সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসকদের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা
করা হচ্ছে না কেন?
চৌধুরী
ইসফাকুর রহমান কুরেশী / ডাঃ নূরজাহান বেগম চৌধুরী
সিলেট আজ বিভাগীয় শহর,
তাছাড়া দেশের পঞ্চম বৃহৎ নগরীও। ঢাকা, চট্টগ্রাম,
খুলনা ও রাজশাহীর পরই লোকসংখ্যা কিংবা
আয়তনে এই নগরের স্থান। তিন দিকে ভারতীয় সীমান্ত ঘেরা বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব কোণে
সিলেট বিভাগের অবস্থান। এই বিভাগের এককোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় একমাত্র আশা
ভরসার স্থল হচ্ছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও এই কলেজ সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল।
বাংলাদেশের প্রথম স্তরের ঐতিহ্যবাহী মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে সিলেট ওসমানী মেডিকেল
কলেজ অন্যতম। যে কলেজটি বাংলাদেশের চিকিৎসক ঘাটতি পূরণে সেই পাকিস্তান আমল তথা
১৯৬৫ইং থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। স্বাধীনতার পর এই কলেজের অনেক
পরিবর্তন হয়েছে। নতুন ৭০০ বেডের বৃহদাকার হাসপাতাল চালু হয়েছে। কিন্তু
শিক্ষাক্ষেত্রে এম.বি.বি.এম কোর্সের বাইরে কোন উচ্চশিক্ষা কোর্স এখনও চালু হয়নি।
কলেজটি বেশ কয়েক বৎসর পূর্বে বৃটিশ মেডিকেল কাউন্সিল কর্তৃক রিকগনাইজডও হয়েছে।
মেডিকেল কলেজটির সমগোত্রীয় ও সম মর্যাদা সম্পন্ন মেডিকেল কলেজ যেমন চট্টগ্রাম
মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক পূর্বেই দেশে
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে পূরনার্থে মেডিকেল সাইন্সের বিভিন্ন বিষয়ের উপর
এম.বি.বি.এস চিকিৎসকগণের জন্য এক বৎসর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়েছে। অথচ
সিলেট বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তীব্র অভাব সত্ত্বেও কোন এক অদৃশ্য কারণে এখানে
ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হচ্ছে না। বর্তমানে এই বিভাগীয় শহরে উক্ত সরকারী মেডিকেল
কলেজ ছাড়াও আর দুইটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ সরকারের অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
একটি হচ্ছে জালালাবাদ আর.আর. মেডিকেল কলেজ। তারাপুর সিলেট এবং অন্যটি হচ্ছে
নর্থ-ইস্ট মেডিকেল কলেজ,
তেলিহাওর, সিলেট।
এ দু’টি মেডিকেল কলেজ চালু হবার খবর সিলেটবাসীর জন্য আনন্দের বিষয়। প্রথমঃ সিলেট
চিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসক বৃদ্ধিতে প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতে বিরাট অবদান রাখবে।
দ্বিতীয়তঃ সামর্থ্যবান ও মেধাবী ছাত্ররা যারা সরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে
ব্যর্থ হবে তারাও তাদের ইচ্ছে পূরণের সুযোগ পাবে এই দু’টি বেসরকারী মেডিকেল কলেজের
মাধ্যমে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- যেখানে এই শহরে তিনটি মেডিকেল কলেজ চালু হয়েছে, সেখানে সরকারী মেডিকেল কলেজ কি সেই মান্ধাতার আমলের একমাত্র
এম.বি.বি.এস. কোর্স চালু রেখেই তাদের দায়িত্ব পালন করে যাবে?
বর্তমানে সিলেট বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের যে তীব্র অভাব
রয়েছে- তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। হাতে গোনা কয়েকজন বিভিন্ন বিভাগে ডিপ্লোমা
ও এম.সি.পি.এস ডিগ্রী ধারী বিশেষজ্ঞের কাছে হুমরী খেয়ে পড়ে সারাটা বিভাগের রোগীরা।
এমনও ডাক্তার রয়েছেন যারা প্রতিদিন ৭০/৮০ জন রোগী দেখেন। একজন
ডাক্তারও মানুষ। প্রত্যেক মানুষের একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক রোগী
দেখতে হলে প্রতিটি রোগীর পিছেনেও যে সময় দেওয়া প্রয়োজন, তা তার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রোগ নির্ণয়ে মারাত্মক
ধরনের ভুল ভ্রান্তি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া মুমূর্ষু রোগীকে চেম্বারে বসে
দীর্ঘক্ষণ তীব্র যন্ত্রণার শিকারও হতে হয়। গড়ে ৫০,০০০
মানুষের জন্য দেশে একজনমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। সিলেট বিভাগে এই সংখ্যা আরও
কম হবে। কাজেই সিলেট বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাড়ানো অবশ্য প্রয়োজন এবং এজন্য
উত্তম ব্যবস্থা হচ্ছে ওসমানী মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স চালুকরণ।
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিক/ হাসপাতাল ও এন.জি.ও
হাসপাতালগুলোতে, এমন কি সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতেও যে সব
এম.বি.বি.এস. ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন,
তাদের পক্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম প্রভৃতি শহরগুলোতে এক বৎসর অবস্থান করে ডিপ্লোমা
কোর্সে অধ্যয়ন অত্যন্ত কষ্টকর। অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। বেসরকারী ক্লিনিক কিংবা
এন.জি.ও হাসতালাগুলোতে উচ্চ শিক্ষা কোর্সের জন্য ছুটি কিংবা প্রশিক্ষণ ভাতা
পাওয়াটাই অসম্ভব। আর সরকারী ডাক্তারদের ক্ষেত্রে ছুটি ও প্রশিক্ষণ ভাতা নিয়ে বাইরে
বছর খানেক অবস্থানের ফলে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও প্রতিষ্ঠানও ভূগান্তির
শিকার হয়। কাজেই সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স
চালুকরণ আজ সময়ের দাবী,
এই দাবী পূরণে আমরা যদি ব্যর্থ হই তবে
যুগের চেয়ে পিছনে পড়ে যাবো। কাজেই উক্ত বিষয়টি বর্তমানে অত্যন্ত জন গুরুত্বপূর্ণ ও
সিলেট বিভাগবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় ঘনিষ্টভাবে সম্পৃক্ত। সিলেটবাসীর স্বাস্থ্যসেবা
বৃদ্ধিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৃষ্টির জন্য ও সিলেটের ডাক্তারদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ
সৃষ্টির জন্য আমরা মেডিসিন,
গাইনী ঈযরষফ যবধষঃয , কার্ডিওলজী,
স্কিন, সার্জারী, ই.এন.টি.আই.,
নিউরোলজী, সাইকোলজী
ইত্যাদি বিষয়ের উপর ডিপ্লোমা কোর্স চালুকরণের জোর দাবী জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে
মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী,
সিলেটের মন্ত্রী মহোদয় ও এম.পি. মহোদয়গণ
ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
[প্রকাশ কাল: দৈনিক সিলেটের ডাক, ৭ জানুয়ারী,
১৯৯৯ইং]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন