শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

একটি বৈদেশিক ড্রাফট জালিয়াতির ঘটনাঃ

 

একটি বৈদেশিক ড্রাফট জালিয়াতির ঘটনাঃ

২০০৫ সালে খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারের সমাপ্ত বছরে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের তত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে প্রচন্ড সংঘাত আরম্ভ হয়। একটানা দুই বছর প্রতিদিন বিরামহীন হরতাল ও হানাহানি চলতে থাকে। এধরনের এক বিরূপ পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের সুচনালগ্নে সেনাবাহিনী সমর্থন নিয়ে গদীতে বসেন শাহাব উদ্দিন। তার কঠিন হস্থক্ষেপে দেশে থমথমে এক শান্তিময় অবস্থা নেমে আসে। এই ধরনের ভীতিকর সময়েও জালিয়াতরা সক্রিয় ছিল। আমি একদিন অফিসে বসে আমার সাবেক বস আমাদের দরগাগেইট শাখার ব্যবস্থাপক মোসাদ্দিক চৌধুরীর ফোন পেলাম। উৎকণ্ঠিত কন্ঠে স্যার বললেন, কুরেশী সাহেব আপনার শাখার অমুক হিসাবের ব্যালেন্সটা বলুন। আমি দেখলাম হিসাবটিতে টাকা নেই। এবার মোসাদ্দিক স্যার বললেন এই হিসাবে কিছুদিন আগে একটি জাল ফরেন ড্রাফট তার শাখা হতে পরিশোধ হয়ে গেছে, আমি যেন এই হিসাবের মালিকের সাথে যোগাযোগ করে জাল হওয়া টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহন করি। আমি পরীক্ষা করে দেখলাম জাল হওয়া ড্রাফটের টাকার পরিমান ৯৮,৫০০/= টাকা। কুয়েত হতে ইস্যু হওয়া ড্রাফট পরিশোধে একলক্ষ টাকা হলে এডভাইস প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই জাল ড্রাফট তদপেক্ষা কম হওয়ায় দরগাগেইট শাখা সহজে পরিশোধ করে দেয়। এই ফরেন ড্রাফটটি এমন নিখুঁত ভাবে জাল করা হয় যে এটা ধরার কোন উপায়ই ছিলনা এটি জাল নাকি আসলআমি হিসাবের মালিককে ডেকে আনলে সে হতচকিত হয়ে যায়। লোকটি তরুন বয়স্ক একজন গরীব সিএনজি চালক। কঠোর পরিশ্রম করে একটি পুরানো বেবী টেক্সীর মালিক হয়েছে। দরগাগেইট শাখা হতে টাকা এসে জমা হবার পর সে নিজে চেকের পিছনে দুইটি দস্তখত দিয়ে এই ৯৮,৫০০/= টাকা  তুলে নিয়ে গেছে। আমি তাকে ডেকে এনে বিষটি অবগত করলে সে বিষ্মিত হয়ে বলল ঢাকাইয়া এক তরুণী কিছুদিন আগে তাদের পাশে বাসা ভাড়া নেয়। সে তার সাথে ধর্মের ভাই সম্পর্ক স্থাপন করে। একদিন এই মেয়েটি বলল, তার স্বামী কুয়েত থাকেন। তিনি জরুরী কিছু টাকা পাঠাবেন। এই টাকা তার হিসাবে জমা করে তাকে যেন পরিশোধ করে দেন।

আমি খবর নিয়ে জানলাম তরুণটি একজন সহজ সরল ভাল মানুষ। স্বল্প শিক্ষিত এই গরিব মানুষটি ঘুণাক্ষরেও বুঝতেই পারেনি এই অপরিচিত সুন্দরী যুবতী একজন প্রতারক। এই দুষ্ট যুবতী সুকৌশলে তার অপারেশন সমাপ্ত করে যখন অদৃশ্য হয়ে গেল। হতভাগা তরুণটি শেষে ধারকর্জ করে এবং নিজের আয় রোজগারের একমাত্র অবলম্বন সিএনজি ট্যাক্সি বিক্রয় করে এই টাকা পরিশোধ করে দেয়।     

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন