সিলেট তোমায় বলি,
শিল্পী আমি হলি,
নানান রঙ্গের তুলি দিয়ে আঁকতাম তোমার রূপ।
একটা মিনিট,
একটা সেকেন্ড,
হইতনা মোর রঙ্গের তুলি চুপ।
আমার মনের কালি দিয়ে,
প্রাণের মধু ঢেলে দিয়ে,
ফুটিয়ে দিতাম রূপসী চাঁদের হাট।
ঢেউ খেলানো ধানের মেলা,
ঘাসের বুকে ফুলের মেলা,
এমোন করে ভরিয়ে দিতাম সবুজ শ্যামল মাঠ।
শ্যাম স্নিগ্ধ চায়ের দেশে,
চা-কুড়ানি নারী হাসে,
ছবি আঁকার দারুন, দারুন রূপ।
চিরল পাতার বৃক্ষ ডালে,
সবুজ তোঁতা পালে পালে,
কাঠবিড়ালী লাফিয়ে বেড়ায় সত্য অপরূপ।
আমার তুলির অগ্রভাগে,
বনবনানী উঠতো জাগে,
রঙ্গীন ফুল, ফুটতো হাসি হাসি।
কুশিয়ারার ঘোলা জলে,
মলিন পালের ডিঙ্গি নৌকা,
দিন রজনী যাইতো ভাসি ভাসি।
হাকালুকীর গহীন জলে,
আমার মনে জাহাজ চলে,
ঢেউয়ে ঢেউয়ে সাজে হৃদের ছবি।
ভেটের পাতা পেখম মেলে,
শাপলা কুদুম ঢেউয়ে দুলে,
আমার কাছে শিল্প হতো সবি।
লাল ধবল বকের ঝাঁক,
নীচে বইছে নদীর বাঁক,
বুনোহাঁস
খেলতো জলে খেলা।
মেঘেরা সব দলেদলে,
লুকোচুরি
খেলে খেলে,
সূর্যটাকে আড়াল করে কাটিয়ে দিত বেলা।
বিজলী মেয়ের আগুন চোখ,
বৃষ্টিভেজা ধরার বুক,
গুড়ুম, গুড়ুম তীব্র বাজের হাক।
টিলার উপর শিমুল গাছে,
লালফুলেরা ফুটে আছে,
এক ডালেতে
মৌমাছিদের চাক।
চুপেচুপে
শীতকাল এলে,
মুলা, গাজর, সরিষা ফুলে,
ভরে দিতাম সুরমা নদীর চর।
সিঁড়ি কাটা একটা টিলায়,
গরু, ছাগল, মোরগ চড়ায়,
মধ্যে দিতাম কৃষাণ মায়ের ঘর।
জাফলংয়ের
আজর শিলা,
জলের বুকে করছে খেলা,
কালোজলে যায় দেখা সব মাছ।
পাহাড় তাহার পা ধুয়েছে,
সারি নদে চুমুক দিছে,
অমর এক ‘শিল্প’ এঁকে, দিতাম সবার কাছে।
তামাবিলের রঙ্গীন ছবি,
রোজ সকালের ভাঙ্গা রবি,
রাত্রি এলে, মুখ মেলিত, মায়াদারী চাঁদ।
লন্ডনীদের অট্টালিকায়,
দিনদুপুরে চাঁদ দেখা যায়,
আর ক’টা দিন ধর্য্য ধর, বাঁধবে প্রেমের বাঁধ।
খাসিয়াদের মাচাংবাড়ী,
ঘাঘরা পরা রূপসী নারী,
পিঠে তাদের বনকুড়ানী ঝুলি।
পাহাড় ঘেরা নিরব পথে,
পাতাঝরা বৃক্ষতলে,
উদাস বনে পথ হারিয়ে যেতাম সবই ভুলি।
সিলেট তোমায় শিল্প করে,
শত রঙ্গে রঙ্গীন করে,
এঁকে আমি দিতাম।
পরিবর্তে
তোমার কাছে,
কিয়ামতের
পূর্ব-বাসে,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন