কবি লেখক ও ব্লগার ইসফাক কুরেশী
দুশমন মুসলিম সেনাবাহিনী সিলেটরাজ গৌড়গোবিন্দের গৃহ দ্বারে উপস্থিত। সম্মুখ যুদ্ধেও পেরে উঠা সম্ভব নয়। গৌড়গোবিন্দ বেশ ভাল ভাবেই বুঝতে পারলেন এবার আর রক্ষা নেই। তবুও তিনি শেষমেষ নিজ ভাগ্য পরীক্ষার করতে চাইলেন। তার অস্ত্রাগারে একটি অতি প্রাচীন প্রকান্ড লৌহধনুক ছিল। এই ধনুকে শ্রীহট্টে কেউ কোনদিন গুণ সংযোগ করতে সক্ষম হয় নি। তখন এইরূপ একটি ধারনা শ্রীহট্টে বিদ্যমান ছিল, যে ব্যক্তি এই ধনুকে গুণ যোজনা করতে সক্ষম হবে, কেবলমাত্র সেই ব্যক্তিই গৌড় রাজ্য জয় করতে পারবে। গৌড়গোবিন্দের বিশ্বাস ছিল পৃথিবীর কেউই উহাতে গুণ যোজনা করতে পারবে না।
তিনি শাহজালালের নিকট ধনুকটি পাঠিয়ে জানালেন মুসলমানদের মধ্যে যদি কেহ উক্ত ধনুকে গুণ আরোপে সমর্থ হয়, তবে আমি বিনা যুদ্ধে রাজ্য ছেড়ে চলে যাব।
শাহজালাল তার সঙ্গীদের ডেকে বললেন, এমন কেউ কি আছেন যার কোনদিন আসরের নামাজ কাজা হয় নাই, কেবল তিনিই উক্ত ধনুকে গুণ যোজনে সক্ষম হবেন।
অনেক ক্ষন পর দেখা গেল একজন বীর এগিয়ে আসছেন, তিনি সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন। “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পাঠ করে তিনি ধনুকটি হাতে তুলে নেন এবং খুব সহজেই তীরে গুন যোজনে সফল হন।
গৌড়গোবিন্দ যখন জানলেন মুসলিম শিবিরে তার অজেয় ভারী ও শক্ত ধনুকে গুণ সংযোজন হয়ে গেছে, তখন তিনি প্রচলিত ধারনার বশবর্তী হয়ে ভাবলেন এই লোকের হাতেই তাঁর পরাজয় বিধি লিখে রেখেছেন। তাঁর রাজভাগ্য শেষ, এবার ভিক্ষুক ভাগ্য তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। রাজা গৌড় গোবিন্দের ভীত সন্তস্ত্র মন্ত্রীরাও বললেন, মহারাজ আলামত ভাল ঠেকছে না, আমাদের জয়ের কোন আশা নেই। এবার রাজাগোবিন্দ জয়ের আশা একেবারে ছেড়ে দেন এবং বিনাযুদ্ধে রাজ্যত্যাগ করার সিন্ধান্ত নেন।
সুদীর্ঘ্য পঁচিশ বছর ধরে স্বাধীন গৌড়্ররাজ্যে প্রবল প্রতাপে শাসনদন্ড পরিচালনাকারী রাজা গৌড়গোবিন্দের ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, তাকে ধনসম্পদ রাজ ক্ষমতা সব ফেলে শূন্যহাতে উত্তর দিকের পাহাড়ে চিরতরে হারিয়ে যেতে হল।
সূত্রগ্রন্থঃ 'সুহলে ইয়ামন' রচয়িতাঃ নাছির উদ্দিন হায়দার প্রকাশকালঃ ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন