হুমায়ুন আহমদের নুহাশপল্লীতে একদিনঃ
বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বাধিক জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমদের স্মৃতিবিজড়িত গাজিপুর নুহাস পল্লীতে এক শিক্ষা সফরে যাই ৫ নভেম্বর ২০২১, শুক্রবার। সাথে ছিলেন পূবালী ব্যাংকের আমার সহকর্মী সাইদ আব্দুল্লাহ যীসু, হোটেল ইণ্টারকন্টিনাল শাখার ব্যবস্থাপক খালেদ আহমদ পলাশ, ঋণবিভাগ প্রধান কার্যালয়ের হাবিব মহসীন, আমার অফিসের বশির উল্লাহ, নরসিংদীর জামিল আহমেদ রাজু এবং আমার ধানমণ্ডি বাসার গাড়ি চালক খোকন। ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই হুমায়ুন আহমদ নিউইয়র্কে চিরবিদায় নেন, তখন বাংলাদেশে অঝুরধারার বৃষ্টি ঝরছিল। দেশ-বিদেশে তাঁর লাখ লাখ ভক্ত তখন শোকের সাগরে ভেসে যান। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে এমন পাঠকপ্রিয় লেখক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও চলচিত্রকার এর আগে জন্ম নেননি। হুমায়ুন আহমদের বাড়িয়ে ঢুকতে টিকেট মূল্য ২০০ টাকা। টিকেটের গায়ে লিখা দেখি এই টাকা নুহাস পল্লীর ব্যবস্থাপনা ও হুমা্যুন আহমদের নেত্রকোনায় নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত শহিদস্মৃতি স্কুলের কাজে ব্যয় হয়। হুমায়ুন আহমহ তাঁর মা আয়েশা ফয়েজের অনুরোধে তাঁর শহিদ বাবা ফয়জুর রহমানের স্মৃতি রক্ষার্থে স্কুলটি নির্মাণ করেন, কিন্তু কেবল পিতার নামে নামকরণ নাকরে দেশের ৩০ লক্ষ শহিদের উদ্দেশ্যে এই স্কুলটি উৎসর্গ করে দেন। ভিতরে ঢুকেই সামনে সুইমিংপুল, মা-সন্থানের ভাস্কর্য্য, খুকির ব্রোঞ্চের মূর্তি, একটি বাংলো, মাছের বড় চৌবাচ্চা। বিশাল চত্বরের একপাশে রেস্টহাউস বৃষ্টিবিলাস। বৃষ্টিবিলাসে প্রচুর কাটের ভাস্কর্য্য। পাশের খোলা পাকঘর ও ডাইনিং। বাংলাদেশে এই প্রথম আমি আপেল গাছ দেখি। পাশে একটি বামন জাপানি বটের গাছ, তাঁর চারপাশ পাকা করে বাধানো। বিভিন্ন দেশী বিদেশী বৃক্ষে ছোট্ট ফলকে নাম লিখা আছে। সামনের গাছের সুন্দর দুইটি আগায় টংঘর, দাবাখেলার ঘরে বড় বড় কাটের দাবার ঘুটি। ঘন বেলিফুলের বনের নিচে টালি দিয়ে নির্মিত ধ্যান ও বসার খোলা আসন। ভিতর বাটিতে যেতে দেখা যায় একটি পানির আঁধারে রুপকথার মৎস্যকন্যা, সিঙ্গাপুরের মঙ্গলের প্রথিক মিরলায়নের ভাস্কর্য্য। নিচে তাঁর অকালে মৃত্যুবরণকারী কন্যা লীলাবতীর নামে নির্মিত বিশাল পুকুর। পুকুরের মাঝে একটি দ্বীপ, বাঁশে নির্মিত একটি সেঁকো পেরিয়ে এই দ্বীপে যেতে হয়। পুকুরের দুইপারে আছে দুইটি ভিন্ন ডিজাইনের ঘাট ও বসার জায়গা। পুকুরপার ঘেষে 'ভুতের বাড়ি' নামক দুইটি কটেজ। নুহাস পল্লীর জায়গার পরিমান ৪০ বিঘা। হুমায়ুন আহমদের সমাধি গ্লাসে ঢাকা। বাড়ির বাহিরের রাস্থা দিয়ে সেখানে ঢুকতে হয়। আমরা তাঁর কবরের পাশে যাই। মনে হল তখন তাঁর এক গানের কলি। "তোমার কাছে একখান জিনিস চাইগো দয়াময়/চান্নিপ্রহর রাইতে যেন আমার মরণ হয়"। জ্যোৎস্নার বরপূত্র হুমাউন আহমদ নিউইয়র্কে যে রাতে মারা যান হয়ত সেরাত ছিল চান্নিপ্রহর রাত। নিউইয়র্ক রাতে ঘুমায়না। সেখানে রাতও দিনের মত আলোঝলমলে। তিনি ভালবাসতেন ঝুমবৃষ্টি। হ্যাঁ তখন সারা বাংলাদেশে ছিল ঝুমবৃষ্টির খেলা। প্রিয় হুমায়ুন আহমদ বাবার পুলিশের চাকুরির সুবাদে আমার প্রিয় শহর সিলেটেও তাঁর ছাত্রজীবনের বেশ কিছুকাল কাটিয়ে ছিলেন। তাঁকে হাজার সালাম ও শ্রদ্ধা জানাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন