জেবা
রশিদ আপা এবং আমিঃ
২০০৬ সালে
ঈদগাহ শাখার মাত্রাতিরিক্ত লাভ হওয়ায় ব্যবস্থাপক হয়েই আমি তিনটি স্পেশাল
ইনক্রিমেন্ট লাভ করি। কাজেই ২০০৭ সালেও আমি অনুরূপ লাভ করার পরিকল্পনা গ্রহন করি।
কোন শাখায় লাভ বৃদ্ধি করতে হলে অগ্রীম বাড়াতে হয়। কিন্তু অগ্রীম বৃদ্ধিকরা কঠিন ও
ঝুঁকিবহুল কাজ। অন্যদিকে সুদবিহীন ডিপোজিট বাড়াতে পারলে সহজেই ঝুকি ছাড়াই লাভ
বৃদ্ধি পায়। আমি তাই চলতি ডিপোজিট সংগ্রহে মনযোগ দেই। বিভিন্ন খরচ কমিয়ে কিংবা
জনবল হ্রাস করেও সাময়িক লাভ বৃদ্ধি করা যায় কিন্তু তাতে গ্রাহকসেবা অব্যাহত রাখা
সম্ভব হয়না। এতে কাজের তীব্র চাপ তৈরি হয়ে ভুলভ্রান্তি ও বিপদ ঘটার সম্ভাবনা
সৃষ্টি হয়। মন্দঋন আদায় হলেও শাখার লাভ বৃদ্ধিতে গতি সঞ্চার হয়।
এবার চলতি
ডিপোজিট সংগ্রহের জন্য জেবা রশিদ চৌধুরীর সমীপে গিয়ে নিজেকে পেশ করলাম। তিনি
সিলেটের বিখ্যাত রশিদ পরিবারের সুকন্যা। তার তিনভাই বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রি
ছিলেন। এই পরিবারের লোকজন সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে
এক একজন তারকা। তারা সিলেট বিভাগের অনেকগুলো চাবাগানের স্বত্তাধিকারী। জেবা আপা
বারিধারা হতে সিলেটে আসলে আমি ঈদগাহ ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ে তাদের আলিশান বাসায় গিয়ে
হিসাব খোলার ফর্ম নিয়ে হাজির হই। লন্ডন শিক্ষিতা জেবা আপার বেশ বয়স হলেও তিনি
বয়সের তুলনায় স্মার্ট ও তরুন। তার মাথায় ছোট ববছাট কালো চুল। ইংরেজিতে কথা বলেন
অনর্গল। কেতাদুরস্ত জেবা আপা পুরুষের মত দক্ষতা নিয়ে বাগান পরিচালনা করতে পারেন।
মনে হল আমি যেন দিল্লী সম্রাঞ্জী সুলতানা রাজিয়ার এক মিনিয়েচারের সামনে বসে আছি।
তার ব্যবহার ও কথাবার্তা আমার সামনে তার এক অমায়িক দিলখোলা উজ্জ্বল ভাবমূর্তি
উপহার দিল।
নাস্তা ও
বড়কাপে চা নিয়ে জেবা আপার বাবুর্চি সামনে হাজির হল। জেবা আপা আমাকে দোলাভাই
কুদ্দুস চৌধুরীর সৌজন্যে ভালই চিনতেন। রশিদাবাদ চাবাগান ও রশিদ মনজিলে অনেকবার তার
সাথে দেখা হয়েছে। এবার জেবা আপা বললেন, ম্যানেজার সাহেব আমার সাথে তোমার কি
প্রয়োজন? বললাম, এই হতভাগা ম্যানেজারের উপর ডিপোজিটের জন্য ভীষন চাপ আছে। আমাকে
কিছু ডিপোজিট দিন। এবার তিনি বললেন আমি মেসার্স রশিদ এন্টারপ্রাইজের নামে একটি
চলতি হিসাব তোমাকে দেব। তিনি আমাকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার সুদবিহীন চলতি ডিপোজিট উপহার
দিলেন। এবার বললেন, তোমার উপকার হবে? আমি বললাম বহুত আচ্ছা, আপনার অপার মেহেরবানী।
এই চলতি ডিপোজিট ২০১০ সালে আমি চলে আসার আগ পর্যন্ত এভাবেই ঈদগাহ শাখায় জমা রাখা ছিল।
আমি বেরিয়ে আসব জেবা আপা তখনই আমার হাতে তার লিখা একটি ছোটগল্পের বই তুলে দেন।
বইটি বাসায় নিয়ে আদিঅন্ত পড়লাম। এখানে তিনি যেন একজন মায়ের মমতা ডেলে দিয়ে চা শ্রমিকদের যাপিত জীবনকে
গল্পে গল্পে তুলে ধরেছেন। নিজ বাগান শ্রমিকদের প্রতি একজন চা সম্রাঞ্জীর এই
অপরিসীম দরদ ও ভালবাসা এই বইয়ের ছত্রে ছত্রে পড়ে আমি বিমুগ্ধ ও বিষ্মিত হলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন