শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আমার রেবতী রমন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাশতবার্ষিকী-২০০৮ উৎযাপনঃ

 আমার রেবতী রমন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাশতবার্ষিকী-২০০৮ উৎযাপনঃ

রেঙ্গা পরগনার নেগালের বিখ্যাত জমিদার রায়বাহাদুর রমেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য্য মোগলাবাজারে কেশরখালী নদীর তীরে ১৯০৮ সালে একটি উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্টা করেন। তিনি তার পিতা রেবতী রমন ভট্টাচার্য্যের নামে এই স্কুলটির নামকরন করেন। আমরা ভাইবোন সবাই এইস্কুলে অধ্যয়ন করি। আমার পিতা তার জীবনের বিরাট একটা সময়কাল এইখানে শিক্ষকতা করে অতিবাহিত করেন। তাই এই স্কুলটি আমাদের কাছে শেকড়ের মত অতি আপন মনে হত

এই স্কুলে আমার জুনিয়র শ্রেনীর মেধাবীছাত্র মোঃ মুহিবুর রহমানের সাথে  একদিন আমার কোথায় যেন দেখা হয়তিনি তখন দক্ষিণ সুরমা কলেজের দর্শনশাস্ত্রের শিক্ষক ছিলেন। বহুদিন পর তার দেখা পেয়ে আমার বেশ আনন্দ লাগল। কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, সেফাক ভাই আমাদের রেবতী রমন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্টা শতবার্ষিকী উৎযাপন হবে, আমরা ম্যাগাজিন বের করব আপনি লেখা দিতে পারেন। আমি বললাম, আচ্চা চেষ্টা করে দেখব কলমের আগায় লেখাটেখা কিছু বেরুয় কিনাএকদিন আমি বাড়িতে যাবার সময় বিষয়টি পরখ করতে স্কুলে উঠলাম, ভাবলাম এই অনুষ্টানটি অবশ্য করনীয় একটি কাজ যা বহুবছর পর অতীতের পরিচিত প্রিয়জনদের সাথে আবার মুখোমুখি হবার একটা সুবর্ন সুযোগ করে দেবে। কিন্তু আমার প্রিয় প্রধানশিক্ষক শ্রীগুনেন্দ্র চক্রবর্তী স্যার বললেন, কেউ চাঁদা দিচ্ছেনা। সাড়ম্বরে অনুষ্টান করার মত কোন ফান্ড নেই। সর্বোপরি অনুষ্ঠান পরিচালনা  কমিটি নিয়ে মাতব্বরদের মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন রাজনীতিও চলছে।

প্রভাষক মোঃ মুহিবুর রহমানের কথায় আমি একটি স্মৃতিচারমুলক প্রবন্ধ লিখলাম। লেখা হল কিন্তু অনুষ্টানের কোন খবর নেই। বিদ্যালয়ের এই জন্মশতবর্ষ পালন উৎসব হবার কথা ২০০৮ সালে। অথচ এক সময় ঘষে ঘষে ২০০৮ সাল পার হয়ে গেল। আমি মনকে বললাম পুড়াকপাল আমার প্রিয়স্কুলের, বছর পেরিয়ে গেল অথচ তার প্রতিষ্ঠা শতবার্ষিকী পালনের উদ্যোগটুকু কেউ গ্রহ করলনা। ভাবলাম আমার লেখা প্রবন্ধটি ধরে রেখে এখন আর কি করব। শেষমেশ ৩১ জানুয়ারি ২০০৯ আমি ‘ঐতিহ্যবাহী রেবতী রমন উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষে পদার্পন’ শিরোনামে দৈনিক সিলেটের ডাকে এই প্রবন্ধটি প্রকাশ করে দিলাম। এই প্রবন্ধটি প্রকাশ করার পরপরই যেন একটু নাড়াচাড়া লক্ষ্য করলাম কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্র এবং মোগলাবাজারের জনকয়েকণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জেগে উঠলেন। আমি এবং আমার অনুজ নিশাত একটা সম্মানী দিয়ে আমাদের নাম রেজিস্ট্রেশন করে নিলাম।

একদিন ডাক পেলাম ‘শতবর্ষ স্মৃতি স্মারক গ্রন্থ ২০০৮’ এর জন্য আমার লেখা প্রবন্ধ যেন শীঘ্রই পাঠিয়ে দেই। আমি দৈনিক সিলেটের ডাকে প্রকাশিত সেই প্রবন্ধটি প্রয়োজন মত কাটাকাটি করে আমার প্রিয় শিক্ষক নিত্যানন্দ চক্রবর্তী নিতু স্যারের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। আমি খুব খুশী হয়ে ভাবলাম বিদ্যালয়ের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান একদম না হওয়ার চেয়ে দেরীতে হওয়াও ঢের ভাল।

২১শে মার্চ ২০০৯, বসন্তকালের গৌরবময় বিজয় মাসের সেই দিনটিতে স্কুলের গেটের বাহিরে গাড়ি রেখে আমি ও অনুজ নিশাত এসে গেটের সামনে দাড়াই। বিদ্যালয়ের সামনে একটি অনুষ্টান মঞ্চ, সারাটা আঙ্গিনা জুড়ে  মাথার উপর কাপড়ের ছাদ। একবার স্মৃতিময় স্কুলটি ঘুরে দেখে এলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে স্কুলের বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্রছাত্ররা এসে বিদ্যালয়ের ভিতর এক জনারণ্য তৈরি করে ফেলে। অনেককে চিনলাম অনেককে চেনা গেল না। কেউকেউ বহুবছর পর কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং বলা না বলা অনেক কথায় ফুলঝরি বর্ষ করেন।

তপন স্যার, নিতু স্যার এবং প্রধান শিক্ষক শ্রী গুনেন্দ্র রঞ্জন চক্রবর্তী স্যারকে খুব তৎপর দেখলামএবার মাইকে ঘোষণা করা হল শুভযাত্রা মিছিল বের হবে। আমরা পদযাত্রা করে মোগলাবাজার রেলস্টেশন পর্যন্ত গিয়ে বাজারে ফিরে সোজা ত্রিমুখিতে চলে যাই। ত্রিমুখি হতে এই আনন্দমিছিল জনস্রোত তৈরি করে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ফিরে এল। এবার জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া শেষ হলে কোরান তেলাওত এবং গীতা পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান আরম্ভ হল। নিশাত এবং আমি সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচার করলাম। এত এত বক্তা স্মৃতিচারণ করলেন যে, লিখতে গেলে একটা বই হয়ে যাবে। শিক্ষক মিলনায়তনে বসে আখনি পোলাও খাবার সময় তপন স্যার বললেন, একটা জিনিস আছে নিয়ে যেও। সেই জিনিসটা বিকেলে হাতে আসল ‘শতবর্ষ স্মৃতি স্মারক গ্রন্থ ২০০৮’ সন্ধ্যার পর হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্কুলের দুইচার জন ছাত্রছাত্রী এবং সিলেটের স্থানীয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করলেন, যাদের নাম ঠিক মনে নেই। সব শেষ করেই রাতে বাসায় ফিরলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন