অন্ধপল্লীর কারাগারে বন্দি ছোট্ট বালিকা শবমেহের,
শিকারীর পাতানো ফাঁদে পড়ে হাতে এলো জালেমের।
জানেনা সে কন্যে কোথায় এসেছে মমতামাসির দয়ায়,
এ যে পাপপূরী দেখে আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তার মাথায়।
কোথায় এলাম? আমাকে বাঁচাও, আমায় বাঁচতে দাও?
তোমরা বাপ, তোমরা আমার ভাই, আমাকে ছেড়ে দাও?
পাষন্ডরা দিল না কান কচি মেয়ের বুকফাটা ক্রন্দনে,
মাল, তাজা মাল, মালে গণিমতের মাল, ব্যবসাঙ্গনে।
একপাল শিকারী কুকুর ঝাঁপ দিল নাবালিকা গায়,
মেরে মেরে বেহুশ করে ওরা অঙ্গে অস্ত্র চালায়।
এলোনা একজনও কেউ পিতৃ কিংবা ভাতৃস্নেহ নিয়া,
হায়েনার দল নরম মাংস খায়, নরকে ঝাঁপ দিয়া।
স্নেহহীন, মায়াহীন, নির্দয় অসভ্যরা পাষাণ বর্বর,
অমানুষ, মানবতা কখনও ওদেরে করেনি আছর।
হায় রে ধর্ষক হায়েনার দল, হায় রে জানোয়ার,
দারুণ ব্যস্ত সব, চলছে নরম মাংসের কারবার।
খাসা নারীমাংস রেঁধে কেমনে সেদ্ধ করা যায়,
সবাই মাংস খেতে চায়, মাংসের স্বাদ জিহবায়।
বাংলার নিরীহ পল্লীবালারা দুর্ভিক্ষের আকালে,
ভাতের খোঁজে হলুদ শহরে আসে পালে পালে।
রসাল মাংস আছে যে মেয়ের কচি লাল গালে,
অনায়াসে বন্দি হয় তাঁরা দুষ্ট শিকারীর জালে।
শুড়িবাড়ির অন্ধখাচায় পাশবিক অত্যাচারে,
বাধ্য হয় কিশোরীরা সস্তায় বিলাতে আপনারে।
দেশের ভদ্রলোকেরা সবই জানে, অথচ কেউ,
ঘামায় না মাথা, প্রতিবাদ করেনা তো কেউ।
বন্দিনীর ক্রন্দনধ্বনী, অন্ধকারে করে প্রতিধ্বনী,
টানবাজার বিষাক্ত করে, রোজ রোজ অনুরণী।
চাবুক আর পেশীবলের বিভৎস্য অত্যাচারে,
অবলার বল নিস্তেজ হয়, থেমে যায় চিরতরে।
দেয়ালে দেয়ালে কান্নার দু’চার প্রতিধ্বনী, তারপর শেষ,
অন্ধপল্লী, নারীর নরম মাংসের ব্যবসা, চলিতেছে বেশ।
শবমেহের এক প্রতিবাদী রক্তজবা,
আত্মদানের এক অমর ইতিহাস।
না নুয়ায়ে শির, হল সে শব,
তাঁকে সালাম জানাই বারমাস।
একপাল পাষন্ড নেকড়ের হিংস্র অত্যাচারে,
প্রতিবাদের রক্তজবা শবমেহের গেল শেষে ঝরে।
অকালে সপিল সে তাঁর পবিত্র কিশোরী জীবন,
ঝরে গেল সদ্যফোটা পুষ্পকলি কাঁদায়ে ভূবন।
মর্মান্তিক মরণে তাঁর বিষাধিত হল সভ্য মানবমন,
হল গণজাগরণ, অজস্র বন্দিনী পেল মুক্ত জীবন।
সবযুগে নারীদেহে কসাইরা চালায় নির্মম অত্যাচার,
বক্ষে তার প্রতিবাদ শবমেহেরের বিকট চিৎকার।
শবমেহের পৃথিবীর ইতিহাসে এক সেরা আত্মদান,
সোনার অক্ষরে শহিদের দলে রবে শবমেহের নাম।
রচনাকালঃ
১৯৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে শবমেহের নামের একজন বালিকাকে পিঠিয়ে হত্যা করা হয়। কারণ সে স্বেচ্ছায় দেহদানে রাজি হয়নি। সে সময় এই মেয়েটির শোকে আমি এই কবিতাটি রচনা করেছিলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন