গৌড়ের সুলতান শামসউদ্দিন ফিরোজের ভাগিনেয় সিকান্দর খান গাজী তার অবস্থান পশ্চিমবঙ্গের সাতগাঁও দুর্গ এবং পূর্ববঙ্গের সোনারগাও দুর্গের মুসলিম সেনাবাহিনী একত্রিত করে শ্রীহট্ট অভিমুখে রওয়ানা হন। পূর্ববর্তী অভিযানে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা সোনারগায়ের সৈনিকরাও এতে অংশগ্রহন করেন। সিকান্দর গাজী সেনাবাহিনীসহ শ্রীহট্ট সীমান্তে উপনীত হন। সিলেট পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল অঞ্চল। তখন ছিল বর্ষাকাল। প্রবল বর্ষনে চতুর্দিক জলে সয়লাব হয়ে পড়ে। আর্দ্র আবহাওয়ায় গৌড়ের সৈন্যরা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। মুসলিম সেনাদলে তখন প্রচুর পশ্চিমদেশীয় লোক নিয়োজিত ছিলেন, যারা এদেশীয় আবহাওয়ায় অভ্যস্থ নন। জ্বরাক্রান্ত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলিম সেনারা এই রোগবালাইকে রাজা গোবিন্দের যাদুবিদ্যার প্রভাব জনিত উপদ্রপ মনে করে নিতান্ত ভীত ও নিরোৎসাহিত হয়ে পড়েন। মুসলিন সৈন্যগন নদী পার হয়ে গোবিন্দের রাজ্যে প্রবেশে সচেষ্ট হলে আড়াল থেকে গোবিন্দের সৈন্যরা আবার তীরের মুখে জ্বালানী মিশ্রিত ন্যাকড়ায় আগুন লাগিয়ে নিক্ষেপ করলে বহু মুসলিম সেনা হতাহত হয় এবং তাহারা এগুলো গোবিন্দের যাদুর অগ্নিবান মনে করে ভীতসন্তস্ত্র হয়ে পড়েন ও নদী পার হতে ব্যর্থ হন। ফলে সিকান্দর গাজী সামনের দিকে অগ্রসর না হয়ে সিলেট রাজ্যের সীমান্তে এক বৃহৎ নদীর তীরে শিবির স্থাপন করে আরও সৈন্য ও যাদুটুনা প্রতিহতকারী কোন আধ্যত্মিক পুরুষ পাঠানোর জন্য গৌড়ের সুলতান শামসউদ্দিন ফিরোজ বরাবরে আবেদন পেশ করেন।
রাজা গোবিন্দের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বারবার ব্যর্থতায় বুরহান উদ্দিন যারপরনাই দুঃখিত হন, এমনকি তিনি ভগ্নমনে পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য দেশত্যাগ করে পবিত্র মক্কা গমন করতে মনস্ত করেন। তিনি মক্কা যাত্রা শুরু করে পথিমধ্যে যখন দিল্লীতে উপস্থিত হন। ঘটনাক্রমে হজরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার খানকায় তখন বিখ্যাত দরবেশ শাহজালালের সহিত তাহার দেখা হয়। তিনি পূর্বাঞ্চলে ইসলাম ধর্মের অবমাননা, নিজের দুর্দশা ও পবিত্র মক্কা-মদীনা যাওয়ার সংকল্পের কথা তাঁহাকে জানান। বুরহান উদ্দিনের কাছে বিস্থারিত শোনে শাহজালাল মর্মাহত হন ও এর প্রতিবিধানকল্পে তার দরবেশদল নিয়ে বাঙ্গালার দিকে রওয়ানা হন। তখন বুরহান উদ্দিন নবোৎসাহে পথপ্রদর্শকরূপে তাহাকে নিয়ে সিলেট অভিমুখে পুনরায় পথ চলেন। পথে পথে মৃত্তিকা পরীক্ষা করে করে শাহজালাল বাঙ্গালার দিকে অগ্রসর হন। শাহজালাল দিল্লী হতে পূর্বদিকে প্রস্থানের পর শায়েখ শামসুদ্দিন মুহাম্মদ, দওলত মুনির, হুসামুদ্দিন বিহারী, মুজাফ্ফর বিহারী সহ আরও অনেকে গন্য মান্য ব্যক্তিবর্গ শাহজালালের শিষ্যত্ব গ্রহনপূর্বক তাঁর কাফেলায় যোগ দিয়ে তাঁর অনুগামী হন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন