১৪
মে ২০০৮, ১৩ তম বিবাহ বার্ষিকীর উপহারঃ
একদিন ডাঃ
নুরজাহান বেগম চৌধুরী সিলেট স্টেডিয়ামের চেম্বারে বসে রোগী দেখছেন। ফুলবাড়ির গাড়ি
ব্যবসায়ী রুম্মান ভাগনা একটি খুব সুন্দর রক্তরঙ্গের জাপানি টয়োটা করলা ভিটজ নিয়ে
সেখানে আমার সামনে হাজির হন। ২০০৪ মডেলের জাপান রিকন্ডিশন ১৩০০সিসি কারটিতে বসে
স্টার্ট দিয়ে একটু চালাতেই আমি এই কারের গভীর প্রেমে পড়ে গেলাম। আমার পুরানো টয়োটা
করোল্লা ই ই-৮০ কারটি বয়সের ভারে বৃদ্ধ হয়ে বারবার অসুস্থ ইঞ্জিনে কারখানায়
মেরামতে ভর্তি হত। দাম কত? জানতে চাইলে রুম্মান বলল, মামু মাত্র সাড়ে আট লক্ষ টাকা
আমাকে দিলেই চলবে। আমি তোমার কাছ থেকে ডাব্বা মারার কোন প্রশ্নই আসেনা। আর দশ
জায়গায় জিঞ্জেস করে যে দাম হবে তাই পরিশোধ করলে চলবে। আমার অতি আগ্রহ দেখে রুম্মান
বলল, গাড়িটি নিয়ে যান যখন খুশি দাম পরিশোধ করবেন। কিছুদিন আগে শেয়ার বিক্রি করে
প্রচুর লাভ হয়। ভাবলাম এই অনাহুত লাভের টাকা হতে কারটি কিনে ফেলব। তাকে সেইমাসে
আড়াইলক্ষ টাকা পরিশোধ করলাম। মুল্যবাবদ এক বছরে মোঠ ৮,২০,০০০/- টাকা মূল্যশোধ করে
রেজিস্ট্রেশন করলাম। রেজি ফি ৪৫,০০০/-টাকা সহ
সর্বমোঠ ৮,৬৫,০০০/- টাকা খরচ হল। এই ছোট কারটি চালাতে বেশ আরাম, পূর্বের বড়
কারটি সিলেটের ছোট ছোট রাস্থায় ঘুরাতে ফেরাতে বেশ কষ্ট হত।
রোগী নিয়ে ভীষণ
ব্যস্থ থাকায় আমার পত্নীর মনেই ছিলনা সেই দিনটি ১৪ মে, তার ১৩ তম বিয়ের দিন। বাসায়
ফিরে নতুন কারের চাবীটি তার হাতে তুলে দিয়ে বললাম, এই নাও আমার পক্ষ হতে তোমাকে
বিবাহ বার্ষিকীর উপহার। তারপর এই রাতেই আমার মা আসমতুন্নেছা এবং জৈষ্ঠা বোন রেহাকে
নতুন গাড়িটি চড়াতে সিলেটের রাস্থায়
নামলাম, তখনই চোখের কোনে জল এসে গেল। এই মাত্র ছয়মাস আগে ২৪ নভেম্বর ২০০৭ আমার
আব্বা যে পরপারে চলে গেছেন। আজ তিনি এই গাড়ি চড়তে পারলে আমার জীবন ধন্য হত, আর
আব্বা আমার কত যে খুশি হতেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন