লেখকের কথা



উ ৎ স র্গ

আমার সুখে সবচেয়ে বেশি সুখী হতেন,
আবার
আমার দুঃখে সবচেয়ে বেশি দুঃখ পেতেন, যাঁরা
আমার সাফল্যে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেতেন,
আবার
আমার ব্যর্থতায় সবচেয়ে বেশি মাথা ঘামাতেন যারা,
তারা আর কেউ নন,
আমার শ্রদ্ধেয় জনক-জননী।
স্বর্গবাসী জগত বরেণ্য পিতা, সফিকুর রহমান চৌধুরী
ধার্মিকা, বিদুষী, অনন্যা রমণী মাতা, আসমতুন্নেছা চৌধুরী।
তাঁরা সারাটা জীবনভর নিজেকে উজাড় করে,
সম্পূর্ণ একতরফা,
আমাকে কেবল দিয়েই গেছেন,
কোনদিন ফিরে পেতে চান নি কিছু।
হতভাগ্য আমিও দিতে পারি নি কোন প্রতিদান।
তাঁদের এক মহাসমুদ্র নিঃস্বার্থ ঋণ,
কোন বিনিময়ে শোধ হবার নয়, কোনদিন।
তাইতো
আমার জীবনের শতসাধনার ধন,
এই 'ইসফাক কুরায়শী রচনাসমগ্র'।
জনক ও জননীর পবিত্র স্মরণে অবনত মনে,
করিলাম উৎসর্গ।



মাতাঃ আসমতুন্নেছা চৌধুরী




                                          পিতাঃ স ফিকুর রহমান চৌধুরী


 লেখকের কথা

একই মলাটের কভারে সম্পূর্ণ আলাদা ভাষা, বিষয়বস্তু ও আঙ্গিকে লিখা দশটি গদ্য ও কবিতার বই প্রকাশিত হচ্ছে। পাঠক হয়তো ভাবতে পারেন হাজার পৃষ্ঠারও অধিক এই রচনাসমগ্র সদ্য লিখা। না, তা নয়! বিগত ৩০ বৎসরেরও অধিক সময় কালে এই গ্রন্থগুলো আমি রচনা করেছি। ১৯৭৭ সালে শুরু ও ২০১১ সালে তার পরিসমাপ্তি। শুরুতেই ‘আরম্ভ রাগিনী’ কাব্যগ্রন্থ, নতুন প্রচেষ্টা, তাই কিছুটা অপূর্ণতার ছাপ। পরক্ষণেই সব ধরনের শোষণ নির্যাতনের প্রতিবাদে কাব্যগ্রন্থ “আমার রক্তে যদি”। তারপর গরীবের প্রেম, তথা বামনের চাঁদ ছোঁয়ার স্বপ্নভরা কাব্য “যে প্রাণে আগুন জ্বলে”। জন্মভূমি সিলেটের প্রকৃতি ও সৌন্দর্যের ছায়াচিত্র “সিলেট তোমার নাম, কবিতা দিলাম”। খন্ডখন্ড ভাবের বুদবুদ সনেট কাব্যগ্রন্থ “রমণীয় পৃথিবীর বুকে”। আমার কাব্য মানসে বাংলার ষড়ঋতুর বিবরণ “ঋতুচক্রে ইসফাক”। সিলেট পলিটেকনিকে অধ্যয়নকালে আমি ১৪টি গল্প লিখি। এসব গল্পগুলো একত্র করে হয়েছে গল্পগ্রন্থ “ঝরাপাতা”। ছাত্র ও চাকুরি জীবনে পত্রিকায় মাঝেমধ্যে প্রকাশিত হয় বেশ কিছু প্রবন্ধ। অনেক হারিয়ে যাবার পরও যা রয়েছে, তা নিয়ে প্রবন্ধ সংকলন “সময়ের দিনলিপি”। চাকুরি জীবনে বিশেষ করে শুক্রবারের ছুটির দিনগুলোতে রচনা করা দুই শতাধিক ভাব ও ভক্তি সংঙ্গীতের ধারায় রচিত গানের বই “লালগোলাপ”। হজরত শাহজালালের(রঃ)  প্রথম ১২ জন সহচরের অন্যতম হজরত শাহদাউদ কুরায়শীর(রঃ) একজন বংশধর হিসেবে আমি তার কুষ্টিনামা ও তাঁর বংশধর দাউদপুর চৌধুরীগণের ইতিহাস সম্পর্কীয় একটি পান্ডুলিপি ছাত্রজীবনে তৈরী করি এবং এই তথ্যগুলো “শাহজালাল(রঃ) ও শাহদাউদ কুরায়শী(রঃ)” নামক গ্রন্থের তৃতীয় পর্বে সংযুক্ত করি। ২০১১ সালে উক্ত গ্রন্থের প্রথম পর্বে বিশ্ববিশ্রুত ওলিআল্লাহ হজরত  শাহজালাল(রঃ) ও দ্বিতীয় পর্বে  তাঁর ৩৬০ আউলিয়ার বিবরণ ও ইতিহাস রচনা করে উক্ত গ্রন্থে সংযুক্ত করি।
এত বৎসর আমার বইগুলো কেন প্রকাশিত হয় নি, তারও একটি কারণ রয়েছে। ছাত্রজীবনে বই প্রকাশের প্রচন্ড ইচ্ছা নিয়ে একজন ধনীলোকের কাছে ধরনা দেই। লোকটি অনেক দিন আমাকে তাঁর অফিসে দৌঁড়ায়। তারপর পিছিয়ে যায়। সেদিন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই যদি কোনদিন আমার আর্থিক সামর্থ্য হয় তবে নিজের অর্থে বই প্রকাশ করব, কারও কাছে ধরনা দেব না। আর কখনও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে এজন্য ধরনা দিতে যাই নি। চাকুরি ও ব্যবসার ব্যস্ততায় এতগুলো বই ছাপানোর জটিল কর্মযজ্ঞে নামার সময় ও সাহস দু’টি আমার হয়ে উঠে নি।
২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল পূবালী ব্যাংক লিমিটেড বরইকান্দি শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করি। একদিন চেম্বারে আসেন সিলামের এক তরুণ মোঃ মিজানুর রহমান চৌধুরী। প্রসন্নভাগ্য চেহারার ভদ্রলোক ধরণের এই তরুণটি আমার পান্ডুলিপির কাহিনী শুনে তাদের প্রেসে  কাজ আরম্ভ করার প্রস্তাব দেন। তার অভিব্যক্তি দেখে মনে হল- এ আর এমন কি, যেন একেবারে ডালভাত। সে বছর হজ্জ্বে গমনকালে পান্ডুলিপি তুলে দিলাম, তার ছোট ভাই রুমেল চৌধুরীর হাতে। তিনি দিবস-রজনী শ্রম দিয়ে যান। কাবাঘর প্রথম দর্শনে আল্লাহর দরবারে যা চাওয়া যায় তাই নাকি হয়ে যায়। হজ্জ্ব শেষে অফিসে ফিরে বসতেই দেখি সবগুলো পান্ডুলিপির কম্পোজ চেম্বারে হাজির। কাবাঘরে খোদার কাছে চাওয়া একটি প্রার্থনার এযেন দ্রুত বাস্তবায়ন।
প্র“ফ দেখতে এগিয়ে আসেন আমার প্রিয়জন দৈনিক সিলেটের ডাকের বার্তা সম্পাদক আব্দুস সবুর মাখন ভাই, কুদরতউল্লাহ মসজিদ মার্কেটের শাহিন লাইব্রেরির মালিক বন্ধু শাহিন আহমদ, নানা বুদ্ধি দিয়ে সহায়তা করেন মোহাম্মদি অফসেট প্রেসের মালিক সামিম চৌধুরী। শ্রদ্ধার সাথে মনে পড়ল আমার লেখালেখির প্রথম উৎসাহ দাতা, বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী সহপাঠি ও বন্ধু সিদ্দিকুর রহমান নির্ঝরকে। আর এই রচনা প্রকাশে স্বেচ্ছায় আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসেন আমার পত্নী ডাঃ নুরজাহান বেগম চৌধুরী। তারা সবাই একেবারে নিঃস্বার্থভাবে আমার এই কর্মকান্ডে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে যে সহায়তা ও শ্রম দিয়েছেন, সেজন্য অন্তরের অন্তঃস্থল হতে তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা জানাই।
আমি একজন সামান্য মানুষ। মানুষ কখনও ভূল ত্র“টি সমালোচনার উর্দ্ধে নয়। মানুষ হিসেবে আমারও নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমার সব অপারগতা ও সীমাবদ্ধতার জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমার এই লেখামালা যদি পাঠকের কাছে সামান্যও ভাল লাগে, সামান্যও প্রশংসা পায় এবং উন্নত শিল্প হিসেবে মানুষের প্রজন্ম হতে প্রজন্মে ঠিকে থাকার যোগ্য হয়, তাহলে আমার এই সাধনা ও শ্রম সার্থক হবে।

চৌধুরী ইসফাকুর রহমান কুরায়শী


                                   চিত্রঃ পুত্র জেফার ও আমি ইসফাক কুরেশী

২টি মন্তব্য:

  1. Yes, I read your biography; really nice to know that. We might be classmate MC in 1983. But we forgot each other. Anyhow wish you good health and keep it up your good work. -Pappu from Kuwait

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. তোমাকে ধন্যবাদ বন্ধু আমাকে প্রেরনা দেওয়ার জন্য। প্রবাসে সুখে থেকো? দেশে এলে দেখা হবে ইনশাহ আল্লাহ্‌।

      মুছুন