Pages

প্রকাশিত গ্রন্থ-সমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৬

উন্নয়নে পিছিয়ে যাচ্ছে সিলেট

উন্নয়নে পিছিয়ে যাচ্ছে সিলেট
চৌধুরী ইসফাকুর রহমান কুরেশী

এই নগর আমাদের স্বপ্নপুরী। আসুন সরকার, কর্তৃপক্ষ ও জনগণ সবাই মিলে নগরটাকে বিশ্বের একটি আদর্শ নগর হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হই। বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহৎতম এই শহরটি একটি আদর্শ ও স্বাস্থ্যকর নগর হিসেবে গড়ে উঠুক এমনটি কামনা করছি।

বর্তমানে সিলেটের উন্নয়ন ও সমস্যা নিয়ে যখন স্বপ্ন দেখি। তখনই মনে হয় উন্নয়নে কেমন যেন এক স্থবিরতা বিরাজ করছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব এম. সাইফুর রহমানের সময়ে যেভাবে দ্রুত ও ত্বরিৎ গতিতে সিলেটের উন্নয়ন হচ্ছিলো, একের পর এক নতুন নতুন সকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিলো ১/১১ এর পর তা থেমে যায়। ঐ সময়ের সিলেটের প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিভাগীয় স্টেডিয়ামসহ অনেক অনেক প্রতিষ্ঠান। প্রশস্থ হয়েছে রাস্তাঘাট, ডাবল সড়কে পরিণত হয়েছে চৌহাট্টা হতে রিকাবীবাজার ও মেন্দীবাগ হতে সোবানীঘাট সড়ক। ক্বিনব্রীজ সুসজ্জিত হয়েছে। মনোরম সাজে সজ্জিত হয়েছে চাঁদনীঘাট সুরমা নদীর পার। স্টেডিয়াম, ঈদগাহ, দরগাহ, মসজিদ, মন্দির সর্বত্রই উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দেন সিলেটের কৃতিপুরুষ মরহুম সাইফুর রহমান। আমরা রাজনীতি করি না। কোন রাজনৈতিক দলের সদস্যও নই। আমরা একটা জিনিস বুঝি তা হলো- সবধরনের সমস্যার সমাধান এবং দ্রুত ও ধারাবাহিক উন্নয়ন। সিলেট শহরের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দু’টি ব্রীজ ও বাইপাস সড়ক নির্মিত হওয়ায় ট্রাক ও বড় গাড়ীগুলোর যানজট হতে অনেকটা মুক্ত হয়েছে নগরবাসী। ক্বিনব্রীজ সিলেটের ঐতিহ্য ও প্রাচীন স্থাপনা হিসাবে গণ্য হওয়ায় ক্বিনব্রীজকে ভেঙ্গে নতুন প্রযুক্তিতে বৃহৎ ব্রীজ উক্ত স্থানে নির্মাণ করা হয়নি। যানবাহন নয়, কেবল মাত্র পদযাত্রা ও রিকশা পরিবহনের জন্য সংস্কার করা হয় ব্রীজটি। বৃহৎ যানবাহন পারাপারের জন্য কিনব্রীজের বিকল্প হিসেবে শেখঘাটে আরেকটি সেতু নির্মাণের কাজ জনাব সাইফুর রহমানের বিশেষ নজরদারীতে সূচনা হয়েছে। আমি পূবালী ব্যাংকের বরইকান্দি শাখার ব্যবস্থাপক। আমার বাসা শহরের সাগরদিঘীরপার। গাড়ী নিয়ে আমার অফিসে যেতে হলে মেন্দিবাগ কদমতলী হয়ে প্রায় ৪ মাইল জায়গা ঘুরে যেতে হয়। অথচ শেখঘাট ব্রীজ হলে মাত্র দেড় মাইল দূরে কার নিয়ে অফিসে যাওয়া আসা সম্ভব হতো। যে জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রীজটির সত্তুর ভাগ কাজ সমাধা হয়ে আছে মাত্র ত্রিশ ভাগের মত কাজ বাকী আছে সেই কাজটি কেন যে আটকে আছে তা সিলেট ও দক্ষিণ সুরমাবাসীর বোধগম্য হচ্ছে না।

সিলেটে অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোন গঠনের সংবাদ প্রায়ই শোনা যায়, কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই। সাইবার বা সফটওয়্যার নগরী হিসেবে এই নগরকে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। তাঁর স্বপ্ন স্বপ্নই রয়েছে বাস্তবের মুখ দেখেনি। এই সিলেট প্রবাসী বহুল অঞ্চল। এখানে প্রবাসী বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। আমাদের প্রবাসীরা যদি বিনিয়োগের সুযোগ পান ও দেশের আইটি ইঞ্জিনিয়ারগণ সচেষ্ট হন তবে সিলেটই হবে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আই.টি সিটি। বর্তমানে সিলেট শহরে বহুতল ভবন নির্মাণের সংস্কৃতি চলছে। নগরের ছোট ছোট রাস্তার পাশে নির্মিত হচ্ছে ১৫/১৬ তলা বৃহদাকার ভবন। একটি বিল্ডিংয়ে নির্মিত হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০টির মত বাসাবাড়ি। এক একটি ভবনে ঢুকে পড়ছে এক একটি গ্রামের সমপরিমাণ মানুষ। ভবনের পাশের ছোট রাস্তা, ড্রেন, পানি সরবরাহ এত মানুষের চাহিদা পূরণে কতটুকু সক্ষম তা ভাবা হচ্ছে না। বন্দরবাজার হতে আম্বরখানা পর্যন্ত ছোট রাস্তাটির দুই পাশে সিটি কর্পোরেশন অসংখ্য বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি কিভাবে দিচ্ছেন জানিনা-ফলে এই সব ভবনে আগত মানুষ ও যানবাহনের ভার রাস্তাগুলো ধারণ করতে পারছে না। অসহনীয় যানজট জনজীবনকে অচল করে ফেলেছে। তারপর জনগণের পায়ে হাঁটার জন্য ফুটপাতটুকুও অবৈধ ব্যবসায়ীরা দখল করে আছে। রাস্তার মধ্যভাগ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পথচারী দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তা নিয়ে মানুষে মানুষে হচ্ছে মারামারি, ঝগড়াবিবাদ। আমাদের জোর দাবী ফুটপাতগুলোকে জনগণের হাঁটার জন্য পুরোপুরী অবমুক্ত করা হউক। কোন হকারকে যেন ফুটপাতে উঠতে দেওয়া না হয়। সিটি কর্পোরেশনের কাছে আমাদের পরামর্শ বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানায় সিলেট শহরকে কেন্দ্রিভূত না করে শহরটাকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিন। এই এলাকার আর বহুতল ভবন নির্মাণে অনুমতি বন্ধ করা হলে ব্যবসায়ীরা দূরে দূরে ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য হবেন। বন্দরবাজার হতে আম্বরখানা পর্যন্ত দ্বিতল সড়ক নির্মাণেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে যানজট অনেকটা কমে আসবে। যে শহরে ২০/২৫ বৎসর পূর্বও প্রতিটি বাসার বাগানে ফুল ফুটতো, মৌ মৌ ফুলের সুগন্ধ ভেসে বেড়াতো বাতাসে, সে শহরে আজ এমনভাবে বাসাবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে যে, আলো বাতাসও ঢুকতে পারছে না। আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। বাসা নির্মাণে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় জায়গা ছাড় দিতে হবে। এই নগরে পূর্বকালে অনেক অনেক দীঘি ছিল। ভূমিখেকোরা সরকারের দূর্নীতিপরায়ণ লোকদের সহায়তায় সবকিছু খেয়ে ফেলছে। এখনও যে সব দীঘি ও সরকারী জায়গা রয়েছে তা রক্ষা করা অতি প্রয়োজন। একটা আদর্শ নগরে রাস্তা ছাড়া আরও ২৫ ভাগ খালি জায়গা থাকা প্রয়োজন যা পরিবেশ রক্ষার্থে বৃক্ষ শোভিত থাকবে। অথচ এ নগরে যেভাবে দখল শুরু হয়েছে অচিরেই শহরটি ইটকংক্রীটের এক অস্বাস্থ্যকর বৃক্ষহীন জঞ্জাটে পরিণত হবে।
এই নগর আমাদের স্বপ্নপুরী। আসুন সরকার কর্তৃপক্ষ ও জনগণ সবাই মিলে নগরটাকে বিশ্বের একটা আদর্শ নগর হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হই। বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম এই শহরটি একটি আদর্শ ও স্বাস্থ্যকর নগর হিসেবে গড়ে উঠুক এমনটি কামনা করছি।

[প্রকাশ কাল: দৈনিক সিলেটের ডাক, ২ আগষ্ট, ২০১০ইং



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন