পূবালী ব্যাংকের পঞ্চাশ বর্ষপূর্তি
চৌধুরী
ইসফাকুর রহমান কুরেশী
[সিলেট বিভাগে পূবালী ব্যাংকের দুইটি
আঞ্চলিক প্রশাসন রয়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জে ৪৬টি শাখা ও মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জে ২৮টি
শাখা রয়েছে। কেবলমাত্র সিলেট শহরে ১১টি শাখা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রায় তিন শত লোক
কর্মরত রয়েছেন। ১৯শে মে ২০০৯ইং এই ব্যাংকের গৌরবময় ৫০ বর্ষপূর্তিতে পূবালী ব্যাংকের
সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী, আমানতকারী
ও সেবাগ্রহণকারীকে ব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করা হয়। পূবালী ব্যাংক সেবা
ও উন্নয়নে সামনের পানে এগিয়ে যাক। পূবালী ব্যাংক চিরজীবী হোক।]
বাংলাদেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে পূবালী
ব্যাংক লিমিটেড এখন তার গৌরবময় সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে। ১৯মে ২০০৯ ব্যাংকটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে। ১৯৫৯সালের ১৯মে চট্টগ্রামের টেরিবাজারে
ব্যাংকটির যাত্রা শুরু হয়। ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন চট্টগ্রামের মোহাম্মদ নিজাম ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন কুমিল্লার চিওড়ার খানবাহাদুর মখলেসুর রহমান। ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক নামে যাত্রা শুরু করা এই
ব্যাংকটি পাকিস্তান আমলে বাঙ্গালি মালিকানাধীন একমাত্র বেসরকারি ব্যাংক, যার প্রধান কার্যালয় পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে ছিল।
বাঙ্গালি উদ্যোক্তাদের ৬০% এবং স্টেইট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ৪০% অংশীদারিত্বে
১৯৫৯ সালের ১৯মে স্থাপিত আজকের পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের আদি নাম ইস্টার্ণ মার্কেন্টাইল ব্যাংক। দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালে পূবালী ব্যাংক নামে
ব্যাংকটিকে জাতীয়করণ করা হয়।
১৯৮৩সালে কোম্পানি গঠন করে ব্যাংকটিকে বেসরকারিকরণের পথে
অগ্রসর হয় তৎকালীন এরশাদ সরকার। ১৯৮৫ সালে ৫% শেয়ার সরকারের হাতে রেখে বাকী সব
শেয়ার বিক্রি করে দেয়া হয় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছে। বাংলাদেশের সাবেক পুলিশ
প্রধান ও ঢাকাস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সদ্য প্রয়াত ই. এ. চৌধুরী
ঢাকায় অবস্থানরত সিলেটি ব্যবসায়ী ও নিজে লন্ডন গিয়ে সিলেটি প্রবাসীদেরকে দিয়ে উক্ত
ব্যাংকের শেয়ারের এক বৃহৎ অংশ ক্রয় করান। তিনি বেসরকারিকরণের পর ১৯৮৫ সাল থেকে
২০০৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর গতিশীল
অভিভাবকত্বে ব্যাংকটি দুর্বল অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে উন্নত পর্যায়ে চলে আসে। আমরা তাঁর অবদান গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। বর্তমানে পূবালী ব্যাংকের
চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সিলেটের এক শ্রেষ্ঠ ও গুণী সন্তান
জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের সাংসদ হাফিজ মজুমদার ট্রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ আহমদ মজুমদার। উক্ত ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সি.ই.ও হিসেবে
দায়িত্ব পালন করছেন এই সিলেটেরই আর এক কৃতিসন্তান হেলাল আহমদ চৌধুরী। সাবেক এম ডি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের প্রচেষ্ঠায় ব্যাংকটি আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রব্লেম ব্যাংকের তালিকা হতে বেরিয়ে সম্ভাবনাময় ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন সর্বজনাব মনির উদ্দিন আহমদ, শেখ ওয়াহিদুর রহমান,
রুমানা চৌধুরী, ফাহিম ফারুক চৌধুরী,
আহমদ শফি চৌধুরী, মনজুরুর রহমান প্রমুখ।
পূবালী ব্যাংক বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হলেও বহুদিন
রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের অনেক কিছু বহাল থাকে। ইতোমধ্যে ব্যাংক খাতে বিভিন্ন বিধিবিধান আরোপ করায় ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনেক বেসরকারি ও সরকারি ব্যাংকের মত পূবালী ব্যাংকও প্রবলেম ব্যাংক হয়ে পড়ে। কেন্দ্রিয় ব্যাংক পরিচালনা
পরিষদে একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেন। তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইব্রাহীম খালেদ ও
ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ২০০৫ সালে ব্যাংকটি
প্রবলেম ব্যাংকের তালিকা থেকে অবমুক্ত হয়।
২০০৮ইং সনে ব্যাংক ৩৪৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করে। আয়কর প্রদান
পূর্বক নেট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫২ কোটি টাকা। ২০০৮ সনের ৩১শে ডিসেম্বর
ব্যাংকের মোট ডিপোজিট ৭,৩০২ কোটি ও অগ্রীমের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬,১৭৯ কোটি টাকা। শ্রেণিবিন্যাসিত মন্দঋণ মোট ঋণের মাত্র ৩.৫৯%
অর্থাৎ ২২১ কোটি টাকা। মন্দ ঋণ দ্রুত কমে আসছে।
ব্যাংকটি বর্তমানে ৩৭১টি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম
পরিচালনা করছে। যার বেশীর ভাগ শাখাই গ্রাম অঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছে। ২০০০ সালের
মধ্যে ব্যাংকের সবগুলো শাখাকে কম্পিউটারাইজড করা হয়। ২০০৬ সনে ব্যাংক তাঁর নিজস্ব
সফটওয়্যার পি.আই.বি.এস প্রবর্তণ করে। বর্তমানে ব্যাংকের ১০টি শাখা অনলাইন করা
হয়েছে এবং এই বৎসরের মধ্যে অনলাইন শাখা ১০০টিতে উন্নীত করা হবে। ব্যাংকের আধুনিকায়নে নিরলস কাজ করছেন বুয়েট হতে আসা দক্ষ আইটি বিশেষঞ্জ মোহাম্মদ আলী। ব্যাংকটির বর্তমান
কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৬,০০০ জন। এ বৎসর আর নতুন ১০টি শাখা খোলা
হবে। কাজেই এই ব্যাংকে আরও জনশক্তির প্রয়োজন হবে। এই ৬,০০০ কর্মির মাধ্যমে দেশের ছয় হাজার পরিবারের অন্ন সংস্থান করছে
ব্যাংকটি। তাছাড়া আরও লক্ষাধিক পরিবার ব্যাংকের অর্থে ব্যবসা পরিচালনা করে দিন
গুজরান করছে। ব্যাংকটি দেশের বৃহৎ ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় আহসান উল্লাহ
মিশনে ৪ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। পিলখানা ঘটনায় নিহত সেনাকর্মকর্তাদের
পরিবারবর্গের সহায়তায় ও দেশের যে কোন দুর্যোগ দুর্দিনে পূবালী ব্যাংক মুক্তহস্তে
এগিয়ে এসেছে। ঢাকা বার্ডেম হাসপাতালের উন্নয়নে সহজ শর্তে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান
করেছে এই ব্যাংক। পূবালী ব্যাংক বিনা জামানতে মানুষকে বিদেশে কর্মসংস্থানে গমনের
জন্য আড়াই লক্ষ টাকার ঋণ প্রদান ব্যবস্থা চালু করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির এমন
কোন সেক্টর নেই যেখানে পূবালী ব্যাংক সম্পৃক্ত হয় নাই।
সিলেট বিভাগে পূবালী ব্যাংকের দুইটি আঞ্চলিক প্রশাসন রয়েছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জে ৪৬টি শাখা ও মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জে ২৮টি শাখা রয়েছে। কেবলমাত্র
সিলেট শহরে ১১টি শাখা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রায় তিন শত লোক কর্মরত রয়েছেন। ১৯শে
মে ২০০৯ ইং এই ব্যাংকের গৌরবময় ৫০ বর্ষপূর্তিতে পূবালী ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী,
আমানতকারী ও সেবাগ্রহণকারীকে ব্যাংকের
পক্ষ থেকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করা হয়। পূবালী ব্যাংক সেবা ও উন্নয়নে সামনের পানে
এগিয়ে যাক। পূবালী ব্যাংক চিরজীবী হোক।
[প্রকাশ কাল: দৈনিক সিলেটের ডাক, শনিবার,
২৩ মে, ২০০৯ইং]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন