প্ৰাচীন মিশরীয়রা ধনীলোকদের সোনারূপা ধনসম্পদ তাদের লাশের সাথে ভূগর্বস্থ কবরে পাঠাতো। মনিবের সেবাযত্নের কোন কসুর যাতে না হয় সেজন্য দাসদাসীদেরকে বদ করে সাথে দিত। আজ ফারাওদের যুগ নেই। আহা রে এখনও যদি ফারাওদের সময়কাল বহাল থাকতো, তবে আমার লোকজনকে বলতাম, আমার যাকিছু আছে সব গুণেগুণে সাথে দিও এবং সেইসাথে আমার অতি আদরের গোলাম লাটিয়াল গোলউল্লাটাকে পাঠাতে যেন কোন ভূল না হয়। ভয় হয় মুনকার নকীর যদি রেগে যান। মুনকার নকীর চটলে আমি যেন এই দুনিয়ার মত বাজখাই গলায় হুঙ্কার দিতে পারি গোলউল্লা ওদেরে গল্লা লাগা।
আমার জীবনের পড়ন্ত বিকেল আজ। বয়স আশি পার হয়েছে বছর চারেক আগে। আজ হৃদয়ের চোখগুলো অতীতের বাঁকেঁবাকে ফিরে ফিরে যায়। ইচ্ছে হয় আমার জীবনের কিছু কাহিনী লোকজনকে শোনাই কিন্তু কি শোনাবো- এ জীবনথলীতে যে ভাল কিছু নেই। সবিই কালিমার কালো কালিতে লেপ্টে আছে। দেখতাম কুকুর পৱিশ্ৰান্ত হলে তার জিহ্বা বেয়ে লালা ঝরতে থাকে কিন্তু আমার জিহ্বা বেয়ে দিনের চব্বিশটি ঘণ্টা কেবল লোভের বিষাক্ত লালা বেরুতো। শহর হতে অনেক দূরে এক অজঁপাড়াপায়ে আমার জন্ম। জাতে আতরাফ, স্থান আপৃষ্য। হাড়হাভাতে জীবন বয়ে গেছে কয়েক পুরুষ। এইস্থানে ধন নেই, মান নেই, স্থান ছাড়লে বাড়বে মান, হয়তো উপড়ে ফেলা যাবে ভাগ্যের অপজিজ্ঞীর, তাই ১৯৬৫ সালে হিজরত করি সিলেট শহরের এক শিয়াল ডাকা পাড়ায়, নাম তার সাগরদিঘিরপার। তখন আমার বয়স আর কত হবে? বড়জোর বছর চল্লিশেক।
এখানে একসময় এক বিশাল দিঘি ছিল। লোকে বলতো সাগরদিঘি। এই দিঘীর জলে এক সময় নাকি জীনপরীরা চরে বেড়াতো, আজ আর সাগরদিঘিটাকে খুজে পাওয়া যায়না। অসংখ্য বহুতল ভবনের তলায় চিরদিনের জন্য দিঘিটির সমাধি কখন যে রচিত হয়েছে, কেউ তার খবর রাখেনি। বকভরা শাপলা ফোটা দৈত্য দানবের বিশাল দিঘিটি নেই অথচ ঐতিহ্যের বলিরেখা সাগরদিঘি নামটি কেমন করে যেন রয়ে যায়। আমি যখন আসি তখন এখানে ছিল জলেডোবা নিচু জমি, ধানক্ষেত। এখানে এসেই আমি চারপাশে আমার লোভের ঘনঘন বিষাক্ত নাগ নিশ্বাস নিক্ষেপ করি। সরকারি জমিজমা দখল করি, আশপাশের নিরিহ মানুষের জমিজমায় দখল বসাই, এদেশের বস্তাপছা রাজনীতি আমাকে সহায়তা করে। রাজনৈতিক দলে ঘাপটি মেরে বসে থাকা দুবৃত্তদের হাত করি, তাদের অপকর্মে শরিক হই, বদলা আমার অপকর্মে তাদের সহায়তা পাই।
শহরের ভদ্রলোকেরা আমাকে একটা বাজে লোভী খাটাস ভাবে, তাতে আমার অহংকার আর বেড়ে যায়, নিজেকে মনে হয় হিন্দি ছবির খলনায়ক, এক দুৰ্দান্ত মাস্তান। হামলা মামলা খুন- সব কাজের কাজি আমি। মামলার ভয়, সে তো ব্যাঙের সর্দি, হামলা মামলার সমুদ্রে সাতরাতেই আমার আনন্দ। জবরদখল মারামারি আইন আদালত ছাড়া কি জীবন চলে, জীবনে কি উঠে আসা যায়। আমি ঐ পথ ধৱেই হাটি, জিরো হতে আজ হিরো হই। আর তা সম্ভব হয়েছে সবসম্ভবের দেশ, এই বাংলাদেশে।
লোকে বলতো আমি নাকি সিংহ রাশির জাতক, ঐ রাশির জাতকের সাথে পেরে উঠা যায় না। কেউবা বললো মানবমলে বেশীদিন পা রাখতে নেই। দু'চার জন ভীরুকে বন্দুকের নল দেখাই, দু'একটা গোল্লা ফোঁটাই, তারা পানির দরে জমিজমা সব আমার কাছে বিক্রি করে পালিয়ে গেল। বাকিরা মামলা করল, পেরে উঠতে নাপেরে শেষমেষ হালছেড়ে রনভঙ্গ দিল।
আমার সুদীৰ্ঘ্য জীবন ঝুড়িতে রাখা আছে অনেক অনেক কাহিনী। দু'চারটাতো আপনাদেরকে শুনাতেই হয়। আমার বাসার সামনে সরকারের বেশ কয়েক বিঘা জমি আমি চল্লিশ বছর দখল করে রাখি। অবৈধ বস্তি নিৰ্মান করে ভাড়া আদায় করি। এখানে প্ৰচুর মাছ হত। বস্তির কেউ মাছ ধরলে ঈগলের মত হানা দিয়ে সব মাছ কেড়ে নিতাম। আমার বাপদাদারা গরুর খেদমতে জীবন ব্যয় করেন। আমি শহরে এসেও পূৰ্বপুরুষের চিহ্ন গরুপোষা ছাড়তে পারিনি। দুধ বিক্ৰি করি, স্বভাবদোষে পানিও মেশাই। নেকড়েরা তাদের রাজ্যে কাউকে ঢুকতে দেয়না। একবার আমার দখলি রাজ্যে একলোককে ঘাস কটিতে দেখে কৰ্কশ গলায় গালী দেই- 'চুতমারানির পোয়া।' আরেকবার লম্বা ঘাস দেখে একপাল ছাগল নিয়ে ঢুকে পড়ে ভাটিপাড়ার বুড়ো রাখাল। এবারো নেকড়ে তরমুজ আলীর তাড়া খেয়ে ছাগলসহ বুড়োটা উদ্ধশ্বাসে দৌড়ে পালায়। ডানবাম সবকিছুর জমিদার লাটখা আমি তরমুজ আলী এখানে আর কারও স্থান নেই।
আমার চাকর বাকর ড্ৰাইভার রাখালেরা বাসার সামনের একশত বর্গহাত জায়গার একএক জন সম্ৰাট আকবর। যে নিঃশ্ব লোকগুলোৱ চৌদ্দগোষ্টি মানুষের লাত্থিগোত্ত খেয়ে গ্ৰামে জীবন কাটিয়েছে, তাৱা আমার নওকর হয়ে এক একটা আস্ত মাস্তানে পরিণত হয়। ড্ৰাইভাৱ পাশের বাসার পাহারাদারকে মারধর করে, আরেক বাসার সামনে সরকারি রাস্থায় মনিবের জবর দখলি গাছের আমে এক নিৰ্মাণ শ্ৰমিক হাত দিলে জুরে চপেটাঘাত মেরে বসে আমার গরুর রাখাল। আমি জমিদার লাটবাহাদুর তরমুজ আলী এই লোকগুলোকে ক্ষমতাৱ সুমিষ্ট শরাবান তহুরা পান করাই। আমি আমার পোষালোকদেরে এক একটা গোয়ারগোবিন্দে পরিণত করি। এরা হল আমার চাকর কাম লাটিয়াল। ভদ্রলোক, জ্ঞানীলোক, মানীলোক আমার কোন বাতবিচার নেই। সবার সাথে ইতরামি করে আমি দারুণ আনন্দ উপভোগ করি।
একবার আমার সাম্রাজ্যে এক সিংহ হামলে পড়ে। বাঘের উপর টাগ, আর সাপের উপর বেজী ছড়ি ঘুরায়৷ এবার এই সিংহটা আমার উপর শুধু ছড়িই ঘুৱালোনা, আমার বহু কালের রাজ্যটা দখল করে নিল। সিংহটা লন্ডনি নজির উদ্দিন, সে বিশ্বনাথের লোক। ঐদিন আমার বাহাদুর পাইক পেয়াদারা আমাকে নজির উদ্দিনের অসংখ্য মারমুখী যুদ্ধাৱ তরবারির কোপের মুখে ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায়। হিটলার নজির উদ্দিন বীরবিক্ৰমে আমার নামফলক উপড়ে ড্রেনে ছুড়ে ফেলে দেয়। সেখানে তার নামখচিত মালিকানা সাইনবোর্ড স্থাপন করে, 'এই জায়গার মালিক নজির উদ্দিন।' আমার হালত তবদুল, অবস্থা বেহাল। নাজেহাল হয়ে আমি ঢুকে পড়ি কাছের ছোটভাইয়ের বাসায়, সে দ্রুত গেট বন্ধ করে দেয়, প্ৰাণে রক্ষা পাই। আমার লোভ হিমালয়সম, এত নিৰ্লজ্জ তাড়ানি খেয়েও মাঠটাৱ উত্তরদিকের কিছুটা জায়গা আমার বস্তিসহ দখলে রাখি। সেখানে কাচা পায়খানার গায়ে আলকাতরা দিয়ে লেখাই এই জায়গার মালিক তরমুজ আলী। রাজ্য হারিয়ে নখদন্তহীন নেকড়ে তরমুজ আলী নিরবে ফুসতে থাকি। অপমানের সে কি তীব্রদহন, রাতে আমার চোখে ঘুম আসতনা। মনে মনে বলতাম, হারামজাদা নজির উদ্দিন রে, আমার যদি তোর মত ক্ষমতা থাকত, তোর মত শক্ত গডফাদায় থাকত, তবে কুরবাণীর পশুর মত তোকে কেটে টুকরো টুকরো করে আমার কুত্তাদেরে খাইয়ে দিতাম। দেখিয়ে দিতাম কার সাথে পাজ্ঞা ধরছিস।
বাংলাদেশের রাজনীতির ঝড়ের মাঠে হঠাৎ করে এলো ওয়ান ইলেভেন, প্ৰচন্ড এক প্ৰলয়ঙ্করী ভূমিকম্প। সারা বাংলাদেশে অবৈধ দখল হতে সরকারি জমি উদ্ধারে সেনাবাহিনী নামলো। সহসা আমার প্রতিও নাযেল হলো আজ্রাইল যৌথবাহিনী, তারা সরকারি রাস্থা দখল করে নিৰ্মিত আমার মাৰ্কেটটির অর্ধেক ভেঙ্গে ফেলার নিৰ্দেশ দিল। তাদের চোখে ধূলো দিতে সামান্যই ভাঙ্গলাম। পরদিন আবার আসল তারা, মার্কেটটি ভেঙ্গে ফেলতে এবার বুলডোজার তাক করল। যৌথবাহিনী বড়ই নিষ্ঠূর, ওদের কোন দয়ামায়া নাই। ওরা নাছুড়বান্দা, আমাকে দিয়ে আমার বহুকষ্টে গড়া চারতলা মাৰ্কেটটির সামনের বারান্দা ভাঙতে বাধ্য করল।
শ্রমিকরা ঢালাই ভাঙছে আর তাদের হাতুড়ির প্রতিটি আঘাত যেন সশব্দে আমার বুকে কামানের গোলার মত বিদ্ধ হচ্ছে। তীব্ৰ যন্ত্ৰণায় বিছানা নেই। ডায়বেটিস ও প্রেসার বেড়ে উচ্চসীমা অতিক্ৰম করে। ছেলেরা দেখলো বিপদ, বাপকে বাঁচানো যাবেনা, তাই আমাকে বাচাতে তারা পাশে আরেকটি ভবন নির্মাণ শুরু করে। ওরা সান্তনা দিয়ে বলল, একটা ভবন গেছেতো কি হয়েছে, আমরা আরেকটি বানিয়ে দিচ্ছি। তাদের এই উপহার আমাকে এযাত্ৰায় বাঁচিয়ে দেয়। নতুবা ভবনশোকে নিৰ্ঘাত মারা যেতাম।
যৌথবাহিনীর রক্তচক্ষু হতে বাঁচতে ড্রাইভার ও বান্দিরপুত গোলকে দৌড়ে পাঠাই, তারা আমার অপদখলি বস্তির পায়খানার গায়ে লিখা 'এই জায়গার মালিক তরমুজ আলী,' কাদার অন্তরণে লেপে দেয়। দুদিন পর শুনি হৈচৈ চেচামেচি, বাচ্চারা আনন্দ চিৎকার দিচ্ছে আইলোরে, আইলোরে, চেয়ে দেখি বুলডোজার নিয়ে আসছে আজরাইল যৌথবাহিনী। আমার বুক ধড়ফড়িয়ে উঠে, ভয়ে পা দু'টি কাঁপতে থাকে। এবার বাঁচি কেমন করে। প্ৰবল বর্ষণে যে কাদা ধুয়ে পায়খানার গায়ে আবার বেরিয়ে এসেছে 'এই জায়গার মালিক তরমুজ আলী।' তখনই সামনের পনের বিশজন লোক লাগিয়ে চোখের পলকে বস্তিসহ পায়খানাটি ভেঙ্গে চুরমার করে দেই। সব হারাণোর যন্ত্ৰণায় একটু আনন্দ পাই, যখন দেখি আমার প্রাণের শত্ৰূ দখলদার নজির উদ্দিনের ঘর ও সাইনবোৰ্ড যৌথবাহিনী ভেঙ্গে ফেলেছে। আরেকবার সুখ পাই, যখন শুনি নজির উদ্দিন বিশ্বনাথীর গডফাদার ই আলী ঢাকায় চিরদিনের জন্য গুম হয়ে গেছে।
সাগরদিঘির পশ্চিম সীমানা দিয়ে বয়ে গেছে এক ছড়া। এই ছড়া বর্ষাকালে শহরের উত্তরের চাবাগানের স্বচ্ছ জলরাশি বয়ে নিয়ে যায় সুরমায়। শীত-গ্রীষ্ম-বসন্তে টিলার বালিচোষা পরিষ্কার পানির ক্ষীণ জলধারা বইতো এছড়ায়। সাগরদিঘির আদি বাসিন্দা মনিপুরীরা এই ছড়ার স্ফটিক জলে তাদের স্নান ও গৃহস্থলী কাজ সেৱে নিত। আজ এই ছড়া দিয়ে বয় ময়লার বিষাক্ত স্রোত। ছড়াটির পারঘেষে প্ৰায় দেড়বিঘা জায়গায় মনিপুরিদের প্ৰাচীন শ্মশান, যুগযুগ ধরে এখানে মাটির সাথে মিশে আছে তাদের দেহাবশেষের ছাই। আমার লোভের জিহবা লকলক করে উঠে। কীর্তিমান তরমুজ আলীর কীৰ্তির ভান্ডারে জমা হয় আরেক সোনায় মেডেল। একদিন আমি শ্মশানটা দখল করে নেই। মৎস্যন্যায়ের দেশ বাংলাদেশ, এখানে বোয়াল-মাছেরা সবসময় চুনোপুটি গিলে খায়, চুন হতে পান খসলে চুনোপুটিদের বিচার আচারও সারে বিচারপতি চিতল বোয়ালেরা। এটাই চিরন্তন নিয়ম। মনিপুরি পিপীলিকারা আমার ভয়ে শ্মশানের বহিরে ছড়াপারে তাদের পবিত্ৰ লাশ পুড়াতো, আর আমি বছরের পর বছর তাদের পূর্বপুরুষদের দেহভষ্মের উর্বর মাটিতে সোনার ফসল ফলাই, তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সেই শস্য খাই।
জবরদখল আমার আজন্ম স্বভাব। এখানে এসেই আমার দখলি জমি বৃদ্ধির লোভ জাগে। বৰ্ষায় ছড়ার মধ্যে বাশ দিয়ে বাঁধ দেই, যেন অন্যপার ভেঙ্গে আমার দখলি জমি বৃদ্ধি পায়। বাশগুলোও ওপার হতে জুরপুর্বক কেড়ে নিতাম। ওরা বকাবকি করলে ছেড়ে দিতাম আমার বংশীয় বানী-চিরন্তনী, 'ও চুদাউরির পুড়িনরে তোমরারে দেখে নেবো।' আর ওপারের মেয়েরা বাশঝাঁড়ের আড়াল হতে তাদের কাপড়তলার সব সুন্দর সুন্দর শ্ৰতিমধুর পবিত্ৰবানী আমাকে বৰ্ষণ করতো। ইতিমধ্যে সরকার বদল হয়। আমি ও ছাত্রনেতা আমার পুত্ররত্নরা, এই দুই প্রজন্মের মহান গডফাদার মন্ত্রী আ সা আ চাচামিয়া ভোটের পরদিনই ধপাস। আমার ক্ষমতা উদাও। আমার লোকদের বেহাল অবস্থা। পুলিশ তাড়াচ্ছে, তারা পালাচ্ছে। এবার সরকার শ্মশানঘাট প্ৰকৃত মালিক মনিপুরিদের হাতে তুলে দেয়।
গেট ও বাউন্ডারি ওয়াল নিৰ্মাণ করে আমাকে ঘাড়ে ধাক্কা মেরে ওখান হতে বের করে দেয়। এবার জমিদারির আরেক অংশ হারালাম। রাজ্য হারিয়ে নির্লজ্জ আমি পানবিড়ির বাস্কসহ একজন লোককে শ্মশানগেটে কয়েকদিন বসিয়ে দখল রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করি। একদিন দেখি গেটে মোটা একখান তালা ঝূলছে। পুলিশ এসে আমার লোকটাকে গলাধাক্কা মেরে গেট হতে তুলে দেয়। হায়রে বেহায়া লোভ আমার, তবে হাল ছাড়ি।
আপনারা হয়তো ভাবছেন তরমুজ আলী লোকটার জীবনটা কেমন, আসলে তার জিন্দেগি একদম সাদামাঠা। সেখানে কোন জৌলুস নেই, সানশওকত নেই। একটি সাধারণ পাকাঘরে আজীবন বসবাস করি। বৰ্ষা এলে আঙ্গিনায় হাঁটুপানি জমে যেত। ঘরেও পানি ঢুকতো। আমার ভাড়াটিয়া চায়ের দোকানে বসে মজুরদের সাথে মাগনা চা পান করি এবং আমার দখলি বস্তির কেরান প্ৰজাদের রিকশায় বিনে পয়সায় ঘুরে বেড়াই। লোভের বিষাক্ত নেশা আমাকে হাড়কিপ্টে বানায়। আমার বড় আদরের টাকা খরচ হলে কলিজায় বিধতো। তাই অল্প-সল্প খেয়েপরে কেবল জমাতাম। আমি একজন নেশাখোর, আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি গাঞ্জা খাই, নয়তো হিরোইন। আসলে আমি একজন ভয়ঙ্কর নেশাগ্ৰস্ত জমিখোর কাম টাকাখোর। কালিবাড়িতেও একটা বড় সরকারি টিলা দখল করি। সরকার বদল হলে ধরে রাখতে পারিনি।
আমি আল্লার মাল তরমুজ আলী, আমার ইচ্ছে হয় আল্লার দুনিয়ার পুরোটা দখল কইরা ফেলি। সাগরদিঘিরপারের সরকারি সড়কের সব ফলজ ও বনজ বৃক্ষ, আম, কাটাল, জাম, বরই সব দখল করি। সরকারি সড়কের বৃক্ষডাল কাটা হলে ডালগুলো আমি বস্তিবাসীর কাছ হতে কেড়ে নেই। পরে বিক্রি করে দুচার টাকা আয় করি। আশপাশের মানুষের বালি, ইটের টুকরা প্ৰকাশ্যে কিংবা গোপনে বাদিপুত্ৰ গোলকে পাঠিয়ে সংগ্ৰহ করি। আমার ট্ৰাক লোকের পণ্য পরিবহন করলে আমার বাসার সামনে প্ৰতি ট্রিপে তরমুজ আলীর জন্য নুড়ি বালি পাতর কিছু একটা ফেলে দিত।
আমার লাটিয়াল গোলের কিছু ইতিকথা বলব। চাবাগান এলাকায় এক বাদি পোষি, আরেক পোষা গোলামের সাথে বিয়ে দেই। পেটে বাচ্চা পয়দা করে গোলামটি পালায়। বাদি এক কমবক্ত বাচ্চা প্ৰসব করে। মাকড়সা জন্ম নিয়ে মাকে খেয়ে ফেলে, আর ঐ অলক্ষি বদমায়েশটা মাকে খেয়ে তারপর জন্মালো। ওকে আমি গৃহভৃত্য ও লাটিয়াল হিসাবে গড়ে তুলি, ওকে পরিণত করি গ্লাডিয়াতুর লড়াইয়ের জানোয়ার ষাড়-যুদ্ধায়। আমি আদেশ কারামাত্ৰই বলদটা পাতাকুড়ানী লোক, বস্তির ভিক্ষুক, রিকশাওয়ালা, ছিচকে চোরসহ সবার উপর তার লম্বা হাত উঠায়। লোকজনকে খোটায় বেধে মারতে শুরু করে, এমন বিনে পয়সার গোলাম ও লাটিয়াল কয়জনের ভাগ্যে জুটে।
একবার সিটি কৰ্পোরেশনের কিছু লেবার বেওয়ারিশ কুকুর নিধনে বের হয়। আমার বাসার সামনে ওরা একটি ধরতেই মনে হল আমার কুকুর। গোলউল্লাকে আদেশ দেই, গোলউল্লা গল্লালাগা। ওমনি সে জল্লাদটা লাটি মেরে লিকলিকে রোগা লোকদুটিকে অর্ধমৃত করে ফেলে। সেদিন সিটি কমিশনার এসে যদিনা বাচাতো তবে ঐ গোয়ার গর্দভটা লোক দুটিকে খুন করেই ফেলতো। ইতিমধ্যে আমার গোয়েন্দাৱা খবর দেয় লেবাররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। তারা শিঘ্রই মিছিল নিয়ে এসে আমার সমীপে মানবমল ও বিষ্টা বর্ষণ করবে। এবাৱ প্ৰমাদ গুণি। সুকৌশলে নেতাদের হাতকরি, পরদিন সিটি লেবারদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাই ও মোঠা অঙ্কের আক্কেল সেলামি দিয়ে রক্ষা পাই।
লজ্জা ঈমানের অর্ধেক- আল হাদিস। অথচ বিধাতা ঐ লজ্জা নামক জিনিসটি আমাকে আদৌ দেননি। বিধাতাকেইবা দুষবো কেমনে। আসলে সৰ্বনাশা লোভলালসা আমার ভিতরটাকে এমনভাবে পূৰ্ণকরে রেখেছে যে এখানে লাজলজ্জা থাকার মত কোন জায়গা আর অবশিষ্ট নেই। শেষমেষ চেয়ে দেখি আমায় সুস্থ কুকুরটি এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে, আর পিঠে তুলে লেজ নাড়াচ্ছে, আসলে এরা যে কুকুরটি ধরেছিল ওটা আদৌ আমার নয়, রাস্থার বেওয়ারিশ।
শহরের ভদ্রলোকেরা আমাকে একটা বাজে লোভী খাটাস ভাবে, তাতে আমার অহংকার আর বেড়ে যায়, নিজেকে মনে হয় হিন্দি ছবির খলনায়ক, এক দুৰ্দান্ত মাস্তান। হামলা মামলা খুন- সব কাজের কাজি আমি। মামলার ভয়, সে তো ব্যাঙের সর্দি, হামলা মামলার সমুদ্রে সাতরাতেই আমার আনন্দ। জবরদখল মারামারি আইন আদালত ছাড়া কি জীবন চলে, জীবনে কি উঠে আসা যায়। আমি ঐ পথ ধৱেই হাটি, জিরো হতে আজ হিরো হই। আর তা সম্ভব হয়েছে সবসম্ভবের দেশ, এই বাংলাদেশে।
লোকে বলতো আমি নাকি সিংহ রাশির জাতক, ঐ রাশির জাতকের সাথে পেরে উঠা যায় না। কেউবা বললো মানবমলে বেশীদিন পা রাখতে নেই। দু'চার জন ভীরুকে বন্দুকের নল দেখাই, দু'একটা গোল্লা ফোঁটাই, তারা পানির দরে জমিজমা সব আমার কাছে বিক্রি করে পালিয়ে গেল। বাকিরা মামলা করল, পেরে উঠতে নাপেরে শেষমেষ হালছেড়ে রনভঙ্গ দিল।
আমি বেটে হালকা পাতলা গঠনের লোক। কল্লাটা ছোট, থুতনিতে অল্পসল্প ছাগলি দাড়ি। আমার চেহারায় নেই কোন আভিজাত্য। লুঙ্গি পরে যখন হাঁটি অচেনা লোকেরা ভাবে গ্ৰাম হতে সদ্য আসা কোন এক হতদরিদ্র দিনমজুর হাঁটছে। যারা চেনে তারা বলত, এ যে দেখছি বাট্টি, শিয়তানের লাট্টি। যে যাই বলুক তাতে আমার কিছুই যায় আসেনা। আমি মানব বজ্যের তলায় লুকিয়ে থাকা আধুলিটাও জিহবা দিয়ে চেটে চেটে বের করি। বুড়ো হয়েছি কিন্তু শেষবেলায় এসেও ভাল হতে পারি নি। আইনে মানেনা তারপরও একটু ভাল ভাড়া পাওয়া যায় তাই আমার দখলে থাকা লন্ডনি ভাইয়ের জায়গায় বসিয়ে দিয়েছি গাড়ি মেরামত কারখানা, কাট কারখানা ও দুটি ওয়েল্ডিং সপ। সামনের সরকারি রাস্থার অপদখলি জমিতে চলে কারখানার কাজ ও মালামাল রাখা। চারপাশে আবাসিক বাসা, তীব্ৰ শব্দ দূষনে মানুষ অতীষ্ট, খোলা রাস্তায় ওয়েল্ডিংইয়ের তীব্ৰ আলোয় পথিক শিশুদের চোখ যাচ্ছে, ছাত্ররা পড়তে পারছেনা। দিনরাত লোহার রড পিটুনীর বিকট শব্দে রোগীরা ঘুমাতে পারছেনা, মানুষের চোখ-কান নষ্ট হচ্ছে, আর আমি তখন পিছনে আমার রাজসিংহাসনে বসে প্ৰাচীন রোমান সম্রাট নিরোর বাঁশী বাজাই। বাঁশিতে অগ্নিসূর উঠাই। মহল্লাবাসীর পছন্দ নয় তারপরও রাস্তার পাশের ভবনে আমি ভাড়া দেই ছাত্ৰমেস, তৈরি করি মস্তানখানা ও গ্যাঞ্জাম আখড়া। একটি গানের কলি মনে পড়ে গেল "কাউয়ায় কমলা খাইতে জানেনা।" আমার পোষ্য কিছু দুবৃত্ত ও বাজে মাস্তান বাসার সামনে মটরসাইকেল নিয়ে সারাদিন তিরিং বিরিং করে বেড়ায়। আগের জামানায় আমার সীমানায় কিছু ঢুকলে অদৃশ্য হয়ে যেত, তা মোরগ-হাস যাই হোক।
আমি হীন, আমি নীচ, আমাকে উপেক্ষা করবে তোমরা, পাশের ভদ্ৰলোকের বাসার বিয়ের দাওয়াত পাইনি। আমি চটে যাই, তার মেহমানদের উপর হামলা করি, ককটেল ফোটাই। আমি একটা ঘৃন্য বাজে আদমি, তাই দাওয়াত দাওনি, এবার ঠেলা সামলাও।
আশপাশে লন্ডনিরা জমি কিনছে। তারা লন্ডনে যাওয়ামাত্ৰ আমি ঢুকে পড়ি ও তাদের সফটাঘর দখল করে ভাড়া দেই। সাফটার দরিদ্ৰ লোকদেরে গৃহভৃত্যে খাটাই, লাউ পেপে চাষ করাই ও ষোল আনা কেড়ে খাই। সামনের কয়েক বিঘা সরকারি জায়গা দখল করি ও বস্তি নিৰ্মান করে ভাড়া দেই। সামনের ভাড়াটিয়া ও হতদরিদ্ৰ বস্তিবাসীরা আমার নানকার প্রজা। আমি এ তল্লাটের অঘোষিত জমিদার। আমার জীবনটা কেটেছে এক জমিদারি জমিদারি মুডে। বোকা লন্ডনিরা দেশে এসে আমাকে ভ্যাট দেয় তারপর জমির দখল ছাড়ি।আমার সুদীৰ্ঘ্য জীবন ঝুড়িতে রাখা আছে অনেক অনেক কাহিনী। দু'চারটাতো আপনাদেরকে শুনাতেই হয়। আমার বাসার সামনে সরকারের বেশ কয়েক বিঘা জমি আমি চল্লিশ বছর দখল করে রাখি। অবৈধ বস্তি নিৰ্মান করে ভাড়া আদায় করি। এখানে প্ৰচুর মাছ হত। বস্তির কেউ মাছ ধরলে ঈগলের মত হানা দিয়ে সব মাছ কেড়ে নিতাম। আমার বাপদাদারা গরুর খেদমতে জীবন ব্যয় করেন। আমি শহরে এসেও পূৰ্বপুরুষের চিহ্ন গরুপোষা ছাড়তে পারিনি। দুধ বিক্ৰি করি, স্বভাবদোষে পানিও মেশাই। নেকড়েরা তাদের রাজ্যে কাউকে ঢুকতে দেয়না। একবার আমার দখলি রাজ্যে একলোককে ঘাস কটিতে দেখে কৰ্কশ গলায় গালী দেই- 'চুতমারানির পোয়া।' আরেকবার লম্বা ঘাস দেখে একপাল ছাগল নিয়ে ঢুকে পড়ে ভাটিপাড়ার বুড়ো রাখাল। এবারো নেকড়ে তরমুজ আলীর তাড়া খেয়ে ছাগলসহ বুড়োটা উদ্ধশ্বাসে দৌড়ে পালায়। ডানবাম সবকিছুর জমিদার লাটখা আমি তরমুজ আলী এখানে আর কারও স্থান নেই।
আমার চাকর বাকর ড্ৰাইভার রাখালেরা বাসার সামনের একশত বর্গহাত জায়গার একএক জন সম্ৰাট আকবর। যে নিঃশ্ব লোকগুলোৱ চৌদ্দগোষ্টি মানুষের লাত্থিগোত্ত খেয়ে গ্ৰামে জীবন কাটিয়েছে, তাৱা আমার নওকর হয়ে এক একটা আস্ত মাস্তানে পরিণত হয়। ড্ৰাইভাৱ পাশের বাসার পাহারাদারকে মারধর করে, আরেক বাসার সামনে সরকারি রাস্থায় মনিবের জবর দখলি গাছের আমে এক নিৰ্মাণ শ্ৰমিক হাত দিলে জুরে চপেটাঘাত মেরে বসে আমার গরুর রাখাল। আমি জমিদার লাটবাহাদুর তরমুজ আলী এই লোকগুলোকে ক্ষমতাৱ সুমিষ্ট শরাবান তহুরা পান করাই। আমি আমার পোষালোকদেরে এক একটা গোয়ারগোবিন্দে পরিণত করি। এরা হল আমার চাকর কাম লাটিয়াল। ভদ্রলোক, জ্ঞানীলোক, মানীলোক আমার কোন বাতবিচার নেই। সবার সাথে ইতরামি করে আমি দারুণ আনন্দ উপভোগ করি।
একবার আমার সাম্রাজ্যে এক সিংহ হামলে পড়ে। বাঘের উপর টাগ, আর সাপের উপর বেজী ছড়ি ঘুরায়৷ এবার এই সিংহটা আমার উপর শুধু ছড়িই ঘুৱালোনা, আমার বহু কালের রাজ্যটা দখল করে নিল। সিংহটা লন্ডনি নজির উদ্দিন, সে বিশ্বনাথের লোক। ঐদিন আমার বাহাদুর পাইক পেয়াদারা আমাকে নজির উদ্দিনের অসংখ্য মারমুখী যুদ্ধাৱ তরবারির কোপের মুখে ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায়। হিটলার নজির উদ্দিন বীরবিক্ৰমে আমার নামফলক উপড়ে ড্রেনে ছুড়ে ফেলে দেয়। সেখানে তার নামখচিত মালিকানা সাইনবোর্ড স্থাপন করে, 'এই জায়গার মালিক নজির উদ্দিন।' আমার হালত তবদুল, অবস্থা বেহাল। নাজেহাল হয়ে আমি ঢুকে পড়ি কাছের ছোটভাইয়ের বাসায়, সে দ্রুত গেট বন্ধ করে দেয়, প্ৰাণে রক্ষা পাই। আমার লোভ হিমালয়সম, এত নিৰ্লজ্জ তাড়ানি খেয়েও মাঠটাৱ উত্তরদিকের কিছুটা জায়গা আমার বস্তিসহ দখলে রাখি। সেখানে কাচা পায়খানার গায়ে আলকাতরা দিয়ে লেখাই এই জায়গার মালিক তরমুজ আলী। রাজ্য হারিয়ে নখদন্তহীন নেকড়ে তরমুজ আলী নিরবে ফুসতে থাকি। অপমানের সে কি তীব্রদহন, রাতে আমার চোখে ঘুম আসতনা। মনে মনে বলতাম, হারামজাদা নজির উদ্দিন রে, আমার যদি তোর মত ক্ষমতা থাকত, তোর মত শক্ত গডফাদায় থাকত, তবে কুরবাণীর পশুর মত তোকে কেটে টুকরো টুকরো করে আমার কুত্তাদেরে খাইয়ে দিতাম। দেখিয়ে দিতাম কার সাথে পাজ্ঞা ধরছিস।
বাংলাদেশের রাজনীতির ঝড়ের মাঠে হঠাৎ করে এলো ওয়ান ইলেভেন, প্ৰচন্ড এক প্ৰলয়ঙ্করী ভূমিকম্প। সারা বাংলাদেশে অবৈধ দখল হতে সরকারি জমি উদ্ধারে সেনাবাহিনী নামলো। সহসা আমার প্রতিও নাযেল হলো আজ্রাইল যৌথবাহিনী, তারা সরকারি রাস্থা দখল করে নিৰ্মিত আমার মাৰ্কেটটির অর্ধেক ভেঙ্গে ফেলার নিৰ্দেশ দিল। তাদের চোখে ধূলো দিতে সামান্যই ভাঙ্গলাম। পরদিন আবার আসল তারা, মার্কেটটি ভেঙ্গে ফেলতে এবার বুলডোজার তাক করল। যৌথবাহিনী বড়ই নিষ্ঠূর, ওদের কোন দয়ামায়া নাই। ওরা নাছুড়বান্দা, আমাকে দিয়ে আমার বহুকষ্টে গড়া চারতলা মাৰ্কেটটির সামনের বারান্দা ভাঙতে বাধ্য করল।
শ্রমিকরা ঢালাই ভাঙছে আর তাদের হাতুড়ির প্রতিটি আঘাত যেন সশব্দে আমার বুকে কামানের গোলার মত বিদ্ধ হচ্ছে। তীব্ৰ যন্ত্ৰণায় বিছানা নেই। ডায়বেটিস ও প্রেসার বেড়ে উচ্চসীমা অতিক্ৰম করে। ছেলেরা দেখলো বিপদ, বাপকে বাঁচানো যাবেনা, তাই আমাকে বাচাতে তারা পাশে আরেকটি ভবন নির্মাণ শুরু করে। ওরা সান্তনা দিয়ে বলল, একটা ভবন গেছেতো কি হয়েছে, আমরা আরেকটি বানিয়ে দিচ্ছি। তাদের এই উপহার আমাকে এযাত্ৰায় বাঁচিয়ে দেয়। নতুবা ভবনশোকে নিৰ্ঘাত মারা যেতাম।
যৌথবাহিনীর রক্তচক্ষু হতে বাঁচতে ড্রাইভার ও বান্দিরপুত গোলকে দৌড়ে পাঠাই, তারা আমার অপদখলি বস্তির পায়খানার গায়ে লিখা 'এই জায়গার মালিক তরমুজ আলী,' কাদার অন্তরণে লেপে দেয়। দুদিন পর শুনি হৈচৈ চেচামেচি, বাচ্চারা আনন্দ চিৎকার দিচ্ছে আইলোরে, আইলোরে, চেয়ে দেখি বুলডোজার নিয়ে আসছে আজরাইল যৌথবাহিনী। আমার বুক ধড়ফড়িয়ে উঠে, ভয়ে পা দু'টি কাঁপতে থাকে। এবার বাঁচি কেমন করে। প্ৰবল বর্ষণে যে কাদা ধুয়ে পায়খানার গায়ে আবার বেরিয়ে এসেছে 'এই জায়গার মালিক তরমুজ আলী।' তখনই সামনের পনের বিশজন লোক লাগিয়ে চোখের পলকে বস্তিসহ পায়খানাটি ভেঙ্গে চুরমার করে দেই। সব হারাণোর যন্ত্ৰণায় একটু আনন্দ পাই, যখন দেখি আমার প্রাণের শত্ৰূ দখলদার নজির উদ্দিনের ঘর ও সাইনবোৰ্ড যৌথবাহিনী ভেঙ্গে ফেলেছে। আরেকবার সুখ পাই, যখন শুনি নজির উদ্দিন বিশ্বনাথীর গডফাদার ই আলী ঢাকায় চিরদিনের জন্য গুম হয়ে গেছে।
সাগরদিঘির পশ্চিম সীমানা দিয়ে বয়ে গেছে এক ছড়া। এই ছড়া বর্ষাকালে শহরের উত্তরের চাবাগানের স্বচ্ছ জলরাশি বয়ে নিয়ে যায় সুরমায়। শীত-গ্রীষ্ম-বসন্তে টিলার বালিচোষা পরিষ্কার পানির ক্ষীণ জলধারা বইতো এছড়ায়। সাগরদিঘির আদি বাসিন্দা মনিপুরীরা এই ছড়ার স্ফটিক জলে তাদের স্নান ও গৃহস্থলী কাজ সেৱে নিত। আজ এই ছড়া দিয়ে বয় ময়লার বিষাক্ত স্রোত। ছড়াটির পারঘেষে প্ৰায় দেড়বিঘা জায়গায় মনিপুরিদের প্ৰাচীন শ্মশান, যুগযুগ ধরে এখানে মাটির সাথে মিশে আছে তাদের দেহাবশেষের ছাই। আমার লোভের জিহবা লকলক করে উঠে। কীর্তিমান তরমুজ আলীর কীৰ্তির ভান্ডারে জমা হয় আরেক সোনায় মেডেল। একদিন আমি শ্মশানটা দখল করে নেই। মৎস্যন্যায়ের দেশ বাংলাদেশ, এখানে বোয়াল-মাছেরা সবসময় চুনোপুটি গিলে খায়, চুন হতে পান খসলে চুনোপুটিদের বিচার আচারও সারে বিচারপতি চিতল বোয়ালেরা। এটাই চিরন্তন নিয়ম। মনিপুরি পিপীলিকারা আমার ভয়ে শ্মশানের বহিরে ছড়াপারে তাদের পবিত্ৰ লাশ পুড়াতো, আর আমি বছরের পর বছর তাদের পূর্বপুরুষদের দেহভষ্মের উর্বর মাটিতে সোনার ফসল ফলাই, তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সেই শস্য খাই।
জবরদখল আমার আজন্ম স্বভাব। এখানে এসেই আমার দখলি জমি বৃদ্ধির লোভ জাগে। বৰ্ষায় ছড়ার মধ্যে বাশ দিয়ে বাঁধ দেই, যেন অন্যপার ভেঙ্গে আমার দখলি জমি বৃদ্ধি পায়। বাশগুলোও ওপার হতে জুরপুর্বক কেড়ে নিতাম। ওরা বকাবকি করলে ছেড়ে দিতাম আমার বংশীয় বানী-চিরন্তনী, 'ও চুদাউরির পুড়িনরে তোমরারে দেখে নেবো।' আর ওপারের মেয়েরা বাশঝাঁড়ের আড়াল হতে তাদের কাপড়তলার সব সুন্দর সুন্দর শ্ৰতিমধুর পবিত্ৰবানী আমাকে বৰ্ষণ করতো। ইতিমধ্যে সরকার বদল হয়। আমি ও ছাত্রনেতা আমার পুত্ররত্নরা, এই দুই প্রজন্মের মহান গডফাদার মন্ত্রী আ সা আ চাচামিয়া ভোটের পরদিনই ধপাস। আমার ক্ষমতা উদাও। আমার লোকদের বেহাল অবস্থা। পুলিশ তাড়াচ্ছে, তারা পালাচ্ছে। এবার সরকার শ্মশানঘাট প্ৰকৃত মালিক মনিপুরিদের হাতে তুলে দেয়।
গেট ও বাউন্ডারি ওয়াল নিৰ্মাণ করে আমাকে ঘাড়ে ধাক্কা মেরে ওখান হতে বের করে দেয়। এবার জমিদারির আরেক অংশ হারালাম। রাজ্য হারিয়ে নির্লজ্জ আমি পানবিড়ির বাস্কসহ একজন লোককে শ্মশানগেটে কয়েকদিন বসিয়ে দখল রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করি। একদিন দেখি গেটে মোটা একখান তালা ঝূলছে। পুলিশ এসে আমার লোকটাকে গলাধাক্কা মেরে গেট হতে তুলে দেয়। হায়রে বেহায়া লোভ আমার, তবে হাল ছাড়ি।
আপনারা হয়তো ভাবছেন তরমুজ আলী লোকটার জীবনটা কেমন, আসলে তার জিন্দেগি একদম সাদামাঠা। সেখানে কোন জৌলুস নেই, সানশওকত নেই। একটি সাধারণ পাকাঘরে আজীবন বসবাস করি। বৰ্ষা এলে আঙ্গিনায় হাঁটুপানি জমে যেত। ঘরেও পানি ঢুকতো। আমার ভাড়াটিয়া চায়ের দোকানে বসে মজুরদের সাথে মাগনা চা পান করি এবং আমার দখলি বস্তির কেরান প্ৰজাদের রিকশায় বিনে পয়সায় ঘুরে বেড়াই। লোভের বিষাক্ত নেশা আমাকে হাড়কিপ্টে বানায়। আমার বড় আদরের টাকা খরচ হলে কলিজায় বিধতো। তাই অল্প-সল্প খেয়েপরে কেবল জমাতাম। আমি একজন নেশাখোর, আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি গাঞ্জা খাই, নয়তো হিরোইন। আসলে আমি একজন ভয়ঙ্কর নেশাগ্ৰস্ত জমিখোর কাম টাকাখোর। কালিবাড়িতেও একটা বড় সরকারি টিলা দখল করি। সরকার বদল হলে ধরে রাখতে পারিনি।
আমি আল্লার মাল তরমুজ আলী, আমার ইচ্ছে হয় আল্লার দুনিয়ার পুরোটা দখল কইরা ফেলি। সাগরদিঘিরপারের সরকারি সড়কের সব ফলজ ও বনজ বৃক্ষ, আম, কাটাল, জাম, বরই সব দখল করি। সরকারি সড়কের বৃক্ষডাল কাটা হলে ডালগুলো আমি বস্তিবাসীর কাছ হতে কেড়ে নেই। পরে বিক্রি করে দুচার টাকা আয় করি। আশপাশের মানুষের বালি, ইটের টুকরা প্ৰকাশ্যে কিংবা গোপনে বাদিপুত্ৰ গোলকে পাঠিয়ে সংগ্ৰহ করি। আমার ট্ৰাক লোকের পণ্য পরিবহন করলে আমার বাসার সামনে প্ৰতি ট্রিপে তরমুজ আলীর জন্য নুড়ি বালি পাতর কিছু একটা ফেলে দিত।
আমার লাটিয়াল গোলের কিছু ইতিকথা বলব। চাবাগান এলাকায় এক বাদি পোষি, আরেক পোষা গোলামের সাথে বিয়ে দেই। পেটে বাচ্চা পয়দা করে গোলামটি পালায়। বাদি এক কমবক্ত বাচ্চা প্ৰসব করে। মাকড়সা জন্ম নিয়ে মাকে খেয়ে ফেলে, আর ঐ অলক্ষি বদমায়েশটা মাকে খেয়ে তারপর জন্মালো। ওকে আমি গৃহভৃত্য ও লাটিয়াল হিসাবে গড়ে তুলি, ওকে পরিণত করি গ্লাডিয়াতুর লড়াইয়ের জানোয়ার ষাড়-যুদ্ধায়। আমি আদেশ কারামাত্ৰই বলদটা পাতাকুড়ানী লোক, বস্তির ভিক্ষুক, রিকশাওয়ালা, ছিচকে চোরসহ সবার উপর তার লম্বা হাত উঠায়। লোকজনকে খোটায় বেধে মারতে শুরু করে, এমন বিনে পয়সার গোলাম ও লাটিয়াল কয়জনের ভাগ্যে জুটে।
একবার সিটি কৰ্পোরেশনের কিছু লেবার বেওয়ারিশ কুকুর নিধনে বের হয়। আমার বাসার সামনে ওরা একটি ধরতেই মনে হল আমার কুকুর। গোলউল্লাকে আদেশ দেই, গোলউল্লা গল্লালাগা। ওমনি সে জল্লাদটা লাটি মেরে লিকলিকে রোগা লোকদুটিকে অর্ধমৃত করে ফেলে। সেদিন সিটি কমিশনার এসে যদিনা বাচাতো তবে ঐ গোয়ার গর্দভটা লোক দুটিকে খুন করেই ফেলতো। ইতিমধ্যে আমার গোয়েন্দাৱা খবর দেয় লেবাররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। তারা শিঘ্রই মিছিল নিয়ে এসে আমার সমীপে মানবমল ও বিষ্টা বর্ষণ করবে। এবাৱ প্ৰমাদ গুণি। সুকৌশলে নেতাদের হাতকরি, পরদিন সিটি লেবারদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাই ও মোঠা অঙ্কের আক্কেল সেলামি দিয়ে রক্ষা পাই।
লজ্জা ঈমানের অর্ধেক- আল হাদিস। অথচ বিধাতা ঐ লজ্জা নামক জিনিসটি আমাকে আদৌ দেননি। বিধাতাকেইবা দুষবো কেমনে। আসলে সৰ্বনাশা লোভলালসা আমার ভিতরটাকে এমনভাবে পূৰ্ণকরে রেখেছে যে এখানে লাজলজ্জা থাকার মত কোন জায়গা আর অবশিষ্ট নেই। শেষমেষ চেয়ে দেখি আমায় সুস্থ কুকুরটি এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে, আর পিঠে তুলে লেজ নাড়াচ্ছে, আসলে এরা যে কুকুরটি ধরেছিল ওটা আদৌ আমার নয়, রাস্থার বেওয়ারিশ।
আমার আলী সাম্ৰাজ্যে অনেক মাগনা বাদি-গোলাম-লাটিয়াল দরকার। হারামজাদা গোলকে দুইবার বিয়ে দেই কিছু বাদি গোলাম পয়দার আশায়, কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। এই নামরদটা কোন বাচ্ছা পয়দা করতে পারেনি। দুই বউই এই নপুংশকটাকে ফেলে গোপনে পালায়। আমার কোন বিনিয়োগই কোনদিন বিফলে যায়নি অথচ ওই ধ্বজভঙ্গটার দুই দুইটি বিয়ের খরচ সম্পূৰ্ণটা গচ্ছা যায়।
বউ ও ছেলেদের যন্ত্ৰণায় অতীষ্ট হয়ে তাদের টাকায় একবার হজ্বে যাই। এসে দেখি আমার বারমাসী দুটি ব্যারাম লোভ ও গাট্টামী আদৌ কমেনি বরং আরব দেশের গরমে ও অনাদ্র বাতাসে তা আর কয়েক ডিগ্ৰি বেড়ে গেছে। আমি মক্কা ফেরত হাজি তরমুজ আলী হয়েও আগে যে লাউ ছিলাম, সেই কদুই রয়ে পেলাম। শয়তানের শিরোমনি পাপিষ্ট কলবে আল্লাহতায়ালা মোহর মেরে দেন, তাই বুড়ো বয়সে তার মেহমান হয়েও হেদায়েত আমার ভাগ্যে জোটে নাই। এসেই আমি হাজি তরমুজ আলী গোলকে দিয়ে একলোকের কিশোর পুত্ৰকে পেঠাই। পরদিন আমাকে ধরতে র্যাব আস। ধরা পড়ামাত্ৰই সাঠাং হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ি। চেলাচামুন্ডারা মাথায় পানি ঢালতে থাকে। আমি একজন দক্ষ অভিনেতা, এমন অভিনয় করি যে হার্টফেল করে মারা যাচ্ছি। ছকরাতুল মউতে পড়া বৃদ্ধ লোকটাকে ফেলে রেখে র্যাব পাততাড়ি গোটায়। এ যাত্ৰায় খেকশিয়ালের বুদ্ধি আমাকে বাচিয়ে দেয়।
আমি এখানে শুভাগমনের কয়েক বছর পর ভাটির একজন হাবাগোবা মালদার লন্ডনি এপাড়ায় তিন চার বিঘা ধানি জমি কিনে। সে লন্ডনে গেলে আমি এই জমিতে চুপে চুপে ঢুকে যাই। বাশ-টিনের অনেকগুলো সাফটা বানিয়ে ভাড়া দেই। বছরের পর বছর এই জমি ভোগ করি। মানুষকে বলতাম, এটা আমার শালার জায়গা, আমি তাকে কিনে দিয়েছি, এখন পাহারা দিচ্ছি। অনেক বছর পর আমার বুড়ো বয়সে লন্ডনি শালা এলেন গোপনে জমিটি বিক্রি করে দিতে। লন্ডনির ক্রেতারা আসে, আমার লালচোখ দেখে তারা পালায়। কার এত বুকের পাটা আমার দখলি জমি কিনে মাথা ঢুকায়। জল অনেক ঘোলা করে লন্ডনি বুঝলেন, এজমি বেচতে হলে তরমুজ আলীকে দরকার। এলেন তিনি নতজানু হয়ে, বললেন হাজিসাব, জমিটা আমি বিক্রি করে দেবো, আপনার সাহার্য্য চাই। বিনিময়ে আপনাকে আমি খুশী করব। আমি রনহুঙ্কার দিলাম, আপনার জমি আমি এত বছর পাহারা দিয়েছি, আলগে রেখেছি, নইলে চোর-ডাকাতরা কবে যে নিয়ে যেত, এই জমি কি ফিরে পেতেন? আপনার এত উপকার করলাম, আর বলছেন খুশী করব। আমি কি ফকিরনির পুত, আপনি আমাকে ভিক্ষে দিয়ে খুশী করবেন। এবার বিষয়টা খোলাসা করুন। আমার দুইটি শর্ত একঃ জমি বিক্রির টাকা অর্ধেক আপনার, বাকী অর্ধেক আমার। দুইঃ জমি বিক্রি করব আমি, আপনি কেবল এসে সই করবেন। লন্ডনি আমতা আমতা করতে লাগলেন। হুমকি দিলাম, আমার দলিল আছে, দখল আছে, জমি কিন্তু হয়ে যাবে আমার। বেশি তেড়িবেড়ি করবেন না জনাব, শেষে টেকা যাবে, ডেকাও যাবে। হুমকিতে কাজ হল, জনাবের টনক লড়লো, ভাটির লন্ডনি রাজি হলেন। তবে রে এত বিশাল জায়গা কিনবে কে? জমির দাম যে আকাশ ছোঁয়া। এবার পাঁচ ছয় ডেসিমেলের বেশকিছু প্লট করলাম। বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আসে আমার এই কৌশলী হাতে। জমি মালিক লন্ডনি শালাকে কিছু ভিক্ষা ছুড়ে দিলাম। শালা ভাবল, অনেক পেয়েছি তাও যদি ভাগ্যে না জুটিত, পাছায় যে তরমুজ-বাশ ঢুকে আছে।
সিলেট শহরের এক গুণ, প্ৰতি বছরে জমির দাম বেড়ে হয় দুইগুণ। জীবনভর ছলে বলে কৌশলে কুক্ষিগত করা জমি বিক্রি করে এবার কোটি কোটি টাকা হাতে আসে। জিন্দেগির শেষ সীমানায় এসে হাম বনেগা কোটিপতি। নিমিষেই চারতলা ছয়তলা কয়েকটি সুবিশাল ভবনের মালিক হই। আমি আজ মহারাজাধিরাজ, আমি কাউকে পরওয়া করিনা, এমন কি 'ছেলেদেরও টাকার ধার ধারিনা, আমার কি টাকা নেই।' আমার এমন কথাবাৰ্তা শুনে পাশের মোল্লাব্যাটা অনুচ্চ শব্দে বলল, মানব বজ্যের ময়লা দুৰ্গন্ধময় ট্যাঙ্কিতে ডুবসাতার দিয়ে উঠানো এমন অৰ্থসম্পদে পেচ্ছাব করি, এমন ধনের চেয়ে ফকির তাখনইতো ঢের ভাল।' সমাজে তরমুজ আলীর সম্পদের কোন মূল্য নেই, এসম্পদ নিয়ে যে গৰ্ব করারও কিছু নেই। এই ধনসম্পদ হাজি তরমুজের জীবনভর অজস্ৰ অন্ধকার কুকর্মের ফসল।
'চুপ থাক বেয়াদব' বলেই মোল্লার গালে কষে দিলাম একটা শক্ত চড়, যথাযত জবাব পেয়ে গাল ঘষে ঘষে নির্বাক মোল্লা পালালো।
আমার বড়ভাই ফেরেশতা মানব, আমি অমাবশ্যা আর তিনি পুর্ণিমা। তার বাসার একটি গাছে প্রচুর নারকেল ঝুলে আছে। থোকা থোকা নারকেল দেখে আমার জিবে জল এসে যায়। একদিন সব নারকেল পেড়ে নিয়ে অসি। ভাইয়ের সাদামন বলেন নি কিছু কিন্তু তার বেটা বেয়াদবী শুরু করে দেয়। আমি হুঙ্কার ছুড়ি, 'এই ধনসম্পদ সব আমিই করেছি, সবকিছুর মালিক আমি, তোমাদেরে এই বাসাবাড়ি দয়া করে লিল্লাহ দিয়েছি।' এবার ভাইয়ের বেটা মারোমুখী হয়ে আমাকে মারতে আসে। আমিও লাটি নিয়ে বের হই। লোকজন আটকায়। কয়েকজন বলল, 'মুরব্বিসাব, ওর সাথে কুস্তি লড়লে আপনার মানসম্মান যাবে, একেতো ভাতিজা তার উপর কালকের বাচ্চা ছেলে। বয়সের তফাৎ আকাশ আর পাতাল।' মনে মনে বলি 'হায়রে মানুষ, বোকা মানুষ, তোমরা তো কিছুই জাননা, ওই 'সন্মান' নামক বিদগুটে বজ্জাত জিনিসটা তরমুজ আলীর কোনদিনই ছিলনা, এখনো বিন্দু পরিমান নেই। যা নেই তা যাবে কি। আই ডোন্ট কেয়ার।
আমার গল্প শেষ হল, এবার আমার এক পেয়ার দুস্তের গল্প শুনাবো। আমি তরমুজ আলী। আমার লাহান খাসামাল প্ৰতি পাড়ায় কদাচিৎ দু'একজনের দেখা মেলে। এমনই একজন এপাড়ার শেষসীমার বাসিন্দা হাসেম আলী। সে দু'তলা বেসাইজ একটি বিয়ের সেন্টার নির্মাণ করে। ভাড়া অল্প যখন যাহা ভাগ্যে জুটে৷ বিশ পচিশ জন বরযাত্রি নিয়ে গরিব বরেরা এখানে আসে, চুড়ুইভাতি শেষে কাপড়মুড়ানো বেবি কিংবা রিকশায় চড়ে কনে নিয়ে ফুডুৎ মারে। অন্য সেন্টারে রবি শুক্ৰ ভীড় হলেও এখানে রোজ রোজ বিয়ের ধূম লেগেই থাকে। দখলবাজটা দুদিকে রাস্তার প্রচুর জায়গা দখল করে বিয়ের সেন্টারে ঢুকায় ও কয়েকটি দোকান বানিয়ে ভাড়া দেয়। তার ছিল বাজখাই গলা আর গালভরা দাড়ি। সে বারান্দার চেয়ারে বসে সারাদিন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতো। নিছক আনন্দ পেতে ভিক্ষুক পেঠাতো। রিকশা চড়ে ভাড়া কম দিত ও প্রায়ই রিকশাওয়ালাদের মারধর করতো। আমার মত তারও বংশের প্রতিক গরু পোষতো, গোবজ্য রাস্তা পৰ্যন্ত সয়লাব করতো। এখানে এসে পথিকেরা নাকে রুমাল দিত। বেদিশা মুসল্লিরা পাশের মসজিদে যেতে হাসেম আলীর গোমুত্ৰে পিছলা খেয়ে অজু হারাতো।
এই অলক্ষিটার সেন্টার নিৰ্মাণকালে এক দুৰ্ঘটনা ঘটে। একই ঘরের তিনজন ভিনজেলার লোক সেফটিক ট্যাংকের সাটারিং খোলতে গিয়ে একে একে নিচে নামে। পোড়াকপাল ওদের, বিষাক্ত গ্যাসে তিনজনই অকালে মারা যায়। টের পেয়ে হাসেম আলী ভয়ে পালিয়ে যায়। হাসেম আলী নিখোজ, কেউ তার খবর জানেনা। বেশ কিছুদিন পর ফিরে আসে হাসেম আলী। লোকে বলল, হাসেমালী ভাই, এই গরিব লোকেরাতো তোমার আরামখানা বানাতে প্ৰাণ দিল, আল্লাহ তোমাকে প্রচুর ধনসম্পদ দিয়াছে, ঔ লোকগুলোর অসহায় পরিবারের জন্য একটা কিছু করো। হাসেম আলী বলল, বাহারে, আমার কি দায় পড়ল ঐ হসআড়ুয়া কামলাদেৱ বুজা নেবো। আমি কি তাদের মেরেছি, না মরতে বলেছি যে জরিমানা দেব। এত দরদ থাকলে আপনারা সাহায্য করুন। ঐ দুষ্ট শেয়ালটা টাকার কুমির হয়েও নিহতদের পরিবারকে একটা কানাকড়িও সাহায্য দেয়নি।
হাসেম আলী বিয়ের সেন্টারের ছাদে ঝুপড়ি ঘৱে কৃপনের মত জীবন কাটায়, আর ধান্দামান্দা করে টাকা জমায়। তার দান খয়রাত শূন্য অথচ মসজিদে গিয়েও হরকিছিমের বেতমিজি করে। ইমাম মোয়াজ্জিন ও হজুরদের উপর গায়ে পড়ে মাতব্বরী করে। একদিন সে আচমকা মসজিদের এক হজুরের পিঠে ঝাড়ু দিয়ে বেশ কয়েকটি ঘা বসিয়ে দেয়। মুসল্লিরা ক্ষেপে যান ও তাকে মসজিদে আসতে বারন করে দেন। কুত্তা মগজি মুরব্বি হাসেম আলীকে তারপর বহুদিন এ মসজিদে দেখা যায়নি।
একবার দুজন বুড়ো বুড়ি কয়েকটি ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে ভিক্ষা করছিল। এই ভিন জেলাবাসীরা দোকানে দোকানে গিয়ে বলছিল, 'ভাইরা, আমরা হজরত শাহজালালের দরগায় এসে সব টাকা হারিয়ে ফেলেছি, দেশে ফেরার জন্য মাত্ৰ দুহাজারটা টাকার প্রয়োজন।' এভাবে তারা প্রচুর টাকা সংগ্ৰহ করে। হাশেম আলীর সামনে আসতেই সে এই লোকদেরে সেন্টারের ভিতরে ঢুকায়, জুরগলায় বলে উঠে, 'তোমাদের তো মাত্ৰ দুই হাজার টাকার দরকার।' লোকগুলো বলল, 'জি হুজুর, মাত্ৰ দুই হাজার টাকা হলেই আমরা কোনমতে ফিরে যেতে পারব।' এবার হাশেম আলী বাজখাই গলায় বলে উঠে, দুই হাজার টাকার পুরোটা আমি দেবো যদি তোমাদের হতে কোন টাকা না থাকে; আর যদি দুই হাজারের বেশি পাই, তবে বাকি সব টাকা আমার।' লোকগুলো আমতা আমতা করে কেমনে পালানো যায় সেইপথ খোজতে থাকে। এবার হাসেম আলী জালিবেত বের করে। বেত লাগতেই তাদের পকেট হতে প্ৰচুর টাকা বেরিয়ে আসে। হাসেম আলী চিৎকার করে ওঠে, 'ও হায়েজার বালাই, ও মড়কের বালাই, তোমরা সিলেটটারে ঠগে লুটেপুটে খাচ্ছো, এবার মজা দেখাচ্ছি।' বলেই দুইহাজার টাকা ওদের দিকে ছুড়ে মেরে বাকি সৰ টাকা কেড়ে নেয়। লোকগুলো ভয়ঙ্কর চেঙ্গিস হাসেম আলীর চিপাখানা হতে কোনমতে প্ৰাণ নিয়ে বের হয়ে সবফেলে দৌড়ে পালায়, ভাবখানা এমন, 'ভিক্ষা চাইনা, ক্ষেপা কুকুরটা সামলাও।' হতভাগা লোকগুলোর পোড়াকপাল, পড়ল এসে এক ইয়া দাড়িওয়ালা শয়তান হুজুরের ফাঁদে। পড়বি তো পর, পড়ল গিয়ে একেবারে খাস মালীর ঘাড়ে।
ঐ অৰ্থলুলোপটা লন্ডনি টাকার লোভে ছেলেদেৱে শিশু বয়সে প্রচুর টাকা খরচ করে লন্ডনে পাঠায়। যে লোকটার পুত্ৰ সেজে এই অবুঝ শিশুরা লন্ডনে যায় তাকেই তারা, বাবা ভাবতে থাকে, আসল বাপ অন্তরালে হারিয়ে যায়। হাসেম আলীর আম তো গেল, সেইসাথে ছালাও গেল। লোক মুখে শোননাম- আলিমের ঘরে জালিম, আর জালিমের ঘরে আলিম জন্মায়। ওর ছেলেরা মোক্তাকি ও ফরহেজগার। একবার দেশে এসে তারা বাবাজানের আদুম চুদুম কায়কারবার দেখে অবাক হয়ে ভাবে, ছিঃ ছিঃ এই শয়তান লোকটা কি আমাদেৱ বাপ হয়। এ কেমন বাবা যাকে ভাল হতে ছেলেরা উপদেশ দেয়। সে বেশরম বুড়োটা তার লুঙ্গির তলার গৰ্বের ধনটি হাতের মুঠোয় ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে দিয়ে হুঙ্কার ছুড়ে, ফুটানি করিওনা রে হারামজাদাইন, তোমরা ওটার পয়দা রে হারামজাদা, আমি ওটা দিয়ে তোমরা ৱে জন্মাইছি, লন্ডনে গিয়ে তোমরা আজ বাদশাহ বনে গেছ। আমি মন্দ আর তোমরা ভালা, কোথা হতে পয়দা হইছ রে তোমরা। আমারে উপদেশ দেবার কুনু দরকার নেই, যাও নিজ নিজ চরকায় তেল দাও।
বউ ও ছেলেদের যন্ত্ৰণায় অতীষ্ট হয়ে তাদের টাকায় একবার হজ্বে যাই। এসে দেখি আমার বারমাসী দুটি ব্যারাম লোভ ও গাট্টামী আদৌ কমেনি বরং আরব দেশের গরমে ও অনাদ্র বাতাসে তা আর কয়েক ডিগ্ৰি বেড়ে গেছে। আমি মক্কা ফেরত হাজি তরমুজ আলী হয়েও আগে যে লাউ ছিলাম, সেই কদুই রয়ে পেলাম। শয়তানের শিরোমনি পাপিষ্ট কলবে আল্লাহতায়ালা মোহর মেরে দেন, তাই বুড়ো বয়সে তার মেহমান হয়েও হেদায়েত আমার ভাগ্যে জোটে নাই। এসেই আমি হাজি তরমুজ আলী গোলকে দিয়ে একলোকের কিশোর পুত্ৰকে পেঠাই। পরদিন আমাকে ধরতে র্যাব আস। ধরা পড়ামাত্ৰই সাঠাং হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ি। চেলাচামুন্ডারা মাথায় পানি ঢালতে থাকে। আমি একজন দক্ষ অভিনেতা, এমন অভিনয় করি যে হার্টফেল করে মারা যাচ্ছি। ছকরাতুল মউতে পড়া বৃদ্ধ লোকটাকে ফেলে রেখে র্যাব পাততাড়ি গোটায়। এ যাত্ৰায় খেকশিয়ালের বুদ্ধি আমাকে বাচিয়ে দেয়।
আমি এখানে শুভাগমনের কয়েক বছর পর ভাটির একজন হাবাগোবা মালদার লন্ডনি এপাড়ায় তিন চার বিঘা ধানি জমি কিনে। সে লন্ডনে গেলে আমি এই জমিতে চুপে চুপে ঢুকে যাই। বাশ-টিনের অনেকগুলো সাফটা বানিয়ে ভাড়া দেই। বছরের পর বছর এই জমি ভোগ করি। মানুষকে বলতাম, এটা আমার শালার জায়গা, আমি তাকে কিনে দিয়েছি, এখন পাহারা দিচ্ছি। অনেক বছর পর আমার বুড়ো বয়সে লন্ডনি শালা এলেন গোপনে জমিটি বিক্রি করে দিতে। লন্ডনির ক্রেতারা আসে, আমার লালচোখ দেখে তারা পালায়। কার এত বুকের পাটা আমার দখলি জমি কিনে মাথা ঢুকায়। জল অনেক ঘোলা করে লন্ডনি বুঝলেন, এজমি বেচতে হলে তরমুজ আলীকে দরকার। এলেন তিনি নতজানু হয়ে, বললেন হাজিসাব, জমিটা আমি বিক্রি করে দেবো, আপনার সাহার্য্য চাই। বিনিময়ে আপনাকে আমি খুশী করব। আমি রনহুঙ্কার দিলাম, আপনার জমি আমি এত বছর পাহারা দিয়েছি, আলগে রেখেছি, নইলে চোর-ডাকাতরা কবে যে নিয়ে যেত, এই জমি কি ফিরে পেতেন? আপনার এত উপকার করলাম, আর বলছেন খুশী করব। আমি কি ফকিরনির পুত, আপনি আমাকে ভিক্ষে দিয়ে খুশী করবেন। এবার বিষয়টা খোলাসা করুন। আমার দুইটি শর্ত একঃ জমি বিক্রির টাকা অর্ধেক আপনার, বাকী অর্ধেক আমার। দুইঃ জমি বিক্রি করব আমি, আপনি কেবল এসে সই করবেন। লন্ডনি আমতা আমতা করতে লাগলেন। হুমকি দিলাম, আমার দলিল আছে, দখল আছে, জমি কিন্তু হয়ে যাবে আমার। বেশি তেড়িবেড়ি করবেন না জনাব, শেষে টেকা যাবে, ডেকাও যাবে। হুমকিতে কাজ হল, জনাবের টনক লড়লো, ভাটির লন্ডনি রাজি হলেন। তবে রে এত বিশাল জায়গা কিনবে কে? জমির দাম যে আকাশ ছোঁয়া। এবার পাঁচ ছয় ডেসিমেলের বেশকিছু প্লট করলাম। বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আসে আমার এই কৌশলী হাতে। জমি মালিক লন্ডনি শালাকে কিছু ভিক্ষা ছুড়ে দিলাম। শালা ভাবল, অনেক পেয়েছি তাও যদি ভাগ্যে না জুটিত, পাছায় যে তরমুজ-বাশ ঢুকে আছে।
সিলেট শহরের এক গুণ, প্ৰতি বছরে জমির দাম বেড়ে হয় দুইগুণ। জীবনভর ছলে বলে কৌশলে কুক্ষিগত করা জমি বিক্রি করে এবার কোটি কোটি টাকা হাতে আসে। জিন্দেগির শেষ সীমানায় এসে হাম বনেগা কোটিপতি। নিমিষেই চারতলা ছয়তলা কয়েকটি সুবিশাল ভবনের মালিক হই। আমি আজ মহারাজাধিরাজ, আমি কাউকে পরওয়া করিনা, এমন কি 'ছেলেদেরও টাকার ধার ধারিনা, আমার কি টাকা নেই।' আমার এমন কথাবাৰ্তা শুনে পাশের মোল্লাব্যাটা অনুচ্চ শব্দে বলল, মানব বজ্যের ময়লা দুৰ্গন্ধময় ট্যাঙ্কিতে ডুবসাতার দিয়ে উঠানো এমন অৰ্থসম্পদে পেচ্ছাব করি, এমন ধনের চেয়ে ফকির তাখনইতো ঢের ভাল।' সমাজে তরমুজ আলীর সম্পদের কোন মূল্য নেই, এসম্পদ নিয়ে যে গৰ্ব করারও কিছু নেই। এই ধনসম্পদ হাজি তরমুজের জীবনভর অজস্ৰ অন্ধকার কুকর্মের ফসল।
'চুপ থাক বেয়াদব' বলেই মোল্লার গালে কষে দিলাম একটা শক্ত চড়, যথাযত জবাব পেয়ে গাল ঘষে ঘষে নির্বাক মোল্লা পালালো।
আমার বড়ভাই ফেরেশতা মানব, আমি অমাবশ্যা আর তিনি পুর্ণিমা। তার বাসার একটি গাছে প্রচুর নারকেল ঝুলে আছে। থোকা থোকা নারকেল দেখে আমার জিবে জল এসে যায়। একদিন সব নারকেল পেড়ে নিয়ে অসি। ভাইয়ের সাদামন বলেন নি কিছু কিন্তু তার বেটা বেয়াদবী শুরু করে দেয়। আমি হুঙ্কার ছুড়ি, 'এই ধনসম্পদ সব আমিই করেছি, সবকিছুর মালিক আমি, তোমাদেরে এই বাসাবাড়ি দয়া করে লিল্লাহ দিয়েছি।' এবার ভাইয়ের বেটা মারোমুখী হয়ে আমাকে মারতে আসে। আমিও লাটি নিয়ে বের হই। লোকজন আটকায়। কয়েকজন বলল, 'মুরব্বিসাব, ওর সাথে কুস্তি লড়লে আপনার মানসম্মান যাবে, একেতো ভাতিজা তার উপর কালকের বাচ্চা ছেলে। বয়সের তফাৎ আকাশ আর পাতাল।' মনে মনে বলি 'হায়রে মানুষ, বোকা মানুষ, তোমরা তো কিছুই জাননা, ওই 'সন্মান' নামক বিদগুটে বজ্জাত জিনিসটা তরমুজ আলীর কোনদিনই ছিলনা, এখনো বিন্দু পরিমান নেই। যা নেই তা যাবে কি। আই ডোন্ট কেয়ার।
আমার গল্প শেষ হল, এবার আমার এক পেয়ার দুস্তের গল্প শুনাবো। আমি তরমুজ আলী। আমার লাহান খাসামাল প্ৰতি পাড়ায় কদাচিৎ দু'একজনের দেখা মেলে। এমনই একজন এপাড়ার শেষসীমার বাসিন্দা হাসেম আলী। সে দু'তলা বেসাইজ একটি বিয়ের সেন্টার নির্মাণ করে। ভাড়া অল্প যখন যাহা ভাগ্যে জুটে৷ বিশ পচিশ জন বরযাত্রি নিয়ে গরিব বরেরা এখানে আসে, চুড়ুইভাতি শেষে কাপড়মুড়ানো বেবি কিংবা রিকশায় চড়ে কনে নিয়ে ফুডুৎ মারে। অন্য সেন্টারে রবি শুক্ৰ ভীড় হলেও এখানে রোজ রোজ বিয়ের ধূম লেগেই থাকে। দখলবাজটা দুদিকে রাস্তার প্রচুর জায়গা দখল করে বিয়ের সেন্টারে ঢুকায় ও কয়েকটি দোকান বানিয়ে ভাড়া দেয়। তার ছিল বাজখাই গলা আর গালভরা দাড়ি। সে বারান্দার চেয়ারে বসে সারাদিন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতো। নিছক আনন্দ পেতে ভিক্ষুক পেঠাতো। রিকশা চড়ে ভাড়া কম দিত ও প্রায়ই রিকশাওয়ালাদের মারধর করতো। আমার মত তারও বংশের প্রতিক গরু পোষতো, গোবজ্য রাস্তা পৰ্যন্ত সয়লাব করতো। এখানে এসে পথিকেরা নাকে রুমাল দিত। বেদিশা মুসল্লিরা পাশের মসজিদে যেতে হাসেম আলীর গোমুত্ৰে পিছলা খেয়ে অজু হারাতো।
এই অলক্ষিটার সেন্টার নিৰ্মাণকালে এক দুৰ্ঘটনা ঘটে। একই ঘরের তিনজন ভিনজেলার লোক সেফটিক ট্যাংকের সাটারিং খোলতে গিয়ে একে একে নিচে নামে। পোড়াকপাল ওদের, বিষাক্ত গ্যাসে তিনজনই অকালে মারা যায়। টের পেয়ে হাসেম আলী ভয়ে পালিয়ে যায়। হাসেম আলী নিখোজ, কেউ তার খবর জানেনা। বেশ কিছুদিন পর ফিরে আসে হাসেম আলী। লোকে বলল, হাসেমালী ভাই, এই গরিব লোকেরাতো তোমার আরামখানা বানাতে প্ৰাণ দিল, আল্লাহ তোমাকে প্রচুর ধনসম্পদ দিয়াছে, ঔ লোকগুলোর অসহায় পরিবারের জন্য একটা কিছু করো। হাসেম আলী বলল, বাহারে, আমার কি দায় পড়ল ঐ হসআড়ুয়া কামলাদেৱ বুজা নেবো। আমি কি তাদের মেরেছি, না মরতে বলেছি যে জরিমানা দেব। এত দরদ থাকলে আপনারা সাহায্য করুন। ঐ দুষ্ট শেয়ালটা টাকার কুমির হয়েও নিহতদের পরিবারকে একটা কানাকড়িও সাহায্য দেয়নি।
হাসেম আলী বিয়ের সেন্টারের ছাদে ঝুপড়ি ঘৱে কৃপনের মত জীবন কাটায়, আর ধান্দামান্দা করে টাকা জমায়। তার দান খয়রাত শূন্য অথচ মসজিদে গিয়েও হরকিছিমের বেতমিজি করে। ইমাম মোয়াজ্জিন ও হজুরদের উপর গায়ে পড়ে মাতব্বরী করে। একদিন সে আচমকা মসজিদের এক হজুরের পিঠে ঝাড়ু দিয়ে বেশ কয়েকটি ঘা বসিয়ে দেয়। মুসল্লিরা ক্ষেপে যান ও তাকে মসজিদে আসতে বারন করে দেন। কুত্তা মগজি মুরব্বি হাসেম আলীকে তারপর বহুদিন এ মসজিদে দেখা যায়নি।
একবার দুজন বুড়ো বুড়ি কয়েকটি ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে ভিক্ষা করছিল। এই ভিন জেলাবাসীরা দোকানে দোকানে গিয়ে বলছিল, 'ভাইরা, আমরা হজরত শাহজালালের দরগায় এসে সব টাকা হারিয়ে ফেলেছি, দেশে ফেরার জন্য মাত্ৰ দুহাজারটা টাকার প্রয়োজন।' এভাবে তারা প্রচুর টাকা সংগ্ৰহ করে। হাশেম আলীর সামনে আসতেই সে এই লোকদেরে সেন্টারের ভিতরে ঢুকায়, জুরগলায় বলে উঠে, 'তোমাদের তো মাত্ৰ দুই হাজার টাকার দরকার।' লোকগুলো বলল, 'জি হুজুর, মাত্ৰ দুই হাজার টাকা হলেই আমরা কোনমতে ফিরে যেতে পারব।' এবার হাশেম আলী বাজখাই গলায় বলে উঠে, দুই হাজার টাকার পুরোটা আমি দেবো যদি তোমাদের হতে কোন টাকা না থাকে; আর যদি দুই হাজারের বেশি পাই, তবে বাকি সব টাকা আমার।' লোকগুলো আমতা আমতা করে কেমনে পালানো যায় সেইপথ খোজতে থাকে। এবার হাসেম আলী জালিবেত বের করে। বেত লাগতেই তাদের পকেট হতে প্ৰচুর টাকা বেরিয়ে আসে। হাসেম আলী চিৎকার করে ওঠে, 'ও হায়েজার বালাই, ও মড়কের বালাই, তোমরা সিলেটটারে ঠগে লুটেপুটে খাচ্ছো, এবার মজা দেখাচ্ছি।' বলেই দুইহাজার টাকা ওদের দিকে ছুড়ে মেরে বাকি সৰ টাকা কেড়ে নেয়। লোকগুলো ভয়ঙ্কর চেঙ্গিস হাসেম আলীর চিপাখানা হতে কোনমতে প্ৰাণ নিয়ে বের হয়ে সবফেলে দৌড়ে পালায়, ভাবখানা এমন, 'ভিক্ষা চাইনা, ক্ষেপা কুকুরটা সামলাও।' হতভাগা লোকগুলোর পোড়াকপাল, পড়ল এসে এক ইয়া দাড়িওয়ালা শয়তান হুজুরের ফাঁদে। পড়বি তো পর, পড়ল গিয়ে একেবারে খাস মালীর ঘাড়ে।
ঐ অৰ্থলুলোপটা লন্ডনি টাকার লোভে ছেলেদেৱে শিশু বয়সে প্রচুর টাকা খরচ করে লন্ডনে পাঠায়। যে লোকটার পুত্ৰ সেজে এই অবুঝ শিশুরা লন্ডনে যায় তাকেই তারা, বাবা ভাবতে থাকে, আসল বাপ অন্তরালে হারিয়ে যায়। হাসেম আলীর আম তো গেল, সেইসাথে ছালাও গেল। লোক মুখে শোননাম- আলিমের ঘরে জালিম, আর জালিমের ঘরে আলিম জন্মায়। ওর ছেলেরা মোক্তাকি ও ফরহেজগার। একবার দেশে এসে তারা বাবাজানের আদুম চুদুম কায়কারবার দেখে অবাক হয়ে ভাবে, ছিঃ ছিঃ এই শয়তান লোকটা কি আমাদেৱ বাপ হয়। এ কেমন বাবা যাকে ভাল হতে ছেলেরা উপদেশ দেয়। সে বেশরম বুড়োটা তার লুঙ্গির তলার গৰ্বের ধনটি হাতের মুঠোয় ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে দিয়ে হুঙ্কার ছুড়ে, ফুটানি করিওনা রে হারামজাদাইন, তোমরা ওটার পয়দা রে হারামজাদা, আমি ওটা দিয়ে তোমরা ৱে জন্মাইছি, লন্ডনে গিয়ে তোমরা আজ বাদশাহ বনে গেছ। আমি মন্দ আর তোমরা ভালা, কোথা হতে পয়দা হইছ রে তোমরা। আমারে উপদেশ দেবার কুনু দরকার নেই, যাও নিজ নিজ চরকায় তেল দাও।
ফলে দুৰ্জ্জনটার সাথে কারও সম্পৰ্ক রইল না, না ছেলেমেয়ে, না অন্য কেউ। শেষমেষ সে বুড়িসহ ছাদের চীলেকোঠায় বিয়ে সেণ্টারের মাগনা খাবার খেয়ে খেয়ে একাকি জীবন কাটায়।
সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করতে আসে যৌথবাহিনী, বাহাদুর হাসেম আলী দু'হাত জোড় করে হাটু ভেঙ্গে যৌথবাহিনীর বুলডোজারের সামনে বসে পড়ে। যৌথবাহিনী তাকে ঘাড়ে ধাক্কা মেরে উঠায়। আমার দুস্তের সেণ্টারটির দু'দিকের দখলকৃত অংশ তারা এমনভাবে ভেঙ্গে দেয় যে শেষ পৰ্যন্ত ভবনটি সে গুড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়। বুড়ো বয়সে আমার মত এই জানোয়ার লোভীটা ভবন হারানোেৱ দুঃখ সইতে পারে নি। সম্পদ বিরহে ওর শরীরটা দ্রুত ভেঙ্গে পড়ে ও শয্যাগত হয়। সে এখানে আবার দশতলা ভবন নিৰ্মাণে নেমে যায়। কিন্তু একটা ঢালাই দিয়েই কমবখতটা আক্কা পায়। আমার বুকটা ফাইটা যায়, যখন দেখি আমার প্রাণের দুস্তটার অপূৰ্ণ স্বপ্ন ভবনের খুঁটিগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। আমার এই ইয়ারটার আমার মত এত বাহুবল ছিল না। ও ছিল শক্তের ভক্ত, নরমের জম। সে কেবল ছিন্নমুল হতদরিদ্রের উপর তার বাহাদুরি ফলাতো। কনজুস হাসেম আলীর কোন রাখাল ছিল না। চোর এসে তার গোরাজ্যে সহজেই হানা দিত, আর সে চোৱ ধরে বেঁধে অমানুষিক পিঠুনী দিত। আমরা দুই দুস্তের কান্ডকারখানা দেখে লোকে ভীড় জমিয়ে তামাশা দেখতো। কেউ কিছু বলত না হয়তোবা ভয়ে, নয়তোবা মনে করত এসব কমজাত কমিন্দের কাজ।
আপনারা নিশ্চয়ই গান্ধাপোকার নাম শুনেছেন। সিলেটিরা ঐ পোকার একটি সুন্দর নাম দিয়েছে ফাদরা-পোকা। এই পোকারা যেখানে বসে আশপাশ দুৰ্গন্ধময় করে দেয়। ফলে কেউ টিকতে পারে না। আসলে আমরা সমাজের মধ্যে বসা গুটিকয় ফাদরাপোকা। আমাদের নষ্টপচা দেহ- মন- পায়ু বিচ্যুরিত দুৰ্গন্ধে ডানে বামে ভাল কিছু টিকতে পারে না, সত্য হারে আর সুন্দর পালায়। আমরা এই তল্লাটের দুইজন বিখ্যাত আলী, তরমুজ আলী আর হাসেম আলী, নিতান্তই মুখ্যসুখ্য মানুষ। জীবন ভান্ডারে তেমন কোন ডিগ্ৰি-ফিগ্রি নেই। জীবনের ঠেলায় পড়ে যা শিখেছি তা দিয়ে এই দুইনম্বরী জীবনটা বেশ ভালভাবেই পার করে দিয়েছি।
বন্ধুর গল্প বলে বলে এতক্ষণ শেষ হল, এবার আসি আবার আমার নিজের গল্পে। মনে মনে ভাবি আমার এ সুদীৰ্ঘ্য জীবনকালে খানে দাজ্জাল বের হয় নি, ইমাম মেহদিরও খবর নেই। ভয় হয় যখন মনে হয় সামনে দাঁড়িয়ে আছেন হজরতে আজ্রাইল। জইফ বয়সে অক্ষম আমি বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে খেয়ে ভাবি পরিবার পরিজন সব গোল্লায় যাক, আমার কিচ্ছু যায় আসে না, কিন্তু আমার এত কষ্টের, এত যত্নের, এত নির্লজ্জ লালসার, এত এত এত দুই, তিন, চার নম্বরী কৰ্মযজ্ঞের ফসল এই যক্কের ধন থুইয়া যাইতাম কেমনে।
তখনি খোলা জানালা দিয়ে পাশের মসজিদ হতে ভেসে আসে উপরওয়ালার পবিত্ৰ বানী-
১-২। (অপরের তুলনায়) বেশী সুখ সম্পদের আকাঙ্ক্ষাই মানুষকে আমৃত্যু মোহাচ্ছন্ন করে রাখে।
৩-৪। আসলে এটা ঠিক নয়, সময় এলেই তা জানতে পারবে। আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি, এটা ঠিক নয়, সময় এলেই তা জানতে পারবে।
৫। (সত্য সম্পৰ্কে) নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে তোমরা কখনই মোহাচ্ছন্ন হতে না।
৬-৮। তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে। আবার বলছি, তোমরা অবশ্যই নিজ চোখে জাহান্নাম দেখবে। তোমরা নিশ্চিত থাক, সেদিন আমার দেয়া নেয়ামত দিয়ে তোমরা কি করেছ, সে সম্পৰ্কে জবাবদিহি করতে হবে।—সুরা তাকাসুর
জীবনের শুরুতেই আমরা নিজেদের হাতেগড়া একটি লোভের অন্ধকার কারাগারে বন্দি হয়ে যাই। তারপর কারাগেটের বাইরে এসে সুন্দর এই আলোকিত পৃথিবী দেখার সুযোগ আমাদের কখনও হয়নি। আমাদের এই নষ্ট আত্মারা সবই নফসে আম্মারা, এগুলো বৈজ্ঞানিক ষ্টিফেন হকিংয়ের এক একটা কৃষ্ণগহ্বর। আলো পড়লেও এগুলো আলোকিত হয় না বরং সব আলো খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। তাইতো এই ভয়ঙ্কর ব্ল্যাকহোলগুলো চিরকালই ঘিসঘিসে কালো অন্ধকার।
(সমাপ্ত)
সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করতে আসে যৌথবাহিনী, বাহাদুর হাসেম আলী দু'হাত জোড় করে হাটু ভেঙ্গে যৌথবাহিনীর বুলডোজারের সামনে বসে পড়ে। যৌথবাহিনী তাকে ঘাড়ে ধাক্কা মেরে উঠায়। আমার দুস্তের সেণ্টারটির দু'দিকের দখলকৃত অংশ তারা এমনভাবে ভেঙ্গে দেয় যে শেষ পৰ্যন্ত ভবনটি সে গুড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়। বুড়ো বয়সে আমার মত এই জানোয়ার লোভীটা ভবন হারানোেৱ দুঃখ সইতে পারে নি। সম্পদ বিরহে ওর শরীরটা দ্রুত ভেঙ্গে পড়ে ও শয্যাগত হয়। সে এখানে আবার দশতলা ভবন নিৰ্মাণে নেমে যায়। কিন্তু একটা ঢালাই দিয়েই কমবখতটা আক্কা পায়। আমার বুকটা ফাইটা যায়, যখন দেখি আমার প্রাণের দুস্তটার অপূৰ্ণ স্বপ্ন ভবনের খুঁটিগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। আমার এই ইয়ারটার আমার মত এত বাহুবল ছিল না। ও ছিল শক্তের ভক্ত, নরমের জম। সে কেবল ছিন্নমুল হতদরিদ্রের উপর তার বাহাদুরি ফলাতো। কনজুস হাসেম আলীর কোন রাখাল ছিল না। চোর এসে তার গোরাজ্যে সহজেই হানা দিত, আর সে চোৱ ধরে বেঁধে অমানুষিক পিঠুনী দিত। আমরা দুই দুস্তের কান্ডকারখানা দেখে লোকে ভীড় জমিয়ে তামাশা দেখতো। কেউ কিছু বলত না হয়তোবা ভয়ে, নয়তোবা মনে করত এসব কমজাত কমিন্দের কাজ।
আপনারা নিশ্চয়ই গান্ধাপোকার নাম শুনেছেন। সিলেটিরা ঐ পোকার একটি সুন্দর নাম দিয়েছে ফাদরা-পোকা। এই পোকারা যেখানে বসে আশপাশ দুৰ্গন্ধময় করে দেয়। ফলে কেউ টিকতে পারে না। আসলে আমরা সমাজের মধ্যে বসা গুটিকয় ফাদরাপোকা। আমাদের নষ্টপচা দেহ- মন- পায়ু বিচ্যুরিত দুৰ্গন্ধে ডানে বামে ভাল কিছু টিকতে পারে না, সত্য হারে আর সুন্দর পালায়। আমরা এই তল্লাটের দুইজন বিখ্যাত আলী, তরমুজ আলী আর হাসেম আলী, নিতান্তই মুখ্যসুখ্য মানুষ। জীবন ভান্ডারে তেমন কোন ডিগ্ৰি-ফিগ্রি নেই। জীবনের ঠেলায় পড়ে যা শিখেছি তা দিয়ে এই দুইনম্বরী জীবনটা বেশ ভালভাবেই পার করে দিয়েছি।
বন্ধুর গল্প বলে বলে এতক্ষণ শেষ হল, এবার আসি আবার আমার নিজের গল্পে। মনে মনে ভাবি আমার এ সুদীৰ্ঘ্য জীবনকালে খানে দাজ্জাল বের হয় নি, ইমাম মেহদিরও খবর নেই। ভয় হয় যখন মনে হয় সামনে দাঁড়িয়ে আছেন হজরতে আজ্রাইল। জইফ বয়সে অক্ষম আমি বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে খেয়ে ভাবি পরিবার পরিজন সব গোল্লায় যাক, আমার কিচ্ছু যায় আসে না, কিন্তু আমার এত কষ্টের, এত যত্নের, এত নির্লজ্জ লালসার, এত এত এত দুই, তিন, চার নম্বরী কৰ্মযজ্ঞের ফসল এই যক্কের ধন থুইয়া যাইতাম কেমনে।
তখনি খোলা জানালা দিয়ে পাশের মসজিদ হতে ভেসে আসে উপরওয়ালার পবিত্ৰ বানী-
১-২। (অপরের তুলনায়) বেশী সুখ সম্পদের আকাঙ্ক্ষাই মানুষকে আমৃত্যু মোহাচ্ছন্ন করে রাখে।
৩-৪। আসলে এটা ঠিক নয়, সময় এলেই তা জানতে পারবে। আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি, এটা ঠিক নয়, সময় এলেই তা জানতে পারবে।
৫। (সত্য সম্পৰ্কে) নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে তোমরা কখনই মোহাচ্ছন্ন হতে না।
৬-৮। তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে। আবার বলছি, তোমরা অবশ্যই নিজ চোখে জাহান্নাম দেখবে। তোমরা নিশ্চিত থাক, সেদিন আমার দেয়া নেয়ামত দিয়ে তোমরা কি করেছ, সে সম্পৰ্কে জবাবদিহি করতে হবে।—সুরা তাকাসুর
জীবনের শুরুতেই আমরা নিজেদের হাতেগড়া একটি লোভের অন্ধকার কারাগারে বন্দি হয়ে যাই। তারপর কারাগেটের বাইরে এসে সুন্দর এই আলোকিত পৃথিবী দেখার সুযোগ আমাদের কখনও হয়নি। আমাদের এই নষ্ট আত্মারা সবই নফসে আম্মারা, এগুলো বৈজ্ঞানিক ষ্টিফেন হকিংয়ের এক একটা কৃষ্ণগহ্বর। আলো পড়লেও এগুলো আলোকিত হয় না বরং সব আলো খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। তাইতো এই ভয়ঙ্কর ব্ল্যাকহোলগুলো চিরকালই ঘিসঘিসে কালো অন্ধকার।
(সমাপ্ত)
রচনাকালঃ জুন ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ। চিত্রঃ গল্পটির লেখক ইসফাক কুরেশী
রচনাস্থানঃ জেফার ভবন, ৩৩/২, সাগরদিঘির পার, সিলেট।
রচনাস্থানঃ জেফার ভবন, ৩৩/২, সাগরদিঘির পার, সিলেট।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন