সুন্দরবনের জাহাজে সপরিবারে আনন্দ ভ্রমণে তিনদিন ও তিনরাতঃ
আমাদের শৈশবে স্কুলের পাঠ্যসুচীতে সুন্দরবনের নানা বিবরণ পড়ে
সুন্দরবন দেখার একটা তীব্র মনোবাসনা আমাকে পেয়ে বসে। কিশোরবেলায় পচাব্দি গাজীর
একশত একটি মানুষখেকো বাঘ শিকারের গল্প এক নিঃশ্বাসে পড়ে ভয়ে ও উত্তেজনায় রোমাঞ্চিত
হতাম। বইয়ের প্রচ্ছদে ও পাতায় শিল্পীর আকা সুন্দরবনের ছবিও আমাকে খুব বিমুগ্ধ করত।
একবার ঢাকায় ব্যাংকের জাতীয় ব্যবস্থাপক সম্মেলন হতে ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমানকে
নিয়ে আমি এক ঝটিকা সফরে খুলনা ও বাগেরহাট গমন করি। সেইবার মংলাবন্দরে নেমে সেই বর্ষনসিক্ত
দিনে একটি ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে আমরা সুন্দরবনে প্রবেশ করে করমজল ও বানিয়াশান্তা
ঘুরে আসি। এই অংশটা সুন্দরবনের প্রবেশপথ মাত্র। সুন্দরবনের সুচনাস্থলের এই সামান্য
জায়গাটুকু বৃষ্টিতে ভিজে ভ্রমণ করে আমি খুব একটা পরিতৃপ্ত হতে পারিনি। সুন্দরবনকে
গভীরভাবে পরখ করে দেখার বাসনা তাই আমার মনের গভীর গহীনে সুপ্তই রয়ে যায়। আমার চাকুরি, বেগম সাহেবার ডাক্তারি প্রেকটিস, পূত্রের
ডাক্তারি পড়ার ফাঁকে কিছুটা ভ্রমণসময় বের করা বেশ কঠিন কাজ। ২০১৮ সালে পারিনি, ২০১৯
সালের শেষলগ্নে সময় বের হলো। 
অনলাইনে খুলনার একজন ট্যুর অপারেটরের সাথে
যোগাযোগ করে জাহাজে তিনজনের একটি কক্ষ ভাড়া করি। তিনজনের তিনদিনের জাহাজ ভাড়া
সাব্যস্থ হয় ছাব্বিশ হাজার টাকা। আমি অগ্রীম দশ হাজার টাকা অপারেটর জাহেদের ব্যাংক
হিসাবে পরিশোধ করে দেই। ২৫ ডিসেম্বর আমার পুত্র তার মাকে নিয়ে গ্রীনলাইনে ঢাকা
আসে। আমি ধানমন্ডি হতে হেঁটে কাওরান বাজার যাই। শীতের বিকেলে হাঁটতে খুব ভালই
লাগছিল। এবার ওভারব্রিজের উপর দিয়ে বাতাস ঠেলে ঠেলে মাইল দেড়েক হেঁটে রাজারবাগ গ্রিনলাইন
অফিসে গিয়ে তাদেরকে ধানমন্ডি নিয়ে আসি। পরদিন ২৬ ডিসেম্বর আমরা গ্রিনলাইনের বাসে
মাওয়া হয়ে ছয় ঘন্টায় খুলনা পৌছি। বাসটি আমাদেরকে পদ্মার এপারে নামিয়ে দেয়। একটি
ছোট লঞ্চ চড়ে আমরা প্রায় পনের বিশ মিনিটে বিশাল পদ্মার জলধারা পার হই।পদ্মা নদীর
এইপারে মাওয়া ঐ পারে শিবচরবাজার। মাঝে ফারাক প্রায় ছয় কিলোমিটার। এই দুইপার জোড়া
দেবে যে পদ্মা ব্রিজ তার নির্মান কাজ জোরে সোরে চলছে। নদীর এপার থেকে ওপার একটার
পর একটা দৈত্যের মত বিশাল অনেকগুলো আরসিসি পিলার দাড়িয়ে গেছে। পথে নির্মাণাধীন এই পদ্মাসেতু
চোখে পড়ে। এই সেতুর অনেকগুলো স্পেন আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। সবশেষে বাংলাদেশের এই সুবিশাল
প্রকল্পের নিচদিয়ে লঞ্চটি যাবার সময় আমরা এই স্বপ্নসেতুর বেশকিছু ছবি উঠাই। ওপারে শিবচরবাজারে
নেমে গ্রিনলাইনের অন্য একটি বাসে চড়ে দুইতিন ঘন্টা পর খুলনা পৌঁছি।  
খুলনা সাতরাস্থার মোড়ে গ্রিনলাইন অফিসে নামা মাত্রই ট্যুর অপারেটর
জাহেদ এসে হাজির হন। তিনি অল্পবয়স্ক একজন মোল্লা লোক, পাতলা দাড়ি, গাঁয়ে পাঞ্জাবিপরা
লোকটির ব্যবহার ভালই মনে হল। সে একটি ট্রলারে করে আমাদেরকে জাহাজে নিয়ে যায়। জাহাজটি
ছোট, খালাসিরা বলল ত্রিশজন যাত্রী থাকার মত ব্যবস্থা আছে এই ছোট জাহাজে। এবার
লোকটার আসল চেহারা দেখি, সে আমাদেরকে দুতলার ভাল কেবিন না দিয়ে নিচে হয়ত জাহাজকর্মীরা
থাকে এমন একটি সংকীর্ণ বাথরূমহীন কক্ষে নিয়ে যায়। কক্ষটি পানির নিচে ডুবে আছে।
কেবল কাচের জানালা ভাসমান। কক্ষে দুইটি মাত্র ছোট্ট খাট, একটি খাটের নিচে আরেকটি
বেড ফেলে তিনবেড করে নিয়েছে। এবার আমি গরম হই, আমাকে বাথসহ তিনবেডের কক্ষ দেন নইলে
চলে যাব। এবার উপরের দুইটি কক্ষে এইরাত কাটাতে বলে বাকী ষোল হাজার টাকা নিয়ে সে চলে
যায়। আমরা তিনজন এবং জাহাজের লোকজন রূপসার ভাসমান জলে সেইরাত গভীর ঘুমে কাটিয়ে
দেই। ভোরে আজান শুনে ঘুম ভাঙ্গে। খুলনার রূপসা নদী বেশ প্রশস্থ, আমাদের সিলেটের
সুরমা কুশিয়ারা মনু খোয়াই মিলেও রূপসার সমান হবেনা। ওপারে বাড়িঘর দেখা যাচ্ছে,
পাশের জলকাদায় একটি শুশুক লাফিয়ে উঠে। নামাজ পড়ে আমরা চা খেতে চাইলে বাবুর্চি বিস্কুট
ছাড়াই লাল চা পাঠায়। 
ভোরের নদীতে তেমন কুয়াশা নেই। রূপসার বুকে বড় বড় অনেকগুলো
ভাসমান প্রমোদতরী দেখে ডাঃ নুরজাহান বললেন, এইসব সুন্দর জলযানে আমাদেরকে না দিয়ে
এই কি একটা ছোট লঞ্চে উঠাল। সকাল নয়টায় লোকজন আসা শুরু হয়। আমাকে নিচের সংকীর্ন
কক্ষে যেতে চাপাচাপি করলে বলি, আমি ব্যাংকের একজন নির্বাহী আমার পত্নী চিকিৎসক।
এধরনের কক্ষে আমরা জীবনেও থাকিনি। মোবাইলে আমি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের ছবি দেখাই এবং
বলি আপনাদের সেই লোককে ডাকুন যে চুক্তি করেছে। ভাল কক্ষ না দিলে আমার ছাব্বিশ হাজার
টাকা ফিরিয়ে দেন আমি সিলেটে ফিরে যাব। এবার জাহাজের ব্যবস্থাপক বলল, আমাদের বড়
জাহাজ আছে আপনাদেরকে সেই জাহাজে পাঠিয়ে দিচ্ছি। 
এবার ট্রলার আমাদেরকে পাশের
ভাসমান বড় জাহাজ ‘এমবি দি ভেসপার’তে নিয়ে যায়। শতাধিক যাত্রী বহনের আবাসিক
ব্যবস্থা এই বড় জাহাজে রয়েছে। আমাদের জন্য দুতলায় ২৯ নম্বর কক্ষ বরাদ্ধ করা হয়।
কক্ষটির সাথে এটাস্ট বাথরুম রয়েছে। এই জাহাজে আরোহন করেই নুরজাহান বেগমকে বললাম,
বলো শোকর আলহামদুলিল্লাহ। সকালে তুমি যা চেয়েছিলে আল্লাহ এখন সেই
ধরনের একটি জাহাজে আমাদেরকে স্থান করে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ বলে নুরজাহান
বললেন, হ্যাঁ আমরা যা চাই, তাইতো আল্লাহের মেহেরবানীতে পেয়ে যাই।   
এই জাহাজের তিনতলার ডাইনিং কক্ষে
আমরা ব্রেকফাস্ট করি। ডাইনিং হলটি কাচঘেরা, ভিতরে বারটি খাবার টেবিলে একসাথে বাহাত্তুর
জন লোক বসতে পারেন। একদিকে সোফাসেট এবং বড় পর্দার টিভি এবং খানিক জায়গায় নামাজের
জন্য কার্পেট বিছানো রয়েছে। ডাইনিং হলের অন্যপ্রান্তে ফ্রিজ, চানাস্তা টেবিল এবং
খাবারদাবার রাখার টেবিল সজ্জিত। এই খাবার হলটিতে রয়েছে অনেকগুলো লাইফ জ্যাকেট ও
প্লাস্টিক চেয়ার। একটি আভ্যন্তরীণ সপ, যেখানে সুন্দরবনের খাঁটি মধু ও পণ্যসামগ্রী
রয়েছে। এই সুন্দর হলরূমে শতাধিক লোক খাবার ছাড়াও যে কোন সভা সমাবেশ বা অনুষ্ঠান
করে নিতে পারেন। জাহাজের নিচতলায় ইঞ্জিনরূম, গোদাম এবং রান্নাঘর। জাহাজে সোলার
এনার্জি এবং আইপিএস বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও রয়েছে। কেবিন সজ্জিত দুতলার সামনে ও পিছনে
বারান্দা রয়েছে। জাহাজের পিছনের বারান্দায় বড় দড়ি দিয়ে সব সময় বাঁধা থাকে একটি বড় ট্রলার।
এই ট্রলারটি সত্তুর আশি জন লোককে অনায়াসে সুন্দরবনের খালে ও স্পটে নিয়ে যায়। 
গাইড বললেন এই ধরনের একটি জাহাজ
নির্মাণে কোটি টাকা লাগে। আমাদের প্রমোদতরী এমবি দি ভেসপারের মালিক বরিশালী, তিনি
ঢাকায় থাকেন। গ্রীষ্মকালে সাগর উত্থাল থাকে, আবহাওয়া থাকে বিরূপ। তাই সুন্দরবনে
পর্যটন তখন বন্ধ থাকে। শীতকালের পাচমাস 
সুন্দরবনে পর্যটন ব্যবসা হয়। এই পাচমাস জাহাজটি এখানে দেদারছে ব্যবসা করে
গ্রীষ্মের আগমনে ঢাকা চলে যায়। 
ডাইনিং হলের আগেপিছে এবং ছাদে
স্টিলের রেলিংঘেরা খোলা বারান্দা। এইসব বারান্দার প্লাস্টিক চেয়ারে বসে বসে নদী ও
সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য বেশ উপভোগ্য। কেবিনে শুয়ে শুয়ে কাচের জানালা দিয়েও
নদীর দৃশ্য দেখা যায়। জাহাজটি প্রায় দেড়মাইল প্রশস্থ রূপসা নদীর মধ্যরেখা দিয়ে
মংলার দিকে যাত্রা শুরু করে। খুলনা শহরের ভবনমালা ও বন্দরে ভাসমান জাহাজরাশি
পশ্চাতে হারিয়ে যায়। সামনে সুদীর্ঘ্য রূপসা সেতুর ছায়া ভেসে ওঠে। একসময় এই সেতুর
নিচ দিয়ে এগিয়ে যাই। অর্ধঘন্টা পর নির্মানাধীন দ্বিতীয় রূপসা নদীর নিচে চলে আসি।
এই সেতু মংলা বন্দরকে পদ্মাসেতুর সাথে যুক্ত করবে। এই দুইটি সেতু চালু হলে
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ১% বেড়ে যাবে এবং বদলে যাবে এই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। জলভরা
নদীর দুই পারে গ্রাম, ক্ষেত, বৃক্ষ, নদীতে জাহাজ নৌকা দেখে দেখে রামপালে এসে যাই।
এখানে এই নদীপারের বিশাল এলাকা জুড়ে ভারতের সহায়তায় নির্মান হচ্ছে সুবিশাল কয়লা
বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে উদ্ভিঘ্ন দেশের জনগণ, এই
যন্ত্রদানব কি খেয়ে ফেলবে বাংলার অহংকার সুন্দরবন? ধবংশ কি করে দিবে সুন্দরবনের
অজস্র নদী ও খাল। এমনিতেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হুমকির মুখে আছে যে বনটি, এবার মানবসৃষ্ট
দুর্যোগে তার কি পরিণতি ঘটবে, কেউ জানেনা।
নদী এখন আর প্রশস্থ, জলে নোঙর
করে আছে পণ্যবাহী অনেক অনেক জাহাজ, ব্যস্ত বন্দর। গাইড বললেন আমরা মংলা এসে গেছি। জাহাজের
নিচতলায় পাকঘরে পাঁচজন লোক রান্নাবান্নার কাজ করছেন। মাইকে দুপুরের খাবারের ডাক
শুনি। মাত্র তিনদিনের এক অস্থায়ী জাহাজ জীবনে মিলিত হওয়া আমরা প্রায় সত্তুরজন নর নারী
শিশু সুসজ্জিত ডাইনিং হলে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ব্যুফে খাবার নিয়ে এক অপূর্ব সুন্দর
খাবার মেলায় যোগ দেই।
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                              খাবারের পর আমরা সুন্দরবনের হড়বাড়িয়া স্পটে
যাব। 
২৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে ২৯ ডিসেম্বর
রাত পর্যন্ত সারাদিনই ভাল ভাল খাবার ও নাস্তা আসে। তিনবার চানাস্তা ও দুইবার ভাত
পোলাও। চা কফি বিস্কুট, পাকুড়া বিরামহীন। খাবার মেনুতে ছিল মোরগ, হাঁস, গরু, গলদা
চিংড়ি, রুই, লাচো, কুড়াল, সবজি, দুই ধরনের ডাল, ডিম, দই, কুক, সস, সালাদ ইত্যাদি।
রাতে বারবিকিউ পরিবেশন করা হয়। খাবার নিয়ে সবাই সন্তুষ্ট, এব্যাপারে কারো কোন
অভিযোগ নেই।
বাদ আসর চানাস্তা করে আমরা
ট্রলারে চড়ে একটি খাল দিয়ে হড়বাড়িয়া স্পটে যাই। আসলে এই স্পট বন বিভাগের একটি
অফিসের ধারে সুন্দরবনের প্রবেশ পথে সাজানো হয়েছে। খালেরপারে জেটিতে উঠেই একটি
কাটের সেতু পার হই। সেতুর নিচে এবং সামনের মাঠে বাদরের দল খাবারের লোভে বসে আছে। আমরা
সফেদা ছুড়ে দিলে তারা কাড়াকাড়ি করে খায়। একটি লাল শাপলা ফোটা পুকুরের পাশদিয়ে ভিতরে
যাই। সামনের লোকদের অনুসরণ করে হাঁটতে থাকি। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসে। রাস্থা দিয়া
আবার সেই পদ্মপুকুর পারে এসে পড়ি। বিচিত্র সব ফুলগাছ নানান ধরনের কুসুমে ছেয়ে আছে।
জাহাজে ফিরে রাত হয়ে যায়। হলে বসে টেলিভিশনে দক্ষিন ভারতীয় ছবি উপভোগ করি। জাহাজ নেতা
মাইকে বললেন, রাতের খাবারের পর একটি মিটিং হবে, এই সভা শেষ করে সবাই যেন কেবিনে
যান। 
সভায় বলা হয় আগামীকল্য পাচটায়
ঘুম হতে উঠেই সুন্দরবনের নানা দর্শনীয় স্থানে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। ঠিক ৫টায়
উঠে নামাজ ও চা নাস্তা করে নিতে হবে। ৬টায় ট্রলার ছেড়ে যাবে,  এক মিনিটও কারও জন্য অপেক্ষা করা হবেনা। প্রথমেই
আমরা যাব টাইগার পয়েন্ট। গাইড বললেন এই স্থানে বাঘ বিচরন করে। কাজেই স্থানটি
ভয়ঙ্কর। সবাইকে নিষেধ করা হল কেউ যেন ঝকঝকে রঙ্গিন পোষাক পরে না যান। বাঘ চোখে কম
দেখে, রঙ্গিন কাপড় সহজেই বাঘের চোখে ধরা পড়ে। কেউ কেউ জানতে চান আমরা কি বনের বাঘ
দেখতে পাব। গাইড বললেন বাঘ যাতে না দেখেন সেজন্য দোয়া করুন। একবার সেখানে বাঘ দেখে
কয়েকজন মহিলা বেহুশ হয়ে যান, পুরুষরা ভয়ে প্রস্রাব করে কাপড় নষ্ট করে দেন। রয়েল
ব্যঙ্গল টাইগারের হুঙ্কারও ভয়ঙ্কর, বাঘের গর্জনেও মানুষ হুশ হারায়। এই বাঘের বনে
প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে সমুদ্র সৈকতে পৌঁছতে হবে। গাইড সাবধান করে বললেন, যাদের
শক্তি সামর্থ্য আছে, সাহস আছে কেবল তারা যেন টাইগার পয়েন্ট যান। আবার জানতে চাওয়া
হল বাঘ এলে আমরা কি করব? গাইড বললেন, কোন নড়াচড়া করবেন না। বাঘ নড়াচড়া করলেই
শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাশের সশস্ত্র প্রহরী বন্দুকের ম্যাগজিন দেখিয়ে বললেন, কোন
ভয় নেই, ম্যাগজিন ভরা আছে, বাঘ হামলা করলে পুরোটাই তার উপর বর্ষন করে দেবো। আমি
বলি, বাঘ আমাদের গর্ব, বাঘ আজ বিপন্ন প্রাণী। বাঘ আমাকে নিয়ে গেলেও তাকে গোলী
করবেন না। বাঘ সুন্দরবনের বিশ্বস্ত প্রাকৃতিক পাহারাদার। বাঘ শেষ হয়ে গেলে
বনচোরেরা গভীর বনকে সাবাড় করে দেবে। সুন্দরবনের আশপাশের লোকরা বাঘকে বলে মামা।
বাঘমামা নেই তো সুন্দরবন নেই। বাঘ নিয়ে সুন্দরবনের পাশের গ্রামবাসীদের মধ্যে অনেক
কুসংস্কার রয়েছে। সুন্দরবনে ঢুকে যারা বাঘের হামলায় মারা যান, তাদের পত্নীরা হয়ে
যান বাঘ-বিধবা। এসব বাঘ-বিধবাদেরকে মনে করা হয় অপয়া এবং একারণে এই বিধবাদের পক্ষে
আবার বিয়েতে জড়ানো সম্ভব হয়না। 
আমরা রাতে খাবার শেষে জাহাজে
ঘুমপাড়ানী গান শুনে শুনে গভীর ঘুমে ডুবে যাই। মংলা হতে পশুর নদী দিয়ে জাহাজ যাত্রা
করল। এই নদীটি আর বিশাল। বিস্তার দুইতিন মাইলের কম হবেনা। জাহাজ যতই সামনে যাচ্ছে
নদী তত প্রসারিত হচ্ছে। সারারাত ঘরঘর আওয়াজ করে জাহাজ এগিয়ে গেল। শেষরাতে নদী আর
নদী নেই, যেন এক চিকন উপসাগর। এই সাগরখাড়ির এপারে টাইগার পয়েন্ট এবং ওপারে হিরন
পয়েন্ট। ভোর চারটায় কড়মড় আওয়াজ করে মাঝসাগরে জাহাজ নোঙর করল। ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল।
আমরা জেগে উঠে নামাজ পড়ি, ডাইনিং হলে গিয়ে নাস্তা করি। সময় দ্রুত পার হয়। ছয়টা
বাজার আগেই সবাই ট্রলারে উঠে যাই।  
টাইগার পয়েন্টে ছয় কিলোমিটার
হাঁটার খবরে নুরজাহান ভয় পেয়ে যান। কিন্তু পরদিন বাচ্চারাও সেখানে যাচ্ছে দেখে তার
সহস জন্মে। তিনিও ট্রলারে উঠেন। টাইগার পয়েন্টে নেমে আমাদের বেশ জুরছে হাঁটার ব্যায়াম
হয়। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত্রি হয়। সবার মধ্যে একটি বাঘভীতি কাজ করে, সবাই দল
বেঁধে যান, আমি পিছনে থেকে স্ত্রী ও পুত্রকে পাহারা দিয়ে হাঁটি। বাঘ এসে রাতে পানি
খায় এমন একটি পানা পুকুরের পাশ দিয়ে যাই। চারপাশে সুন্দরী, কেওড়া, গেওরা ও গোরান বন। খালপারে ঘন গোলপাতার জঙ্গল। নারকেলের মত অজস্র গোলফল
ঝুলে আছে। 
সুদীর্ঘ্য হাঁটার পর এক সাগরপারে
সিডর ঝড়ে উপড়ে পড়া বৃক্ষবনে এসে আমাদের যাত্রা শেষ হয়। সাগর সৈকতটি বালির নয়,
কাদার। কাদামাটির সৈকতে কেউ যায়না, জুতা কর্দমাক্ত করার ইচ্ছে কারও থাকেনা। আমরা
সাগরের পারের বনে হাঁটাহাঁটি করি। বনটির নাম সুন্দরবন, শৈশবে ভাবতাম বনটি নাজানি
কি সুন্দর, তাই নামটি হয়েছে সুন্দরবন। কিন্তু বয়স বাড়ার পর জানতে পারি এখানে
সুন্দরী নামক এক ধরনের বৃক্ষ প্রচুর জন্মে, এই বৃক্ষের নামেই বনটির নাম হয়েছে
সুন্দরবন। সুন্দরী বৃক্ষ দেখতে চাইলেও কেউ আমাকে দেখাতে পারেনি। দুঃখজনক হলেও সত্য
যে নিয়মিত সুন্দরবনে যাতায়াতকারী গাইডও বনবৃক্ষদের নাম বলতে পারেননি। আমরা বাঙ্গালিরা
বৃক্ষ সম্পদে এক অতি সমৃদ্ধ জাতি, অথচ এই বৃক্ষদের নাম জানার গরজ আমরা খুব একটা অনুভব
করিনা।
টাইগার পয়েন্ট হতে সকাল ৯টায়
আমরা জাহাজে ফিরে আসি। এবার ব্রেকফাস্ট করে আমরা সবাই কটকা অভয়ারণ্যে চলে যাই। সৈকত
হতে হেঁটে হেঁটে সামান্য ভিতরে গিয়েই প্রাকৃতিক অরন্যে প্রচুর মায়া হরিণ ও চিত্রল
হরিণের দেখা পাই। মায়া হরিণ গাড় হলুদ বর্ণের কিছু শিংবিহীন, কিছু ডালশিংযুক্ত।
চিত্রল হরিণ হলুদ কিন্তু সারা শরীরে সাদা রঙের বৃত্ত বৃত্ত ছিটা রয়েছে। এরা বনে
দলবেঁধে হাটছে, গাছের পাতা চিবুচ্ছে। হরিণের প্রিয় খাবার সুন্দরী ও গরানপাতা
চিবিয়ে দেখি আমাদের কচি চাপাতার স্বাদ। অরণ্য ঘুরে সৈকতের বালিতে হেঁটে ফেরার সময়
কিছু শামুক ও ঝিনুক কুড়িয়ে নেই। মাদার বৃক্ষের ছায়ায় হেঁটে জাহাজে ফিরি।
সৈকতটি হিরণ পয়েন্ট, হিরণ শব্দের
ভাবার্থ স্বর্ণ হলেও কেউবা বলেন হরিণ পয়েন্ট। এখানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটি
ও অফিস রয়েছে। নদীতীরে তিনচারটি জেটি, একটি জেটি দিয়ে সুন্দর একটি সৈকতে আমরা অবতরণ
করি। পাশে বনবিভাগের অফিস ও আবাসিক এলাকা। মাটি হতে পাঁচ ফুট উপরে পাকা মাচাং বাড়ি
এবং অফিস ঘর। একটু এগিয়ে গিয়েই হরিনের চিড়িয়াখানা। এখানেও বুনো বাদরের পাল
বাঁদরামি করছে। একজন কৃষক ছোট ছোট ঘাসের আটি বিক্রি করছে। পর্যটকরা আটি আটি ঘাস
কিনে হরিণের সামনে ধরলেই হরিনেরা প্রতিযোগিতা করে ঘাস খেয়ে নিচ্ছে। হিরণ পয়েন্টের শেষপ্রান্তে
একটি খাবারজলের পুকুরে যাই। বনবিভাগের অফিস ও ঘুর্ণীঝড় আশ্রয়কেন্দ্র চোখে পড়ে। শেখ
হাসিনা এখানে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন স্মারক স্থাপন করেছেন। কয়েকটি বাঘের মূর্তি
কাছেই স্থাপিত রয়েছে। 
এবার জাহাজটি একটি স্বর্গবনের
পাশদিয়ে সাগরের দিকে ছুটে যায়। অরণ্যে ঘড়িয়াল ঘুমাচ্ছে, পাখিরা উড়ছে। চরায় বক ও
জলচর পাখিরা দাঁড়িয়ে আছে। দূর সাগরে সাদা গাংচিলেরা দলবেঁধে ঝাপ দিচ্ছে, উড়ে
যাচ্ছে। নদীর জল ও সাগরের জলের একটি সীমান্তরেখা চোখে ভেসে ওঠে। একদিকে নদীর
সামান্য ঘোলাজল, অন্যদিকে সাগরের পরিস্কার নীলজল। বিকেলে শীতের সূর্য মিঠা মিঠা
রোদ বিলিয়ে দিচ্ছে। আমি ছাদের উপর চেয়ারে বসে সাগরের অপরূপ রূপ দেখে নিচ্ছি। এই
সময় তীরছাড়া এক ঢেউয়ের রাজ্যে জাহাজ প্রবেশ করে। জাহাজের চারপাশে জল আর জল, ঢেউ আর
ঢেউ, বাতাস আর বাতাস শনশন করছে। সৃষ্টির এত রূপলাবন্য উপভোগ করে আমার শ্রবণ দর্শন
এবং স্পর্ষ ইন্দ্রিয় এসময় মহান স্রষ্টার গুণগানে মুখর হয়ে ওঠে। সুন্দর বিকেলটা এই
সাগরের মাঝেই কেটে যায়। আসলে এই সাগরসন্ধ্যা ছিল আমার জীবনের এক সেরা আনন্দকাল।
রক্তিম সুর্যটা সামনের সাগরের জলে আস্তে আস্তে যেন নিজেকে হারিয়ে দিল।
গাইড এবার ডাক দেন, ট্রলারে আসুন
দুবলার চর যাব। দুবলারচর সাগরপারে। সামনে উত্থাল সাগর। আমরা লাইফ জ্যাকেট পরে নেই।
ট্রলারে বসেই শুটকির ঝাঝালো গন্ধ এসে নাকে লাগে। এখানে মাঝে মাঝে ছনের ঘর, ঘরের
চারপাশে মাঠের পর মাঠ জুড়ে কেবল শুটকি শুকানো হচ্ছে। দুবলার চর বাংলাদেশের সবচেয়ে
বড় শুটকি পল্লী। এখানে প্রায় লক্ষাধিক লোক শুটকি শিল্পে কাজ করেন। শীতকাল সমাপ্ত
হলে লোকেরা এই দুবলারচর ছেড়ে নিজনিজ বাড়িঘরে চলে যান। শীতের জমজমাট দুবলারচর
গ্রীষ্মকালে বিরাণভূমিতে পরিণত হয়। সবার সাথে আমিও দুবলারচর হতে কিছু লুইট্যা ও
বাশপাতা শুটকি কিনে নেই। রাতের অন্ধকারে যখন ট্রলারে ফিরি, তখন দূরের বাতিঘরে আলো
জ্বলছে। লোকে বলল এই বাতিঘরের ধারে সাগর সৈকতে প্রতি বছর রাসমেলা ও পুণ্যস্নান হয়।
হাজার হাজার মানুষ তখন সমবেত হন গভীর অরণ্যের এই সমুদ্রপারে। ২৮ ডিসেম্বর দিনটা
খুব আনন্দেই চলে গেল। ‘দুবলার চরের উপখ্যান’ নামে আমি একটি ছোটগল্প লিখেছিলাম। আমার
ধারণা ছিল এটি একটি প্রাচীন জনপদ, এসে দেখলাম আমার সেই কল্পনা সম্পূর্ণ ভূল, এটি
একটি মৌসুমি শুটকিপল্লী মাত্র। সারাদিনের হাঁটাহাঁটিতে ক্লান্ত শ্রান্ত সবাই
জাহাজে এসে ডিনার সেরে বিছানায় গাত্রফেলা মাত্রই নিদ্রারাজ্যে হারিয়ে যান। 
২৯ ডিসেম্বর সকালবেলা সাগর সৈকতের
কাছে নোঙর করা জাহাজে তিনজন সংগ্রামি নারী একটি ডিঙ্গি নিয়ে হাজির হন। তাদের একজন
মাঝি ও দুইজন ডাব বিক্রেতা। আমরা ডাব কিনি, তারা ছুলিয়ে দেয়। ডাব খাওয়া শেষে
নারকেলের পাতলা আঁশ কেটে দেয়। তাদের একডিঙ্গি ডাব এই জাহাজেই নিঃশ্বেষ হয়ে যায়।
ব্রেকফাস্ট শেষে জাহাজ নোঙর তুলে উজানযাত্রা শুরু করে। গতরাতে ঘুমের মধ্যে এই পথে
আসি, এবার দিনের আলোয় ফিরছি। পাশের খালের গর্তে দুইটি ভোদড় জলেস্থলে লাফ দিচ্ছে। বিশাল
পশুর নদীর দুপারের জলেভাসা নয়নাবিরাম অরণ্যের সৌন্দর্য্য দেখে দেখে জোহরের দু’রাকাত
কসর নামাজ পড়ে নেই। সাফারের পর আমাদেরকে করমজল স্পটে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে
খালপারের জেটিতে ট্রলারের প্রচন্ড ভীড়। আমরা জেটিতে নেমে প্রচুর লোকজনের দেখা পাই।
দুই তিনজন বিদেশী পর্যটকও চোখে পড়ে। এই স্পটটি মংলার বেশ কাছে, তাই মানুষ সহজে
নৌকায় করমজল আসতে পারেন। এখানে রয়েছে কৃত্রিম কুমির প্রজনন কেন্দ্র। একটি কুমিরের
পুকুর, সেই পুকুরপারে নীরবে শুয়ে একটি বড় কুমিরকে রোদ পোহাতে দেখি। অনেক কুমিরছানা
দেখে আমরা মাটি থেকে তিন ফুট উপরে সেতুর মত করে নির্মিত কাটের মাচাংপথে সুন্দরবনের
ভিতর প্রায় এক কিলোমিটার পথ ঘুরে আবার ফিরে আসি করমজল স্পটের খালপারের ঘাটে। এখানেই
আমাদের সুন্দরবন ভ্রমণ সমাপ্ত হয়।
আমাদের সুন্দরবন ভ্রমণকালে বছরের
সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে। সারা বাংলাদেশে তখন শৈতপ্রবাহ বয়, প্রচন্ড শীতে দেশটা তরতর
করে কাঁপছিল। কনকনে শীতের প্রকোপে সুন্দরবনে মূহূর্তের জন্যও গরম পোষাক গা থেকে
সরানো যায়নি। ভাগ্যিস পর্যাপ্ত গরম কাপড় আমাদের সাথে ছিল। তীব্র শীতের জ্বালায় সারাক্ষণ
মাফলারে গলা ও মাথা পেছিয়ে রাখতে হয়। সাগর নদী ও বন থেকে অনবরত হীমঠান্ডা হাওয়া বয়ে
আসে। হ্যাঁ, আমার জন্ম শীতকালে, তাই শীত আমি ভালবাসী। কনকনে শীতেরও যে একটা ছন্দ ও
আনন্দ আছে, সুন্দরবনে শীতের সেই আনন্দটা আমরা তা উপভোগ করি মনেপ্রাণে।    
ভৈরব হাইস্কুলের এসএসসি
পরীক্ষার্থী ব্যাচ-১৯৯১ এর সহপাঠিরা সপরিবারে আমাদের সাথে ছিলেন। তাদের পত্নী ও
স্বামীরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে জাহাজে চড়েন। দিনের অবসর সময় তারা ডাইনিং হলে
স্মৃতিচারণ, গানবাজনা ও তাসখেলায় খরচ করেন। তাদের সবার নীলগ্যাঞ্জিতে লিখা ছিল
‘এসএসসি পরীক্ষার্থী ব্যাচ-১৯৯১ ভৈরব হাইস্কুল, কিশোরগঞ্জ’। এপেক্স টেক্সটাইলের
কয়েকজন অফিসার তাদের কোম্পানির খরচে সুন্দরবনে আসেন। ঢাকার একজন বিমানচালক
সপরিবারে আমাদের সহযাত্রী ছিলেন।  
জাহাজে একজন বললেন আপনাদের
সিলেটে অনেক সুন্দর সুন্দর পর্যটন স্পট আছে। জেফার জবাবে বলল, অনেক স্পট আছে সত্য,
কিন্তু খুলনার সুন্দরবন তো একাই একশ। এখানে সাগর, নদী, বিচ, অরণ্য, নৌবিহার সব
একসাথেই হয়ে যায়। সিলেটে পাহাড় আছে, এখানে নেই পাহাড়, এই যা। দশহাজার
বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের ৬০% বাংলাদেশে, বাকী ৪০% রয়েছে ভারতে। আসলে এই ছয়হাজার
বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবন বাংলাদেশের অহংকার। আমাদের সিলেট ও সুনামগঞ্জ এই
দুইজেলাকে যদি জনশুন্য করে অরণ্যে পরিণত করা হয় তাহলে আয়তনে সুন্দরবনের প্রায় সমান
হবে। বনটি খুলনা, সাতক্ষিরা ও বাঘেরহাট জেলার অর্ধেক  দখল করে আছে। বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলাতেও বনটির
বিস্তার রয়েছে। এই সুন্দরবন দক্ষিণের সাগর হতে আসা ঘুর্ণীঝড়ের প্রচন্ড থাবা চীনের প্রাচীরের
মত প্রতিহত করে জনপদকে রক্ষা করে। ঘুর্ণীঝড় সিডরকে আটকাতে গিয়ে গাছপালা উপড়ে বনটি
একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। যদি সুন্দরবন না থাকতো তাহলে খুলনা সাতক্ষিরা ও
বাঘেরহাটের যে কি দশা সিডর ঘটাতো তা ভাবাই যায়না। আমাজন যদি পৃথিবীর হৃদপিন্ড হয়,
তাহলে সুন্দরবন বাংলাদেশের হৃদপিন্ড সুনিশ্চয়। সুন্দরবনের অক্সিজেন ও সুফল সারা
বাংলাদেশে ছড়ায়। 
সুন্দরবনে আদিমকাল হতেই জলদস্যুদের
উৎপাত চলে আসছে। আধুনিককালেও এই দস্যুদের অনাচার বন্ধ হয়নি। তারা বিভিন্ন দলে উপদলে
বিভক্ত হয়ে সারাটা সুন্দরবন বাহুবলে দখলে নিয়ে যায় এবং সন্ত্রাসের রাজত্ব কয়েম
করে। তাদের মধ্যকার ক্ষমতার লড়াইয়ে সংঘটিত বন্দুকযুদ্ধে আদিকাল থেকে অজস্র মানুষ
এখানকার বনবাদাড়ে প্রাণ হারায়। ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জেলেদেরে ধরে নিয়ে মুক্তিপন
আদায়, বন্য প্রাণিনিধন, শৃংখলা বাহিনীর উপর হামলা  ইত্যাদি অপকর্মে এসব বনদস্যুরা জড়িত। গাইড বললেন
আমাদের জাহাজ যে জলপথ দিয়ে যাবে সেই পথে জলদস্যু নেই। তাছাড়া বনদস্যুরা সাধারণতঃ
পর্যটকদের উপর কোন হামলা করেনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি
বনদস্যুদের সুন্দরবনে টিকে থাকা কঠিন করে দেয়। কোস্টগার্ড ও র্যাবের অবিরাম অভিযান
ও ক্রসফায়ারে তারা হয়ত মারা পড়ছে, নয়ত আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে
বাধ্য হচ্ছে।       
 
 
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন