বড়বোন আনিকা চৌধুরী রেহার বিয়ের বিয়ের ইতিকথাঃ
এই ১৯৭৫ সালের ফালগুন
মাসে আমার বড় বোন আনিকা চৌধুরী রেহার বিয়ে হয়। বর দরগামহল্লার আমার ফুফার ভাতিজা
মুফতি মোহাম্মদ খালেদ। তিনি তখন ঢাকার
কোহিনুর ইন্ডাস্ট্রিতে চাকুরিরত ইজ্ঞিনিয়ার। তবে আমার মা এই
বিয়েতে সম্মত ছিলেন না।
তার অমতে আব্বার ইচ্ছায় শেষপর্যন্ত এই বিয়ে হয়।
বিয়ের কিছুদিন আগে কাবিন ও সময়সূচী
নির্ধারণে পানচিনি অনুষ্ঠান হয়। এদিন দরগামহল্লা বরপক্ষের
মুরব্বিরা আসেন। বিয়ের পাঁচ সাত দিন আগ থেকে
বাড়ি আত্মীয়স্বজনে ভরে যায়। বিয়ের আগের রাতে বিভিন্ন বর্ণের রঙিন কাগজ কেটে ঝাঝর তৈরি
করে দরজা জানালার উপর গামের সাহায্যে লাগিয়ে ও ছোট ছোট ত্রিকোন
ফ্ল্যাগ তৈরি করে সুতায় টেনে বাড়ি সাজানো
হয়।
পান সুপারী বাটতে বসা নারীরা
সমবেত বেসুরা কন্ঠে দুচারটা বিয়ের গান গেয়ে আনন্দ করেন। আগের
বড় বাংলো ঘরের ভিতর প্যান্ডেলের
মত করে সাজানো হয়। তখন মাটির মেঝে মাদুর বিছিয়ে দস্তরখানা টেনে লাইন ধরে বসে খাবার প্রচলন
ছিল। বর্তমান কালের মত বিয়ের সেন্টার ছিলনা, এমন কি
ডেকোরেটার্সের প্রচলনও ছিল না। আমাদের বংশের
সব চৌধুরীবাড়ি হতে অনুষ্ঠানের সব দরকারি মালামাল যেমন ডেগ, প্লেট,
কাঁপ পিরিচ ইত্যাদি সব চৌধুরীবাড়ি হতে সংগ্রহ
ও একত্রিত করে কাজ চালানো হত।
বাশের তৈরি বিয়ের গেটে লিচুর
ডালপাতা ঢুকায়ে সাজানো হয় এবং উপরে রঙ্গীন কাগজের অক্ষর কাটে লিখা হয় ‘বিয়ে
বাড়ি’। বিয়ের একটি সুন্দর স্মরণিকা (উপহার
পত্র) লিখা হয়। এই স্মরণিকায় বিয়ে উপলক্ষে বর ও কনের
উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জনের লিখা ছড়া, কবিতা, গদ্য, বানী ইত্যাদি দিয়ে সাজানো ছাপা
রঙ্গীন পেপার। আসলে এটা এক ধরনের বিবাহ স্মৃতিকথিকা। এই
উপহারের দুটি লাইন মনে পড়ছে- ‘হঠাৎ আপা
শুনতে পেলাম তোমার নাকি বিয়ে,/ বসন্তের ফাগুন হাওয়ায় কোরমা
পোলাও দিয়ে’।
আমাকে এই বোন কাঁধে নিয়ে হাঁটতেন,
তার বান্ধবীরা এলে তাদেরও পিঠে চড়তাম। তিনি জামা কাপড় পরায়ে ফুলবাবু সাজাতেন। তার
বিয়েতে আমি মনে তীব্র আঘাত পাই। কনের গাড়িতে উঠে যাই
ও তাঁর সাথে যাবার জন্য কান্না জুড়ে দেই। সবাই আমাকে জুর করে
নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ছাড়েন। আমাকে কনের গাড়ি হতে
জুরে নামানোর কথা শুনে আম্মা খুব দুঃখ পান ও বলেন- সে তার বোনের সাথে যেতে
চেয়েছিল, ওকে নিয়ে গেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন