে হয়। মঈন উদ্দীন কুরায়শী ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বাদ মাগরিব ৯৫ বৎসর বয়সে সিলেটের সাগরদিঘিরপারের বাসা কুরেশী ভবনে ইন্তেকাল করেন। তাকে শাহজালালের(রঃ) দরগায় দাফন করা হয়।


৩.০ মোহতছিন আলী চৌধুরী

ইয়াকুব আলী চৌধুরীর তৃতীয় পুত্র মোহতছিন আলী চৌধুরী এই বংশের একজন খ্যাতনামা ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন অসাধারণ গুণের অধিকারী। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু, দানশীল ও নিরহংকার। কারো সাথে সাক্ষাৎকালে অন্যকে সুযোগ না দিয়ে তিনি প্রথমে সালাম করতেন। অতিথিপরায়ণতা ছিল তাঁর চরিত্রের এক ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য। তাঁর মোসফেরখানার বিভিন্ন ধরনের লোক এমনকি কাবুলিওয়ালারা পর্যন্ত আপ্যায়িত হত। জনসাধারণের নিকট তিনি তহছিল মিয়া নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। ১৩৪০ বাংলা সালের ১লা ভাদ্র (১৭ আগস্ট, ১৯৩৩ইং) তারিখে তিনি ইন্তেকাল করেন।

মোহতছিন আলী চৌধুরীর ঔরসে জন্ম নেন চার ছেলে: মজহর আলী আহমদ চৌধুরী, মতহর আলী আহমদ চৌধুরী, মুজাফফর আলী চৌধুরী ও আবুল হাসান মসদ্দর আলী চৌধুরী এবং দশ মেয়ে (১) সাইদুন্নেসা (২) আসকারী খাতুন (৩) আমবরী খাতুন (৪) কুলসুম খাতুন (৫) ছারা খাতুন (৬) সালেহা খাতুন (৭) আতেকা খাতুন (৮) রাবেয়া খাতুন (৯) আজিজুন্নেসা খাতুন ও (১০) রোকেয়া খাতুন। তন্মধ্যে সাইদুন্নেসা খাতুন ব্রিটিশ আমলের জেলা প্রশাসক কানিহাটির জমিদার খান বাহাদুর তজুম্মল আলী চৌধুরী স্ত্রী, ছারা খাতুন খান বাহাদুর গৌছ উদ্দীন আহমদ চৌধুরী স্ত্রী, আতেকা খাতুন লংলা পরগণার আমানীপুর গ্রামের জমিদার সৈয়দ আফতাব উদ্দীন হোসেনের স্ত্রী ও মরহুম বিচারপতি সৈয়দ মিসবাহ উদ্দীন হোসেনের মাতা। রাবেয়া খাতুন করিমগঞ্জের আলী নগরের জমিদার শামসুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন মীর্জা মালিক মোহাম্মদ তুরানীর বংশধর। সর্ব কনিষ্ঠ মেয়ে আজিজুন্নেসা সিলেট দরগামহল্লার মুফতী রইস উদ্দীন আহমদের স্ত্রী ও অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব আহমদুল রব চৌধুরীর শাশুড়ি। বাড়ির সামনে তার নিজস্ব ভূমিতে ১৯২৫ সালে তিনি দাউদপুর প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।


৩.১ মজহার আলী আহমদ চৌধুরী

মোহতছিন আলী চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র মজহার আলী চৌধুরী বাস করতেন পশ্চিম বাড়ীর উত্তর অংশে। তিনি শাহবাজপুর পরগণায় ভোগা গ্রামের জমিদার নওমান আব্দুল মুকিত চৌধুরীর মেয়েকে বিবাহ করেন। তাঁর বড় মেয়ে মাজেদা খাতুন ও ছোট ছেলে হামজা আহমদ বাল্যকালে টাইফয়েডে মারা যান। বড় ছেলে ডাঃ নজীব আহমদ কুরায়শী (গোলাম নবী) চিরকুমার ছিলেন। সম্প্রতি তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর একমাত্র জীবিত মেয়ে মমতাজ বেগমের বিবাহ হয় ভাটিপাড়ার মনসুর আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে। মনসুর আহমদ চৌধুরী “ডানকান ব্রাদার্স” এ উচ্চ পদে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পর স্বামী-স্ত্রী বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করছেন।


৩.২ মতহর আলী চৌধুরী

মোহতছিন আলী চৌধুরীর দ্বিতীয় পুত্র মহতর আলী চৌধুরী রণকেলীর বাগিচা বাড়ীতে আব্দুল মজিদ চৌধুরীর মেয়েকে বিবাহ করেন। অত্যন্ত বিনয়ী ও ধার্মিক হিসেবে তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। নিঃসন্তান অবস্থায় পরিণত বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।


৩.৩ মুজফফর আলী চৌধুরী

মোহতছিন আলী চৌধুরীর তৃতীয় পুত্র মুজফফর আলী চৌধুরী ফুলবাড়ীর আব্দুল মুনিম চৌধুরীর মেয়েকে বিবাহ করেন। তাঁর চার পুত্রের মধ্যে বড় ছেলে মাহমুদ শিশুকালে মারা যায়। অন্য তিন পুত্র মকসুদ আহমদ কুরায়শী, মনসুর আহমদ কুরায়শী এবং মতলুব আহমদ কুরাশী। দ্বিতীয় পুত্র মকসুদ আহমদ কুরায়শী ফেঞ্চুগঞ্জ ফাইর্টিলাজার কোম্পানিতে দীর্ঘদিন চাকুরি করে পরে বাড়িতে মারা যান। ৩য় পুত্র মনসুর আহমদ কুরায়শী যুক্তরাজ্য প্রবাসী অবস্থায় সম্প্রতি ইন্তেকাল করেছেন। কণিষ্ঠ ছেলে মতলুব আহমদ কুরায়শী প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকুরি করার পর বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন।


৩.৪ আবুল হাসান মসদ্দর আলী চৌধুরী

তিনি প্রথমে ফুলবাড়ীর আব্দুল মুনিম চৌধুরীর কন্যা ও তাঁর অগ্রজ মোজাফফর আলী চৌধুরীর বিধবা স্ত্রী রাবেয়া খাতুনকে বিবাহ করেন। এই পক্ষে তাঁর এক পুত্র নেসার আহমদ কুরায়শী ও এক মেয়ে মর্জিয়া খাতুনের জন্ম হয়।নেসার আহমদ কুরায়শী বাংলাদেশ রেলওয়েতে দীর্ঘদিন চাকুরি করার পর অবসর গ্রহণ করেছেন। মেয়ে মর্জিয়া খাতুনের বিবাহ হয় ফুলবাড়ির আব্দুর রকিব চৌধুরী সঙ্গে।আব্দুর রকীব চৌধুরী সরকারি চাকুরিতে থাকা অবস্থায় মারা যান।প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর আব্দুল হাসান মসদ্দর আলী চৌধুরী রণকেলীর মুনীর উদ্দীন চৌধুরীর মেয়ে হুছনে আরা চৌধুরীকে বিবাহ করেন।এই পক্ষে চার পুত্র শওকত আহমদ কুরায়শী, শাহনাজ আহমদ কুরায়শী, মুরশেদ আহমদ কুরায়শী ও দিলদার আহমদ কুরায়শী, শাহনাজ আহমদ কুরায়শী, মুরশেদ আহমদ কুরায়শী, রুবু রহমান ও ইভা আহমদ জন্মগ্রহণ করেন।পুত্রদের মধ্যে শওকত আহমদ যুক্তরাজ্যে একজন প্রতিষ্ঠিত রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। তিনি কৌড়িয়া রাজাপুরের মলিকুর রাজা চৌধুরীর মেয়েকে বিবাহ করেন।দ্বিতীয় পুত্র মুর্শেদ আহমদ কুরায়শী বাণিয়াচং এর দন্ত চিকিৎসক এ. হাসান এর মেয়েকে বিবাহ করেন। তৃতীয় পুত্র শাহনাজ আহমদ বারহালে বিবাহ করেন।

তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র দিলদার আহমদ (কচি) সাবেক চেয়ারম্যান (১৯০২ সাল হতে ১৯১১ সাল), দাউদপুর ইউনিয়ন। তার সাথে বল্লভপুরের মোহাম্মদ রাজা চৌধুরীর মেয়ের বিবাহ হয়। শাহনাজ আহমদ কুরায়শী যুক্তরাজ্য চাকুরি করছেন। মোরশেদ আহমদ কুরায়শী বি.এ যুক্তরাষ্ট্রের নিউয়র্কের অধিবাসী এবং সেখানে চাকুরি করেন।

আবুল হাসান মছদ্দর আলী চৌধুরীর কন্যা রুহেনা চৌধুরীর বিবাহ হয় করিমগঞ্জের অন্তর্গত শামসুল ইসলাম চৌধুরীর দ্বিতীয় পুত্র মেহের উল ইসলাম চৌধুরী সঙ্গে। তাঁরা বর্তমানে লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাসরত। রুমানা কুরায়শীর বিবাহ হয় দাউদপুরের শাহ্দাউদ বংশের হাসিবুর রাজা চৌধুরীর পুত্র হেমায়েত দাউদ কুরায়শীর সঙ্গে। রুবু রহমান চৌধুরী মনি এর বিবাহ হয় সিলেট দক্ষিণ সুরমা উপজেলার অর্ন্তগত জালালপুর নিবাসী ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম মখদুম রহিম উদ্দীন আনছারির বংশধর মরহুম আব্দুল কাদির চৌধুরী জুনায়েদ এর একমাত্র সন্তান সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী রেশাদ এর সঙ্গে। তাঁরা বর্তমানে কানাডা প্রবাসী। তাঁদের তিনটি পুত্র সন্তান যথাক্রমে রাজী রহমান চৌধুরী, রাবীব রহমান চৌধুরী, রাঈদ রহমান চৌধুরী। তারা কানাডার অধ্যয়নরত। উল্লেখ্য রুবু রহমান চৌধুরী মনির স্বামী সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী রেশাদ একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবক। তিনি কানাডাতে একাধারে ১২ বছর অর্থাৎ একযুগ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বর্তমানে তিনি কানাডা থেকে প্রকাশিত বাংলা সাপ্তাহিক ‘দেশের আলোর’ পত্রিকার চেয়ারম্যান। কণিষ্ঠ মেয়ে ইভা চৌধুরীর বিবাহ হয় চানভরাং নিবাসী সুলেহ আহমদ চৌধুরীর ছেলে তুফায়েল আহমদ চৌধুরীর সাথে। তাঁদের দুই কন্যা ও তিন ছেলে: কায়নাত জাহান চৌধুরী, মিশকাত আহমদ চৌধুরী, মাখসুরাত জাহান চৌধুরী, মুশরাত আহমদ চৌধুরী ও ইরফাত আহমদ চৌধুরী। ইভা, তাঁর স্বামী ও ছেলে মেয়ে সব লন্ডন থাকেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন