বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উন্নয়ন
চৌধুরী
ইসফাকুর রহমান কুরেশী
বর্তমান যুগ গণতন্ত্রের যুগ, জনগণের
সার্বভৌমত্বের যুগ। বর্তমান যুগের দর্শন হচ্ছে-রাষ্ট্রের মালিক হচ্ছেন জনগণ। কাজেই
জনগণ হচ্ছে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রকৃত মালিক। জনগণ ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন
করেন দেশ পরিচালনার জন্য। জনগণের সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ হলে মেয়াদান্তে জনরায়ের
মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা হারাতে হয়। গণতন্ত্র হচ্ছে কোন ছল-বল-কৌশল নয়।
ক্যু-ষড়যন্ত্র-সামরিক আইন কিংবা ভোট ডাকাতির নির্বাচন নয়। বরং জনগণ সম্পূর্ণ অবাধ
ও স্বাধীনভাবে সরকার নির্বাচন করবে। যখনই এসবের ব্যতিক্রম ঘটবে, ক্ষমতার পরিবর্তনে সুষ্ঠু জনরায়ের পরিবর্তে ষড়যন্ত্র স্থান করে
নেবে, তখনই দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট
হবে, হরতাল ও অস্থিরতায় জনজীবন বিপর্যস্থ হবে
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি থেমে যাবে। বিদেশী বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে। জাতীয়
উৎপাদন কমে যাবে। প্রবৃদ্ধির হার নীচে নেমে আসবে। যার ফলাফল প্রতিফলিত হবে দেশের
আপামর জনসাধারণের ওপর। মানুষের দারিদ্র আরও বাড়বে। বেকারত্ব আরও প্রকট হবে, শিক্ষা-দীক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হবে। কাজেই বর্তমানে দেশের
সার্বিক উন্নয়ন, শান্তিময় পরিবেশ ও অর্থনৈতিক
অগ্রযাত্রার জন্য গণতন্ত্র চর্চার বিকল্প কিছু নেই।
দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির জন্য
বর্তমানে একান্ত প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক
স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন জনগণ ও সবগুলো রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীগণের
গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য যতœবান হওয়া। গণতন্ত্র হচ্ছে একটা ধারাবাহিক চর্চার বিষয়। এই জন্য
সবার আগে প্রয়োজন গণতন্ত্রকে বোঝার মত জ্ঞান ও গণতান্ত্রিক মন-মানসিকতা।
দেশের
উন্নয়নে গণতন্ত্র যে, কতটুকু প্রয়োজন তা বুঝতে হলে আমাদের
বর্হিবিশ্বের দু’একটি দেশের দিকে দৃষ্টি ফেরাতে হবে। উত্তর ও দক্ষিণ কুরিয়ার মধ্যে
তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যায় অল্প জনসংখ্যা ও অধিক আয়তন বিশিষ্ট উত্তর কুরিয়া
গণতন্ত্র না থাকার জন্য দক্ষিণ কুরিয়ার চেয়ে অনেক পিছনে পড়ে রয়েছে। বর্তমানে উত্তর
কুরিয়ার মাথাপিছু আয় যেখানে মাত্র ২৩০ মাঃ ডলার, সেখানে
গণতান্ত্রিক দঃ কুরিয়ার মাথাপিছু আয় ৫০০০ মাঃ ডলার। একই ভাবে একনায়কতান্ত্রিক
পূর্বজাপানী গণতান্ত্রিক পশ্চিম জার্মানীর চেয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক পিছনে পড়ে
গিয়েছিল। অনুরূপ মুসলিম বিশ্বের যে সব দেশে যেমন মালয়শিয়া, তুরস্ক,
মিশর ইত্যাদিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত
রয়েছে, সে সকল দেশে মানব সম্পদ উন্নয়ন, মানব অধিকার,
আইনের শাসন, অর্থণৈতিক,
রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন অধিক হারে
প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। রাজতান্ত্রিক ও শেখতান্ত্রিক মধ্যযুগীয় শাসনের শিকলে বন্দি আরব
দেশসমূহে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। এসব দেশে মানুষের শিক্ষার হার বাড়ছে না, এসব দেশে বাকস্বাধীনতা,
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, কিংবা সরকারের কাজের সমালোচনা করার কোন অধিকার নেই। একদল
একনেতার দেশ ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া
ইত্যাদি দেশ সমূহে একই অবস্থা বিদ্যমান। এইসব রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক
সরকার না থাকায় শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতার দম্ভ,
যুদ্ধ, সামরিক
শক্তিচর্চায় দেশের সিংহভাগ সম্পদের অপচয় করে জনগণকে অন্ধকারে ডুবিয়ে রেখেছে।
বিশ্বের সিংহভাগ তরল সোনার অধিকারী হয়েও কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন ব্যতিত অন্যকোন
প্রকার সার্বিক উন্নয়ন হচ্ছে না। ধর্মকে নিজেদের কায়েমী স্বার্থে যথেচ্ছভাবে
ব্যবহার করছে এইসব দেশের স্বৈরাচারী অবৈধ সরকারগণ। মুসলিম বিশ্বে গণতন্ত্র চর্চার
অভাবে কোথাও মধ্যযুগীয় রাজতন্ত্র কোথাও অবৈধ সামরিকতন্ত্র, কোথাও একদলীয় ফ্যাসিষ্ট একনায়কতন্ত্র জনগণের কাধে আরব্য
উপন্যাসের দৈত্যের মত চেপে বসে আছে। আমাদের হতভাগা বাংলাদেশে আর যাই হোক
গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক উন্নয়নে এসব দেশের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে
রয়েছে।
বর্তমান বিশ্বের সবগুলো উন্নত দেশেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা
বিদ্যমান। গণতন্ত্রকে কেন্দ্র করে এসব দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি সুন্দর ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। গণতন্ত্র ব্যতিত অন্যকোন
তন্ত্রে দায়িত্বশীল জনকল্যাণ-কামী সরকার প্রতিষ্ঠিত নাও হতে পারে। গণতন্ত্রের
সরকারকে সবসময় জনগণের সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হতে হয় এবং জনরায়ে ক্ষমতা হারানোর
আশংকায় সরকার সবসময় জনগণের সমৃদ্ধি,
উন্নতি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে
ব্যস্ত থাকে। স্বৈরাচারী একনায়ক,
শিল্পী কামরুল হাসানের বিশ্ববেহায়ার
অবৈধ শাসন উৎখাত করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুদীর্ঘ নয় বৎসর ব্যাপী দীর্ঘ
আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা। একজন বি.এন.পি’র নেতৃত্বে ও
অন্যজন স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে স্বৈরাচার
বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হন। এদেশের ক্ষমতা
জবরদখলকারী স্বৈরাচারী এরশাদ তার শাসনামলে ছলচাতুরী ও ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়ে
ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার কুমতলব আঁটেন। তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা মানুষের আন্দোলন
তুঙ্গে উঠলেই তিনি সামরিক আইনজারী করতেন। রাজনীতি চর্চা নিষিদ্ধ করে দিতেন। আবার
কখনও কখনও ঘরোয়া রাজনীতির অনুমতিও দিতেন। এরশাদ আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছিল
না। চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে পুলিশী হত্যাকান্ডের খবর কোন পত্রিকা ছাপাতে
পারেনি। এভাবে এরশাদের স্বার্থ বিরোধী কোন তথ্য কিংবা খবর পত্রিকাগুলো ছাপাতে
পারতো না। স্বৈরাচারী মধ্যযুগীয় রাজরাজড়ার মত এরশাদ তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন।
এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র উদ্ধারে আপ্রাণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে
পড়েন আমাদের দুই মহান নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা। ’৮৬ সনে এরশাদ সংসদ
নির্বাচন দেন। খালেদা এ নির্বাচন বর্জন করেন। শেখ হাসিনা স্বৈরাচারের অধীনে এই
নির্বাচনে অংশ নিয়ে সুবিধা করতে পারেন নি। নীলনকশা অনুযায়ী নির্বাচনের ফল
নির্ধারিত হয়। কিছুদিন পর হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন। ’৮৮তে এরশাদ গণতন্ত্রের
বিরুদ্ধে আর এক ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন। কোন বিরোধী দল ছাড়াই কেবলমাত্র আ.স.ম রবকে
নিয়ে আর এক নীলনকশার নির্বাচন করে সংসদ গঠন করেন। এরশাদের এসব ছলচাতুরী ও
ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসী তীব্রভাবে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। দুই নেত্রী খালেদা ও
হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এরশাদকে উপড়ে ফেলার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে
পড়ে। ’৯০-এ গণঅভ্যূত্থান শুরু হয় ও এরশাদের পতন সূচিত হয়। অতীতের নানা অভিজ্ঞতার
মাধ্যমে মানুষের মনে এই ধারণা সৃষ্টি হলো যে,
এদেশে কোন দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও
নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। কাজেই মানুষের মনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে
সংসদ নির্বাচনের ধারনা সৃষ্টি হলো।
বিচারপতি সাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে
অবাধ ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এ নির্বাচন সারাবিশ্বে প্রশংসিত হলো।
নির্বাচনে জয়ী হয়ে বি.এন.পি’র খালেদা জিয়া সরকার গঠন করেন। স্বৈরাচারের অধীনে
হাসিনার ’৮৬-এর নির্বাচনে অংশ গ্রহণ দেশের সচেতন মানুষের পছন্দ হয়নি। স্বৈরাচারী
এরশাদের বিরুদ্ধে খালেদা অনমনীয় মনোভাব গ্রহণ করে গণতন্ত্রের জন্য আপোষহীন
নেত্রীতে পরিণত হন। সম্ভবত: এজন্য তিনি এদেশের গণতন্ত্রমনা মানুষের রায় লাভে সমর্থ
হন। এরশাদ আমলে দুই নেত্রীই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেন।
’৯০-এর নির্বাচনের পর নতুন সংসদে
সংশোধনীর মাধ্যমে সর্বসম্মতি ক্রমে দেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গৃহীত হয়।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য গণরায়কে সানন্দে মেনে নেয়া জয়ী ও পরাজিত সকল
প্রার্থীর জন্য অবশ্য প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে এমন এক ট্রেডিশন গড়ে ওঠেছে যে, নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরা পরাজয় স্বত:স্ফূতভাবে মেনে না
নিয়ে নির্বাচনে ভোট চুরির অভিযোগ উত্থাপন করেন। ’৯০-এর নির্বাচনের রায় শেখ হাসিনা
মেনে নিলেও নির্বাচনে সুক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ উত্থাপন করেন। অন্যদিকে খালেদা
’৯৬-এর নির্বাচনে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়ে পুকুর চুরির অভিযোগ উত্থাপন করেন।
যতগুলো আসনে বিএনপি পরাজিত হয় সবগুলোতে পুন:নির্বাচন দাবী করেন। অথচ তাদের দলীয়
প্রেসিডেন্ট আঃ রহমান বিশ্বাস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন ও তৎকালীন
নির্বাচন কমিশন ও তারাই গঠন করেন। এই যে,
দুই নেত্রীর জিতলে মানি, হারলে মানিনা নীতিÑ
তা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও গণতান্ত্রিক
উন্নয়নের প্রতি মারাত্মক হুমকি জনক।
খালেদার আমলে খালেদা জিয়া সংসদকে কার্যকর রাখার ব্যাপারে তেমন
যতœবান হননি। প্রধানমন্ত্রী খালেদা প্রায়ই
সংসদে অনুপস্থিত থাকতেন। গণতন্ত্রকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য যে জিনিসটি সবচেয়ে
জরুরী তা হচ্ছে বিরোধী দলসমূহকে গুরুত্ব প্রদান ও তাদের মতামতকে যথাযথ সম্মান
প্রদর্শন। কিন্তু খালেদার আমলে তা দেখানো হয়নি। সবগুলো রাজনৈতিক দল, এমনকি তার মিত্রদল জামাতে ইসলামীও যখন পরবর্তী সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের দাবী জানালো তিনি তা অস্বীকার করে নিজের
শাসনামলের শেষ দুইটি বৎসর বিরোধী দল সমূহকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সুযোগ
সৃষ্টি করে দেন। অথচ তিনি নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন করে
প্রধানমন্ত্রি হন। বিরোধী দল সমূহের উত্থাপিত এই গুরুত্বপূর্ণ গণদাবী মেনে না নিয়ে
খালেদা গণতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করেন। একই সাথে নিজেরও সর্বনাশ ডেকে আনেন।
এই দুইটি বৎসর দেশের অর্থনীতিও মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ৯০’এর নির্বাচনের পর
জনগণের আশা ছিল দেশে শান্তি,
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আসবে।
কিন্তু মাত্র ৩ বৎসর পর বিশৃংখলা সৃষ্টি হওয়ায় জনগণ হতাশ হন। জনগণ মনে করেছিল অবাধ
নির্বাচনের সংসদ তার ৫ বৎসরের মেয়াদ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পূর্ণ করবে। কিন্তু
বিরোধী দলসমূহের সংসদ থেকে মেয়াদের পূর্বেই পদত্যাগ গণতন্ত্রমনা মানুষকে আশাহত
করে। অসময়ে তৎকালীন সংসদ থেকে বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত
গণতন্ত্রের উন্নয়নের জন্য সঠিক হয়নি।
বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে দুইটি ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। ছোট
ছোট দলসমূহ বিলুপ্ত হয়ে দেশের রাজনীতি ক্রমান্তয়ে দুইটি ধারার মধ্যে কেন্দ্রিভূত
হচ্ছে। একটি হচ্ছে স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী ধারা যার নেতৃত্বে
রয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা,
অন্যটি জাতীয়তাবাদী ধারা বিএনপি যার
নেতৃত্বে রয়েছেন খালেদা জিয়া। দ্বি-দলীয় ধারায় মাধ্যমে দুনিয়ার বিভিন্ন উন্নত দেশে
গণতন্ত্র বিকশিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট,
বৃটেন ইত্যাদি দেশে দুইটি দলকে কেন্দ্র
করে গণতন্ত্র সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে দ্বিদলীয় পদ্ধতির প্রতিষ্ঠা
এখন সময়ের ব্যাপার। আমাদের বাংলাদেশেও বর্তমানে আওয়ামীলীগ ও বিএনপিকে কেন্দ্র করে
গণতন্ত্র তার পথ পরিক্রমা শুরু করেছে। আমাদের দুই নেত্রীর মধ্যে এখনও গণতান্ত্রিক
সহনশীলতা ও সমঝোতার সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
গড়ে ওঠা একান্ত প্রয়োজন। সংঘাত কিংবা ধর্মঘট নয় বরং যে কোন ব্যাপারে, দুইনেত্রী মুখোমুখী আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছা একান্ত
প্রয়োজন। কাজেই এই দু’টি দল ও দু’দলের নেত্রীদ্বয়কে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক
রূপদানে আরও যতœশীল, সহনশীল, ধর্য্যবান ও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তবে আশার কথা আমাদের দেশের
মানুষের মত দু'নেত্রীও গণতন্ত্রকে ভালবাসেন। সভা
সমিতিতে উচ্চস্বরে গণতন্ত্রের কথা বলেন। নানা ত্র“টি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও গণতন্ত্রের
প্রতি তাদের এ অকৃত্রিম ভালবাসা এদেশের গণতন্ত্রকে আশা করা যায় এক সময়
প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া সম্ভব হবে। গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশে আসবে শান্তি, সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক মুক্তি। দারিদ্র ও অশিক্ষার অশুভ থাবার
হাত হতে মুক্তি পাবে বাংলাদেশের আপাময় জনসাধারণ।
[প্রকাশ কাল: দৈনিক সিলেটের ডাক, শনিবার,
১২ জুলাই, ১৯৯৭ইং]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন