দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা- মাস্যাসুসেট, মিশিগান এবং ক্যানাডা সফরপর্ব- উনিশ
নায়েগ্রা ফলস পরিদর্শনঃ
১৬ জুলাই ২০১৬ সাল। দিনটি স্মরণীয় কারন এদিন জীবনে দেখা সেরা সুন্দর নায়াগ্রা আমাদের দেখা হয়। টরেন্টো হতে মাত্র দুই ঘণ্টায় কানাডার পর্যটন শহর নায়াগ্রায় পৌছা যায়। দুই শহরের দুরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। সকাল ১১ টায় রুহুলের সেভেন সিটের গাড়ি পূর্ন লোড হয়ে যাত্রা শুরু করি। বোন সেহা, ভাগনা, ভাগ্নি, ভাগনা বউ সবাই আনন্দ স্ফূর্তি করে ১ ঘটিকার সময় নায়াগ্রা শহরে প্রবেশ করি। হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত রূপের রানী পর্যটন নগরী নায়াগ্রা। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সীমান্তের পাঁচটি সুবিশাল লেকের একটি ইরি ও অন্যটি লেক অন্টারিও। বড় বড় চ্যানেল দিয়ে ইরি লেকে এসে অন্য তিন লেক সুপিরিয়র, মিশিগান ও হুরনের অথৈ জলরাশী জমা হয়। ইরি লেক উচ্চভূমিতে এবং অন্টারিও লেক চারপাচ শত ফুট নিম্নভূমিতে অবস্থিত। ইরি লেকে জমা হওয়া বিশাল জলরাশীর প্রবল তোড় প্রচন্ড বেগে উপচে পড়ে নায়াগ্রা নদী সৃষ্টি করে এবং এই নদী দিয়ে অন্টারিও লেকে বয়ে যায়। এই জলরাশির শেষ গন্তব্য লাব্রাডা প্রনালী হয়ে আটলান্টিক মহাসাগর। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তরেখা নায়াগ্রা নদী। এই সুন্দর টলটলে নদীর পূর্বপার যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমপার ক্যানাডা। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সিংহভাগ অংশ ক্যানাডায় অবস্থিত, তাই নায়াগ্রাকে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ক্যানাডা হতেই ভালভাবে উপভোগ করা যায়।
নায়াগ্রার দুইটি অংশ, প্রথমাংশে যুক্তরাষ্ট্র হতে চারপাচ শত ফুট প্রশস্থ একটি নদী সরলপথে এসে অনেক উপর থেকে নায়াগ্রা নদীতে উপচে পড়ছে। এই জলপ্রপাত হতে দুই ফার্লং দূরে মূল নায়াগ্রা জলপ্রপাতের অবস্থান। বাংলাদেশের আয়তনের কয়েকগুণ বড় চারটি সমুদ্রসম লেকের কোটি কোটি টন পানি আমাদের এম সি কলেজ মাটের মত আয়তনের বৃত্তাকার ক্ষেত্র রচনা করে ভয়ঙ্কর তর্জন গর্জন করে চার পাঁচ শত ফুট নিচে নেমে একটি নদীর জন্ম দেয়। এই নদীটিই পৃথিবী বিখ্যাত নায়াগ্রা নদী। এখানে জলের সাথে জলের প্রচন্ড সংঘর্ষে জলকনা কুন্ডলী তৈরী করে উড়ে যায় আকাশে। এই জলকনা উপরে মেঘমালা তৈরী করে নায়াগ্রার আকাশে সব সময় বিচরন করে। ভাসমান জলকনা ভিজিয়ে দেয় আশপাশের বৃক্ষ-লতা-ভুমি। তাইতো নায়াগ্রার উদ্যানমালা এত সতেজ, এত সজিব, এত সুন্দর। নায়াগ্রা নদীর জলকনায় ফোটে উঠে শত সহস্র রংধনু। রংধনুর সাতরং মানুষের চোখে বর্নচ্ছটার আলোক ধাঁধা লাগিয়ে দেয়। এ যেন একই সাথে, একই সময়ে, হাজার হাজার রংধনুর বিচিত্র রংখেলা।
 
 
 
“ছেলেবেলায় পড়েছিলাম ভূগোল ইতিহাসে,
বৃহত্তম জলপ্রপাত ক্যানাডা নামের দেশে।
বুড়ো কালে দেখিলাম বিষ্মিত চোখ নিয়ে,
নায়াগ্রা জলপ্রপাতের অতি কাছে গিয়ে।
শুনিলাম নিজকানে পানির গর্জন,
শুন্যে ঝুলে রামধনু জুড়ায় নয়ন।
দৃশ্য ছবি, কবিতা কিংবা মুখে বলিলে,
বুঝিবেনা কোনকিছু নিজে না দেখিলে।”
এমসি কলেজ মাটের সময়াতনের উপবৃত্তাকার নায়াগ্রার ক্ষেত্রটি এই গ্রহের এক অনন্য অপার্থিব স্থান। এযেন মর্তের পৃথিবীতে এক টুকরো বেহেশত। এইখানে যেন পৃথিবীর সিংহভাগ সুন্দর ও সব স্বর্গীয় আনন্দ লুকিয়ে রয়েছে।
জাহাজ হতে নামার পর রুহুল বলল, মামাকে নায়াগ্রার আর কিছু দেখাব যার খবর লোকেরা তেমন জানেনা। সেদিকে মানুষ খুব অল্পই যায়। সে দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে আমাদেরকে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের অনেক উজানে নিয়ে যায়। কয়েক মাইল জায়গা জুড়ে নায়াগ্রার দিকে ধাবমান পানির দৃশ্য নয়নকে সম্মোহন করে দেয়। এযেন চেঙ্গিস খানের ধাবমান বিশাল অজেয় অশ্বারোহী মোঙ্গর বাহিনী, যারা ধপাস ধপাস করে ঘোড়ার খুরের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তুলে বিশ্ব জয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
নায়েগ্রা তীরে তীরে টিউলিপ উদ্যান। সারি সারি লাল, হলুদ, নীল, সাদা টিউলিপে বাগান ছেয়ে আছে। মাঝে মাঝে বসার গ্যালারী। শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ ও চীনা চোখ ধাঁধানো কয়েক জোড়া ময়ূর ময়ুরী। আমাদের দেশে পাঁচ তারকার উপর হোটেল নেই। এখানে সাত তারকা ম্যারিওট হোটেল, সাত তারকা শেরাটন হোটেল উঁচু পাহাড়ের উপর নায়াগ্রার কুয়াশার রাজ্যে যেন ঘুমিয়ে আছে। বিচিত্র তার-ট্রেনে চড়ে ঐ পাহাড়ে যেতে হয়। নায়াগ্রার জলকনায় সিক্ত সতেজ ফুলবাগ, বৃক্ষলতা, পাহাড় চূড়ার ওয়াচ টাওয়ার, পাহাড়ে ওঠার কাঁচের লিফট, ক্যাসিনো হাউস, এমিউজমেন্ট পার্ক, গার্ডেন, মার্কেট এবং সাত তারকা হোটেলের ছড়াছড়ি।
 
আমাদের চোখের সামনে সন্ধ্যা নেমে আসছে আনন্দ নগরী নায়াগ্রায়। রাতে নায়াগ্রা আরেক রূপ ধারন করে। হাজার হাজার নামী দামী গাড়ি নায়াগ্রা ছাড়ছে। রাতের নায়াগ্রা ফলসে কাছের পাহাড় হতে ফেলা সাতরঙের আলো খেলা করে। ঘুর্নায়মান বর্নিল আলোর বন্যায় নায়াগ্রা রঙ্গীন হয়ে উঠে। আলোর লাইন বরাবর যতদূর দৃষ্টি যায় কেবল নানা বর্নের জলকনা হীরা, মুক্তা ও সোনা দানার মত ঝলমল করে। রাতের নায়াগ্রাও সত্যই অপরূপ।
 
১৬ জুলাই ২০১৬ সাল। দিনটি স্মরণীয় কারন এদিন জীবনে দেখা সেরা সুন্দর নায়াগ্রা আমাদের দেখা হয়। টরেন্টো হতে মাত্র দুই ঘণ্টায় কানাডার পর্যটন শহর নায়াগ্রায় পৌছা যায়। দুই শহরের দুরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। সকাল ১১ টায় রুহুলের সেভেন সিটের গাড়ি পূর্ন লোড হয়ে যাত্রা শুরু করি। বোন সেহা, ভাগনা, ভাগ্নি, ভাগনা বউ সবাই আনন্দ স্ফূর্তি করে ১ ঘটিকার সময় নায়াগ্রা শহরে প্রবেশ করি। হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত রূপের রানী পর্যটন নগরী নায়াগ্রা। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সীমান্তের পাঁচটি সুবিশাল লেকের একটি ইরি ও অন্যটি লেক অন্টারিও। বড় বড় চ্যানেল দিয়ে ইরি লেকে এসে অন্য তিন লেক সুপিরিয়র, মিশিগান ও হুরনের অথৈ জলরাশী জমা হয়। ইরি লেক উচ্চভূমিতে এবং অন্টারিও লেক চারপাচ শত ফুট নিম্নভূমিতে অবস্থিত। ইরি লেকে জমা হওয়া বিশাল জলরাশীর প্রবল তোড় প্রচন্ড বেগে উপচে পড়ে নায়াগ্রা নদী সৃষ্টি করে এবং এই নদী দিয়ে অন্টারিও লেকে বয়ে যায়। এই জলরাশির শেষ গন্তব্য লাব্রাডা প্রনালী হয়ে আটলান্টিক মহাসাগর। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তরেখা নায়াগ্রা নদী। এই সুন্দর টলটলে নদীর পূর্বপার যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমপার ক্যানাডা। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সিংহভাগ অংশ ক্যানাডায় অবস্থিত, তাই নায়াগ্রাকে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ক্যানাডা হতেই ভালভাবে উপভোগ করা যায়।
নায়াগ্রার দুইটি অংশ, প্রথমাংশে যুক্তরাষ্ট্র হতে চারপাচ শত ফুট প্রশস্থ একটি নদী সরলপথে এসে অনেক উপর থেকে নায়াগ্রা নদীতে উপচে পড়ছে। এই জলপ্রপাত হতে দুই ফার্লং দূরে মূল নায়াগ্রা জলপ্রপাতের অবস্থান। বাংলাদেশের আয়তনের কয়েকগুণ বড় চারটি সমুদ্রসম লেকের কোটি কোটি টন পানি আমাদের এম সি কলেজ মাটের মত আয়তনের বৃত্তাকার ক্ষেত্র রচনা করে ভয়ঙ্কর তর্জন গর্জন করে চার পাঁচ শত ফুট নিচে নেমে একটি নদীর জন্ম দেয়। এই নদীটিই পৃথিবী বিখ্যাত নায়াগ্রা নদী। এখানে জলের সাথে জলের প্রচন্ড সংঘর্ষে জলকনা কুন্ডলী তৈরী করে উড়ে যায় আকাশে। এই জলকনা উপরে মেঘমালা তৈরী করে নায়াগ্রার আকাশে সব সময় বিচরন করে। ভাসমান জলকনা ভিজিয়ে দেয় আশপাশের বৃক্ষ-লতা-ভুমি। তাইতো নায়াগ্রার উদ্যানমালা এত সতেজ, এত সজিব, এত সুন্দর। নায়াগ্রা নদীর জলকনায় ফোটে উঠে শত সহস্র রংধনু। রংধনুর সাতরং মানুষের চোখে বর্নচ্ছটার আলোক ধাঁধা লাগিয়ে দেয়। এ যেন একই সাথে, একই সময়ে, হাজার হাজার রংধনুর বিচিত্র রংখেলা।
“ছেলেবেলায় পড়েছিলাম ভূগোল ইতিহাসে,
বৃহত্তম জলপ্রপাত ক্যানাডা নামের দেশে।
বুড়ো কালে দেখিলাম বিষ্মিত চোখ নিয়ে,
নায়াগ্রা জলপ্রপাতের অতি কাছে গিয়ে।
শুনিলাম নিজকানে পানির গর্জন,
শুন্যে ঝুলে রামধনু জুড়ায় নয়ন।
দৃশ্য ছবি, কবিতা কিংবা মুখে বলিলে,
বুঝিবেনা কোনকিছু নিজে না দেখিলে।”
এমসি কলেজ মাটের সময়াতনের উপবৃত্তাকার নায়াগ্রার ক্ষেত্রটি এই গ্রহের এক অনন্য অপার্থিব স্থান। এযেন মর্তের পৃথিবীতে এক টুকরো বেহেশত। এইখানে যেন পৃথিবীর সিংহভাগ সুন্দর ও সব স্বর্গীয় আনন্দ লুকিয়ে রয়েছে।
জাহাজ হতে নামার পর রুহুল বলল, মামাকে নায়াগ্রার আর কিছু দেখাব যার খবর লোকেরা তেমন জানেনা। সেদিকে মানুষ খুব অল্পই যায়। সে দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে আমাদেরকে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের অনেক উজানে নিয়ে যায়। কয়েক মাইল জায়গা জুড়ে নায়াগ্রার দিকে ধাবমান পানির দৃশ্য নয়নকে সম্মোহন করে দেয়। এযেন চেঙ্গিস খানের ধাবমান বিশাল অজেয় অশ্বারোহী মোঙ্গর বাহিনী, যারা ধপাস ধপাস করে ঘোড়ার খুরের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তুলে বিশ্ব জয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
নায়েগ্রা তীরে তীরে টিউলিপ উদ্যান। সারি সারি লাল, হলুদ, নীল, সাদা টিউলিপে বাগান ছেয়ে আছে। মাঝে মাঝে বসার গ্যালারী। শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ ও চীনা চোখ ধাঁধানো কয়েক জোড়া ময়ূর ময়ুরী। আমাদের দেশে পাঁচ তারকার উপর হোটেল নেই। এখানে সাত তারকা ম্যারিওট হোটেল, সাত তারকা শেরাটন হোটেল উঁচু পাহাড়ের উপর নায়াগ্রার কুয়াশার রাজ্যে যেন ঘুমিয়ে আছে। বিচিত্র তার-ট্রেনে চড়ে ঐ পাহাড়ে যেতে হয়। নায়াগ্রার জলকনায় সিক্ত সতেজ ফুলবাগ, বৃক্ষলতা, পাহাড় চূড়ার ওয়াচ টাওয়ার, পাহাড়ে ওঠার কাঁচের লিফট, ক্যাসিনো হাউস, এমিউজমেন্ট পার্ক, গার্ডেন, মার্কেট এবং সাত তারকা হোটেলের ছড়াছড়ি।
আমাদের চোখের সামনে সন্ধ্যা নেমে আসছে আনন্দ নগরী নায়াগ্রায়। রাতে নায়াগ্রা আরেক রূপ ধারন করে। হাজার হাজার নামী দামী গাড়ি নায়াগ্রা ছাড়ছে। রাতের নায়াগ্রা ফলসে কাছের পাহাড় হতে ফেলা সাতরঙের আলো খেলা করে। ঘুর্নায়মান বর্নিল আলোর বন্যায় নায়াগ্রা রঙ্গীন হয়ে উঠে। আলোর লাইন বরাবর যতদূর দৃষ্টি যায় কেবল নানা বর্নের জলকনা হীরা, মুক্তা ও সোনা দানার মত ঝলমল করে। রাতের নায়াগ্রাও সত্যই অপরূপ।

 
 
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন