গভীর রজনীতে সবাই যখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন, তখন বিছানায় বসে একটার পর একটা সিগারেট ফু’কে যাচ্ছে এক কিশোর। আবার কখনও বাল্বটা জ্বালিয়ে পায়চারী করছে সোফায়, মেঝে। আবার কখনও বা বেলকনীর রেলিং ধরে তাকিয়ে থাকে বাইরের অন্ধকারে, গ্লাসের পর গ্লাস জল ঢালছে গলে। হঠাৎ জ্বর পালানো রুগীর মত ঘামছে শরীর। মাত্র কয়েকদিন আগে যে ঘটনাটি ঘটে গেল, যা আচমকা কালবৈশাখীর ঝড়ের মত ছোবল হেনে তছনছ করে দিল তার মন। বিধ্বস্ত করে দিল তার এতদিনের লালিত স্বপ্নসাধ। সমাধি হল তার এতদিনের বহুযতনে গড়ে উঠা সোনালী ভালবাসার।
কি হবে লুকিয়ে তার নাম? সে আমার এক প্রিয়বন্ধু মিটু। এক ছলনাময়ী তরুণীর হাতে এতবড় আছাড় খাবে; তা সে বুঝতে পারেনি কোনদিন। তাইতো সে যৌবনের ঊষালগ্নে হঠাৎ জড়িয়ে পড়ল এক মেয়ের প্রেমে, নাম তার ইতি। ইতি আপন ফুফুতো বোন। চট্টগ্রামের হালীশহরে ফুফুর বাসায় যখন সে প্রবেশিকা দিচ্ছিল, হঠাৎ বুঝতে পারল প্রভাতের তেজহীন রোদ যেন তাকে ডাকছে। তার হৃদয়ে বুলিয়ে দিচ্ছে তার সোনাবরণ হাত। তখনও সে জানতনা ভালবাসার সংজ্ঞা, তখনও সে শিখেনি কাকে বলে প্রেম। তাইতো তারই অজান্তে প্রেম এসে বাসা বাঁধে তার বুকে। আর এই প্রেমের দহনে জ্বলতে জ্বলতে পলিটেকনিক প্রথমবর্ষের উচ্চল তরুন মিটু হঠাৎ একদিন ইতির নরম হাতে রাখে তার হাত। তিন বছরের ছোটবোন ইতিকে কম্পিত কন্ঠে বলে- তোমাকে আমি ভালবাসি ইতি। আমার একহাতে বিষের সিসি আর অন্যহাতে তুমি। তোমার সামনে দু’টি পথ খোলা আছে। তুমি ইচ্ছে হলে আমাকে হত্যা করতে পার, আবার ইচ্ছে হলে ভালবাসায় ভরে দিতে পার আমার সারাটা জীবন। তুমি যে পথ ইচ্ছে গ্রহণ করতে পার, আমি একটুও কষ্ঠ পাবনা। অবশ্য আমি দেখতে চাই ইতি একজন হৃদয়বান নারী।
ইতি কোন কথাই বল্লো না। তবে ফিক্ করে হেসে উঠে মৃদুকন্ঠে বলে উঠে- ছেড়ে দাও আমার হাত, যদি কেউ দেখে ফেলে।
মিটু আরও সজোরে হাতে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে উঠে- একটু দেখুক না সবাই, আমি তোমাকে কত ভালবাসি।
এমনই করে করে বয়ে যাচ্ছিল তাদের দিন। প্রবেশিকা পাশ করে মিটু ভর্তি হল সিলেট পলিটেকনিক কলেজে। চলে আসে শেখঘাট চাচার বাসায়। ইতিবিহীন দিনগুলো তার কাছে যেন কেমন কেমন লাগছিল। চট্টগ্রাম থেকে প্রবেশিকা দিয়ে আসার সময় অনেকক্ষণ চোখ মুছলো তার আশৈশব খেলার সাথী ইতি। সবার আড়ালে নিয়ে কানে কানে বলল, মিটু ভাইয়া, সিলেট গিয়ে নিয়মিত পত্র দিও। মিটুর পত্র পেলে কিছুক্ষণ পরপর বেলকনীর বারান্দায় দাঁড়িয়ে বারবার চিঠিগুলো পড়ত ইতি। সে দিনটা তার কাছে বড়ই মধুর মনে হত। তারপর একদিন এসএসসি পাস করে ইতিও চলে এলো মামার বাসায় সিলেটের শেখঘাট। ভর্তি হল সরকারী কলেজে, একই বাসায় থেকে পড়ছে দু’টি তরুণ-তরুণী। মিটু আর ইতি। কিন্তু সেই ছোট্টকালের মত এত তাড়াতাড়ি মিটু আসতে পারে না ইতির কাছে। কি একটা লজ্জার আবরণ যেন ওদেরকে আচ্ছন্ন করে দেয়, বাসার ছোট ছোট ভাইবোনেরা ঠাট্টা করে মিটুকে দোলাভাই ও ইতিকে ভাবী বলে বারংবার বিরক্ত করে। এভাবে এদের একনিষ্ট প্রেমে লজ্জা এসে তাদেরকে যেন পরস্পর দূরে টেলে দেয়।
এমনই করে করে বয়ে যাচ্ছিল তাদের দিন। প্রবেশিকা পাশ করে মিটু ভর্তি হল সিলেট পলিটেকনিক কলেজে। চলে আসে শেখঘাট চাচার বাসায়। ইতিবিহীন দিনগুলো তার কাছে যেন কেমন কেমন লাগছিল। চট্টগ্রাম থেকে প্রবেশিকা দিয়ে আসার সময় অনেকক্ষণ চোখ মুছলো তার আশৈশব খেলার সাথী ইতি। সবার আড়ালে নিয়ে কানে কানে বলল, মিটু ভাইয়া, সিলেট গিয়ে নিয়মিত পত্র দিও। মিটুর পত্র পেলে কিছুক্ষণ পরপর বেলকনীর বারান্দায় দাঁড়িয়ে বারবার চিঠিগুলো পড়ত ইতি। সে দিনটা তার কাছে বড়ই মধুর মনে হত। তারপর একদিন এসএসসি পাস করে ইতিও চলে এলো মামার বাসায় সিলেটের শেখঘাট। ভর্তি হল সরকারী কলেজে, একই বাসায় থেকে পড়ছে দু’টি তরুণ-তরুণী। মিটু আর ইতি। কিন্তু সেই ছোট্টকালের মত এত তাড়াতাড়ি মিটু আসতে পারে না ইতির কাছে। কি একটা লজ্জার আবরণ যেন ওদেরকে আচ্ছন্ন করে দেয়, বাসার ছোট ছোট ভাইবোনেরা ঠাট্টা করে মিটুকে দোলাভাই ও ইতিকে ভাবী বলে বারংবার বিরক্ত করে। এভাবে এদের একনিষ্ট প্রেমে লজ্জা এসে তাদেরকে যেন পরস্পর দূরে টেলে দেয়।
ইতি এইচএসসি পাশ করবে আর মিটু বসে বসে দেখবে, তা হতে পারে না। তাই সেও এডমিশন নেয় একই কলেজে। উভয়ে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে। এবার ইতি এম.সি কলেজে কেমেষ্ট্রিতে অনার্সে ভর্তি হলে মিটু অন্ততঃ গ্রেজুয়েট হবার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। সেও সরকারী কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হতে দেরী করল না।
একদিন মিটু এমসি কলেজে যায় ফেরার পথে লক্ষ করে ইতি একটা ছেলের সাথে কথা বলে বলে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। ভীষনভাবে মনক্ষুন্ন হল মিটু। আমার ইতি অন্য ছেলের সাথে কথা বলবে, সইতে পারল না মিটু। পাশ দিয়ে চলে গেল হন হন করে। সে যেন ইতি নামের মেয়েটাকে দেখেনি কোনদিন। ইতি ‘মিটু ভাই, মিটু ভাই’ বলে ডাকল অনেক। কিন্তু পেছনে না তাকিয়ে রিকশায় দ্রুত প্রস্থান করল মিটু। বাসায় এসে ইতি তার মিটু ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামীর কাছে নালিশ জানালে মিটু জবাব দেয়- তোমার যখন রিকশা ডেকে দেবার লোক রয়েছে, তখন আমি আর কি করব। চালাক মেয়ে ইতির বুঝতে অসুবিধা হলনা কেন তার উপর মিটু ভাইয়ের এত অভিমান। তারপর ইতির সাথে কথাবার্তা একদম বন্ধ করে দেয় মিটু ।
মিটুর ইচ্ছা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তারপর ইতিকে নিয়ে বাঁধবে ঘর। ডিপ্লোমা পাস করে একটা চাকুরী জোটাতে পারলেই সে হয়ত তার লক্ষে পৌঁছতে পারবে হয়ত। কিন্ত বাঁধ সাধল ঐ পলিটেকনিকটা। ১৯৮৩ সালে পায়ে ওযে বেড়ী দিয়েছে, আর যে ছাড়ছেনা, এ যেন শক্তলোহার বাঁধ। মাত্র তিন বছরের কোর্স। অথচ একে একে পাঁচটি বছর পার হয়ে গেছে। এখনো শেষ হবার কোন লক্ষণ নেই। আর কতকাল অপেক্ষা করবে মিটু। ধর্য্যর বাঁধ যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে তার।
এদিকে ইতি বেড়ে উঠছে ধাপে ধাপে। সেই সাথে তাল মিলিয়ে কাঁপছে মিটুর বুক। সুন্দরী মেয়ে ইতি। শরীরের ভাঁজে ভাঁজে তার রূপের কারূকাজ। কন্ঠে তীক্ষ্মবুদ্ধির প্রখরতা, ধারালো ব্রেন, বংশের আভিজাত্য। সব মিলিয়ে সে যে কোন পুরুষেরই কামনার ধন।
ছোট্টকালে মিটু যদিও তার ভালবাসার কথা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেছে ইতির কাছে। কিন্তু এখন আর তা পারেনা। বরং প্রেম যেন বাঁচাল মিটুকে লাজুক করে দেয়, সে হয়ে যায় নির্জনতাপ্রিয়। সম্ভবত ইতিরও একই অবস্থা। ইতি এখনো আগের মত তাকে ভালবাসে কিনা, তা পরখ করার সাহস আর নেই মিটুর। একই ছাদের নীচে থেকেও যেন তার প্রেমিকা একসাগর দূরে পড়ে আছে। একতরফা প্রেমের দহনে জ্বলতে জ্বলতে ছাঁই হয়ে যাচ্ছে মিটু। ইতির হৃদয়ে কী ঘটছিল তা অবশ্য কারও জানার কথা নয়।
হঠাৎ প্রচন্ড আছাড় খায় মিটু। আচমকা তার ফুফু ও চাচারা সবাই একসাথে নিষ্টুর হয়ে যান। মিটুর হৃদয়ের যন্ত্রনা বুঝেও না বোঝার ভান করে সবাই। সহসা এক ডাক্তার এসে ছুঁ মেরে নিয়ে যায় তার শত সাধনার ধনকে। আর তাকে অবাক করে দিয়ে তার স্বপ্নের রানীও “কবুল” বলে উড়ে গেল সুখের সন্ধানে।
তারপর কয়েক দিন কয়েক রাত প্রলাপ বকে বকে একদিন মধ্যরাতে সকলের অন্তরালে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় মিটু। অনেক খুঁজাখুঁজির পরও তাকে আর পাওয়া যায়নি। অথচ সামনে দাঁড়িয়ে আছে পলিটেকনিক জীবনের সর্বশেষ ফাইনেল পরীক্ষাটি। তার বাবা-মার সাথে আমরা সহপাঠিরাও এই সদাহাস্য বাচাল বন্ধুটির অপেক্ষায় পথপানে চেয়ে রই।
রচনাকাল ঃ ১৯৮৭ খৃস্টাব্দ।তারপর কয়েক দিন কয়েক রাত প্রলাপ বকে বকে একদিন মধ্যরাতে সকলের অন্তরালে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় মিটু। অনেক খুঁজাখুঁজির পরও তাকে আর পাওয়া যায়নি। অথচ সামনে দাঁড়িয়ে আছে পলিটেকনিক জীবনের সর্বশেষ ফাইনেল পরীক্ষাটি। তার বাবা-মার সাথে আমরা সহপাঠিরাও এই সদাহাস্য বাচাল বন্ধুটির অপেক্ষায় পথপানে চেয়ে রই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন