গোরস্থানে
দিবসের কর্মশেষে ক্লান্ত দিবাকর,
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পশ্চিম গগনে।
চুপে চুপে কালোছায়া নেমে,
গ্রাসিতেছে সারাবিশ্ব কি যে আনমনে।
সম্মুখে ঐ দূরে বটবৃক্ষতল,
হালকা বৃষ্টির ধারা ঝরিতেছে অবিরল।
ঘাসে ভরা বিরাট এক ভূমি,
পাশদিয়ে ছোটনদী বহে পদচুমি।
সেই উদাস মাঠে কত গর্তকূপ,
বেজি শেয়ালের নিরাপদ আস্থানা।
গভীর রাতে চীৎকার শুনি,
হুক্কা হুয়া আর কতকিনা।
সূর্যটা ডুবে গেলে বাদুরের পাল,
ঝুলে থাকে বটশাখে জানিনাসে হতে কোনকাল।
এই বিরাট অশ্বত্থের তলে,
ছোট
নদী তীরে,
ঘুমিয়ে আছে লক্ষ লোক যুগযুগ ধরে।
এই মাঠ এ গ্রামের প্রাচীন গোরস্থান,
পাশ দিয়ে যেতে রাতে কাঁপে সারাপ্রাণ।
মনে হয় মরে যাওয়া মানুষের অশরিরী প্রাণ,
আশপাশে অদৃশ্য হয়ে বিরাজমান।
মানবাত্মা কেউ যেন দু’টি কানে ছাড়ে
নিঃশ্বাস,
পটপট পিছু হাটে আমারে করিতে গ্রাস।
গ্রামের সুন্দরী পল্লীবালাগণ,
একদিন যাদের ছিল রূপে গর্বমন।
মেটো পথে হাঁটিতো ওরা অঙ্গে ঢেউতুলে,
কিশোরের চঞ্চল চোখ যেত সব ভূলে।
তারাই এখন ঘুমায় বটের তলায়,
ফেলে রেখে সব স্বপ্ন পৃথিবীর গায়।
স্বজনেরা সিক্ত হতো দু’চোখের জলে,
মুছিত লালচোখ রঙ্গীন রূমালে।
সুন্দর সে পৃথিবী,
প্রদীপ্ত
যৌবন,
প্রেম প্রেম হাসীমাখা রূপালি নয়ন।
মিশেগেছে সব আজ মাটির তলায়,
মহাকালের বক্ষে এক অনন্ত নিদ্রায়।
গ্রামের সামন্ত প্রভূ,
চৌধুরী,
খানবাহাদুর,
খানেবাড়ী,
কিরান,
প্রজা
প্রচন্ড প্রতাপ।
যাহা আজ ক্ষয়ে গেছে এই মাঠে,
থেমে গেছে গ্রীষ্মের সূতীব্র উত্তাপ।
এই গ্রামের জমিদার,
আজ
তার নেই অবশেষ,
মহাকালের আবর্তে পড়ে সব নিঃশেষ।
দুইভাইয়ে ঠেলাঠেলি সারাটা জীবন,
পাশাপাশি দুটি গর্তে করিলো শয়ন।
বর সেজে যুগে যুগে তরুনের দল,
এনেছে নতুন বধু পল্লী কূড়ে ঘরে।
এসেছে বাবার ঘরে ঢেলে অশ্র“জল,
লাল রঙা বিয়েশাড়ি পরে।
মধুময় দাম্পত্য জীবন,
প্রেম প্রেম মশকরা যখন তখন,
দ্বারে বসে নতুন বউ স্বামীর অপেক্ষায়।
বসে বসে গুণিত দিন বেলা অবেলায়,
পড়ে এলো বেলা।
বুড়ো হয়ে থেমে গেল সব রঙ্গখেলা,
তারপর দুইজনে বেছে নিল এই মাঠি তলা।
চাতক পাখির মতো প্রতীক্ষার পর,
নববধু লভিল কোলে ছোট্ট সোনাধন।
বড় হবে সোনামনি স্বপ্নে ভরা চোখ,
কখন হাঁটবে,
কখন
বলবে, বারবার
কখন? কখন?
বড় হয়ে একদিন বিষণœ
সন্ধ্যায়,
ঝরেগেল স্বপ্নধন রোগ যন্ত্রণায়।
হারিয়ে মা সাতরাজার ধন,
কাঁদিয়া বেহুশ হলো,
প্রলাপেতে
কাঁপিল পবন।
কৃষক মজুর আর ধনী জমিদার,
উচ্চ-নীচ সকলের শেষ সমাচার,
জনহীন যন্ত্রণার নিথর এ প্রান্তর,
সবাইকে ডাকিয়া বলে,
জানো
আমি তোমাদের ঘর।
সন্ধ্যার ছায়াঘন হিমেল হাওয়ায়,
সব ফেলে আসিবে তুমি চিরনিদ্রায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন