Pages

প্রকাশিত গ্রন্থ-সমূহ

শনিবার, ১ আগস্ট, ২০২০

এই বাংলাদেশে


এই বাংলাদেশে

পৃথিবীর প্রান্তরে প্রান্তরে ঘুরে ফিরে,
অবশেষে জন্মভূমি এই বাংলাদেশে,
শ্বাসত শান্তির নীড়,
আমি খুঁজে ফিরি প্রতি প্রহরে। 
এখানে ঘন বনানীর ঝোপছায়া তলে,
ভাসায়ে ঘাসিয়ারা নাও বর্ষার জলে।
করস হিজল বনে শ্রাবণী বায়ে,
হেরে যেত শিশুমন আনমনা হয়ে।

বিষন্ন প্রহর শেষে
ভাসান বন্যার জল শুকাবার আগে।
হাঁটুজলে রাজহাঁস পাতিহাস ভাসে,
সরপুটি, দাড়কিনা, দাপাদাপি করে অনুরাগে।
কই, মাগুর, সোনাব্যাঙ লাফ দিত,
বন ঝোপ কচুরিপানা বেয়ে।
তাই দেখে কাদাজলে নেমেছি কত,
হাকডাক চিৎকার দিয়ে।

সহাস্য বিকেলে, মিলেমিশে সব ছেলে-পেলে,
ফুটবল, গোল্লাছুট, হা-ডু-ডু-ডু, মার্বেল খেলে।
মাঠের সবুজ ঘাসে লুটোপুটি খেয়ে,
আনন্দে চেচিয়েছি বনগাছ বেয়ে।
আম পাড়া, মাছ ধরা, জলকেলি খেলা,
ফুর্তির জোয়ারে ভাসাতাম শৈশবের ভেলা।
সন্ধ্যা রাতে চুপে চুপে ভীত হৃদয়ে,
লুকিয়ে ফিরেছি ঘরে, বড়দের বকুনীর ভয়ে।

এইখানে এই প্রিয় বাংলাদেশে,
ভাট, পিসাস, জাপানি লতার বনে।
গাংচিলের কান্নার সুরে,
কুকিলের কুহুকুহু মধুতানে।
মায়ের স্নেহ-ক্রোড় ছেড়ে,
কেশরখালের তীর তীরে অস্থির পায়ে।
বগলে বইখাতা চেপে হেঁটেছি প্রচুর,
ঘাসের লেংরা ফুল দুপায়ে দাবায়ে।
আহারে, করেছি আফসুস কত,
দেখে আটাগুটা, লেংড়ায় পোশাকের করুন দশা।
উফ, কেঁদেছি কত, গেঁথে ঝোপের কাটা,
উৎপাত করেছে কত ডানপিঠে মশা।

বড় হয়ে উন্নত জীবনের খোঁজে,
আসামের পাহাড় বন, দিল্লি ডিঙ্গায়ে,
সিলেট, ঢাকা, চাটগা, কোলকাতা হয়ে,
ঘুরে ফিরে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর।
দুবাই, কুয়েত, আরব, আর বহুদূর।
একে একে ভারত, পাকিস্তান সব পার হয়ে,
অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা হয়েছে যে ঠাই।
স্বদেশের বিরহ, দারুণ জ্বালা, কেহ ভূলে নাই।

ফেলে আসা বাংলাদেশে, এই আমারে,
চিনেনা অনেকেই অনেক বছর ধরে।
চিনেনা বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের কেউ,
সাথীরা হারিয়ে গেছে দূরে দূরান্তরে।
আজকের স্বদেশে সেই, বাংলাদেশ নেই,
আজকের বাংলাদেশে সেই বন্ধুরা নেই,
সমস্ত বদলে গেছে কালের ঘুর্ণীস্রোতে,
ঝড় বৃষ্টি, বান বন্যা, ঋতুচক্রের রথে।

এই বাংলাদেশে প্রেমিকার চোখ টিপা খেয়ে,
দিঘিঘাটে বসেছি কত জলে ছিপ ফেলে।
প্রেমের করুণা বিন্দু যদি, ছিপে টান দেয়,
সারাদিন বয়ে গেছে বরশি বাওয়ার ছলে।
অঘ্রাণে, ল্যাংটা শিশুদের মাটিলেপা উঠানে,
আজও শুনি শৈশবের ডাক।
এখানে এই ছায়াঢাকা, পাখিডাকা বাংলার গ্রামে,
রেখে এসেছি শৈশব, কৈশর, যৌবনের বাঁক।

এই ব্যস্ত প্রবাসে সবাই কামনা করে,
মৃত্যু যেন হয় তাঁর ঈমানের সনে।
চিরনিদ্রা হয় যেন প্রিয়জনের পাশাপাশি কবরে,
স্বজনেরা করবে দাফন, কান্নাভেজা বিষাদ নয়নে।
তাই বিদেশের মাটিতে মরার আগে,
সবাই বলে কফিনে ভরে লাশটি আমার।
পাঠিয়ে দিও জনমমাটি বাংলাদেশে শেষবার।

কাব্যঃ হৃদয়ে বাংলাদেশ
(রচনাকালঃ ১লা আগস্ট ২০২০ রচনাস্থানঃ জেফার ভবন,সিলেট)

       কবি লেখক ব্লগার ও পূবালী ব্যাংকার ইসফাক কুরেশী(বামে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন