বুধবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৬

হৃদয়ে অগ্নিউৎপাত

হৃদয়ে অগ্নিউৎপাত
 সময়ের স্রোত এক বহতা নদী,
সতেরটা বছর পেরিয়ে গেল,
চিনতে পারিনি আমি, আমাকে।
আমার ভিতর যে আমি বেঁচে আছি
সেই আমিকে একদিনও দেখিনি,
 একদিনও পাইনি তার খোঁজ।
সেই সত্ত্বাকে সত্যই দেখা যায় না,
বোঝা যায় না, ধরা ছোঁয়া যায় না,
পৃথিবীর কেউই স্পর্শ করতে পারেনা তাকে।
এমন কি, পারেননি-
লালন সাই, রবীন্দ্রনাথ, সক্রেটিস, হাসন রাজা।
এমনি করে করে,
 দিনমালার উজান স্রোত বয়ে গেল চুপিসারে।
বয়স সতের হল,
 খোজে পাইনি তারে, কে আমার অচীন পাখি।
কোনদিন একবারও তার প্রভাব, তার ছায়া,
তার রূপ-রস-গন্ধ-মোহ,
আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি, কোনমতে।

 সতের বয়সের সবুজ ছোঁয়ায়, 
সেই 'আমি' খানিক প্রকাশ হল।
চুপেচুপে প্রজ্জ্বলিত হল,
তার সামান্য তেজে জ্বলতে শুরু করল,
আমার শরীরের প্রতিটি জীবকোষ।
গরম হল প্রতিটি রক্ত কণিকা,
কালবৈশাখীর তুফান বইল,
 আমার মেঘহীন প্রাণাকাশে।
বজ্রাঘাতে খান খান হয়ে গেল,
 বুকের স্বচ্ছ আবরণ।
মৃত বিসুভিয়াস জীবিত হল,
তার বদ্ধলাভা স্থব্ধ ছিল,
বারুদের গন্ধে হঠাৎ সশব্দে জাগল, 
 হল অগ্নিউৎপাত, লাভা উদগীরন।
প্রাচীর বন্দী হৃদয় নগরে আমার,
আমার 'আমিতে' আমার।

 গরম লাভার চাপায় চিরতরে হারিয়ে গেল,
রোমান সভ্যতার লীলাভুমি পুম্পেই নগরী।
 স্বগৃহে, খামারে কর্মরত মানুষ, 
মাতৃক্রোড়ে স্তন পানরত মা ও শিশু,
 বুড়ো বুড়ি, ঘুমন্ত রোগী,
ক্রীড়ায় বিভোর বাচ্চাদের দল,  
কামকেলী মত্ত যুবক ও যুবতী, 
সাজানো পরিপাটি বাগান বাড়ি। 
যেমন ছিল ঠিক তেমনই,
কিছু বুঝার আগেই তারা তলিয়ে গেল,
ফুটন্ত লাভার  স্রোতের গভীর গহীনে।

 সতের বছর ধরে, কটানা পূর্ত খননের পর,
 বহুকষ্টে পেলাম পুম্পেই শহরআমার ভিতর
  
রচনাকাল ঃ
আমার এম সি কলেজ জীবন
(১৯৮১-১৯৮৩ সাল)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন