লেখক, কবি ও ব্লগার ইসফাক কুরেশী(ডানে) ব্যাংকার ও লেখক সায়েদ আব্দুল্লাহ যীশু (বামে)
যে দরবেশের আধ্যাত্মিক শক্তিবলে অজেয় গৌড় রাজ্য হেরে গেল, রাজ্যত্যাগের পূর্বে গোপনে একবার সেই সাধক ওলি শাহজালালকে দেখার জন্য গৌড়গোবিন্দের মনে এক তীব্র কৌতুহল জাগে। এই ইচ্ছে পূরনের জন্য তিনি একদল সাপুড়ের ঝুড়িতে লুকিয়ে মুসলিম শিবিরে হাজির হন। কিন্তু শাহজালাল আধ্যাত্মিক শক্তি বলে তাহাকে চিনতে পারেন। তখন গৌড়গোবিন্দ অনুতপ্ত হৃদয়ে ক্ষমা চেয়ে শাহজালালের কাছ হতে বিদায় নিয়ে নিজ প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী রাজপ্রসাদ পরিত্যাগ করেন এবং সিলেট শহরের উত্তরপূর্ব দিকে ছয়সাত মাইল দূরে জঙ্গলাকীর্ণ পেচাগড় নামক স্থানে তার শৈলাবাসে চলে যান। সেখানকার প্রাচীন আদিবাসী পাত্র সম্প্রদায়ের মানুষ নিজদেরকে রাজা গৌড়গোবিন্দের সভাসদদের (পাত্রদের) বংশধর বলে দাবী করেন। পাত্র উপজাতীয় লোকজনরা সিলেটের শেষ স্বাধীন সার্বভৌম নৃপতি গৌড়গোবিন্দের সভাসদদের (পাত্রদের) বংশধর হিসাবে পরিচয় দিতে বেশ গর্বানুভব করে থাকেন।
অতঃপর মুসলমানদের অগ্রাভিযানের মুখে সিলেটের ভাগ্যবিড়ম্বিত শেষ স্বাধীন সার্বভৌম হিন্দুরাজা গৌড়গোবিন্দ পেচাগড় ছেড়ে আসামের দিকে চলে যান। তারপর তার আর কোন খবর পাওয়া যায় নি। তিনি বিস্মৃতির আড়ালে হারিয়ে যান। সিলেটের গ্রাম্য ছড়ায় বিষয়টি এসেছে এভাবে- “রাজ্য ছাড়ি গেলা রাজা পর্বত ভিতর, / এরপর কি হইল তার না জানি খবর।” রাজা গৌড়গোবিন্দের প্রস্থানের মাধ্যমে সিলেটে মুসলিম রাজত্বের সূচনা হয় এবং একটি ক্ষুদ্র সার্বভৌম হিন্দুরাজ্য হিসাবে সিলেটের যে স্বাধীনতা ছিল, তার চির অবসান হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন