যুগ যুগ ধরে একদল জন্মান্ধ মানুষ,
বেঁচে আছে এগ্রহের আমাজন অরণ্যদুর্গে।
বাস্তব সুন্দর পৃথিবী ওরা দেখেনি কোনোদিন,
চিরবন্দি তাঁরা এক কল্পনার অলীক স্বর্গে।
ঢালাই লোহার প্রাচীর ঘেরা শক্ত এ স্বর্গে,
নেই উদাস আকাশ কিংবা বিশুদ্ধ বাতাস।
নেই এই পৃথিবীর বৈচিত্রের রূপ-রস-গন্ধ,
স্বেচ্ছা সে কারাবাসে নেই, বিজ্ঞানের বাস।
ভয়ঙ্কর লৌহদুর্গে বন্দি কাটে দিনের পর দিন,
জনম, জীবন, বাঁচন মরণ, এখানে গুরুস্থান।
সভ্যতার অন্তরালে ভ্রান্তির মায়ায় বহে যুগধারা,
দর্শনের যুক্তবাদ ওরা কখনও করেনি সন্ধান।
একদা দুর্দান্ত কিশোর এক কৌতুহলী হয়ে,
শাবল মেরে প্রাচীর করল ফোটা।
সংস্কারের দোহাই দিল ভিতরের সবাই,
বাঁধার মুখে একাই সারলো সে দেয়াল কাটা।
ফোটো দিয়ে এক বিষাক্ত কালো নাগ,
অদম্য ছেলেটাকে দিল এক মরণ ছোবল।
ভূমিতে লুটিলো অকালে দামাল তরুণ,
কেল্লার বন্দিরা সব হল তাতে চঞ্চল।
অবাক বিষ্ময়ে দেখল সবাই বন্ধচোখ মেলে,
জগত ও জীবনের মোহময় যাদুকরী রূপ।
লালরবি, রূপাচাঁদ, পুস্পমেলা, বসন্তের মায়া,
রজনীর অন্ধকারে জুনাকিরা জ্বলে অপরূপ।
পৃথিবীর বনলতা, বৃক্ষপাতা, উদাস প্রান্তর,
নয়নে নামলো যাদু, প্রাণে ভরে দিল গান।
জুড়ালো যুগেযুগে চিরবন্দি অন্ধ অন্তর,
মহা উৎসাহে শুরু হল ইট ভাঙ্গার গান।
নরখাদক নেকড়ের পাল এলো ছুটে,
দেয়াল ভাংতে যখন লাগলো সকলে,
পচা লাশের গন্ধে বাতাস উঠলো কেঁদে,
জনকতক গেল তাদের উদর পাতালে।
নেকড়ের থাবায় আত্মরক্ষায় লোক,
ঘুমভেঙ্গে শতাব্দীর উঠলো সবে জেগে।
ভয়ঙ্কর বাঁধভাঙ্গা স্রোতের মতন,
শাবল হাতে যুক্তির চিরমুক্তির অনুরাগে।
ভাঙ্গলো হঠাৎ লোহার দেয়াল,
এ প্রাচীর ভাঙ্গার কেউ কখনও করেনি খেয়াল।
অজস্র শতাব্দীর শীতনিদ্রার পর,
মুক্ত হলো, অবরুদ্ধ এক দুর্গের ভিতর।
প্রাচীর ভাংতে যে অকুতোভয় সর্বাগ্রে সপেছিল তাঁর প্রাণ,
দুর্গে তাঁর মূর্তি হলো, জনতা দিলো তাঁরে সশ্রদ্ধ সম্মান।
রচনাকালঃ কলেজ জীবন (১৯৮১-৮৬সাল)

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন