দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা- মাস্যাসুসেট, মিশিগান এবং ক্যানাডা সফরপর্ব- সতের
হাইডপার্কের চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক
ক্রিস্টোফারের সাথে আমার কথা হয়। তিনি একজন বৃটিশ কিন্তু তার পত্নী একজন পর্তুগীজ।
ক্রিস্টোফার বললেন, তিনি ভারত অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো ও কিউবা
সফর করেছেন। জানালেন মেক্সিকো গিয়ে তিনি প্রথম গরীব মানুষ দেখেন। ক্যানাডায়
ধনী-গরীবের জীবনমানে তেমন কোন ব্যবধান নেই। এখানে কে ধনী, কে গরীব তা বুঝার
উপায় নেই। কানাডার বাহিরে গরীব দেশগুলো সফরে গিয়ে ধনী গরীবের মধ্যকার বৈষম্য
সর্বপ্রথম ক্রিস্টোফারের চোখে ধরা পড়ে। তিনি মেস্কিকো সিটিতে গিয়ে অবাক চোখে দেখেন
গরীব জনগোষ্টি ময়লা বস্তিতে মানবেতর জীবন যাপন করছে, আর পাশেই ধনী
লোকগুলো নির্লজ্জের মত চাকচিক্যময় বিলাসবহুল ভবনে স্বার্থপরের মত জীবন কাটাচ্ছে।
তিনি আর বিস্মিত হন যখন দেখেন মেস্কিকোর
রাস্থায় চোর ডাকাতরা প্রকাশ্যে মানুষের ম্যানিব্যাগ ও সেলফোন কেড়ে নেয়। এসব ঘটনা
তিনি ক্যানাডায় কখনও দেখেন নি। আমি বলি ক্যানাডা চিরশান্তির দেশ। আমার মুখে তিনি
কানাডার প্রশংসা শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে বললেন ক্যানাডায় জন্ম নেয়ার জন্য আমি নিজেকে
ভাগ্যবান মনে করি। তাকে বললাম, আমার জন্মস্থান বাংলাদেশ গরীব হলেও চোর
ডাকাতের দেশ নয়। তবে বাংলাদেশে মেস্কিকোর মত ধনী গরীবের জীবনমানের পর্বত প্রমান
বৈষম্যের বিষয়টা অস্বীকার করতে পারলাম না।
কানাডার প্রতিটি নারী, প্রতিটি শিশু ও
প্রতিটি পুরুষ আলাদাভাবে এক একটা অখন্ড স্বাধীন সত্ত্বা। কেউ কারো উপর কতৃত্ব করতে
পারেনা, ছড়ি ঘুরাতে পারেনা। এখানকার শিশুরা
স্কুলে, পার্কে, অরন্যে, সুইমিংপুলে
প্রকৃতির সাথে এমনভাবে মিশে যায় যেন তারা পাখি কিংবা হংস ছানার একেবারে প্রকৃতির
সন্থান। অনিন্দ্যসুন্দরী টিচারগন নেচে গেয়ে বাচ্চাদের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে
যান। ক্যানাডায় বাচ্চাদেরকে কোন ধরনের শারীরিক কিংবা মানসিক নির্যাতন ও কষ্ট
প্রদান সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। কানাডার সমাজ ব্যবস্থায় অনুমতি ছাড়া কাউকে স্পর্শ করা
অপরাধ, সে নারী, পুরুষ, শিশু যাই হউক। এখানকার
ভদ্রলোকেরা কোন প্রয়োজনে লাইন ধরে দাড়ালেও নিরাপদ দুরত্ব ফাঁক রেখে দাড়ান যাতে
কারো গায়ে স্পর্শ না লাগে। একদিন আমি অভিমত ব্যক্ত করলাম কানাডার শিশুরা আমাদের
দেশের শিশুদের চেয়ে অনেক উন্নত ও দক্ষ হয়ে গড়ে উঠবে। আমার ছেলে জেফার তখন দ্বিমত
পোষন করে বলল, যে সব শিশুরা প্রতিকূল পরিবেশে বড় হয়, তাদের টিকে শক্তি
বেশী হয়। বাংলাদেশের শিশুরা বৈরী ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বেড়ে উঠে, তাই আরাম ও
শান্তিময় পরিবেশে বড় হওয়া কানাডার শিশুদেরকে যদি আমাদের শিশুদের সহিত একই বৈরী
পরিবেশে ছেড়ে দেয়া হয় তবে আমাদের শিশুরা সহজে টিকে যাবে। এই অতি আরামে সযতনে বড়
হওয়া কানাডার শিশুরা তা সহ্য করতে পারবেনা।(চলবে)
এখানে কি পড়বে তা ব্যক্তি নিজেই
সিন্ধান্ত নেয়। প্রতিটি শিশু বড় হয়ে নিজের পছন্দ সই বিষয়ে লেখাপড়া করে। ভবিষ্যতে
কোন পেশায় যাবে তাও এখানে নিজস্ব সিন্ধান্তের বিষয়। ক্যানাডায় আমাদের দেশের মত
পড়ার বিষয় কিংবা পেশা অন্যরা নির্ধারন করে দেয়না। নিজের পছন্দের বিষয়ে অধ্যয়ন এবং
পছন্দের পেশা জীবন বেছে নেয়ায় তারা পড়া ও কাজে আনন্দ পায়। তাই তাদের শিক্ষা ও
পেশায় সর্বোচ্চ সাফল্য আসে। তাদের শিক্ষা ও পেশা জীবন আনন্দে ভরে উঠে।
রুহুলের কাছে একজন ক্যানাডিয়ানের পছন্দের গল্প শুনি। তার জন্ম কানাডার এক নির্জন গ্রামে। তার বাবা পেশায় ছিলেন ঘোড়ার খামারি। তাদের বাড়িটি একটি ঘোড়ার খামার। ভদ্রলোক শৈশব হতে রান্না-বান্না খুব পছন্দ করতেন। পাকঘরে মাকে সব সময় রান্নার কাজে সহায়তা করতেন। রুহুল তখন একটি পাঁচ তারকা হোটেলে কাজ করত। তখন এই ভদ্রলোক ছিলেন এই হোটেলের রয়েল সেফ। অতি মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও তিনি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে যাননি। তিনি তার পছন্দের বিষয় রান্না (Cooking) নিয়েই লেখাপড়া করেন। রান্না বিষয়ে কানাডার সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে এই বিষয়ে আর উচ্চশিক্ষা নিতে যান প্যারিস। রান্না বিষয়ে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে হন এই পাঁচ তারকা হোটেলে রয়েল সেফ। তার বাৎসরিক বেতন দেড়লক্ষ ক্যানাডিয়ান ডলার। যা বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি টাকা। কিন্তু চাকুরী তার পছন্দ হলনা, এখানে সরাসরি মাঠকর্মের সুযোগ নেই। সারাদিন অফিস কক্ষে বসে থাকতে হয়। তিনি নিজহাতে রান্নাবান্না করা পছন্দ করেন, এমন সুযোগ না থাকায় একদিন তিনি পাঁচ তারকা হোটেলের লোভনীয় চাকুরীটা ছেড়ে দেন এবং টরেন্টোতে একটি খাবার হোটেল খুলে বসেন।(চলবে)
রুহুলের কাছে একজন ক্যানাডিয়ানের পছন্দের গল্প শুনি। তার জন্ম কানাডার এক নির্জন গ্রামে। তার বাবা পেশায় ছিলেন ঘোড়ার খামারি। তাদের বাড়িটি একটি ঘোড়ার খামার। ভদ্রলোক শৈশব হতে রান্না-বান্না খুব পছন্দ করতেন। পাকঘরে মাকে সব সময় রান্নার কাজে সহায়তা করতেন। রুহুল তখন একটি পাঁচ তারকা হোটেলে কাজ করত। তখন এই ভদ্রলোক ছিলেন এই হোটেলের রয়েল সেফ। অতি মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও তিনি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে যাননি। তিনি তার পছন্দের বিষয় রান্না (Cooking) নিয়েই লেখাপড়া করেন। রান্না বিষয়ে কানাডার সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে এই বিষয়ে আর উচ্চশিক্ষা নিতে যান প্যারিস। রান্না বিষয়ে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে হন এই পাঁচ তারকা হোটেলে রয়েল সেফ। তার বাৎসরিক বেতন দেড়লক্ষ ক্যানাডিয়ান ডলার। যা বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি টাকা। কিন্তু চাকুরী তার পছন্দ হলনা, এখানে সরাসরি মাঠকর্মের সুযোগ নেই। সারাদিন অফিস কক্ষে বসে থাকতে হয়। তিনি নিজহাতে রান্নাবান্না করা পছন্দ করেন, এমন সুযোগ না থাকায় একদিন তিনি পাঁচ তারকা হোটেলের লোভনীয় চাকুরীটা ছেড়ে দেন এবং টরেন্টোতে একটি খাবার হোটেল খুলে বসেন।(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন