শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০২০

দেখে এলাম ভারত, সেই তুলনায় বাংলাদেশ পর্ব- তিন



দেখে এলাম ভারত, সেই তুলনায় বাংলাদেশ   পর্ব- তিন


শিলং শহরে কোন রেলপথ নেই। নর্থইস্টের সাত রাজ্যের লোকজন আসামের রাজধানী গৌহাটিতে এসে ট্রেনে উঠে চলে যান ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। তাই গৌহাটি নর্থইস্টকে ভারতবর্ষের সাথে যুক্ত করেছে। আমি ইতিমধ্যে শিলংয়ে ভারতীয় রেলওয়ের কাউন্টার হতে বিদেশী কোঠায় গৌহাটি হতে দিল্লির আনানবিহার স্টেশনের টিকেট সংগ্রহ করি। নর্থইস্ট এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়বে ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ইং সকাল সাড়ে নয়টায়। গৌহাটি হতে দিল্লি ১৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্থা পার হবে ৩৬ ঘন্টায়। ৮ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালের খাবার খেয়ে ধীরে সুস্থে শিলংয়ের গৌহাটি বাস টার্মিনালে চলে আসি। সুমো জিপ একটার পর একটা গৌহাটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছে। একটি জিপের মধ্যভাগের তিন সিট জুড়ে বসলাম। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ রুপি। সকাল ১২টা নাগাদ বাস ছেড়ে দিল। জিপের ড্রাইভারের পিতামহ বৃটিশ আমলে নোয়াখালী জেলা হতে আসামে আসেন। আমরা বাংলাদেশের লোক জানতে পেরে তিনি খুব আদর যত্ন করেন। অভয় দিলেনচিন্তার কারণ নেইহোটেল পর্যন্ত পৌঁছে দিবেন।

বাস ছেড়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ পর শহরের বাহিরে এক বিশাল নজরকাড়া সুন্দর পাহাড়ি লেক দৃষ্টিগোচর হয়। 
পানি টলটলে নীল। হৃদ হতে রাস্তা পর্যন্ত প্রসারিত অপূর্ব সুন্দর পাইন ও ফার্ণ বন। পাথরের পাহাড়ে পাইনের বন শিলংকে এক অপূর্ব সুন্দরের রানি করে সাজিয়ে রেখেছে। সুন্দর নীল হ্রদপাইন বনসবুজ পাহাড় আপন আপন সৌন্দর্য্য মেলে ধরে একাকার হয়ে গেছে শিলং গৌহাটি রোডে। মনে হলো- বাস ছাড়ার পর হতে ক্রমে ক্রমে বাসটি নীচের দিকে নামছে। ঘন্টা দেড়েক পর সুন্দর লেকের উপর একটি ঝুলন্ত সেতু অতিক্রম করি। আর ঘন্টাখানেক পর হ্রদটির অন্যপারের সমতলভূমিতে নেমে আসি। তখন একটি বিশাল লেকের মধ্যে ভাসমান অসংখ্য মনোরম পাহাড়ের দৃশ্যাবলী দৃষ্টিসীমায় ভেসে উঠে। এখান হতে মেঘালয় শেষআসামের শুরু। কোথাও পাহাড়ি রাস্তা আবার কোথাও সমতল ভূমি বেদ করে জিপটি অগ্রসর হতে থাকে। কোথাও পার্বত্য জনপদ, আবার কোথাও আমাদের দেশের দরিদ্র গ্রামগুলোর মত অনগ্রসর গ্রাম। রাস্তার ধারে একটি দু’তলা হোটেলে খাবার খেয়ে আবার যাত্রা শুরু। বিকাল প্রায় ৬ টায় গৌহাটি নগরে জিপটি প্রবেশ করে।


গৌহাটিতে বিশাল প্রশস্থ রাস্তামধ্যভাগে ডিভাইডার। যানজট নেই। ট্রেনলাইনের উপর দিয়ে নির্মিত সেতু আকার বাস লাইন। বাস লাইন গুলোকে ক্রসলাইন করে উপর নীচ করে দেয়া হয়েছে। ফলে গৌহাটি শহরটি এক বৃহৎ শহর হওয়া সত্ত্বেও যানজটমুক্ত। 
শিলং শহরটি শিলং পিক (উচু চূড়া) হতে দেখে মনে হয়েছে হয়ত আয়তনে সিলেট শহরের মত হবে। এর লোকসংখ্যা ১৫/১৬ লক্ষ। অন্যদিকে গৌহাটি শহরকে অনেক বড় শহর মনে হয়েছে। আমাদের চট্টগ্রাম শহরের মত হবে। অতীতের প্রাগজ্যেতিষপুর আজ হয়েছে গৌহাটি শহর। 
গুয়া হচ্ছে 'সুপারি' আর হাটি হচ্ছে 'হাট'অর্থাৎ সুপারিহাট হচ্ছে গোয়াহাটি বা গৌহাটি।  আসাম তথা সমগ্র নর্থইস্টের প্রবেশদ্বারও এই গৌহাটি। ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণ তীরে ৫৫ মিটার উচুতে শহরটি গড়ে উঠেছে। ব্রহ্মপুত্রের শোভা এখানে খুবই সুন্দর। সুমোর ড্রাইভার আমাদেরকে দুইটি হোটেলে নিয়ে যান। তিনি নিজে ব্যাগটি বহন করেন। অথচ বিদেশী জেনে কেউ রুমভাড়া দিতে রাজি হয়নি। সবশেষে এক রাতের জন্য ২২০০ রুপি ভাড়ায় সিটি হোটেলের এক্সক্লুসিভ রুম ভাড়া নেই।
গৌহাটি বড় শহর। ভবন গুলো দূরে দূরে ছড়ানো। জাম নেইরিকশা অল্প। হোটেলের জানালা দিয়ে গৌহাটি স্টেডিয়াম দেখা যায়। খুব সুন্দর স্টেডিয়াম। সাজানো গোছানো ফুলের বাগান। ফুটবল মাঠের চতুর্দিকে ফুলগাছ লাগানো ও রাস্তা ঘেরা এ যেন স্টেডিয়াম কাম পার্ক। ভোরে অসংখ্য মানুষকে স্টেডিয়াম পার্কে হাঁটতে ও দৌড়াতে দেখি। সময় স্বল্পতায় গৌহাটি শহর ঘুরে দেখা হয়নি। অথচ ঢুকার সময় প্রায় এক ঘন্টা জিপটি শহর প্রদক্ষিণ করে আসে। সে সময় শহরটিকে মোটামোটি জরিপ করে নেই।
 
 
রাতে এক বাঙ্গালি হোটেলে খাবার খাই। আমরা বাঙ্গালি হিসেবে হোটেলের বাঙ্গালি লোকজনের কাছে আলাদা সেবা পাই। 
রিন্টু দাস নামের এক যুবকের সাথে দেখা হয়। তার পরিবার ১৯৬৫ সনে সিলেট ছেড়ে গৌহাটি চলে আসেন। বাঙ্গালি হবার অপরাধে অহমরা তাদেরকে বাঁকা চোখে দেখে। তিনি একবার সিলেটের মদীনা মার্কেটে এসে আত্মীয় স্বজনদেরকে দেখে গেছেন। তিনি হিসেব মেলাতে পারছেন না- তার পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশ ছেড়ে গিয়ে সঠিক কাজটি করেছেন কি না
আসামীদের ভাষা ‘অহম’। তাদের ভাষা বাংলা অক্ষরে লিখা হয়। কেবলমাত্র দু’একটি অক্ষরের আকার একটু ভিন্ন। অহম ভাষায় সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার শব্দাবলীর প্রাধান্য রয়েছে। হোটেলে অহম পত্রিকা পড়ি। পত্রিকাটি বাঙ্গালি বিদ্বেষী মনে হয়েছে। বৃটিশ আমলে অনেক বাঙ্গালি আসামের জনবিরল এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। তাহাদের ধারনা এখনও বাংলাদেশের লোকেরা তাদের অঞ্চলে ঢুকে পড়ছে। আমি কয়েকজনকে বলেছিআমাদের বাংলাদেশের পারিপার্শ্বিক অবস্থা আসামের চেয়ে কোনভাবে খারাপ নয়, কাজেই বর্তমানে আসামে বাংলাদেশীরা আসবে তা কোনমতে বিশ্বাসযোগ্য নয়। 
এখন বাংলাদেশীরা আমেরিকাবৃটেনক্যানাডামধ্যপ্রাচ্য মালয়েশিয়া এসব উন্নত দেশে যাচ্ছে। আসামে গিয়ে তাদের পাবার মত তেমন কিছু নেই। বর্তমানে যে সব বাঙ্গালি আছেন তারা মোগল ও বৃটিশ আমলে যখন উভয় অঞ্চল একদেশ ছিল তখন গিয়েছেনএখন যাবার প্রশ্নই উঠে না। আমাদের দেশেও অনেক খাসিয়া মনীপুরী ইত্যাদি লোকজন রয়েছেন, এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশীদের কোন মাথাব্যাথা নেই। 
আসামের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অরুণ গগই। ভোরে গৌহাটি শহরে একাকী হাঁটছি। একজন ব্রাহ্মণ অত্যন্ত মমতার সহিত আমার কপালে একটি লালটিপ আঁকে দেন। আমাদের হুজুররা যেমন আতর বিতরণ করেনবিষয়টি আমার কাছে তেমনটিই মনে হল। ভদ্রলোক যদি মনে ব্যাথা পান তাই বাঁধা দেইনি। টিপ নিয়ে ফিরে আসি হোটেলে। 
সকালের নাস্তা সেরে সামনে গৌহাটি রেলস্টেশনে প্রবেশ করি। স্টেশনটি আমাদের কমলাপুর রেলস্টেশন হতেও অনেক বড় মনে হল। একটি ওভারব্রিজের উপর দিয়ে যেতে হয়। ষোলটি টার্মিনালে নামার জন্য ওভারব্রিজ হতে ষোলটি সিঁড়ি নেমে এসেছে। ষোল নম্বর টার্মিনাল হতে আমাদের নর্থইস্ট এক্সপ্রেস ট্রেন দিল্লির উদ্দেশ্যে ছাড়বে।
এবার ভারতের রেলপথ নিয়ে দু’একটা কথা বলব। ১৯৪৭ সালের পর হতে আমাদের রেল যখন ক্রমান্নয়ে তলিয়ে যাচ্ছেভারতীয়রা সেই রেলকে যুগপোযুগী করে এক অত্যাধুনিক আরামদায়ক কার্যকর যোগাযোগ মাধ্যমে পরিণত করেছে। ভারতীয় রেলের শক্ত বাঁধনে বিশাল ভারত একাকার হয়ে গেছে।
ভারতীয় ট্রেন আকারে বিশাল। প্রস্থে আমাদের ট্রেনের দেড়গুণউচ্চতায়ও তাই। বগিগুলো ডাবল আংটা দিয়ে জড়ানো হয়। প্রতিটি যাত্রীর টিকেটে একটি বাসার সিট ও একটি ঘুমানোর সিট বরাদ্ধ করা হয়। যাত্রীরা বসে কিংবা শুয়ে শুয়ে ভ্রমণ করতে পারেন।


ভারতীয় ট্রেনের কোন বগি টার্মিনালের কোথায় দাঁড়াবে তাও কম্পিউটার সাইনবোর্ডে ভেসে উঠে। প্রতি বগির যাত্রীরা নিদৃষ্ট স্থানে স্থানে প্রস্তুত থাকেন ও সহজেই নিজ নিজ কম্পার্টমেন্টে উঠে পড়েন। বাংলাদেশের রেলওয়ে তাদের তুলনায় যে কোথায় আছে কে জানে। নর্থইস্ট এক্সপ্রেসে আমার কোচ নং #এস-৯সিট-৫৮ ইউ/বি। এখানে বসার সিট নং ৫৮ ঘুমানোর ইউ.বি অর্থাৎ আপার বেড।
২০১২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৯.৩০ মিনিটে ট্রেন দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। নানা ধর্ম বর্ণ ও নৃতাত্বিক মানুষ ট্রেনের যাত্রী। অনেক অনেক মাতৃভাষার লোক হিন্দির মাধ্যমে সহজেই পরস্পর যোগাযোগ বজায় রাখছেন। আসলে প্রয়োজনীয় ৫০/৬০টি হিন্দি শব্দ জানা থাকলেই আমার মনে হয়েছে সমগ্র ভারতবর্ষে নির্বিঘ্নে চলাচল সম্ভব।
রেলগাড়ি দ্রুত পশ্চিম দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর সীমানা বরাবর রেলপথ। পথে কামাক্ষ্যাকামতাপুরব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে পশ্চিমবঙ্গের নিউকুচবিহার প্রবেশ করি। পরে আসে নিউজলপাইগুড়ি, এখন হতে দার্জিলিং  যাবার পথ রয়েছে। 
পরে ট্রেন ভারতের বিহার রাজ্যে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে রাত্রি নেমে আসে। সব যাত্রীরা সিটে সিটে ঘুমিয়ে পড়েন। ট্রেনে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। ঝিকির-ঝিকির শব্দে সারারাত ট্রেন চলে যায়। ঘুম যখন ভাঙ্গে আমরা তখন ভারতের সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তর প্রদেশে সংক্ষেপে ইউ.পিতে এসে গেছি। এই ইউ.পিতে বিশাল ভারতের রাজধানী দিল্লির অবস্থান। পথে পড়ে গান্ধি পরিবারের সংসদীয় আসন এলাকা এলাহাবাদ। তারপর কানপুর অতঃপর আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাত শহর আলীগড়। এখানে একজন যাত্রীকে প্রশ্ন করি দিল্লি আর কাহাতক দূর হ্যায়। ভদ্রলোক উত্তর দেন- তুড়াই দূর হ্যায়। ধরে নিলাম হয়তো দিল্লির কাছে চলে এসেছি। কিন্তু রাস্তাতো আর ফুরায়না। শেষমেষ জানলাম এখনও ৩/৪ শত কিলোমিটার পথ বাকী রয়েছে। আসলে বিশাল ভারত রাষ্ট্রের লোকজনের কাছে আমাদের সিলেট শহর হতে চট্টগ্রাম বা ঢাকার দূরত্ব কিছুই না, এরকম দূরত্ব তুড়াই দূর হ্যায়। 
তাদের দ্রুতগামী ট্রেন এই সব দূরত্ব নিমিষেই পার হয়ে যায়। ৩৬ ঘন্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষে ১০/০৯/২০১২ সোমবার রাত ৮ টায় দিল্লির সন্নিকটে আনানবিহার স্টেশনে নেমে পড়ি। আমরা পূর্বেই নির্ধারণ করে আসি দিল্লি রেলস্টেশনের নিকটস্থ ‘বিশাল হোটেলে' উঠবো। আনানবিহার স্টেশনে নামামাত্র দালালরা তাদের হোটেলে নিয়ে যাবার জন্য ঘিরে ধরে। 
কোনমতে একটি বেবিটেক্সি রিজার্ভ করে ৩০/৩৫ মিনিটে ‘বিশাল’ হোটেলে চলে আসি। হোটেলের তিন তলায় বড় একটি এসি রুম নেই। ভাড়া প্রতিদিন ৮০০ রুপি। হোটেলের মালিক কাশ্মিরী মুসলিম। হোটেলে একজন বাঙ্গালি কর্মচারী রয়েছে। হোটেল মালিক দিল্লি সাইট সিয়িংয়ের অর্ডার গ্রহণ করেন। এসি বাসে দিল্লি ভ্রমণের বিল বাবদ তিনজনের জন্য ৯০০ রুপি প্রদান করি। পরদিন সকাল ৬টা হতে রাত ৯.৩০ মিনিট পর্যন্ত এসি বাসে দিল্লির স্থাপনাসমূহ ঘুরে দেখব। 
রাতে খাবার খেয়ে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে যাই। খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায়। গাইড এসে আমাদেরকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে পথে পথে অন্য হোটেলগুলোর পর্যটকদেরকে নিয়ে বড় রাস্তায় চলে আসে। রাস্তায় কুকুর নিয়ে শিখরা প্রাতঃভ্রমণ করছেন। মন্দিরে পুজারীরা পুজা দিচ্ছেন। 
ইতিমধ্যে এক বিশাল এসি কোচে আমাদেরকে উঠানো হয়। সেদিন ছিল ১১ সেপ্টেম্বর ২০১২মঙ্গলবার। ওড়িশি নির্মান-শৈলীতে ১৯৩৮ সালে বলদেও বিড়লা লক্ষীনারায়ণ মন্দির নির্মাণ করেন। বিড়লা মন্দির নামেও পরিচিত। মন্দিরের বাহিরে বিশাল ঐতিহাসিক চত্বরে সম্রাট চন্দগুপ্ত মৌর্য্যসম্রাট অশোক ও শিখরাজ রনজিৎ সিংয়ের ভাস্কর্য্য রয়েছে। আর আছে সর্পদেবী, হনুমান ও বানরের মূর্তি। তারপর দেখি ইন্ডিয়া গেট ও সংসদ ভবন। স্যার লুথিয়েন্সের নকশায় ১৯১৩ সালে ৪২ মিটার উঁচু ইন্ডিয়া গেট স্থাপন করা হয়। এখানে চারপাশে বিশাল উদ্যান। ভারতীয় সংসদ ভবনের চেয়ে আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন অনেক বেশী সুন্দরযদিও আমাদের সংসদ ভারতীয় সংসদের মত সুষ্ঠুভাবে কার্যকর নয়।


আমাদেরকে নিয়ে আসে ইন্দিরা গান্ধির বাসভবনে। সাদামাঠা ভবন। এখানে ইন্দিরা গান্ধি বসবাস করতেন। তার দুইপুত্র সঞ্জয় গান্ধি ও রাজিব গান্ধি এ বাড়িতে বড় হন। ভবন হতে ১০০ গজ দূরে তার অফিস গৃহ। অফিসে যাবার রাস্তায় তিনি তার শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন। 
ঐ রাস্তাটিকে ঢেউ ঢেউ কাচ দিয়ে মৃদুমন্দ তরঙ্গ ভরা নদীর রূপ দেওয়া হয়েছে। যেখানে তার মৃত্যু হয় সেইস্থানটি কালো মার্বেল পাথরে ডাকা রয়েছে। ইন্দিরা গান্ধি যাদুঘরে ইন্দিরা গান্ধির ব্যবহৃত শাড়িগহনাক্রেষ্টতৈজসপত্র সযতনে রক্ষিত রয়েছে। বিশাল বাড়িটা বর্তমানে একটি সংরক্ষিত বাগান যেখানে অসংখ্য কাটবিড়ালি সর্বক্ষণ লাফিয়ে বেড়ায়। 
ইন্দিরা গান্ধি যে এক বিশাল মাপের ব্যক্তিত্ব ছিলেন তা যাদুঘর ঘুরে তার জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝতে পারা যায়। এবার আসি কুতুবমিনারে। ভারতে প্রথম মুসলিম বিজয়ের স্মারক হিসেবে গজনির নির্মাণশৈলীর অনুকরণে ভারতের প্রথম মুসলিম শাসক কুতুবউদ্দিন আইবেক ১১৯৯ সালে মিনারটির নির্মাণ কাজ শুরু করেনশেষ হয় ১২৩৬ সালে তার জামাতা সম্রাট ইলতুৎমিশের হাতে। মিনারটির উচ্চতা ৭২.৫ মিটার। ঘোরানো সিড়ি বেয়ে উঠেছে ৩৬৭ ধাপ। সামান্য হেলে আছে কুতুবমিনার। আকারেও বৈচিত্র আছে। গোড়াতে ব্যাস ১৪.৪০ মিটার ক্রমশ সরু হয়ে শেষ হয়েছে ২.৪৪ মিটারে। কুতুবমিনারের নিচে ১১৯৭ সালের একটি মসজিদ রয়েছে। মসজিদটিতে আমরা তিনজন নামাজ আদায় করি। দুচারজন নরনারীকেও সেখানে নামাজ পড়তে দেখি। কুতুবমিনার লাল বেলেপাতরে তৈরি ও বহিদেয়ালে আরবি হরফে পবিত্র কোরানের আয়াত উৎকীর্ণ রয়েছে। 

১৩১১ খ্রিষ্টাব্দে কুতুবমিনারের নিকট সম্রাট আলাউদ্দিন খলজি লাল বেলেপাতরে তৈরি করেন আলাই দরজা। বাইজেন্টাইন তুরস্ক হতে ভাস্কর এনে সম্রাট আলাউদ্দিন ভারতে প্রথম ধনুকাকৃতি খিলানের প্রচলন করেন। সম্রাটের সমাধি রয়েছে আলাই দরজার ডানে। কুতুব মিনারের উত্তরে আলাউদ্দিনের অপূর্ণ স্বপ্ন ২৭ মিটার উচু আলাই মিনার। তার স্বপ্ন ছিল কুতুবের দ্বিগুণ উচু মিনার গড়ার। তবে মৃত্যু আর উত্তরসূরীর অভাবে একতলাতে অপূর্ণ থাকে সে দুঃস্বপ্ন। মৃত্যুর পর সম্রাট ইলতুৎমিস ১২৩৫ সালে এবং আলাউদ্দীন খিলজি ১৩১৬ সালে এখানে সমাধিস্থ হন। কুওয়াতের পশ্চিমে ইলতুৎমিস নিজেই গড়ে তুলেন ইন্ডো-ইসলামিক শৈলীতে নিজের সমাধিসৌধ। এখানে উল্লেখ্য যে দিল্লির সম্রাট আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকালে ১৩০৩ সালে হজরত শাহজালাল(রঃ) আমার শহর সিলেটে আসেন।
কবি লেখক ব্লগার ও পূবালী ব্যাংকার ইসফাক কুরেশী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন