সেনাপতি সিকান্দর খান গাজি ছোট্ট সেনাদল নিয়ে কিশোরগঞ্জে শ্রীহট্ট রাজ্যের সীমান্তে পৌছেন এবং বাঙ্গালার সুলতান শামসুদ্দিন ফিরুজের নিকট পর্যাপ্ত সৈন্য সাহায্য চেয়ে দূত পাঠিয়ে পথপানে চেয়ে থাকেন। দীর্ঘ্যদিন পর সৈয়দ নাসির উদ্দিনের মত যোগ্য সিপাহসালারের অধীনে সৈন্য সাহায্য এলে তিনি নববলে বলীয়ান হয়ে উঠেন। সেইসাথে শাহজালালের(রঃ) মত একজন আধ্যাত্মিক পুরুষ ও তাঁর দরবেশ বাহিনী পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হন। তিনি বুঝতে পারলেন এই ওলির মাধ্যমে গোবিন্দের সব কালো যাদু অকার্যকর হবে ও এবার মুসলিম বাহিনীর প্রতি আল্লাহর অসীম রহমত বর্ষিত হবে।
গৌড়গোবিন্দ গুপ্তচর মারফত আধ্যাত্মিক সাধক শাহজালাল(রঃ) ও প্রবল শক্তিশালী মুসলিম সেনাবাহিনীর আগমনের খবর যথাসময়ে অবগত হন। রাজা গোবিন্দ বুঝতে পারলেন বাংলার মুসলিম বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে পেরে উঠা সম্ভব নয়। মুসলিম বাহিনীকে বাঁধা দিতে তিনি তাই নদীতে নৌকা চলাচল সম্পূর্নরূপে বন্ধ করে দেন। নদী পার হওয়ার মত কোন নৌকা মুসলিম বাহিনী খোঁজে পেল না। সবাই নদী পার হওয়ার বিষয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। আধ্যাত্মিক সাধক শাহজালাল তখন কারামতি প্রদর্শন করলেন, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পাঠ করে নদীর পানির উপর তাঁর জায়নামাজ বিছিয়ে সদলবলে নদী পার হয়ে যান। সিলেটের লোকগীতিতে বিষয়টি এসেছে এভাবে- “জায়নামাজ বিছাইয়া বাবা নদী দিলায় পাড়ি, শুনিয়া রাজা গৌড়গোবিন্দের দিশা গেল উড়ি।” গোবিন্দ বুঝতে পারলেন না কিভাবে মুসলমানরা নদী পার হল। এইরূপে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দের তথা ৭০৩ হিজরির কোন একদিনে শাহজালাল(রঃ) শ্রীহট্ট রাজ্যের ভিতর নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর পরগনার চৌকি নামক স্থানে এসে উপস্থিত হন। এখানে গৌড়গোবিন্দ মুসলিম বাহিনীর অগ্রযাত্রা প্রতিরোধে অগ্নিবান সহ সমুদয় সমর ও কুট কৌশল প্রয়োগ করেন। কিন্তু তার সমুদয় সমরকৌশল ও প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। কোন উপায়ান্তর না দেখে মুসলিম সেনাবাহিনীর পরবর্তী যাত্রাপথে বাঁধা সৃষ্টি করার জন্য শেরপুরের কাছে রাজা গৌড়গোবিন্দ বরাক নদীতে (বর্তমান কুশিয়ারা ও মনুর মিলিত প্রবাহধারা) খেয়া ও নৌ চলাচল বন্ধ করে দেন, যাতে মুসলিম সেনাদল নদী পার হতে না পেরে বাঙ্গালায় ফিরে যায়। কিন্তু শাহজালাল(রঃ) আগের মত আধ্যাত্মিক শক্তিবলে সদলবলে নদী পার হয়ে যান। অতঃপর শাহজালাল(রঃ) সতরসতি নামক স্থানে উপস্থিত হন ও তথাকার ফতেহপুরে রাত্রিযাপন করেন। সেখানে তাঁর সম্মানে একটি স্মৃতির মোকাম রয়েছে। এভাবে মুসলিম বাহিনী সিলেট শহর সংলগ্ন সুরমা নদীর দক্ষিণ তীরে খিত্তা পরগনার লাউয়াই গ্রামে এসে শিবির স্থাপন করেন ও এখানকার একটি টিলার চূড়ায় তাঁরা মুসলিম বাহিনীর পতাকা উত্তোলন করেন। অনুমিত হয় মুসলিম বাহিনী ব্রাহ্মনবাড়িয়া নয়, কিশোরগঞ্জ জেলার ভিতর দিয়ে এসে নবীগঞ্জ হয়ে সিলেটের দিকে রওয়ানা হয়। তাদের হাতে প্রথমে সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ বিজিত হয় এবং পরে তরফ রাজ্য তথা হবিগঞ্জ জেলায় মুসলিম বিজয় সংঘটিত হয়।
লেখক, কবি ও ব্লগার ইসফাক কুরেশী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন