বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকালের হিজরী ৯১১ সালের (১৫০৬ খৃষ্টাব্দ) একটি শিলালিপিতে হজরত শাহজালালকে “শায়খ জালাল কুনিয়াভী” নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এই শিলালিপি হজরত শাহজালালের দরগাহে রক্ষিত আছে। হিজরী ৯১৮ সালে (১৫১২ খৃষ্টাব্দ) ফার্সি ভাষায় লিখিত অন্য একটি শিলালিপি ঢাকার জাতীয় যাদুঘরে রক্ষিত রয়েছে। ইহা বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের সেনাপতি রূকন খানের কামরূপ, কামাতা ও জাজনগর অধিকারের বিজয়স্মৃতি স্বরূপ সিলেটে তাঁর নির্মিত কোন একটি সৌধগাত্রে স্থাপন করা হয়েছিল।
শিলালিপিটি হজরত শাহজালালের মৃত্যুর (১৩৪৬খৃষ্টাব্দ) মাত্র ১৬৫ বৎসর পর স্থাপন করা হয়। এই শিলালিপি মিস্টার স্টেপলটন কর্তৃক ব্যাখ্যাত হয়ে ১৯১৩ খৃষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে ঢাকা রিভিউতে প্রকাশিত হয়েছিল। ফটকলিপিটির বঙ্গানুবাদ নিম্নরূপ-
“মোহাম্মদের চিরকুমার পুত্র শ্রদ্ধাভাজন শায়খুল মাশায়েখ শেখ জালালের আধ্যাত্মিক শক্তির সাহায্যে সুলতান ফিরোজ শাহ দেহলভীর আমলে ৭০৩ হিজরী সনে সিকন্দর খান গাজী কর্তৃক সর্বপ্রথম শ্রীহট্টে মুসলমান বিজয় সংঘটিত হয়।”
শিলালিপিটিতে অল্পকথায় অনেক ঐতিহাসিক তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। ইহা সিলেটের তথা বাংলাদেশের মুসলিম ইতিহাসের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন স্মারক। উক্ত শিলালিপি বিশ্লেষনে আমরা নিম্নলিখিত ঐতিহাসিক তথ্যাবলী পাইঃ
১) শাহজালালের পিতার নাম ছিল মোহাম্মদ।
২) শাহজালাল 'মজররদ' বা 'চিরকুমার' ছিলেন।
৩) শাহজালাল 'শায়খুল মাশায়েখ' বা 'সম্মানীত দরবেশ' ছিলেন।
৪) “শাহজালাল” নয়, “শেখজালাল” নামে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে।
৫) শাহজালালের 'আধ্যাত্মিক শক্তিবলে' সিলেটে প্রথম মুসলিম বিজয় সুচিত হয়েছে।
৬) সিলেট বিজয়কারী প্রথম মুসলিম নৃপতি ফিরোজ শাহ দেহলভী।
৭) সিলেটে প্রথম মুসলিম বিজয়কাল ৭০৩ হিজরী (১৩০৩ খৃষ্টাব্দ)।
৮) সিলেটে প্রথম মুসলিম বিজয়ের সেনাপতি ছিলেন সিকন্দর খান গাজী।
টিকাঃ কুনিয়াভী- কুনিয়ার অধিবাসী। গবেষকদের মতে এটি ইয়ামেনের একটি জনপদ। দেহলভী- দিল্লীর অধিবাসী বা দিল্লীর জাতক।
সূত্রঃ ‘শ্রীহট্টে ইসলামের জ্যোতি’- মুফতি আজহার উদ্দীন সিদ্দিকী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন