শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সাবধান- শুধু বয়স্করা পড়বেন, অবয়স্কদের বারণঃ

 

সাবধান- শুধু বয়স্করা পড়বেন, অবয়স্কদের বারণঃ

 নবম ও দশম শ্রেণি ছিল আমাদের মজার মজার গল্প গোজবের বছর। এসব  বেশির ভাগই ছিল নারী সম্পর্কীয় রসাত্মক গল্প। ষোল সতের বছরের নব যৌবনে পড়া ছেলেদের মনে এসব গল্পশুনার আকর্ষ ছিল সুতীব্র। দুজনের কথাবার্তার বড় একটা অংশ দখল করে নিত এসব যৌনতার অলিক কাহিনি ও হাস্যরসে আমি অলস ক্লাশের গল্পের আসরে বসে শুনা এমন কিছু গল্প বড়দেরকে শুনাতে চাই। যারা আমার মত বয়স্কজন কেবল তাদেরকেই এই রসগল্পগুলো পড়ার অনুমতি দিলাম এবং অন্যদেরকে এই লেখা পড়তে বার করি

তিনটি গল্পের কথক আমার প্রাপ্রিয় সহপাঠি দক্ষি তুড়ুকখলার তৌহিদুল ইসলাম টিপু। একদিন কোন এক ক্লাশের স্যার স্কুলে আসেননি। এই স্যারের ক্লাশে আমরা কয়েকজন কিশোর গোলাকার হয়ে মুখমুখী বসলাম। টিপু গল্প শুরু করল- শহরের ভবনে একজন সুন্দরী যুবতী একদিন তার শয়নকক্ষের আয়নার সামনে বসে ব্লেড দিয়ে বগলের কেশ সেভ করতে বসেনতিনি সাবান লাগিয়ে বগল সেইভিং করছেন, এমন সময় ঘরে ঢুকেন এই সুন্দরীর স্বামী। হঠাৎ কক্ষে অনাহুত লোকের আগমন মনে করে হতচকিত হয়ে এই সুন্দরী অসাবধানতা বসতঃ খুবজুরে ব্লেড চালিয়ে দেন।

এবার এই সুন্দরী উফ উফ চিৎকার দিয়ে তার বুক শক্ত করে চেপে ধরে বাহিরে দৌড় দেন। পিছন পিছন কি হয়েছে, কি হয়েছে বলে তার সাহেবও দৌড়ান। মহিলা পাশের হাসপাতালে গিয়ে সার্জারির ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকে পড়েন। ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন আপনার স্তনের বোটা নেই, ওটা কোথায়? ওটা নিয়ে আসলে আমরা একটা হালকা অপারেশন করে এখনই জায়গামত লাগিয়ে দেব। মহিলা তার সাহেবকে ভিতরে ডেকে বললেন- এক্ষুনি বাসায় যাও, আমার আয়নার সামনে তুমি একটা ছোট মাংশের টুকরা পাবে এটা নিয়ে আস।

সাহেব বাসায় ফিরে আয়নার সামনে গিয়ে কিছমিছের মত কি একটা দেখতে পান। তিনি কিছমিছ মনে করে মুখেপুরে টপকরে গিলে ফেলেন। অনেক খোঁজা খোজি করে কোন মাংশের টুকরা না পেয়ে এবার ভদ্রলোক খালিহাতে হাসপাতাল ফিরে আসেন।

যুবতী ফিরে আসা স্বামীকে পেয়েই বললেন মাংশের টুকরাটি তাড়াতাড়ি ডাক্তার সাহেবের হাতে দাও। ভদ্রলোক বললেন কিসের টুকরা, আমি কিছুই পাইনি কেবল একটা কিচমিছ পেয়েছি, যা মুখে পুরে খেয়ে ফেলেছি। রসিক ডাক্তার তখন সুন্দরীকে বললেন, ম্যাডাম উনি আপনার কিছমিছটা চিরদিনের জন্য খেয়ে ফেলছেন, আপনি বাঁচলেন, উনি রোজ রোজ আর আপনার কাছে কিসমিসের জন্য জ্বালাবে না।

টিপুর গল্প শুনে খিলখিল করে হেসে উঠে বালকেরা। আবার তাকে আরেকটি গল্প বলতে সবাই চেপে ধরে। এবার টিপু বলল একজন প্রবাসী ভদ্রলোক ও তার বউয়ের কাহিনি। প্রবাসী নতুন বিয়ে করে দেশে রেখে যান যুবতী বউ, বছর দেড়বছর পার করে তিনি দেশে আসেন মাত্র একবার। টগবগে যৌবনা নারী বড় কষ্টে একাকিনী সময় কাটান। বহির্ঘরে জায়গীর থেকে বাড়ির বাচ্চাদেরে আরবি পড়ান একজন তাগড়া জোয়ান মোল্লা মিয়া। প্রবাসীর বেগমের সাথে তার গড়ে উঠে গোপন সম্পর্ক। বাড়ির লোকজনের চোখে ধূলো দিতে বেগমের ঘরের কাটের ওয়ালে মোল্লা মিয়া একটি ছিদ্র তৈরি করেন। গভীর রাতে এই ছিদ্র দিয়ে প্রবাসীর বেগমের  সাথে চলে তার গোপন লীলাখেলা।

একদিন প্রবাসী দেশে ফিরলেন। বাহিরে নানা কাজ সেরে কোন এক গভীর রাতে তিনি ঘরে ঢুকেন। এসে দেখেন তার বউ ঘরের কাটের দেয়ালের পাশে দাড়িয়ে কি যেন করছে। স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন এখানে কি করছ? আচমকা সামনে স্বামীকে দেখে হতচকিত বেগম জবাব দেন, ঘরে হ্যাঙ্গার নেই, তাই আপনার সার্ট রাখার জন্য একটি হ্যাঙ্গার তৈরি করছি। এবার প্রবাসী তার গায়ের সার্ট খোলে হ্যাঙ্গারে রাখতে যান। হাঙ্গারে সার্টটি রাখামাত্র কেমন যেন নড়েচড়ে উঠে হ্যাঙ্গার। প্রবাসী দুইতিন বার সার্ট রাখলেন কিন্তু ঈষৎ নাড়াদিয়ে সার্ট পড়ে যায়। এবার প্রবাসী বউকে বললেন হাঙ্গারটা স্পন্সের মত নরম, ওটা ওয়ালের সাথে সঠিকভাবে ফিট হয় নাই, তাই সার্ট রাখলেই পড়ে যায়।

এবার প্রবাসী বউকে নির্দেশ দেন হাতুড়ি ও পেরেকটা এক্ষুণি নিয়ে এস, আমি হ্যাঙ্গারটাকে দেয়ালের সাথে শক্ত করে গেথে দেই। এবার প্রবাসী হাঙ্গারে পেরেক বসিয়ে হাতুড়ি মেরে হ্যাঙ্গারটাকে দেয়ালের সাথে শক্ত করে গেঁথে দেন ঠিকই কিন্তু ঘরের বাহিরে শুরু হয় মোল্লা মিয়ার গগনবিদারী আর্থচিৎকার। তার আর্তনাদে ছুটে আসে চারপাশের লোকজন। এসে দেখেন অর্ধনগ্ন মোল্লামিয়া জট লেগে আটকে আছেন বাড়ির শক্ত কাটের দেয়ালে, মোল্লার ক্রোশবিদ্ধ গর্বের ধন থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত এসে ভিজে গেছে সেই অভিশপ্ত কাটের দেয়াল

তুড়ুকখলার বড়বাড়ির ছেলে কামাল তার গল্প বলা শুরু করে হাসির জ্বলায় কামাল তার গল্প বলতেই পারছে না। কোন এক দম্পতির পাশের কক্ষে ঘুমাত তাদের কিশোরী কন্যা। একদিন রাতে মেয়েটি চিৎকার দিয়ে বলে মাগো ডাইলে পাড়ায়। কিশোরীর মা তার কক্ষ হতে জবাব দেন তুই রাতে বেশি বেশি ডাল খেয়েছিস তাই ডাইলে পাড়ায়, একটু ধৈর্য্য ধর কিছুক্ষণের মধ্যে ভাল হয়ে যাবে।

পরদিন পাশের কক্ষে হতে আবার মেয়েটি মাকে বলল, আম্মা ডাইলে পাড়ায়। মা জবাব দেন ডাল খেলে গ্যাষ্টিক হয়, তর টেবিলে এন্টাসিড টেবলেট রাখা আছে। একটা চুষেচুষে খেয়ে নে, তাহলে ডাইলে পাড়াবেনা।

তৃতীয় দিন মধ্যরাতে আবার মেয়েটি চিৎকার দিয়ে বলে মাগো আজকেও ডাইলে পাড়ায়। এবার মা জবাব দেন, আগামীকাল হতে তুই রাতে আর ডাল খাইবিনা, তাহলে আর ডাইলে পাড়াবে না।

কিছুদিন যেতে না যেতেই মা টের পান তার কিশোরী কন্যা গর্ভবতী। এবার মেয়েকে বকুনি দিলে কন্যা বলল, আমি রোজ রাতেই জানিয়েছি আমাকে ডাইলে পাড়ায় তোমরা আসনি, ডাইলকে পাকড়াও করনি, কোন প্রতিকার করনি। আজ কেন আমাকে অযথা বকাবকি করছ

মা বললেন  সর্বনাশ, তাহলে অপকর্মটি করেছে আমাদের পাঁজি কাজের পোলা ডাইল মিয়া। হায়রে পোড়াকপাল, নাবালক ফেরেশতা ছাওয়াল ভেবে তাকে আমরা পাশের মেয়ের কোঠার মেঝে রাতে ঘুমাতে দিয়েছিলামআর সে কিনা আমাদের কচি মেয়েটার এমন বারটা বাজিয়ে দিল

এবার বালকেরা চিৎকার দিয়ে উঠল- ‘খাইয়া ডাইল লইও’তখনকার সময় কাষ্টমার আকর্ষণ করতে সিলেট শহরের বেশকিছু খাবার হোটেল ডাল ফ্রি অফার করেকিন্তু মাগনা এই ফ্রিডালের ছিল করু অবস্থা, বাটির তলায় দুইচারটি ডালের কণা উপরে পাতলা পানি। এই সৌজন্য উপহার ফ্রি ডাল হতেই ‘খাইয়া ডাইল লইও’ শব্দটি ব্যাপকভাবে সিলেট অঞ্চলের লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। জনতা একে অন্যকে কথার ফাঁকে ফাঁকে মশকরা করে বলত ডাইল ফ্রি ‘খাইয়া ডাইল লইও’   

এবার আমরা সবাই পাঁচ সাত মিনিট দিলখোলা হাসি হেসে কামালকে আবার চেপে ধরলাম। কামালের লীতে আরেকটা গল্প সঞ্চিত আছে। দেবর ভাবী ও শ্বাশুড়ির গল্প। প্রবাসী পুত্র বিয়ে করে সুন্দরী নববধু ঘরে রেখে বিদেশে চলে যায়। সে বিদেশ যাবার সময় মাকে বলল, মাগো, তোমার নুতন বউকে দেখে শুনে রাখবেন, তাঁকে আমানত রেখে গেলাম, যেন কোন খেয়ানত না হয়। কিছুদিন পেরিয়ে গেলে শ্বাশুড়ি টের পান নতুন বউয়ের সাথে দেবরের ফস্টিনস্টি হচ্ছে। এবার নিরাপত্তা জোরদার করতে তিনি পুত্রবধুকে বললেন আজ থেকে বৌমা তুমি আমার সাথে রাতে ঘুমাবে।

রাতে পুত্রবধুকে ছটফট করতে দেখে শ্বাশুড়ির সন্দেহ হয়। এবার তিনি ঘুমানোর সময় একটি হাত বউয়ের গায়ে চেপে রাখতেন, যাতে কোন অঘটন না ঘটেএদিকে বুড়ো শ্বাশুড়িমা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলে তার হাতটি ধীরে ধীরে সরিয়ে দিয়ে চুপেচুপে অন্ধকারে পাশে আসা দেবরের সাথে ভাবীর চলে অভিসার। একদিন হঠাৎ শ্বাশুড়িমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে টের পান বৌমা পাশে নেই। বৌমা তুমি কোথায়? ডাক দিতেই হেস্যন্যস্ত হয়ে ছুটে এসে পুত্রবধু কাছে শুয়ে পড়েন যেন এইমাত্র বাথরুম সেরে এসেছেন, দেবর তার কক্ষে পালাতে গিয়ে শব্দে দরজায় হুচট খায়। শাশুড়ি তার বউয়ের কোমরের উপর হাত রাখতেই শাড়ি হতে কি একটা পিচ্ছিল জিনিস তার হাতে লেগে যায় এবার তিনি বউমাকে বললেন, বউমা তোমার শাড়িতে এই পিচ্ছিল জিনিসটা কি? বউ উত্তর দিলেন, এটা তেমন কিছুনা মা, আজ রাতে পাঙ্গাস মাছ বানানোর সময় খুবসম্ভব শাড়িতে পাঙ্গাসের তেল লেগে গেছে। আর যায় কোথায়, ‘পাঙ্গাস মাছের তেল” বলেই হোঃ হোঃ করে অট্টহাস্যে ফেটে পড়ল সব সহপাঠি কিশোরের দল  

আমি এবার আমার লন্ডনপ্রবাসী কৌশরের বন্ধু টিপুর তিন নম্বর গল্পের আসরে আপনাদেরকে নিয়ে যাব। অবসর ক্লাশে টিপু বলছে, আর আমি, সালেহ, মিনার, পুলক, বেলাল, মখলিস, তমাল প্রমুখরা তাকে ঘিরে বসে শুনে যাচ্ছি তার অমৃত রসাল লোককাহিনি। এই গল্পের নায়ক একজন ইয়া দাড়িওয়ালা বুড়ো মুরব্বী মানুষ। বেশ কয়েক বছর আগে যার প্রিয়তমা বুড়িপত্নী জীবন থেকে বিদায় নিয়েছেন

বিপত্নীক বৃদ্ধ সৌদি প্রবাসী পূত্রকে বিয়ে দিয়ে পূত্রবধুকে নিয়ে নবনির্মিত দালান বাড়িতে বসবাস করছেন। বুড়ো মুরব্বী একসময় নিজের অজান্তে পুত্রবধুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এক অব্যক্ত বক্ষজ্বালায় বুড়োর রাতে ঘুম হয়নাবুড়োর মনে দিনরাত কেবল একটিই ভাবনা ঘুরপাক খায়- কেমন করে পূত্রবধুকে বগলদাবা করা যায়। কেউ ঘুণাক্ষরে জানলেও রক্ষা নেই, মান সম্মান কিছুই অবশেষ থাকবেনা। পুতের বঊ আমাদের সমাজে নিজ কন্যাসম। বৃদ্ধশ্বশুর ভাবেন, কেমনে পুতের বউরে বুঝাই, তার অবৈধ দহনে আমি বুড়ো শ্বশুর জ্বলেপূড়ে হয়ে যাচ্ছি ছাই।

এবার দুষ্ট শয়তাম বুড়ার পিছু নেয়। শয়তানের কুমন্ত্রনায় পড়ে হঠাৎ বুড়ার মাথায় একটা দুর্বুদ্ধি এলো। এইবার তিনি এই দুষ্টবুদ্ধিটা বাস্থবায়নে নামলেন। তিনি একদিন পুত্রবধুকে ডেকে নিয়ে বললেন, বউমা আমরা একজন কামেল পীর সাহেবের মুরিদ। আমরা তার পরামর্শ নিয়ে চলি। তুমি আজও আমাদের পীরের কাছে যাও নাই, তার উপদেশ বাক্য এখনও গ্রহ কর নাই। দুষটা তোমার নয়, আমাদের। আমরা তোমাকে তার কাছে না পাঠালে তুমি তার খানকা শরীফ যাবে কেমনে।

এবার পুত্রবধু শ্বশুরবাপের কাছে পীরের ঠিকানা চাইলে তিনি বললেন, এই কামেল দরবেশ বাড়ির পিছনের বনে নদীপারে অশ্বত্থবৃক্ষ তলায় বসে শুক্রবার সারারাত জেগে আল্লাহর ধ্যান করেন। তোমাকে শেষরাতে সেখানে একাকী গিয়ে তার উপদেশ গ্রহ করতে হবে। শ্বশুরবাপের পরামর্শে এক শুক্রবার শেষরাতে বউমা ছুটলেন পীরের দরবারে, বটতলায় গিয়ে সত্যি একজন ইয়া লম্বা দাড়িওয়ালা জুব্বাদারী কামেল ওলিকে তিনি সেখানে “ইয়া আল্লাহু, ইয়া আল্লাহ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” জিকির করতে দেখলেন।

দরবেশ একজন নারীর পদশব্দ শুনে ফিসফিস করে বললেন, মা তুমি এতরাতে এখানে কেন এসেছ? আগুন্তক নারী জবাব দেন আমার শ্বশুরবাপ আপনার উপদেশ নিতে আমাকে পাঠিয়েছেন। এবার দরবেশ বললেন এসো মা, তোমাকে কিছু উপদেশ দিব। নুতন মুরিদাকে পীরসাহেব অনেক ভাল ভাল উপদেশ দেন কিন্তু সব ভাল উপদেশ শেষে একটা মারাত্মক উপদেশও দেন- তোমার অতিশীপর বৃদ্ধ শ্বশুরের সাথে রাতে একই বিছানায় ঘুমাতে হবে, নইলে তোমার উপর ভয়ঙ্কর বিপদ আসবে। তাকে একাকি পালঙ্কে রাতে ফেলে রেখে তুমি খুব অন্যায় করতেছ। এটা বেয়াদবী ও শক্ত গুনাহের কাজ। তুমি তার কাছে শুইবে, মুরব্বী শ্বশুরবাবা যা বলবেন, তাই তোমাকে করতে হবে। তার কথামত কাজ না করলে মরণের পর আল্লাহ পাক তোমাকে নির্ঘাত দোযখের আগুনে দাউদাউ করে জ্বলবে।

পরদিন ঘুম হতে উঠে বুড়ো তার সুন্দরী পুত্রবধুকে বললেন, বউমা পীরসাহেব তোমাকে গতরাতে কি উপদেশ দিলেন। পুত্রবধু বললেন, সবগুলোই খুব ভাল উপদেশ দিয়েছেন, কেবল একটি উপদেশের কথা আপনাকে বলতে আমার ভীষ শরম লাগতেছে। তা আবার আপনার কাছে না বলেও কোন উপায় নেই। 

অস্থির গলায় শ্বশুর বলেন, কি সেই উপদেশ। 

তিনি আমাকে এই উপদেশ দিয়েছেন যে, তোমার স্বামী বিদেশ থাকাকালে তুমি গুরুজন শ্বশুরবাবার বিছানায় ঘুমাবে, তিনি যা বলবেন তা বিনা বাক্যব্যয়ে পালন করবে। গুরুজনের সবকথা মানতে হয়, নইলে তোমাকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে।

কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে মুরব্বী বললেন, পীরসাহেব যখন বলেছেন তুমি তাই করবে। আগামীকল্য রাতে তুমি আমার কক্ষে ঘুমাবে। 

সেই কালো রাতে শ্বশুরবাবাজী খুব আগুয়ান খেয়ে তার শোবার কক্ষে চলে যান। বৃদ্ধ অস্থির হয়ে ভাবেন, বুড়ি মরে যাবার পর কয়েক বছর ধরে তিনি একটানা উপবাসেই আছেনবুড়ো শরীরে আগের সেই তাকত এখন আর নেই। যুবতী পুত্রবধুর কাছে কোনমতে হেরে যাওয়া চলবে না, তার আগে নিজেকে নুতন করে ঝালাই করে নিতে হবে।

বুড়োর বিছানায় ছিল একটা ছিদ্র যা পালঙ্কের ছাওনি বেদকরে নিচে চলে গেছে। তিনি জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় বিছানার এই ছিদ্রপথে প্রস্তুতি প্রশিক্ষণ শুরু করলেন।

পালঙ্গ তলায় ওৎপেতে বসে থাকা শিকারি হুলো বিড়ালটি  তখন দেখল একটা ইদুর ছিদ্রপথে বারবার মাথা বের করে তারই ভয়ে আবার ভিতরে লুকিয়ে যাচ্ছে। এবার হুলোটি তার সর্বশক্তি নিয়ে ইদুরটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

এমন সময় গতরাতের বটতলার পীরের নির্দেশে কক্ষে ঘুমাতে আসেন তার যুবতী পূত্রবধু। ঢুকেই তার কানে আসে বূড়ো শ্বশুরবাবার ঘুঙ্গানো আওয়াজ। গিয়ে দেখেন সাদা বিছানার চাদরে তাজা রক্তের লাল লাল দাগ। কোঠার এককোনে বসে শিকারি হুলো বিড়ালটি বেগুনের মত লম্বা কি যেন একটা ইঁদুর নিয়ে খেলা করছে।

বৌমা বললেন, বাবা হুলোটা একটি ইদুর ধরেছে, তাই হয়ত চাদরে এত রক্ত লেগেছে। বুড়ো জবাব দেন, এটা ইদুর না বউমা, এটা আমার পাপ। পাপী আমি পীরসেজে তোমাকে বটতলায় নিয়ে গিয়ে কবিরা গোনাহ করেছি। আল্লাহ আমাকে পাপের উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন, এবার আমাকে চটজলদি হাসপাতালে নিয়ে যাও।

আমার কিশোর সহপাঠিদের কাছে গল্পের কোন অভাব ছিলনা। তাদের কাছে হাসির গল্প ছিল, কান্নার গল্প ছিল। গল্প শুনতে বসে দিন শেষ হয়ে যেত। আজকাল সমাজে অশ্লীলতার ধারণা বদলে গেছে। হাতের মোবাইলে একটা চাপ দিলেই এমন কোন নগ্নতা নেই যা মুহুর্তের মাঝে চলে আসে নাতাহলে আমার কিশোরবেলার এমন মধুর স্মৃতিবিজড়িত লোকগল্পগুলো আমি কেন লুকাতে যাবো। অনেক ভেবেচিন্তে এই গল্পগুলো শেষ পর্যন্ত বয়স্ক পাঠকদের জন্য আমার এই আত্মজীবনীতে সংযুক্ত করে দিলাম।  

সেকালে টেলিভিশন কিংবা ইন্টারনেট ছিলনা। রেডিওতে গান আর কত শোনা যায়। তাই সেকালের কিশোরেরা এইসব রসগল্প করে কিংবা খোলামাঠে নানা ধরনের খেলাধুলা করে বিনোদনের কাজটা সেরে নিত। ক্যারম, লুডু, দাবা এবং তাস খেলেও কেউ কেউ সময় পার করত। 

কেউ কেউ অশ্লীল বই পড়ত। সেইসব বইয়ে নানাধরনের  কামকেলীর স্বচিত্র বিবর থাকত। তারা এসব বই ঘরে লুকিয়ে রেখে পড়ত। এইসব বইয়ের বাজার ছিল সিলেট শহরের ফুটপাত। আমার এক সহপাঠি কিশোর আমাকে এধরনের একটি বই উপহার দেয় বইটির নাম ছিল ‘নরম মাংশের স্বাধ’ যা এখনও আমার মনে আছে। বইয়ের এই নাম থেকেই সহজে অনুমান করা যায় বইটির ভিতরে কি ধরনের ময়লা মালমসলা থাকতে পারে। আমি উপহার পাওয়া বইটি বাড়িতে এনে মহাবিপদে পড়লাম, এই বইটি কেমনে পড়ি, কোথায় রাখিকারও নজরে পড়তে নির্ঘাত পিটুনী খেতে হবে। শোনতে হবে কটু কথা, আজকালকার পোলাপাইন, কি যে সর্বনাশ, গোঁফ গজানোর আগেই পেঁকে ঠাস ঠাস। শেষমেশ এই বইটি আরেক দুষ্ট ছেলেকে উপহার দিয়ে আসামী ধরা খাওয়ার আশঙ্কা হতে নিজের প্রাটা বাঁচাই।   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন