Pages

প্রকাশিত গ্রন্থ-সমূহ

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৬

সিলেটে মুসলিম বিজয়ের পূর্বে বঙ্গ ভারত ও সিলেট





১২০২ খ্রিস্টা
ব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি সহসা বাংলার নদীয়া আক্রমন করেন ইতিপূর্বে সমগ্র উত্তর ভারত মুসলমান বিজেতাদের অধিকারে চলে যায়। তাই হিন্দু শাসনাধীন বাঙ্গালা আসাম আশংকাময় হৃদয়ে মুসলিম আক্রমনের অপেক্ষায় ছিল সামরিক শৃংখলাপূর্ন রাজ্যে শত্র প্রতিরোধের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকে। অথচ বাংলার হিন্দু শাসক মহারাজধিরাজ লক্ষন সেনের রাজ্যে তেমন সুদক্ষ সামরিক ব্যবস্থা ছিল না ইখতিয়ার উদ্দিন মোঃ বখতিয়ার খিলজি আটার জন অগ্রগামী অশ্বারোহী সৈন্য ও পিছনে বড় সৈন্যবাহিনী নিয়ে ঝড়ের বেগে নদীয়া আক্রমন করেন বৃদ্ধ সেনরাজ লক্ষন সেন এই আক্রমনে হতচকিত হয়ে পশ্চিম বঙ্গের উত্তরাংশ গঙ্গার উত্তরস্থ উত্তরবঙ্গের পশ্চিমাংশ মুসলিম বিজেতার হস্থে অর্পন করে রাজ্যের পূর্বাংশে ঢাকার বিক্রমপুরে সরে আসেন ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির বিজয় বাংলার অংশবিশেষ অথাৎ লাখনৌতিরাজ্য বিহার উত্তর পশ্চিম বঙ্গের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বিজেতা মুসলমানগন গৌড়কে পরাজিত রাজা লক্ষনসেনের নামানুসারে লক্ষনাবতি বা লাখনৌতি নামে অভিহিত করেন 
এই বিজয়ের পরবর্তী অর্ধশত বৎসর বাঙ্গালার মুসলিম রাজ্য পূর্বদিকে আর বেশী বিস্তৃতি লাভ করতে পারে নাই সেন বংশের পতনের পর দশরত দেব পূর্ববঙ্গের রাজা হন, তার উপাধি দনুজ মাধব রায় সেই সময় দিল্লির সম্রাট গিয়াস উদ্দিন বলবন লক্ষনাবতি বা গৌড়ের বিদ্রোহী সুলতান তুঘ্রীল খানকে দমন করতে এসে দনুজ মাধব রায়ের সাথে সন্ধি করেন পূর্ববঙ্গে স্বাধীন হিন্দু রাজ্য আরও কয়েক বৎসর অক্ষুন্ন ছিল
সম্রাট গিয়াস উদ্দিন বলবন তিন লক্ষ সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে এসে বাংলার বিদ্রোহী শাসনকর্তা তুঘ্রীল খানকে ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধে পরাজিত নিহত করে লক্ষনাবতিতে নিজ পুত্র নাসির উদ্দিনকে (বগরা খান) সুলতান রূপে প্রতিষ্টিত করে তাকে বাঙ্গলা বিজয় সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়ে দিল্লি ফিরে যান নাসির উদ্দিন শান্তিপ্রিয় লোক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তার পুত্র রুকন উদ্দিন কৈকায়ুস (৬৯১ হিজরি ১২৯১ খ্রিস্টাব্দ হইতে ৭০১হিজরি ১৩০১ খ্রিস্টাব্দ) এবং শামস উদ্দিন ফিরোজ (১৩০১ হতে ১৩২২ খ্রিস্টাব্দ) নিজ নিজ শাসনামলে বাংলার অবশিষ্টাংশ জয়ে মনযোগী হন সুলতান রুকন উদ্দিন কায়কাউসের শাসনামলে পূর্ববঙ্গ সাতগাওয়ে মুসলিম অভিযান শুরু হয় এবং তার কনিষ্ট ভ্রাতা ফিরোজ শাহের শাসনামলে তা পরিসমাপ্ত হয় তাদের হাতে পূর্ববঙ্গ সম্পূর্ন বিজিত হবার পরই বাংলার ঈশান কোনে অবস্থিত সিলেট মুসলমানগন কতৃক বিজয়ের  প্রচেষ্টা শুরু হয় 
সিলেটে প্রাপ্ত ফটকলিপিতে বর্নিত ফিরোজ শাহ দেহলবিই বাঙ্গলার সুলতান শামস উদ্দিন ফিরোজ যিনি ১৩০১ খ্রিস্টাব্দ (৭০১হিজরি) হইতে ১৩২২ খ্রিস্টাব্দ (৭২২হিজরি) পর্যন্ত রাজত্ব করে সিলেট বিজয়ের পূর্বে ময়মনসিংহও তাঁর অধিকারে আসে তাছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলা পূর্ববাংলার এক বিরাট এলাকা তাঁর আমলে প্রথম মুসলিম অধিকারে আসে পূর্ববর্তী সুলতানদের অধিকৃত অন্যান্য অঞ্চলগুলি ছাড়াও বিহারের এক বিশাল অঞ্চল তাঁর অধিকারে ছিল তিনি ছিলেন এক বিশাল বিস্তৃত বাঙ্গালা সম্রাজ্যের স্বাধীন সার্বভৌম সুলতান এবং একজন সুযোগ্য শাসক। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে সম্রাজ্যের সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি যোগ্য ব্যক্তিদের উপর গুরুত্বপূর্ন কাজের দায়িত্বভার অর্পন করেন 
তিনি তার জৈষ্ঠ্য পুত্র বাহাদুর খানকে গুরুত্বপূর্ন পূর্ববঙ্গ প্রদেশের রাজধানী সোনারগাঁয়ের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন 'রিয়াজুস সালাতিন' হতে জানা যায়  বাহাদুর  খান ৩৮ বৎসর পর্যন্ত সোনারগাঁও শাসন করে ৭৩১ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন সুতরাং ইহা সুস্পষ্ট যে, শ্রীহট্টে মুসলিম বিজয়কালে ৭০৩ হিজরিতে বাহাদুর খান সোনারগাঁয়ে সুলতান শামস উদ্দিনের নিযুক্ত শাসনকর্তা ছিলেন 
শামসউদ্দিন ফিরোজ শাহ ধর্মপ্রান সুলতান ছিলেন তিনি সুফি, দরবেশ, ধার্মিক জ্ঞানী ব্যক্তিদের সঙ্গে ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহন করতেন বিখ্যাত সুফি শরফুদ্দিন মানেরির মলফুজত” থেকে জানা যায় সুলতান শামসুদ্দিন ধর্মীয় সঙ্গীতের অনুরাগী ছিলেন তৎকালীন মুসলিম বাঙ্গালা রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান নগর সামরিক শক্তিকেন্দ্র ছিল সোনারগাঁও এবং দক্ষিণ-পশ্চিম বাঙ্গালা অঞ্চলের প্রধান প্রশাসনিক নগর ছিল কলকাতার ধারের সাতগাঁও সুলতান রুকনউদ্দিন কায়কায়ুস শামসউদ্দিন ফিরোজের  সময় এই সোনারগাঁওকে কেন্দ্র করে পূর্বদিকের বিজয় অভিযানগুলো পরিচালিত হয়
সিলেটে মুসলিম বিজয়কালে দিল্লির সম্রাট ছিলেন আলাউদ্দিন খিলজি তিনি ৬৯৬হিঃ হইতে ৭১৬হিঃ পর্যন্ত রাজত্ব করেন মুফতি আজহার উদ্দিন সিদ্দিকি  অনেক ঐতিহাসিকের মতে, শামস উদ্দিন ফিরোজ ভারত সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজির অধীনে হয়ত করদ রাজা ছিলেন, তাই সিলেট বিজয় উপখ্যানে দিল্লি ও এ সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজির উল্লেখ রয়েছে। উপাখ্যানে সিলেট অঞ্চলে তখন শাসনদন্ড পরিচালনাকারী দুইজন রাজার নাম শোনা যায়, একজন সিলেটের রাজা গৌড়গোবিন্দ এবং অন্যজন তরফের (হবিগঞ্জ) রাজা আচক নারায়ন।
১২০২ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বাংলায় প্রথম মুসলিম বিজয় অভিযানের একশত বছর পর ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে সিলেট বিজয়ের মাধ্যমে পুরো পুর্ব ও পশ্চিম বাংলা মুসলিম সালতানাতের অংশে পরিনত হয়।   

সূত্রগ্রন্থ
: "বৃহত্তর সিলেটের ইতিহাস" প্রকাশক- বৃহত্তর সিলেট ইতিহাস প্রনয়ণ পরিষদ, প্রকাশকাল- নভেম্বর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ
"সিলেটে ইসলামের জ্যোতি" লেখকঃ মুফতি আজহার উদ্দিন সিদ্দিকি  প্রকাশকাল-১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ। 
রাখাল দাস বন্ধ্যোপাধ্যায়ের "বাংলার ইতিহাস' এবং ডঃ আব্দুল করিমের "বাংলার মুসলিম ইতিহাস"।

  
        চিত্রঃ কবি, লেখক ও ব্লগার ইসফাক কুরেশী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন