আব্দুল
ওয়াহাব চৌধুরী (শাহরু) সমস্যার সুচনা ও পরিণতি
পুবালী ব্যাংকের
সুদীর্ঘ চাকুরি জীবনে যে আত্মীয় লোকটি আমাকে সবচেয়ে বেশি মানসিক
অশান্তি দেন তিনি হলেন আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী (শাহরু)। তিনি হাজিপুরের
আমার আপন ফুফুতো ভাই আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর পুত্র
এবং পূবালী ব্যাংকের এমডি আব্দুল হালিম চৌধুরীর সমন্দিক। সে এমসি কলেজে এইচ এস সি
বিজ্ঞানে আমার জুনিয়র ক্লাসের ছাত্র ছিল। আমার দশ বছরের ব্যবস্থাপক জীবনে বাহিরের
অনেক চেনাঅচেনা মানুষকে অনেক ব্যাংকঋণ দিয়েছি কিন্তু কেউই
আমাকে কোনদিন কোন বিপদে ফেলে নি। ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকাকালে আমি ইদগাহ শাখায় চার বছরে প্রায় পাঁচ শতাধিক, বরইকান্দি শাখায় চার বছরে সাত
শতাধিক এবং চৌধুরীবাজার শাখায় পনের মাসে শতাধিক ব্যক্তিকে ঋণ প্রদান করি। এই তের শতাধিক ঋণগ্রহীতাকে আমি প্রায় সত্তুরকোটি টাকা ঋণ
বিতরণ করি, কিন্তু তাদের কেউই আমাকে কোন
ধরনের জ্বালাতন করে নি।
আমি কখনও
চিন্তা করতে পারি নি আমার অতিপ্রিয় ও স্নেহের পাত্র এই ভাতিজার কাছে এমন এক
বিপর্যয়কর পরিস্থিতির শিকার হব। আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী ছিলেন পিপলস ইন্সুরেন্স কোম্পানির সিলেটের
বিভাগীয় প্রধান। সিলেটের মানরু মার্কেটে বড় অফিস, অফিসের দামী কার, শাহজালাল
উপশহরে তিনতলা বাড়ি সবকিছু পরিপাঠি ছিল তার। আমি ইদগাহ শাখায়
ব্যবস্থাপক টেবিলে বসার দুইএক দিন পরই শাহরু টুপি মাথায় হাজির হয়ে আমাকে অভিনন্দন
জানান।
আত্মীয়
হিসাবে অন্য কাউকে না দিয়ে আমি সব ঋণ ইন্সুরেন্স তাকেই
দিতাম। একদিন শাহরু আমাকে বললেন, মামু আমার সাউথইস্ট ব্যাংকে এফডিআরের বিপরীতে
একটি ঋণসীমা রয়েছে। তিনি আমাকে ‘চাচা’ না ডেকে ‘মামু’
বলতেন একারনে যে তার ছোটচাচি আমার মেঝবোন আজিজা চৌধুরী সেহা। সাথে সাথে বললাম, আমি
থাকতে তুমি কেন অন্য ব্যাংক হতে ঋনগ্রহন করবে। পুবালী ব্যাংকে সুদের হারও অল্প। এই
এফডিআর আমি লিয়েন করে তোমাকে একটি ওভার ড্রাফট লিমিট গ্রান্ট করে দেব। তখনকার সম
এই ঋণ প্রদান ছিল সহজ এবং নিরাপদ। আমি এখানে বিপদের কোন
গন্ধই অনুভব করি নি।
আব্দুল
ওয়াহাব চৌধুরী রাজী হলে সাউথইস্ট ব্যাংকের পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকার এফডিআরের বিপরীতে
আমাদের আঞ্চলিক অফিস হতে উক্ত এফডিআরের ৯০% হিসাবে একত্রিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার
টাকার একটি ঋণসীমা আমি তাকে বরাদ্ধ করে দেই। ২০০৬ এবং ২০০৭ সাল এই দুই
বৎসর ঋণটি বেশ ভালই পরিচালনা করে যান। এই ঋণ প্রদানের পর প্রতিমাসে শাখার আয় চল্লিশ হাজার
টাকা করে বর্ধিত হয়। আমি ব্যবস্থাপক থাকাকালে সব সময় পাই পাই হিসাব করে ব্যাংকের
আয় বাড়ানোর চেষ্টা করতাম। ব্যাংকের জন্য নিজেকে উৎসর্গকরা আমি উপাসনাতুল্য দায়িত্ব
ও কর্তব্য মনে করতাম।
২০০৮ সালের
মধ্যভাগে একদিন অফিসে এসে আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী বললেন আমাদের আমেরিকার ইমিগ্রান্ট
ভিসা হয়ে গেছে, মা সহ সবাইকে নিয়ে একবার
আমেরিকা যেতে হবে। আমার লিয়েন করা এফডিয়ার ৩৫ লক্ষ টাকা, তাই আমাকে ৩৫ লক্ষ টাকাই
ঋণ দিলে খুবই উপকৃত হব এবং দুইতিন মাসের মধ্যে ফিরে এসেই
পরিশোধ করে দেব। আমাকে তিনি আর বললেন ওয়ালি হাউজিং এ তার
একটি প্লট আছে, সেটি বিক্রি করে কিংবা গাড়ি বিক্রি করে ঋণটি
রেগুলার সীমায় নিয়ে আসবেন।
আমার
ব্যাংকিং জীবনের সেরা ভুলটি তখনই আমি করে বসলাম। প্রতিষ্ঠিত স্বচ্ছল, মাথায় টুপিধারি এবং মসজিদে জামাতে নামাজের প্রথম সারির মুসলল্লি দেখতে সহজসরল প্রকৃতির শাহরুকে সন্দেহ করা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। তাদের
পরিবারেরও বেশ নামডাক। আমার কাছে সে কর্জ চাইলেও আমি তাকে হয়ত
দুইএক লক্ষ টাকা তখনই দিয়ে দিতাম। আমার মনে করলাম যাক বাঁচা
গেছে, আমার কাছে ধার না চেয়ে সে তার এফডিয়ারের টাকার বদলে টাকা চাইতেছে। আমি
ডিএমডি আব্দুল হালিম চৌধুরীর দোহাই দিয়ে ও আঞ্চলিক প্রধান আব্দুল করিম স্যারকে
একটু টুনটুনিয়ে ৩৫ লক্ষ টাকার এফডিয়ার লিয়েনের বিপরীতে ১০০% অর্থাৎ ৩৫ লক্ষ টাকা
আমার নিজ দ্বায়দায়িত্বে তাকে পরিশোধ করে দেই। কিছুদিনের মধ্যেই আব্দুল ওয়াহাব সপরিবারে
যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ২০০৮ সালের তৃতীয় কোয়ার্টারে সুদ জমা হয়ে ঋণটির স্থিতি ৩৫
লক্ষ টাকার উপরে চলে যায়। ৩০ ডিসেম্বর চতুর্থ কোয়ার্টারে সুদ এসে আর সোয়ালক্ষ টাকা
যোগ হয়।
২০০৯ সালের
মার্চে আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী সিলেটে ফিরে আসেন। আমি তাকে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ
করতে বললাম, কিন্তু দেবো দিচ্ছি বলে কেবল কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এবার কথা দিলেন
কার বিক্রি করে ঋণটি ৩১,৫০,০০০/- টাকার বৈধ ঋণসীমায় নিয়ে আসবেন।
‘দৈনিক সিলেটের ডাক’ পত্রিকার তার মোবাইল নম্বরসহ কার
বিক্রির একটি বিঞ্জাপন কয়েকদিন দিতে দেখলাম। আমি দোয়া করতে থাকি কারটি যেন দ্রুত
বিক্রি হয় এবং আমি এই আপদ হতে প্রাণে বাঁচি। একদিন দেখলাম বিজ্ঞাপন বন্ধ, এবার খবর নিয়ে জানলাম কারটি সাড়ে
তিন লক্ষ টাকা মূল্যে বিক্রয় হয়ে গেছে। কিন্তু আমার পাওনা একটাকাও আসল না।
রাতে আমি
গাড়ি চালিয়ে তার বাসায় গেলাম, গিয়ে দেখি শাহরু নেই বাসায় এক ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ
করছে। রাস্থায় একজন লোক বলল অসংখ্য পাওনাদার তাকে ঘিরে ধরেছে, তাই তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে আছেন। প্রতিরাতে একবার আমি উপশহরের বাসায় দৌড়ে
যাই। এবার সত্যিই প্রমাদ গুণলাম, অবশেষে
তার সাথে দেখা হলে আব্দুল ওয়াহাব বললেন গাড়ি বিক্রির টাকা অন্য পাওনাদাররা নিয়ে
গেছে। আমি তাকে ব্যাংকের ঋণটি নির্ধারিত
সীমার মধ্যে নিয়ে আসার জোর তাগদা দিলে বললেন ওয়ালি
হাউজিংয়ের প্লট বিক্রি করে পরিশোধ করে দিবেন।
ইতিমধ্যে
আমাদের আঞ্চলিক অফিসের অডিট আমাকে এই ঋণটি রেগুলার সীমায় নামিয়ে আনার জন্য তীব্র
চাপ প্রদান করে। এমনকি আমাদের বস আব্দুল করিম
স্যারও ফোন করে আমাকে বারবার তাগদা দেন। আমি এক অমানুষিক অশান্তির অগ্নিকুন্ডে
নিক্ষিপ্ত হই। এবার আমি নিজে ওয়ালী হাউজিংয়ের প্লট বিক্রির কাস্টমার খোজতে রাস্থায়
নামি। ঈদগাহ এলাকার কয়েকজন জমির দালাল ধরলাম। দুইতিন জন
কাস্টমার পেয়েও গেলাম। কিন্তু প্লটের দরদাম প্রায় সাব্যস্ত করে তারা ওয়ালী
হাউজিংয়ের অফিসে গিয়ে কেন যেন মুখ ফিরিয়ে নেয়।
ওয়ালি হাউজিংয়ের মালিক শাহিন ভাই আমাদের কিছুটা আত্মীয়, তার বাড়ি রনকেলী।
এবার মানরু মার্কেটে তার কাছে ছুটে গেলাম, তিনি আমাকে জানালেন আব্দুল ওয়াহাব
চৌধুরী নামকাওয়াস্তে সামান্য মূল্য পরিশোধ করে প্লটটি সুকৌশলে তাকে দিয়ে ক্রয়দলিল
করিয়ে নিয়ে গেছেন। তার প্রচুর পাওনা ওয়াহাব
সাহেব পরিশোধ করছেন না। আমি তখন শাহিন ভাইকে বললাম, আপনি
কোটিপতি মানুষ, সাত আট লক্ষ টাকা আপনার জন্য কিছুই না। আপনি এই প্লটটি বিক্রির
একটা সুযোগ করে দিন। আমার শাখার ঋণটি সীমায় নিয়ে আসার পর বাকী সব টাকা আপনি পেয়ে
যাবেন। এবার শাহিন চৌধুরী মুখ খুললেন, আপনি এই প্লট বিক্রয় করবেন কিভাবে, এই
প্লটটি ওয়াহাব সাহেব আমাকে দিয়ে দলিল করিয়ে এনবিএল শিবগঞ্জ শাখায় বন্দক রেখে সেখান
থেকে প্রচুর টাকা ঋণ তুলে নিয়েছেন। আমি এবার এনবিএল
শিবগঞ্জ শাখায় ফোন করলে তারা জানাল ওয়াহাব সাহেবের কাছে তাদের প্রচুর পাওনা টাকা
কুঋণ হয়ে আছে। এমনকি ব্যাংক তার বিরুদ্ধে পাওনা আদায়ে অর্থঋণ
আদালতে মামলাও করেছে। তারা আর জানাল ওয়ালী হাউজিংয়ের বন্ধকি প্লটটি প্রচলিত মূল্যে
বিক্রি করেও তাদের শাখার কুঋণটির কোন গতি
হবে কিনা সন্দেহ।
সব আশা ভরসা
শেষ হয়ে গেলে আমি ক্যানাডায় ওয়াহাব সাহেবের
চাচা আমার মেঝ দোলাভাই আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরীকে অবগত
করলাম। নেহায়েত বাধ্য হয়ে লজ্জাবনত হৃদয়ে আমার ভাতিজিবর এবং ওয়াহাব চৌধুরীর
দোলাভাই আমাদের ব্যাংকের ডিএমডি আব্দুল হালিম চৌধুরীকে ফোন করে বিষয়টি তার নজরে
দিলাম। তিনি বললেন, আপনি এই কি করলেন? আপনার কি জানা নেই, উনি চারদিক হতে প্রচুর ঋণ
নিয়ে একদম দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন। আমি সিলেটের সব ব্যাংককে বলে দিয়েছি উনাকে কেঊ যেন একটাকাও
ঋণ নাদেয়। আপনার মত আর অনেক মানুষকে তিনি ভীষণ
বিপদে ফেলেছেন।
আমি ওয়াহাবকে
এতই বিশ্বাস করতাম এবং ওজনদার লোক মনে করতাম যে এই সম্পর্কে একটু আধটুক মাতামাতি শুনলেও
আমার কাছে মনে এসব ডাহা মিথ্যা ছাড়া কিছু নয়। আমি
বললাম, এত টাকা দিয়ে শাহরু কি করেছেন। আব্দুল হালিম চৌধুরী
জবাব দেন, আমি জানিনা। কেঊ কেঊ বললেন শেয়ারে
ঢুকায়ে নষ্ট করেছে। তবে ডিএমডি হালিম সাহেব আমাকে বললেন যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব এফডিয়ার ভাঙ্গিয়ে ঋণটি সমন্বয় করুন। মাসিক সুদপ্রদেয় এই পঁয়ত্রিশ
লক্ষ টাকার এফডিয়ার ভাঙ্গাতে সাউথইস্ট ব্যাংকে গিয়ে দেখলাম অতীতে তাকে মাসে মাসে
প্রদত্ত সুদ বাদ দিয়ে পয়ত্রিশ লক্ষ টাকাও আসছেনা।
সাউথইস্ট
ব্যাংকের এফডিয়ার ভাঙ্গিয়ে ঋণটি সমন্বয়ের পর দেখা গেল
ঋণস্থিতি প্রায় সাড়ে চারলক্ষ টাকা আমার কলিজায় যেন এক জামানতবিহীন ক্যান্সারপিন্ড
হয়ে আটকে আছে। এই ক্যান্সারপিন্ড আমাকে ভীষণ
জ্বালাচ্ছে এবং প্রতি কোয়ার্টারে সুদ এসে পিন্ডটি বর্ধিত হচ্ছে। অথচ আমার সব
চিকিৎসা ব্যর্থ হচ্ছে। এবার আমার দোলাভাই ক্যানাডা হতে দুইলক্ষ টাকা পাঠালে
ক্যান্সারপিন্ডটি প্রায় অর্ধেকে নেমে আড়াইলক্ষ টাকায় এসে ঠেকল। মনটা যেন একটু
হালকা হল, রাতে একটু আরামে ঘুম হল।
যন্ত্রনার
এখানেই শেষ নয়, এই তীব্র অশান্তির সময় দুইলক্ষ টাকা আদায়ের একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেলতে না ফেলতেই একটি ব্যাংক আমাকে ফোনকরে বলল আপনি আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরীর একটি
কনজুমার ঋণের দুইলক্ষ টাকার জামিনদার। আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরীকে আমরা
খোঁজে পাচ্ছি না। আপনি এই টাকা পরিশোধ না
করলে আপনার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।
তাদের ঋণের টাকাটা হাতিয়ে নিয়েছেন আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী, আর আমার ঘাড় হতে আদায়ের
শক্ত হুমকি। শালার বেটা, জামিনদার হয়েছ এবার বাঘের থাবা সামলাও। হঠাৎ মনে পড়ল কিছুদিন আগে তিনি ইদগাহ শাখায়
এসে আমার সামনে বসেন এবং কোন ব্যাংকের একটি ফরম বের
করে আমার দস্তখত নিয়ে তার একটি ঋণের
জামিনদার করেন। মানুষের উপকার করা আমার ধর্ম, তাই
বিপদগ্রস্ত মানুষকে আমি কখনও ফিরিয়ে দিতে পারি না। অতীতেও
আমি অনেক লোকের ছোট ছোট অনেক ঋণের জামিনদার
হয়েছি, কিন্তু পরে কোন খবরই হয় নি। আমার
প্রভিডেন্ট ফান্ডে আমার অনুদান মূল বেতনের ২০% জমা
দেই। এই প্রভিডেন্ট ফান্ড লিয়েন করে আমি মিজান ও আতাহার সাহেবসহ ব্যাংকের অনেককে
স্টাফঋণ নিতে বারবার সাহায্য করেছি। ফলে আমার পিএফ অন্যের জন্য
লিয়েন থাকায় অনেকবার প্রয়োজনের সময় প্রভিডেন্ট ফান্ডের
বিপরীতে নিজের জন্য স্টাফঋণ তুলতে পারি নি।
এই প্রথম খবর হল আমি ব্যাংকের টাকা মেরে পালিয়ে যাওয়া একজন
নিখোঁজ লোকের ঋণের জামিনদার
হয়েছি এবং এই ঋণটি কড়ায় গন্ডায় আমাকেই পরিশোধ করে
দিতে হবে। ব্যাংকটির এমন নিষ্টুর হুমকি খেয়ে সেদিন
প্রতীজ্ঞা করি, আমি বেঁচে থাকতে আর কখনও কারও ঋণের
জামিনদার হব না।
আমি আবার
ক্যানাডায় ফোন করে কুদ্দুস চৌধুরীর স্মরণাপন্ন
হলাম। এবার তিনি তার ভাতিজার প্রতি গরম
হয়ে অগ্নিবর্ষণ করলেন। তারপর সেই
ব্যাংক হতে আমার প্রতি আর কোন হুমকি ধমকি বর্ষিত হল না।
অবশেষে একদিন ওয়াহাব সাহেবের পিপলস ইন্সুরেন্স অফিসের সেকেন্ডম্যান আমার সহপাঠি
এনামের কাছে জানলাম উপশহরের বাসাভাড়া হতে আব্দুল হালিম চৌধুরী মাসে মাসে কিস্তি পরিশোধ করে এই ঋণটি সমন্বয়
করে দেন।
২০০৮ সালের
মধ্যভাগে শুরু হওয়া আব্দুল ওয়াহাব সমস্যা আমাকে সারাটা ২০০৯ সাল ইটভাটার প্রচ্ছন্ন
আগুনের মত দহন করে যায়। ২০০৯ সালের নভেম্বরে আমার
শাখায় এসে হাজির হন মউতের ফেরেশতা আমাদের হেড অফিসের অডিট ডিভিশনের এসপিও মোঃ
এমদাদুল হক। আমার আত্মীয় ডি এম ডি আব্দুল হালিম
চৌধুরী ফোনে আমাকে বললেন, অডিট চলাকালে আপনি এই ঋণটি সমন্বয় করে দিন, পরে ওয়াহাব
চৌধুরীর কাছ থেকে আস্তে আস্তে আদায় করে নিবেন। আমার সামনে তখন ব্যাংকের প্রমোশন
ডিউ হয়ে আছে। তাই আর সময়ক্ষেপন না করে ২২ নবেম্বর ২০০৯ তারিখে আব্দুল ওয়াহাব
চৌধুরীর অভারড্রাফট চলতি হিসাব নং ৩৯৯৫তে সর্বমোঠ ২,৫৭,৫০০/- (দুইলক্ষ সাতান্ন
হাজার পাঁচশত) টাকা নিজের পকেট হতে ভর্তুকি দিয়ে আমি একটি বিশ্বাসের মাসুল সুদে
আসলে আদায় করি। তার কাছে আমার আর দশ হাজার টাকা আগের পাওনা ছিল। সেদিন
আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরীর কাছে আমার নীট পাওনার পরিমান দাঁড়ায়
২,৬৭,৫০০/- টাকা।
২০১৬ সালে
আমি ক্যানাডা যাত্রার প্রক্ষালে পিপলস ইন্সুরেন্সের এনাম আহমদ একদিন বলল,
ওয়াহাব সাহেব প্রতিমাসে ৫,০০০/-টাকা করে কিস্তি দিয়ে আপনার ঋণটি পরিশোধ করে দিবেন।
আব্দুল ওয়াহাবের করুন দেউলিয়া দশার খবর জেনে বিগত সাত আট
বছরে কোনদিনই পাওনা টাকা ফেরত পাবার জন্য
আমি তার সাথে কোন যোগাযোগ করতে যাই নি। একদিন
রাতে সিলেটের বাসার ল্যান্ডফোনে ওয়াহাব চৌধুরীর টেলিফোন পেলাম, মামু আপনার পাওনা
টাকা প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা করে এনামের মাধ্যমে
আপনার হিসাবে যাবে। আমি খুশী হয়ে তাকে বললাম, আমি রাজী, আমার গ্রামে একটি মাদ্রাসা
করব। এই টাকা এই দাতব্য কাজে লাগবে। আমার হিসাবে একদিন ৫,০০০/- টাকা জমা হল। আমার
কোন অনুরোধ ছাড়াই ওয়াহাব সাহেবের পক্ষহতে
এই অর্থাগমন আমার কাছে মনে হল বিনাবজ্রে যেন একপশলা আচমকা বারিবর্ষণ।
তারপর আমি মাসে মাসে টাকা আসার অপেক্ষায়
রইলাম কিন্তু আর একটি টাকাও আসল না। জানি না
বাকী ২,৬২,৫০০/- টাকা আর কোনদিন আমি ফিরে পাব, নাকি জীবনে কখনও এই টাকা ফেরত
পাওয়ার সৌভাগ্য আমার পোড়া কপালে হাসিল হবে?
শেষে বুঝলাম
আমি ক্যানাডায় গিয়ে যদি তার চাচা আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরীর কাছে নালিশ জানাই এই ভয়েই
ওয়াহাব চৌধুরী এই পাঁচ হাজার টাকার টোকেন
মানি আমার হিসাবে জমা করে দিয়ে আমাকে শান্ত করেছেন।
অথচ আমাকে তার ভয় পাবার কোন কারণই ছিল না।
আমিতো তাকে এতদিনে একবারও বলি নি আমার
টাকা ফেরত দাও? শেষমেশ বুঝলাম, ওয়াহাব সাহেবকে আমি যতটুকু বোকা ভাবি আসলে তিনি তত
বোকা নন, বরং উল্টো তিনি ঠিক ততটুকু সেয়ানা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন