সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ঢাকাদক্ষিণে শ্রী চৈতন্যের মন্দির দর্শনঃ

 

ঢাকাদক্ষিণে শ্রী চৈতন্যের মন্দির দর্শনঃ

শ্রীচৈতন্যদেব মহাপ্রভু ছিলেন মধ্যযুগের একজন বিখ্যাত হিন্দু ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক এবং বৈষ্ণব ভক্তি মতবাদের প্রবর্তক। তার পিতা জগন্নাথ মিশ্র ছিলেন সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণের সন্থান। সেই মধ্যযুগে নবদ্বীপ ছিল হিন্দু ও সংস্কৃত চর্চার একটি প্রসিদ্ধ কেন্দ্র। জগন্নাথ মিশ্র তাই হিন্দুধর্ম ও সংঙ্কৃতশাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য ঢাকাদক্ষিণ ছেড়ে সুদূর নবদ্বীপ গমন করেন। সেখানে শচীদেবীকে তিনি বিয়ে করেন।

১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীন নবদ্বীপ তথা বর্তমান নদীয়া জেলায় মাতুলালয়ে শ্রীচৈতন্য জন্মগ্রহণ করেন। এই দম্পতির জগতবরেণ্য সন্থান শ্রীচৈতন্যের ডাকনাম ছিল নিমাই। ভক্তরা তার নাম দেয় গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূ। সারাটা ভারতেবর্ষে শ্রীচৈতন্যের হাজার হাজার ভক্ত ও তাদের মন্দির ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি উড়িষ্যার পুরীর জগন্নাথমন্দিরে নিখোঁজ হয়ে যান।  

আমার গ্রামের বাড়ি দাউদপুর হতে মাত্র সাত মাইল দূরে ঢাকাদক্ষিণ পরগনায় শ্রীচৈতন্যের পৈত্রিক নিবাস দেখার শখ ছিল বহুদিনের। এখানে প্রতিবছর জমকালো মেলা ও পুজো হয়। ঢাকাদক্ষিণ একটি সুপ্রসিদ্ধ বাজার যা একটি পৌরসভা হবার মত সব যোগ্যতা রাখে। পাহাড় ও সমতল মিলে জায়গাটির প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সৌন্দর্য অতুলনীয়।

আমি জীবনে বহুবার ঢাকাদক্ষিণ বাজার ছুয়ে অনেক কুটুম্ব বাড়ি গিয়েছি কিন্তু পোড়াকপাল আমার, ইতিহাস প্রসিদ্ধ শ্রীচৈতন্য দেবের বাড়ি দেখা হয়নি। একদিন আমার ছোট দোলাভাই লিয়াকত চৌধুরীর বাড়ি রনকেলী লামার দক্ষিণভাগ যাই। এখান থেকে পাহাড়ি পথে মাত্র দুইমাইল দূরে ঢাকাদক্ষিণ বাজারের অবস্থান। দুপুরে খেয়ে বড়খালা আবেদা চৌধুরী জবাকে দেখতে ভাদেশ্বর পশ্চিমভাগে যাত্রা শুরু করি। যাত্রাপথে ঢাকাদক্ষিণে কার থামিয়ে সামান্য হেঁটে হেঁটে শ্রীচৈতন্য দেবের পৈত্রিক নিবাসে গিয়ে হাজির হই। আমরা তিনজনের সাথে ছিলেন আমার ছোটবোন মান্না। একটি সুন্দর টিলায় শ্রীচৈতন্যের পৈত্রিক নিবাস, যা এখন একটি তীর্থস্থান ও মন্দির। বেশ কয়েক ধাপ সিড়ি বেয়ে আমরা শ্রীচৈতন্যের মন্দিরে আরোহন করি। একটি মন্দিরের ভিতর শ্রীচৈতন্যের অবক্ষ মূর্তি রয়েছে। আরও কয়েকটি মানবমূর্তি দেখি, যেগুলো কাদের জানতে পারিনি। মন্দিরের সামনে পাকা অঙ্গন, টিলার তলায় পুকুর, সব মিলে জায়গাটি যে দেখার মত আকর্ষণীয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

এখানে পা রেখে আমি যেন মধ্যযুগের পাহাড়ঘেরা ছায়াডাকা ঢাকাদক্ষিণে চলে যাই। জগন্নাথ মিশ্র এখান থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া গিয়ে সেখানেই বিয়ে করে সংসারি হন, এযেন মধ্যযুগেও সিলেটিদের দেশান্তরিত হবার এক অনন্য ঘটনা। পুত বাচলে বাপের নাম। একজন ইতিহাস বরেণ্য পুত্র শ্রীচৈতন্যের জন্ম দিয়ে তার পিতৃদেব জগন্নাথ মিশ্র বিখ্যাত হয়ে যান। সেইসাথে ঢাকাদক্ষিণ শ্রীচৈতন্য দেবের পৈত্রিক নিবাস হিসাবে সুপ্রসিদ্ধি লাভ করে ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থানে পরিণত হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন