Pages

প্রকাশিত গ্রন্থ-সমূহ

শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

সুরমা পারের অজানা কবরগায়


সুরমা পারের অজানা কবরগায়
পলিটেকনিক কলেজের সুউচ্চ ছাদ হতে,
একদিন চোখ মেলে দেখছিলাম আমি,
সুরমাপারের সোনার নগরী শ্রীহট্টকে
যার পরতে পরতে আমি নিত্য বিরাজমান।
টিলা-বাড়ী-নদী,
সবুজের পর সবুজ,
নীলজলের প্রবাহধারা।
সুরমার প্রবাহমান জলের মত, 
গতিশীল হয়ে গেল আমার মন।
 উদাস হলাম বসন্তের চঞ্চল বাতাসের মত,
আর আমি মিশে গেলাম,
দূর বহুদূরে, গ্রাম হতে গ্রামান্তরে,
সীমাহীন সীমানায়।
ক্রমশঃ হাঁটিতে থাকি আমি সুরমার পার ধরে
অজানার পানে।
ক্লাস ফেলে, সহপাঠি তাও ফেলে,
অতি সংগোপনে।
একাকী নিরবতার সন্ধানে ছুটে চলেছি আমি,
চলছি, চলছি, আচমকা থেমে গেল গতি,
চেয়ে দেখি, নদীপারে অসংখ্য গর্ত,
নিদমহলের ছাদ ধ্বসে পড়েছে,
চিরনিদ্রিতদের চাপা দিয়েছে,
তাদেরই মাটির বিছানায়।
 বাঁশের দাঁত কুঁজো করে চেয়ে আছে 
ক্ষুধার্থ হা-মেলে, আকাশের পানে।
পাশে বহমান তার চিরকালের সুরমার জল।
হৃদয়ের মণিকোঠা খোলে গেল, দেখলাম-
অগণিত মানুষের জীবনের ছবি, 
 কাফনের ছবি, দাফনের ছবি, 
 চিরযাত্রি মানুষের বাসনার শেষ,
আশাহত মানুষের আশার সমাপ্তি।
কানায় কানায় শুধু অন্ধকার যন্ত্রনার ঘর,
অথচ পাশে বহে সুশীতল শান্তির জল।

এক বাস্তব সত্য তখন উদিল এই মনে,
দেখলাম, আমার হৃদয়ের সুবিস্তৃত জমিনে,
অসংখ্য মাটির পাষান গর্ত আছে ছেয়ে।
সারাটা হৃদয় হয়ে গেছে ছিন্ন-বিছিন্ন,
কবরের পর কবর, 
গর্তের পর গর্ত, 
পচা বাশের দাতাল ফলা। 
মাটিচাপায় নিস্পিষ্ট পৃথিবীর দাপুটে প্রাইমেটর,  
আখলাকুল মাখলুকাতের দল। 
   
কৈশোরের ফ্রক ছেড়ে যৌবনের সদ্য শাড়িপরা,
এই শাহজাদা সেলিমের মন পাগল করা,
রূপে-রূপে অপরূপা কোন এক সুন্দরী মেহেরুন্নেছায়,
আমাকে সাজিয়েছে আজ, সুরমাপারের এই কবরগায়।

টিকাঃ 
সেলিম- সম্রাট জাহাঞ্জীর, মেহেরুন্নেছা- সম্রাঞ্জী নুরজাহান
রচনাকালঃ
আমার সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট জীবন।
(১৯৮৪-৮৬সাল)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন