একের
ভিতর দশটি গ্রন্থ ‘ইসফাক কুরায়শী রচনাসমগ্র’ প্রকাশনা করার গল্প
২০১২ সালের শেষ মাস ডিসেম্বর। এই
মাসটিতে ১৯৬৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর আমি জন্ম নেই, আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশও আমার জন্মের ছয়
বৎসর পর ১৯৭১ সালের এই শুভ মাসের ১৬ ডিসেম্বর জন্মলাভ করে। এই পবিত্র মাসটিকে তাই আমি
‘ইসফাক কুরায়শী রচনাসমগ্র’ নামক দৈত্যাকার বইটি প্রকাশ করার উপযুক্ত সময় হিসাবে
বেছে নেই।
আমি বিগত তিরিশ বছর ধরে কেবল
লিখেই গেছি এবং পান্ডুলিপি জমে জমে বেশ কয়েকটি খাতা ও ফাইল হয়ে গেছে। যমদূতের ভয়ে সযতনে
আগলে রাখি এসব পান্ডুলিপির ভান্ডার বছরের পর বছর। মনে মনে স্বাগতুক্তি করতাম একটি
নিয়তির বানী-‘রাখলে আল্লায় মারে কে? মারলে আল্লায় রাখে কে?’ যার অর্থ দাঁড়ায়,
আল্লাহ চাইলে আমার শিল্প বাঁচবে, না চাইলে মরবে। সবই মহান আল্লাহর ইচ্ছে, তাই
আমাকে আমার সৃষ্টি নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কি আছে। বিষয়টা আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে
দিয়ে দিব্যি এত বছর পার করে দিলাম।
তবে যে আমি বই প্রকাশের কোনই
চেষ্টা করিনি তা নয়।
তিনি আমার এলাকার দৌলতপুর
গ্রামের সৈয়দ আব্দুল মুহিত। কিনব্রিজের নিচে সুরমাপারে তার বিশাল তোফা অটো রাইসমিল।
রাখালগঞ্জ এলাকার একজন ধনী লোক ও ভাষণবাজ নেতা। কলেজ জীবনের কোন একদিন পান্ডুলিপি
নিয়ে আমার একটি বই প্রকাশের আশায় তার কাছে ধর্ণা দিলাম। আমার সাথে যান আমার প্রিয়বন্ধু
সিদ্দিকুর রহমান নির্ঝর। বইটি ছিল কলেবরে ছোট এবং প্রকাশে তেমন টাকার দরকার হত না।
আমি তখন শূন্যহস্ত, লেখাপড়ার খরচ
জুটানোই ছিল বেশ কঠিন কাজ। তাই এই হাতপাতা। এই হাতপাতা আমার কোন ব্যক্তিগত লাভালাভের
জন্য নয়। কারন একজন লেখকের লেখা যখন প্রকাশ হয়, তখন তা পুরো সমাজের দেশের সম্পদে
পরিণত হয়। আমার এই রচনাতো আমার কোন ব্যক্তিসম্পত্তি নয়, বরং এটা বাংলা ভাষা, বাংলা
সাহিত্য ও পুরো বাঙ্গালি জাতির সম্পদ।
প্রথমদিন যাবার পর তিনি বেশ
অতিথি সেবা করলেন। কারখানার একপাশে তার বেশ মানানসই একটি অফিস। হ্যান্ডসেক করে
আমাকে তার অফিসে বসালেন। মেঘবরন গ্লাসের বড় কাপে লেবুর হালকা লিকার চা ও বিস্কুট
সামনে আসল। কারখানায় গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজের মাঝে বসে আমি ও নির্ঝর তার অটো রাইস মিলে
গত বছর চল্লিশ লক্ষ, তার আগের বছর পচিশ লক্ষ টাকা লাভ হবার গল্পও শুনলান।
তার জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতা বিলেতবাসী সৈয়দ
আব্দুল মতিন দাউদপুর রেঙ্গাস্কুলে আমার আব্বার ছাত্র ছিলেন এবং এখানে অধ্যয়নকারী আমার
ফুফুতো আব্দুল্লাহ ভাইয়ের সহপাঠী বন্ধু ছিলেন। ভাবলাম যে মানুষের কারখানায় বছরে
অর্ধকোটি টাকা লাভ হয় এই বই প্রকাশের খরচ বিশ বাইশ হাজার টাকা তার জন্য কিছুই নয়। এবার
তার হাতে পান্ডুলিপির কপি দিয়ে আবেদন পেশ করলাম। তিনি নিস্তেজ কন্ঠে বললেন আরেকদিন
আসুন আমি ইনশাহ আল্লাহ দেখব।
দশ বার দিন পর আবার হাজিরা দিলে
পুনরায় আশ্বাস পেলাম ছোটভাই তোমার বইয়ের ব্যাপারটা আমার মনে আছে, তবে এখন নয়
কিছুদিন পর দেখব ইনশাহ আল্লাহ। এবার আমি মাস দিন পরে আবার সিদ্দিককে নিয়ে হাজির
হলাম। এবার শুনলাম, ব্যবসায় প্রচুর লস ও ধারকর্জ হবার গল্প। অনুভব করলাম লাখটাকা
লাভের গল্প এখন মরে গেছে।
দেবো দেবো করে লোকটায় দেয়তো না,
তবে লোকটার একটা গুন সে নাতো করেনা। তিনি ভদ্রলোক, তিনি নিরতিশয় বিনয়ী, কোনবারই
একেবারে ‘না’ বললেন না। বই প্রকাশের তীব্র নেশায় আমি নাছোড়বান্দার মত আরেকদিন গিয়ে
হাজির হলাম, এবার আসল কথাটি সৈয়দ মুহিত আমাকে সরাসরি শোনালেন, চৌধুরী সাহেব আপনি আমার
ছোটভাই, আমাদের শ্রদ্ধেয় দলুমিয়া স্যারের ছেলে, বড়কষ্ট করে আমার কাছে বেশ কয়েকবার
এসেছেন, আমি আপনাকে চক্ষুলজ্জায় কিছুই বলতে পারছি না। আসলে বিশ্বাস করুণ আমি একজন
দেউলিয়া মানুষ। এখন ব্যবসায় মার খেয়ে বড় বিপদের মধ্যে আছি, আপনার এই ছোট্ট বইটি
প্রকাশ করতে জানি সামান্য কটা টাকা লাগবে কিন্তু সেই সামান্য টাকা দেবার মত কোন
কানাকড়িও আমার সাধ্যের মাঝে নেই।
এবার আমার বুঝতে কোন অসুবিধা হল না,
সেই প্রথমদিনের দেখা আমির ‘সৈয়দ আব্দুল মুহিত’ আজকের এই সন্ধ্যাবেলায় হয়ে গেছেন
একজন ফকির মিসকিন ‘সৈয়দ আব্দুল মুহিত’।
তবে সেদিনও সামনের টেবিলে বড়
ক্রিষ্টাল কাপে লেমন টি আসতে কোন ভূল হল না।
আমার এই শেষ প্রচেষ্টা ব্যর্থ
হল, এইবার নাছোড়বান্দা আমি ইসফাক কুরেশী ছুটি নিলাম।
ধনী লোকদের সাথে আমার তেমন উঠবস
ছিলনা। যাক এবার এই চরিত্রের লোকদের একটা ধারণা পেলাম। প্রচন্ড আশা নিয়ে দৌড়ে
ব্যর্থ হয়ে এবার সিন্ধান্ত নিলাম, আমার লেখা প্রকাশের জন্য আর কোন দিন কোন ধনী
লোকের কাছে আমি ধর্ণা দিতে যাব না। ভবিষ্যতে যদি আমার আর্থিক সামর্থ্য হয় তবে বইটি
প্রকাশ করব, নতুবা কোনদিন প্রকাশই করব না।
আমার খামখেয়ালীপনার কারণে অনেক
অনেক লেখা চিরদিনের দিনের জন্য হারিয়ে গেছে। এই হারানোর যন্ত্রণা আমার মনে মাঝে
মাঝে ব্যদনার শিহরণ তুলে, যদি আমি মারা যাই তবে আমার এই বিশাল লেখার ভান্ডারও বুঝি
মানুষের দৃষ্টির আড়ালে হারিয়ে যাবে। মনে প্রশ্ন হল, তাহলে কেন আমি এতকিছু লিখে
গেলাম, এত সময়ের অপচয় করলাম। বরং অন্যকাজে এই সময়টা ব্যয় করলে আমি কত না উন্নতি
করে ফেলতে পারতাম।
সিলেটের পাহাড়ে দেখা সেইসব
বনফুলের মত যা স্বর্গের সব রূপ-সুধা-গন্ধ বক্ষে ধারণ করে নির্জনে ফুটে, নীরবে
বাতাসে মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে যায়, তারপর শুকিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে ঝরে যায়। তাঁর
কোন খবর রাখেনা কেউ। তাহলে আমার কবিতা, গান, গল্প, প্রবন্ধের কি এই পাহাড়ি বনফুলের
একই পরিণতির অপেক্ষা করছে! আবার মনে হল শিলঙের পুলিসবাজারে খানিক দেখা সেই
অনিন্দ্য সুন্দরী খাসিয়া মেয়েটির কথা, যে বাজারে পানের দোকানে বসে চা-পান বিক্রি
করে সারাদিন সংসারের ঘানি টেনে যাচ্ছে। মেয়েটির যে চোখ ধাঁধানো রূপ, সিলেটে জন্ম
নিলে সে তার রূপের নিশ্চয়ই উপযুক্ত মূল্য পেত। কোন ধনী লন্ডনির বউ হয়ে বৃটেনের
বিলাসী ভবনে আয়েসি জীবন কাটাতো। এত রূপের খনি হয়েও সে বাজারে পানখিলি বিক্রি করে
এই পাহাড়িয়া দেশে আড়ালে আবডালে হারিয়ে যাচ্ছে। আমার শিল্পমালাও বুঝি এই রূপসি
মেয়েটির মত কোন মুল্য না পেয়েই অবহেলা অনাদরে একদিন হারিয়ে যাবে চিরতরে।
ছাত্রজীবন বয়ে গেল, ১৯৯০ সালে
শুরু হওয়া চাকুরি জীবনে একে একে কুড়ি বছর পেরিয়ে গেলেও স্বপ্নের বই প্রকাশ করা আর
হলনা। চাকুরি জীবনে ব্যস্ততা বেড়ে যায়, সেইসাথে পাল্লা দিয়ে লেখালেখিও কমে আসে।
কখনও কখনও বছর পেরিয়ে যেত তেমন কোন লেখা হতনা। তারপরও চুপেচুপে পান্ডুলিপির কলেবর
কেবল বাড়তেই থাকল খোলামাঠে শিকড় মেলে প্রসারিত হওয়া বটবৃক্ষের মতন। শিল্পকে প্রকাশ
করে লোকসমাজে নিয়ে আসার তাড়না সময়ের সাথে সাথে আমার মনে তীব্র হতে তীব্রতর হতে থাকে।
কিন্তু শত জঞ্জালের শক্ত জালে বন্দি এই সামান্য ব্যাংক ব্যবস্থাপকের এই বিশাল বই
প্রকাশের কর্মেযঞ্জে নামার সময় কোথায়? নীরবে নীরবে প্রচুর লেখালেখির জলাভূমি হিমশীতে
জমে জমে শক্ত বরফ হয়ে গেছে সত্য কিন্তু এত বছরেও কোন বই প্রকাশ করার সময় ও সুযোগ
কোনটাই পেলাম না।
২০১০ সালের প্রারম্ভে আমার
বরইকান্দি শাখার চেম্বারে এসে বসেন সিলামের চর মোহাম্মদপুর গ্রামের তরুণ মিজান
চৌধুরী। সদাহাস্য মিজান কিছুদিন আগে মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে খুড়িয়ে হেটে হেটে
ব্যাংকে আসতেন। তিনি বিএনপি রাজনীতি করতেন ও আমার চাচাত ভাই সাংসদ শফি আহমদ
চৌধুরীর একজন একনিষ্ট কর্মী ও সমর্থক।
তখনও মিজান একজন ছন্নছাড়া মুক্ত
কুমার। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আমি ও মিজান দুইজন বসে গল্প করছি। সিলেট শহরে
মিজানদের বেশ কিছু ছোটখাট ব্যবসা রয়েছে। অপর দুইভাই রূমেল ও শামিম চৌধুরী মিলে
এইসব ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন। আমার ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখা একটি পান্ডুলিপি আমি মিজানের
সামনে নিয়ে আসতেই তিনি হাতে তুলে নেন। কিছুসময় পড়ে বিষ্মিত হয়ে বললেন, লেখাতো ভারী
সুন্দর, তা প্রকাশ না করে বসে আছেন কেন? লালবাজারে আমাদের একটি ছাপাখানা আছে, যার
নাম ‘মোহাম্মদী অফসেট প্রেস’। পান্ডুলিপিটি আমার হাতে দিন, আমার ছোটভাই রূমেল চৌধুরী
ওয়ান টুয়ের মধ্যে কম্পিউটারে লিখে ফেলবে। আমি বললাম, আমার কাছে এধরনের আর অনেক
অনেক পান্ডুলিপি রয়েছে, সে কি এত এত লিখা কম্পিউটারে লিখতে পারবে? আবার জবাব আসল,
আমার ছোটভাই রূমেল একাজে খুবই দক্ষ, ব্যাপারটা তার কাছে কিছুই না। মিজানের
কথাবার্তায় মনে হল আমার তিরিশ বছরের লেখার এই বড় ভান্ডারটি প্রকাশ করা তেমন কঠিন
কিছু নয়। কাজটি যেন সহজ ভাষায় একেবারে ডাল ভাত। সে আমার মনবল একধাপ বাড়িয়ে দেয়।
২০১০ সালের মাঝামাঝি কোন একদিন
রূমেলের হাতে আমার কিছু পান্ডুলিপি তুলে দিলাম। ছাপার অক্ষরে প্রিন্ট হয়ে একটার পর
একটা ক্ষুদে পুস্তিকার মত কপি আমার হাতে আসে, সেইসাথে আমার আগ্রহে আর জোয়ার আসতে
থাকে। মনে এক আনন্দের হাওয়া বইতে থাকে। ২০১০ সালের অক্টোবরে একদিন সবগুলো
পান্ডুলিপি আমি রুমেলের হাতে তুলে দিয়ে ১লা নবেম্বর হজ্জ পালনে পত্নীকে নিয়ে মক্কা
যাত্রা করলাম। ফিরলাম ১৬ ডিসেম্বর ২০১০। ডিসেম্বর ব্যাংকের বাৎসরিক হিসাব সমাপনী
মাস। খুবই ব্যস্ত মাস, তাই আমার হাতে সাপ্তাহ খানেক ছুটি অবশিষ্ট থাকা সত্বেয়
কালবিলম্ব নাকরে অফিসে যোগদান করলাম। আমার আগমনে দায়িত্বে থাকা আমিরুল হক হাফ ছেড়ে
বাঁচলেন।
অফিসে বসার দুই এক দিনের মধ্যেই
রূমেল একগাদা প্রিন্টেড খাতা আমার সামনে উপস্থাপন করেন। এখানে আমার লিখা বিগত
ত্রিশ বছরের আমার কর্মফল। আমার জন্ম এক সুফি এবং জমিদার বংশে। হজরত
শাহজালালের(রহঃ) সাথে মক্কা হতে ১৩০৩ সালে আসা দরবেশ হজরত শাহদাউদ কুরেশী(রহঃ),
তৎপুত্র রহিম দাউদ কুরেশী(রহঃ) ছিলেন সেইযুগের বিখ্যাত সুফি ও আলেম। সুলতানী আমলে পীরমালিক
বড় জমিদারী পত্তন করেন। সেই সময়ে তিনি সরকারী উপাধি পান ‘এখতিয়ার খান’। এই বৃটিশ যুগে
গৌছ উদ্দিন চৌধুরী যেমন ‘খান বাহাদুর’ উপাধি পান, তেমনই সুলতানি আমলের একটি উপাধি
‘এখতিয়ার খান’ যা সেময়ের সরকারের তরফ হতে লাভ করেন পীর মালিক। নিশ্চয়ই তিনি
সেইযুগের একজন প্রতাপশালী এলিট ছিলেন। দাউদপুরের সাতটি চৌধুরীবাড়ির তিনিই
পুর্বপুরুষ। তারপর দুই প্রজন্মে নামের
শেষে খান লিখতে দেখা যায়। আমি মদন মোহন কলেজে ডিগ্রি অধ্যয়ন কালে ১৯৮৪-৮৫ সালে দাউদপুর
চৌধুরী বংশের একটি ক্ষুদে ইতিহাস লিখি। বেশ পরিশ্রম করে আমাদের প্রাচীন কুষ্টিনামা
খাতায় লিখে বই আকারে প্রকাশের উপযোগী করি। এই বংশের অনেকের সংক্ষিপ্ত জীবনী এখানে
লিখে তাতে তাদের জনহিতকর কাজকর্মের বিবরণ সংযোজন করি।
আমার বালক বয়সের একটা স্বপ্ন ছিল
বড় হয়ে সিলেটের ইসলামের সূচনাকালের আধ্যাত্মিক দরবেশ হজরত শাহজালালের(রহঃ) একজন
জীবনীকার হব। এবার আচমকা সিলেটের সেই বিখ্যাত দরবেশ হজরত শাহজালালের(রহঃ) জীবনী
লিখতে আমার মনে এক তীব্র জোশ জেগে উঠে। এই সুতীব্র জোশে আমি জিন্দাবাজারের আল আরাফ
মার্কেটে গিয়ে আমার সহপাঠি বন্ধু খায়রুল আক্তার চৌধুরীর কম্পিউটারের দোকান হতে
আটাশ হাজার টাকা মূল্যের একটি নেটবুক কিনে ফেলি। এই নেটবুকে আমি ‘হজরত
শাহজালাল(রহঃ) এবং হজরত শাহদাউদ কুরেশী(রহঃ)’ নামে একটি গ্রন্থ লিখা শুরু করি।
আমার হাতে হজরত শাহজালাল(রহঃ)
বিষয়ক অনেক বই সংগৃহীত ছিল। সহকর্মী আরিফ শাহরিয়ার আল ইসলাহের প্রাচীন ‘হজরত
শাহজালাল(রহঃ)’ সংখ্যাটি আমাকে উপহার দেন। আমার এককালের শিক্ষক মদন মোহন কলেজের
প্রিন্সিপাল নজরুল ইসলাম চৌধুরী স্যার আমাকে এগিয়ে দেন ‘বৃহত্তর সিলেটের ইতিহাস’
নামক একটি বড় প্রামাণ্য গ্রন্থ। সিলেটের স্বনামধন্য লোকসঙ্গীত শিল্পী মুফতি জামাল
উদ্দিন হাসান বান্নার কাছে পেয়ে গেলাম তার পিতামহ মুফতি আজহার উদ্দিনের লেখা
গ্রন্থ ‘সিলেটে ইসলামের জ্যোতি’। মুসলিম সাহিত্যসংসদ আমার হাতে তুলে দিল ইবনে
বতুতার ভ্রমণকাহিনি ‘রিহলা বা ভ্রমণ’। এখান থেকে পেয়ে গেলাম সচিব ও ঐতিহাসিক
দেওয়ান নুরুল আনোয়ারের লেখা হজরত শাহজালাল(রহঃ) বিষয়ক গ্রন্থসহ আর অনেক লেখকের
বেশুমার বই।
আমি তিনপর্বে এই বইটির রচনাকর্ম
সমাধা করলাম। প্রথম পর্বে হজরত শাহজালাল(রহঃ) দ্বিতীয় পর্বে তিনশত ষাট আউলিয়ার
বিবরন এবং তৃতীয় পর্বে ১৯৮৫ সালে আমার
লিখা ‘হজরত শাহদাউদ কুরেশী(রহঃ) ও তার বংশধারা’ সংযুক্ত করে দেই।
একটির পর একটি করে দাড় করা মোঠ
দশটি ইতিহাস, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ও গানের বই সেগেগুজে একটি দশটি ফুলের মালা হয়ে
গেল। ১০৭২ পৃষ্টার এই গ্রন্থমালার নাম রাখা হল ‘ইসফাক কুরায়শী রচনাসমগ্র’। তবে এই
কর্মযঞ্জ চলল পরবর্তী দুই বছর ২০১১ ও ২০১২ সাল। প্রুফ দেখা একটি বড় কাজ, প্রেস
থেকে কপি নিয়ে এসে আব্দুস সবুর মাখন ভাই, শাহিন আহমদ ভাই ও আমি ভূল সংশোধন করে
দিতাম। এসময় ভারত ভ্রমণ, ডাঃ নুরজাহানের রোগ ও চিকিৎসা, হজ্জগমন ইত্যাদি এই মহাগ্রন্থ
ছাপানোর গতিকে বারবার বাধাগ্রস্ত করে তুলে। সব বাধা পেরিয়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে
স্বপ্নের গ্রন্থটি এক সময় প্রকাশ হলে আমি মহান আল্লাহর প্রতি অশেষ শোকরিয়া আদায়
করি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন