কনজূমার লোন স্কিম এজেন্ট কামাল আহমদ মজুমদার
২০০৮ সালে
আমাদের ব্যাংকের চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদারের সৎভাই কামাল আহমদ মজুমদার
কঞ্জুমার ঋনের দালালী লাভ করেন। তার প্রতিষ্টানের নাম ছিল ‘নাফি এন্টারপ্রাইজ’। সিলেট
শহরে ঈদগাহ শাখায় তখন কোন কঞ্জুমার ঋনের দালাল প্রতিষ্টান ছিলনা। তিনি আমাদের হেড
অফিস হতে সিলেটে কেবল আমার শাহি ঈদগাহ শাখায় ব্যবসা করার অনুমতি লাভ
করেন। ভদ্রলোক দেখতে সুদর্শন ও চামড়া উজ্জ্বল সাদা। তিনি একদিন এসে অফিসে আমার
সাথে দেখা করলেন।
কামাল মজুমদারের
লোকেরা প্রতিদিন ক্রেতাঋণ প্রদানের জন্য দুইচার জন লোক ধরে
নিয়ে আসত। এইসব লোকের বিরাট একটা অংশ ছিল জকিগঞ্জ উপজেলার লোকজন। আমি প্রতিদিনই
দুই চার পাচ লক্ষ টাকার ক্রেতাঋণ প্রদান
করতাম। এসব ক্রেতাঋণের ১৭% সুদের ১৪% ব্যাংক এবং বাকি
৩% দালাল কমিশন হিসাবে নাফি এন্টারপ্রাইজের পকেটে যেত। ব্যাংক
পুঁজি ও শ্রম দিত। এজেন্ট বরোয়ার নিয়ে আসত এবং সমস্যা হলে কিস্তি আদায়ে সহায়তা
করত। ব্যাংকে ঋণ নিতে আসা অনেক ক্রেতা ঋণ এজেন্টদের ভাগ্যে অটো জুটত। তিনি প্রতিদিন দুইচার বার ফোন করে বরোয়ার খোঁজতে
তাগদা দিতেন। বলতেন, ঢাকা চট্টগ্রামের এইশাখা
সেইশাখা আমাকে প্রচুর বরোয়ার দিচ্ছে
আপনারা পারছেন না। তার লোকজনের নিয়ে আসা ঋণপ্রার্থিদের সম্পর্কে
খোজখবর নেওয়ারও তেমন সুযোগ দিতেন না। বলতেন আমি
পরীক্ষা করেছি আপনার আর ঘাটাঘাটি করার দরকার নেই।
এই শাখার ঋণের
কাজকর্ম আমি সম্পুর্ণ একহাতে পরিচালনা করতাম। এই সময় হতে
একে একে শাহরু সমস্যা এবং ছাত্রঋণ সমস্যার
উদয় হল। কিছুদিনের মধ্যে বুজলাম এগুলোর সাথে আরেকটি সমস্যা এসে যোগ হয়েছে, তা
কামাল মজুমদার সমস্যা। অফিসে সীমিত কর্মিবল দিয়ে সবকিছু সামাল দেওয়া বেশ কষ্টকর
হয়ে পড়ে। আমি সকাল ৮টায় কাজ আরম্ভ করে রাত ১০টা পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেতাম।
এমনকি শুক্রবারেও প্রায়ই অফিসে এসে কাজ করতে বাধ্য হতাম।
কামাল মজুমদারকে খুব ভাগ্যবান লোকই বলতে হবে। পুবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হাফিজ মজুমদারের এই সৎভাইয়ের শক্ত ধমক ও তাড়ানী খেয়ে সিলেট, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় বড় শাখার ব্যবস্থাপকগণ ভয়ে কম্পমান হয়ে তার কাস্টমার খুঁজতে মাঠে নামেন। তারা তাকে প্রচুর গাড়ি ঋণ এবং ফ্ল্যাট ঋণ খুঁজে খুঁজে বের করে দেন। ফলে দেখলাম এক সময় নাফি এন্টারপ্রাইজের ঋণস্থিতি একশত কোটি টাকা পার হয়ে গেছে। হিসেব করে দেখলাম এই ঋণ হতে এক বছরে পূবালী ব্যাংক যেখানে ১৪ কোটি টাকা সুদ পাবে, সেখানে কামাল মজুমদার বিনে কষ্টে প্রতি বছর পেয়ে যাবেন ৩ কোটি টাকার সুদ। এটা মৃগয়ায় গিয়ে বন্দুকের কোন গোলী খরচ না করেই যেন ঝড়ের ঝাপটায় মাটিতে লুটে পড়া কোটি কোটি টাকার বক শিকার করে নিজের থলীতে তুলে নেওয়ার মত একটি ঘটনা।
উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করা কামাল আহমদ মজুমদার মাঝে মধ্যে বড়বড় নসিহত লিখে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরীকে ক্রেতাঋণ বিষয়ে তার অতি মূল্যবান উপদেশাবলীও বিতরণ করতেন। মাঝে মাঝে ভাবতাম, পোড়াকপাল আমার, অনেক পাড়াপড়শী আত্মীয়স্বজন এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক হওয়া সত্বেও এত লেখাপড়া করে এসে এখানে দুই পয়সা বেতনের এই চাকুরির জন্য দিনরাত খেটে মরছি, আর কিছুলোক আত্মীয়ের নাম ভেঙ্গে প্রভাব খাটিয়ে এখান থেকে এমনি এমনি কোটি কোটি টাকা কামাই করে নিচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন