যখন হজরত শাহজালাল সিলেটে আগমন করেন তখন সিলেটে খুব অল্প সংখ্যক মুসলমান বসবাস করতেন। তখনকার যুগে সমুদ্রপথে সিংহল চট্টগ্রাম হয়ে সুদূর মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া এমনকি চীন পর্যন্ত আরবের মুসলিম বনিকরা ব্যবসা ও ধর্মপ্রচারের জন্য নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ইতিহাস অনুসারে সিলেটে সেই সময়ে ১৩ জন মতান্তরে ১৩টি মুসলিম পরিবার বসবাস করতেন। সিলেটে তখন বুরহান উদ্দিন বা তাঁর পরিবার একাকী ছিলেন না বরং জোটবদ্ধভাবে কয়েক পরিবার মুসলমান বসবাস করায় তিনি সবার মধ্যে বিতরনের জন্য নিশ্চয়ই গরু কোরবানী করেছিলেন। এই পরিবার সমুহের সংখ্যা বা পরিবার প্রধানের সংখ্যা যে ১৩ তার প্রমান এখনও টুলটিকরে তাদের বাসস্থান গ্রামটি “তেররতন” নামে পরিচিত।
এই মুসলমানদের পূর্বপুরুষরা ৭১২ খৃষ্টাব্দে মোহাম্মদ বিন কাশিমের সিন্ধু বিজয়ের পর সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম হয়ে ধর্মপ্রচারক কিংবা ব্যবসায়ী হিসাবে সিলেটে এসে বসবাস আরম্ভ করেন। তাদের নেতা ছিলেন বুরহান উদ্দিন। বুরহান উদ্দিন নামের এই সম্রান্ত মুসলমান সিলেটের টুলটিকর মহল্লায় বসবাস করতেন। তারা দুরবর্তী হিন্দু রাজার রাজত্বে ভয়ে ভয়ে জীবন যাপন করতেন।
সিলেটের টুলটিকরবাসী এই বুরহান উদ্দিন একদা নিজের একমাত্র পুত্র সন্থনের জন্মের আকিকা উপলক্ষ্যে গোপনে একটি গরু কোরবানী করেন। দুর্ভাগ্যবসতঃ একটা চিল একখন্ড মাংস এনে জনৈক ব্রাক্ষনের গৃহে মতান্তরে রাজগৃহে নিক্ষেপ করে। এই বিষয়টি রাজার গোচরীভুত হইলে রাজা গৌড়গোবিন্দ ক্ষুব্ধ হয়ে বুরহান উদ্দিনের হাত কেঁটে দেন ও তাঁর শিশুপুত্রকে হত্যা করেন। টুলটিকর মহল্লায় বুরহান উদ্দিন, তাঁর শহীদ শিশু পুত্র ও পত্নীর সমাধি বিদ্যমান রয়েছে।
সিলেটের হবিগঞ্জ অঞ্চলের ক্ষুদ্ররাজ্য তরফে তখন নুরউদ্দিন নামক একজন মুসলমান কোন এক মুসলিম মহল্লায় সপরিবারে বসবাস করতেন। তিনি নিজ পুত্রের বিয়ে উপলক্ষ্যে গরু জবেহ করলে তরফের (হবিগঞ্জ এলাকা) হিন্দু রাজা আচক নারায়ন পবিত্র গো-হত্যার অপরাধে তার পুত্রকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
তখন বাঙ্গালার মুসলিম রাজ্য পূর্বদিকে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছিল। এমনই এক সময়ে তখনকার যুগের সিলেট অঞ্চলের এই ছোট ছোট হিন্দুরাজাদের অত্যাচার ও অমানুষিক নৃশংসতা সিলেট অঞ্চলে মুসলিম আক্রমন অত্যাসন্ন করে তুলে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন