চিত্রঃ লেখক, কবি ও ব্লগার ইসফাক কুরেশী
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষলগ্নে সিলেটের একজন সংখ্যালঘু মুসলিম ছিলেন সৈয়দ বোরহান উদ্দিন। তিনি সিলেট শহরের টুলটিকর মহল্লায় বসবাস করতেন। বিবাহিত জীবনের বহু বছর পার হলেও তাঁর কোন সন্থানাদি হয় নি। তিনি মহান আল্লাহর দরবারে মানত করেন যদি কোন পুত্র সন্থানের জন্ম হয় তাহলে একটি গরু জবাই করে বিতরন করবেন। হিন্দুরাজ্যের বাসিন্দা এই ভদ্রলোকের পত্নী বহুবছর পর একজন পুত্র সন্থান জন্ম দেন। তিনি ভয়ে ভয়ে অতি গোপনে একটি গরু জবাই করে মুসলিম পাড়ায় বিতরন করে আকিকা ও মানত পূর্ন করেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস একটি চিল এক টুকরো মাংস পায়ে করে উড়ে নিয়ে যায় এবং রাজা গৌড়গোবিন্দের রাজগৃহ বা রাজমন্দিরে ফেলে দেয়। রাজা গরুর মাংসের টুকরো দেখে যারপরনাই রাগান্বিত হন এবং বোরহান উদ্দিনকে ধরে এনে পবিত্র গোহত্যার অপরাধে তাঁর দু'হাত কবজি পর্যন্ত কেটে দেন এবং নবজাতক পুত্রকে দেবতার সামনে বলী দেন। শ্রীহট্টের অত্যাচারিত সংখ্যালঘু মুসলমান এই সৈয়দ বোরহান উদ্দিন তাঁর একমাত্র নবজাতক পুত্রকে হত্যা এবং নিজ হস্থকর্তনের বিচার চাইতে মুসলিম বঙ্গের রাজধানী লক্ষনাবতি (গৌড়) গমন করেন এবং সুলতান শামসউদ্দিন ফিরুজের দরবারে রাজা গোবিন্দের বিরুদ্ধে বিচারপ্রার্থী হন। প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান লক্ষনাবতির অবস্থান রাজশাহী বিভাগের পশ্চিম দিকে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায়।
সে সময় তরফের (হবিগঞ্জ) রাজা ছিলেন আচক নারায়ন। এই হিন্দু রাজ্যে বসবাসকারী কাজি নুর উদ্দিন তাঁর পুত্রের বিয়ে উপলক্ষে একটি গরু জবাই করেন। এই গরু হত্যার অপরাধে আচক নারায়ন নুর উদ্দিনের পুত্রকে হত্যা করেন। একই সময় সুলতান শামস উদ্দিনের দরবারে নিজ পুত্রকে হত্যার অভিযোগ দায়ের করেন তরফের নুর উদ্দিন। তাঁরা দু'জন অত্যাচারিত মুসলমান বাঙ্গালার সুলতানের দরবারে নিজ নিজ দুঃখের কাহিনী জ্ঞাপন করলে সুলতান শামস উদ্দিন ফিরোজ ভীষন মর্মাহত হন এবং বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সহিত গ্রহন করেন।
তিনি পূর্বাঞ্চলে মুসলিম রাজ্য সম্প্রসারন ও এই দুইজন অত্যাচারী রাজাদেরকে দমনের জন্য অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নিজ ভাগিনা সিকন্দর খান গাজীকে সসৈন্যে সিলেট বিজয়ে প্রেরন করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন