সিলেট
শাখায় তিনমাস একদিন
যোগদানঃ ২৬ জানুয়ারি ২০১০ বিদায়ঃ
২৭ এপ্রিল ২০১০ সাল অবস্থানঃ ৩ মাস ১ দিন
২৬ জানুয়ারি ২০১০ সাল। ভাগ্য
আমাকে তৃতীয়বারের মত আবার সিলেট শাখায় নিয়ে গেল। নিয়ে গেল আমার সেই অতি পরিচিত
বন্দরবাজারের পূবালী ব্যাংকের নিজস্ব সম্পদ পাঁচতলা ভবনে। এই শাখা যেন আমাকে ছাড়ছে
না, বারবার কূলে তুলে নিচ্ছে পরম মমতায়। তবে সিলেট শাখায় আমার এই অবস্থান ছিল খুব
সংক্ষিপ্ত, মাত্র তিনমাস একদিন। ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান খানের চেম্বারে কিছু সময়
কাটিয়ে বাহিরের একটি চেয়ারে গিয়ে বসলাম। চার বছর ম্যানেজারী করে এসে আবার সাবেক
চেয়ারে বিমর্ষ হয়ে বসলাম। দুই ঠোট সেলাই করে দিলাম। কেউ কথা না বললে অযাচিত কারো
সাথে বকবক করা হতে সরে রইলাম। ছয় বছর আগেকার ফেলে আসা সিলেট শাখায় সেই সময়ের তেমন
লোকজন নেই। হাতেগোনা পরিচিত কয়েকজনের মধ্যে পেয়ে গেলাম সামসুদ্দোহা, মতিউর রহমান
চৌধুরী, আব্দুর রব প্রমুখকে, বাকীরা সবাই নতুন। সেই আদিকালের টিবয় সবুজ, ম্যাসেঞ্জার
শাহিন খান ও সুইপার জয়নালকে মনে হল এই শাখায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট, অন্যরা এই
সরাইখানায় আসে কিছুদিন কাটিয়ে চলে যায়। আসা যাওয়ার এই খেলা সবগুলো অফিসে নীরবে
চলতেই থাকে।
দুই একদিন পর আমার গুরুজন অঞ্চল
প্রধান মোসাদ্দিক চৌধুরী আমাকে তার চেম্বারে ডেকে নেন। আমার প্রতি তার স্নেহ-মমতার
কোন শেষ নেই। আমি স্যারের চেম্বারে ঢুকামাত্রই আমাকে ভাতৃসুলভ কন্ঠে বললেন, কুরেশী
সাহেব আমরা চলে যাব আপনারা আর বহুদিন ব্যাংকে থাকবেন, চাকুরি করবেন। কাজেই আপনাকে
সময়ের সাথে বদলে যেতে হবে, আর নিষ্ঠাবান হতে হবে। আমরা চাই আপনি সুনামের সাথে কাজ
করে যান। সিলেট শাখার ক্লিন ক্যাশ মিলিয়ে সবকাজ সমাপ্ত করে তারপর বাসা ফিরবেন। আমি
স্যারের উপদেশ আমলে নেই। দেড় দুই হাজার ভাউচারের ক্লিনক্যাশ মিলায়ে প্রতিরাত বারটা
নাগাদ বাসায় ফিরতাম।
এসময় এক শুক্রবারে নাজিমগড়
রিসোর্টে আমাদের নর্থইষ্ট মেডিকেল কলেজের এজিএম অনুষ্ঠিত হয়। নাজিমগড় রিসোর্ট
কিছুদিন আগে যাত্রা শুরু করেছে মাত্র। আমরা সব কজন পরিচালক সপরিবারে অংশ নিলাম। আমাদের
ছেলে মেয়েরা খুব আনন্দ ফুর্তি করে দিন পার করল। ডাঃ আফজাল ভাই বেশ জৌক করে কথা
বলেন। রনকেলী বড়বাড়ির সন্থান ডাঃ শাহরিয়ার ভাই গুরুগম্ভীর মানুষ কিন্তু তিনি
বুদ্ধির সাগর। তালতলাবাসী কিডনি বিশেষঞ্জ ডাঃ নাজমুল ইসলাম আমার সমবয়স্ক, তার মনটা
জুড়ে নানান স্বপ্ন অবিরাম খেলা করে যায়। তার অভিজাত সুন্দরী পত্নী এবং পুতুলনাচের
পরীর মত সুন্দরী তিন ছোট্টকন্যা কাছে বসলেন। উদারমনের ডাঃ মাসুকুর রহমান মাসুক ভাই
ভরাট গলায় বক্তব্য রাখেন। ভাদেশ্বরের কৃতিসন্থান ডাঃ শামিমুর রহমান শামিম ভাই
ধার্মিক জনদরদি নেতা মানুষ। সুদর্শন ডাঃ হাফিজ স্যার ভাগ্যবান সজ্জন লোক। আমার
বয়েসী নিরহঙ্কার সুন্দরী ডাঃ নাহিদ ইলোরা (এফসিপিএস) এলিট পরিবারের মেয়ে, তিনি
বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ
আব্দুল মোমেনের ভাগ্নি। আমাদের প্রতি ডাঃ ফরহাত মহল আপার (এফসিপিএস) দরদের কোন শেষ
নেই। ডাঃ মাসুক ভাইয়ের পত্নী ডাঃ গোলশান জাহান (এফসিপিএস) বড় ভালমনের মেয়ে- তার দুটি
সুন্দর কালো হরিণ চোখ। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নাজমুল ইসলাম ভাই (এফসিপিএস) সরল মনের
আল্লাহভক্ত ফরহেজগার বান্দাহ, তিনি সাগরদিঘিরপারে আমার একজন পড়শি। চৌকিদেখি
মহল্লার চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ শামসুল আলম হেলাল ভাই ও নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডাঃ কাজী
আখতার ভাইয়ের কোন তুলনা হয়না। যেমন তাদের সততা তেমন রয়েছে বুদ্ধিমত্তা। শ্রীমঙ্গলের
জাতক ডাঃ আজিজুর রহমান, আপন গুনে দীপ্তিমান। হৃদরোগ বিশেষঞ্জ ডাঃ ফারুক উদ্দিন ভাই
আমার শ্বশুরের দেশ বিয়ানীবাজারের সন্থান। তিনি উদার ও বড়মনের মানুষ। নাজিমগড়ে
সারাদিন খেলাধুলা হৈচৈ করে বিকেলে আমরা নিজ নিজ কারে বাসা ফিরে গেলাম। দিনটি বিকেলে
বিস্মৃতির আড়ালে হারিয়ে গেল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন