শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

শেয়ার ব্যবসা- জাহাদার ভাই সকাশে আমিঃ

 

শেয়ার ব্যবসা- জাহাদার ভাই সকাশে আমিঃ

সত্যি বলতে কি, শেয়ার ব্যবসার নাম শুনলেই আমি ভয় পেতাম। অফিসে আমার টেবিলে এসে অনেক শেয়ার ব্যবসায়ী বসতেন। তারা শেয়ারের নানা লাভক্ষতির আলাপ সালাপ করতেন কিন্তু আমি এর আদিঅন্ত কিছুই বুঝতাম না, বুঝার তেমন কোন আগ্রহও আমার ছিলনা। আমি এমন একজন লোক, যে বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানিনা সেখানে আমি না জেনেশুনে পা ফেলতে যাইনা। এক এগারোর পর সিএনজির ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে আমি মনে মনে শরিকানের হাতে পুঁজি তুলে না দিয়ে নিজে নিজে করা যায় এমন একটি লাভজনক ব্যবসা মনেমনে খোজছিলাম। আমার পুঁজি যখন অংশীদারি ব্যবসায় অন্য দুষ্টলোকদের হাতে চলে যায় তখন লাভ তো দুরের কথা পুঁজিও হারিয়ে যেতে পারে। এমন পুর্ব অভিজ্ঞতা রিকাবিবাজারের সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিকে অংশ নিয়ে আমার হয়ে গেছে। তাই অভিজ্ঞতা হতে শিখলাম যার তার ডাকে শরিকি ব্যবসায় হুড়মুড় করে ঢুকে পড়া আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ নয়।   

জাহাদার ভাই একজন পুরান শেয়ার ব্যবসায়ী, তিনি কাগজি শেয়ারের যুগে ১৯৯৬ সাল থেকে ঢাকা স্টক এক্সেইঞ্জে ব্যবসা করে আসছেন। প্রমাণসাইজ দেহাধিকারী হেন্ডসাম জাহাদার ভাই আমাদের ব্যাংকে চাকুরীরতা মির্জা জান্নাতুল ফাহমির জীবনসাথি তার বাসা ইসলামপুর, মোটর সাইকেলে বাসা হতে শহরে আসা যাওয়ার পথে প্রায়ই তিনি ঈদগাহ শাখায় এসে বসতেন। অল্পদিনে আমার প্রায় সমবয়সী জাহাদার ভাইয়ের সাথে এক বন্ধুত্বপূর্ন আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। শেয়ার ব্যবসার অনেক ঝড় তুফা্ন, গ্রীষ্ম বর্ষা, শীত বসন্ত তার মাথার উপর দিয়ে অনেক বয়ে গেছে। শেয়ার বাজারের অনেক বজ্রপাত এবং অনেক আতশবাজি দেখে দেখে তিনি অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। বেশ কয়েকবার তিনি আমাকে ব্রোকার হাউসে একটি বিও হিসাব খোলার অনুরোধ করেন, কিন্তু আমি কৌশলে এড়িয়ে যেতাম। এক এগারোর কিছুদিন পরই তিনি আমাকে জুরদিয়ে বললেন, এবার শেয়ারবাজারে প্রচুর কালো টাকা ঢুকবে একটি বিও হিসাব খোলেন। দেখবেন আপনার শেয়ারের দাম কিভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে উপরে উঠে। আমি তাকে জবাব দিলাম আমি শেয়ারের কিছুই বুঝিনা। তিনি বললেন, আপনাকে এখনই বুঝতে হবেনা, আমি কিনবো, ধীরেধীরে আপনাকে শিখাব বললাম তাহলে আপনাকে আমার শেয়ার শেখার পন্ডিতগুরু আমি মানলাম, তবে আগে শেখান তারপর ভাবা যাবে

তিনি একটি ছোট চটি বই এনে হাতে দিলেন। আমি কয়েকদিন এই চটি বই পড়ে শেয়ারের একদম প্রাথমিক তথ্য, উপাত্ত, অনুপাত, সুচক ইত্যাদি জেনে নিলাম। তারপর আর ব্যাপকভাবে জানার জন্য বাজার হতে অধ্যাপক আবু আহমদের ‘শেয়ার জেতার কৌশল’ নামক বইটি কিনে নিয়ে দুই এক মাস ভালভাবে পড়লাম। শেষমেষ বুকে বেশ সাহস সঞ্চয় করে ২০০৭ সালের জুন মাসে এই ঝুঁকিবহুল ব্যবসায় পা রাখলাম। সিলেট শহরের মানরু মার্কেটের হিলসিটি সিকিউরিটিজে একটি বিও হিসাব খোলে নিলাম। এবার শেয়ার কেনার জন্য বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে জাহাদার ভাইয়ের হাতে ২৪.০৬.২০০৭ তারিখের নয় লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার একটি চেক তুলে দিলাম।

জাহাদার ভাই এই টাকা দিয়ে একটি পোর্টফোলিও সাজালেন। তখন ব্যাংকের চাহিদা তুঙ্গে অবস্থান করায় তিনি পুবালী, শাহজালাল ও ব্রাক ব্যাংকের শেয়ার কিনলেন। সেইসাথে আফতাব অটো, এপেক্স ট্যানারি ও লাফার্জ সিমেন্টের কিছু শেয়ার রাখলেন। এই শেয়ার ক্রয়ের পরদিন হতে পোর্টফোলিও ভ্যেলু রোজ রোজ বাড়তে থাকে। পাচমাস পর ২৪ নভেম্বর ২০০৭ হিসাব করে দেখলাম পোর্টফোলিও ভ্যেলু একুশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা পার হয়ে গেছে।

এই এত লাভের বিষয়টি জাহাদার ভাইকে অবগত করামাত্র তিনি বললেন, কুরেশী ভাই আমি একটা ভবিষ্যতবাণী করব। কিসের ভবিষ্যতবাণী, জানতে চাইলে তিনি বললেন আমার ভবিষ্যতবাণী হচ্ছে আপনি খুবই ভাগ্যবান, আপনি শেয়ার ব্যবসায় সব সময় খুব লাভ করবেন এবং এই ব্যবসা হতে কখনও বেরিয়ে আসতে পারবেন না। তারপর বললেন আমি অনেক লোককে দিয়ে বিও হিসাব খোলায়েছি কিন্তু এতঅল্প সময়ে এতলাভ হতে দেখিনি। আমি জাহাদার ভাইয়ের এই ভবিষ্যৎবানী শুনে সাথে সাথে বললাম, আপনার মুখে চন্দন পড়ুক।

তিনি আর বললেন এখানে ঢুকে যারা প্রথমেই হাত পুড়ায় তারা আর এদিকে হাত বাড়ায় না। আপনি ঢুকামাত্র এত লাভের মুখে পড়েছেন যে এই ব্যবসার লোভ আর ছাড়তে পারবেন না। তারপর জাহাদার ভাই বললেন, এই লাভ দেখে মনে করবেন না এখানে আপনি টিকে গেছেন। যারা আজীবন এই ব্যবসা করার আশা রাখেন, তাদেরকে সারা জীবন শিখতে হয় এবং লেগে থাকতে হয়। নতুবা এই ব্যবসায় টিকে থাকা যায়না। তারপর আরেকটি কথা বললেন এই ব্যবসায় যারা ছুটে আসে তাদের ১০% লোকজনও খুববেশী দিন টিকে থাকতে পারে কিনা সন্দেহ এবং বাকী ৯০% এক সময় পুঁজি খোয়ায়ে উৎসাহ হারিয়ে ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায়

জাহাদার ভাইয়ের ভবিষ্যতবাণীর এগার বার বছর পর দেখলাম আজও  আমি এই ব্যবসায় লেগে আছি। আজও আমি এখানে শক্তভাবে টিকে আছি। দীর্ঘ্যসময়ের পরিকল্পনায় করা কিছু বিনিয়োগ আমাকে লাভবান করে। সল্প সময়ের বিনিয়োগে প্রচুর লাভ করলেও অনেক ক্ষেত্রে ধরা খাই। তবে যোগ বিয়োগ করে বছর শেষে পোর্টফোলিওয়ের বাজারমূল্য কেবল বাড়তেই দেখেছি তাই জাহাদার ভাইয়ের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা বেশুমার। আল্লাহ তার মঙ্গল করুন।             

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন