শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আমার বিদায় বেলায় ইদগাহ শাখা

 

আমার বিদায় বেলায় ইদগাহ শাখা

সিলেট অঞ্চল প্রধান আমার প্রিয় ফরিদ স্যার একদিন আমাকে ফোন করে বললেন, কুরেশী সাহেব মশিউর রহমান খানের অধীনে সিলেট শাখায় আপনি কি কাজ করতে পারবেন? আমি জবাব দিলাম কেন পারবনা, তিনি একজন সজ্জন লোক, সেইসাথে সম্পর্কে আমার ভাগনা। স্টুডেন্টস ঋণের টাকাগুলো দ্রুত সমন্বয় হয়ে আসছে। মহান আল্লাহের দরবারে সামান্য সময় কামনা করছি আমার প্রদত্ত এই ছাত্রঋণ যেন আমি আদায় করে দিয়ে যেতে পারি। কিন্তু সে সুযোগ আমার হলনা। স্টুডেন্টস ঋনের জটিল সমস্যায় আমি যখন জরজর, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মতিউর রহমান, কাওসার আহমদকে নিয়ে রাত ১২টা অবধি কাজ করেও ঘুমাতে পারছি না, এমনই এক বিদায় শীতের দিনে আমার হাতে আসে বদলির আদেশ।

১৭ জানুয়ারি ২০১০ সিনিয়র অফিসার জয়নাল আহমদ ইদগাহ শাখার দায়িত্ব নিতে আসলেন। বয়সে তরুন জয়নাল আহমদ কানাইঘাটের লোক। সমাজবিঞ্জানে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে ব্যাংকে এসেছেন। তিনি গাত্রবর্নে কাল কিন্তু তার মনটা খুব ভাল। তাকে বললাম, আমি চার বছর আগে মামলা, রাইট অফফ এবং কুঋণে হাবুডুবু খাওয়া একটি শাখার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আজ তোমাকে এক ঝকঝকে তকতকে শাখা উপহার দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে কোন মামলা নেই, রাইট অফফ নেই, একটি টাকাও কুঋন নেই। এমনকি কোন স্পেশাল ম্যানশন একাউন্টও নেই। পরদিন সিলেট আঞ্চলিক অফিস হতে অডিট করতে আসলেন সিরাজুল ইসলাম ও আইন অফিসার মাহবুব আহসান। তারা সব দেখলেন, বিশেষভাবে শাখার ঋনরাজ্য পরিপাঠি করে দিয়ে চাকুরি জীবনে প্রথমবারের মত ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব নিতে আসা জয়নাল আহমদকে বললেন, কোন ভয় নেই নিঃশঙ্কচিত্তে পুবালী ব্যাংক ঈদগাহ শাখার সিংহাসনে বসতে পারেন। জয়নাল বলল, স্যার আমি কি পারব? আমি বললাম আপনি পারবেন এই আস্থা রেখেই কতৃপক্ষ আপনাকে এখানে পাঠিয়েছে। আপনি অবশ্যই সফল হবেন।

ইতিমধ্যে ঈশারা পেলাম আমার বস ফরিদ উদ্দিন স্যার জয়নালকে ফোনে বলছেন, কুরেশী সাহেবকে যথাযত সম্মান দিয়ে বিদায় দিবেন। ২৫ জানুয়ারি ২০১০ সন্ধ্যায় তড়িঘড়ি করে এক বিদায় সম্বর্ধণা সভার আয়োজন করা হল। কাস্টমার এনাম ভাই একটি স্যুটপিস উপহার দেন। ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ সার্ট জায়নামাজ এধরণের কিছু উপহার আমার কপালে জুটলো। আমার এই বিদায়সভায় আসলেন আমার বস সিলেট আঞ্চলিক প্রধান ফরিদ উদ্দিন স্যার, দরগাগেট শাখার ব্যবস্থাপক মোসাদ্দেক চৌধুরী, সিলেট শাখার ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান খান এবং আমার কয়েকজন প্রিয় ব্যবস্থাপক। ব্যবসায়ী হিমেল ভাই, সাংবাদিক আব্দুল মালেক জাকা ভাই, রফিপুর গ্রামের শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এনাম ভাই সহ অনেকে আমার সৌজন্যে বক্তব্য রাখলেন। সেইদিন ভাষণে রণক্লান্ত আমি দুঃখ করে বলেছিলাম, আমি একজন সাধারণ মানুষ, এই সামান্য চাকুরি ছাড়া আমার তেমন কোন পরিচিতি নেই। আমি আমার সাধ্যমত কাস্টমার সেবা করেছি, ব্যাংকের জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করে গেছি। আমি ফেরেশতা নই, আমি একজন মানুষ, তাই আমার নানা ভূলক্রুটি থাকতেই পারে। আমার কোন ধরনের ব্যর্থতা ও ভূলক্রুটি থাকলে সবাইকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে নিতে অনুরোধ জানাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন