করোনা
ভাইরাস নিয়ে স্বাগতম ২০২০ সালঃ
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে ২০২০
সাল মানুষের জন্য মঙ্গলবার্তা নিয়ে আসেনি। আমরা সুন্দরবন যাত্রাকালে চীনের উহান
প্রদেশে করোনা নামীয় একটি প্রাণঘাতী ভাইরাসের আবির্ভাবের খবর পাই। বিজ্ঞানীরা ২০১৯
সালে করোনা ভাইরাসের মধ্যমে ছড়ানো এই রোগটির নাম দেন কভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস ডিজিজ ২০১৯)। কত রোগ আসে, কত রোগ যায়, তাই চীনদেশের এই
নতুন রোগ নিয়ে আমরা কেউই তখন মাথা ঘামাইনি। উহানে বন্যপ্রাণী হতে নাকি রোগটি মানুষের
দেহে প্রবেশ করে এবং মহামারির মত চীনের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ে। চীনের বিশাল বিশাল
এলাকা লকডাউন করে সরকার লোক চলাচল একদম বন্ধ করে দেয়। মানুষ দীর্ঘ সময়ের জন্য
গৃহবন্দী হতে বাধ্য হন। আই এম এফ ভবিষ্যৎবানী করে কভিড-১৯ এর কারণে চীনের অর্থনৈতিক
প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমে আসবে। সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটির এই
নাকানি-চুবানী খেতে দেখে মনে মনে খুশী হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড ট্রাম্প।
কিন্তু তিনিও রেহাই পেলেন না, দুইতিন মাসের মধ্যে চীনের চেয়েও ভয়ঙ্কর দুরাবস্তায়
আপতিত হয় যুক্তরাষ্ট্র। হাজার হাজার মার্কিনি এই মহামারিতে আক্রান্ত হন ও মারা
যান। ফুলবাড়ির খালেস মিয়া, রণকেলীর শামিম দোলাভাই সহ নিউইয়র্কে আমাদের কয়েকজন
আত্মীয়ও করোনায় মারা যান। কানাডায় মারা যান আমার এমসি কলেজের সহপাঠী শওকত। যুক্তরাষ্ট্রে
মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা চীনের কয়েকগুণ ছাড়িয়ে যায়। ডুনাল্ড ট্রাম্প কখনো চীনকে
কখনো বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে দোষারোপ করে নিজের চামড়া বাঁচাতে সচেষ্ট হন এবং
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা হতে নিজেদের নাম গুটিয়ে নেন। পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চ
প্রযুক্তির ধনী দেশটির এই বেহাল অবস্থা দেখে জগতবাসী বিষ্মিত হয়। এমন কি বিষ্মিত না
হয়ে পারিনি পাঁচবারের যুক্তরাষ্ট্র সফরকারী আমি ইসফাক কুরেশী।
রোগটি প্রথমেই ইটালি ও ইরানকে
নাস্তানাবুদ করে। তারপর স্পেন, ফ্রান্স ও বৃটেন করোনা ভাইরাসের তীব্র হামলার শিকার
হয়। ব্রাজিল ও মেক্সিকো লাশের মিছিলে শরিক হয়। উন্নত বিশ্বে প্রথম প্রবল
ধাক্কাকালে শঙ্কিত লোকজন ভাবতে থাকে পৃথিবীতে মানুষের চিহ্ন বুঝি মুছে ফেলবে করোনা
ভাইরাস। বৃটেনের একজন গবেষক ভবিষ্যৎবানী করলেন, এই মহামারি বাংলাদেশের মত অনুন্নত
জনবহুল দেশে ঢুকে গেলে এদেশের সাড়ে সতের কোটি মানুষের মধ্যে কমপক্ষে পঞ্চাশ/ষাট
লক্ষ মানুষ মেরে ফেলবে। একটা তীব্র ভীতি ছড়িয়ে পড়ে সারাটা পৃথিবী জুড়ে। কিন্তু
অচিরেই বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস, রোগটির হাত থেকে রেহাই পেলনা পৃথিবীর কোন অঞ্চল,
কোন দ্বীপ কিংবা কোন দেশ, মহাদেশ।
জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের
মধ্যেই রোগটি প্রাণঘাতী হয়ে খুব দ্রুত পৃথিবীর সবকটি মহাদেশে থাবা বিস্তার করে। ভয়ঙ্কর
ছোঁয়াচে এই রোগটি করোনা রোগীর হাঁচি-কাশি, স্পর্শ এবং স্পর্শিত বস্তুর মাধ্যমে
দ্রুত ছড়াতে থাকে। সর্দি-কাশির মাধ্যমে এসে জ্বর হয়, জ্বর থেকে নিউম্যুনিয়া, গায়ে
ব্যথা, গলে ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধহীনতা, নিউম্যুনিয়া হতে শ্বাসকষ্ট, তারপর ফুসফুস
অকার্যকর হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটে। রক্ত ব্লক হয়ে হার্ট এটাক হয়েও অনেক রোগী মারা
যান।
এই ভাইরাস কোন লক্ষন প্রকাশ না
করেও আক্রান্তের শরীরে লুকিয়ে থাকতে পারে দুই সাপ্তাহ পর্যন্ত। আক্রান্ত রোগী হয়ত
জানেইনা তার করোনা হয়েছে। এরিমধ্যে নিজের অজান্তে ছড়িয়ে দিচ্ছে অনেক মানুষের
শরীরে। বিমানযাত্রীরা বিভিন্ন দেশে দেশে রোগটি বহন করে নিয়ে যান, তাই এই রোগ পৃথিবীর
যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আঘাত হানে। আক্রান্ত দেশসমুহের, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যটিন
ব্যবসা, শেয়ারবাজার এবং উৎপাদন ব্যবস্থায় স্মরণকালের ভয়াবহ ধ্বস নামায়। অর্থনীতিকে
সর্বশ্রান্ত করে দেয়। দেশে বিদেশে অগনিত মানুষ চাকুরী হারিয়ে পথে বসে।
প্রথমে আক্রান্ত দেশের সাথে
অন্যদেশের আকাশপথ বন্ধ হয়। অনেকদেশ ভিসা প্রদান বন্ধ রাখে এবং বর্ডার সিলগালা করে
দেয়। বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্তেও তাই ঘটে। একসময় দেশে দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে
পড়লে পুরো পৃথিবীর আকাশ-পথ একদম বন্ধ হয়ে যায়। জনসভা, খেলাধুলা, ধর্মসমাবেশ,
বিদ্যালয় সব বন্ধ করে মানুষকে নিজনিজ ঘরে কোয়ান্টেরাইনে বন্দী করে রাখা হয় যাতে এই
সোয়াচে রোগটি মানুষ হতে মানুষে ছড়িয়ে না পড়ে। চীন, কোরিয়া, ইরান, ইটালি, স্পেন,
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশে কয়েক লক্ষ মানুষ মানুষ কভিড-১৯
হয়ে মারা যান। ইটালি সরকার সেদেশের ছয়কোটি মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে বাধ্য হয়।
অন্যান্য দেশেও তাই ঘটে।
লোকজন বলাবলি করে প্রতি একশত বছর
পরপর নাকি জগতে একটি মহামারি আসে। ১৯১৮ সালের জানুয়ারিতে এসেছিল স্প্যানিশ ফ্লু,
যা দুই বছরব্যাপী প্রায় পাঁচকোটি মানুষকে মেরে ১৯২০ সালের ডিসেম্বরে বিদায় হয়। ১৮২০
সালে আসে কলেরা, বিশ্বের অনুন্নত অঞ্চলে ঘটায় ব্যাপক প্রাণহানি। ১৭২০ সালের প্লেগ
মহামারি রচনা করে মানুষহত্যার করুণ কাহিনি। পৃথিবীতে প্রতি একশত বছর পরপর মহামারির
আগমন কাকতালীয় ঘটনা হলেও তা কোন মিথ্যে
কাহিনি নয়।
বাংলাদেশে আমরা কভিড-১৯ এর ভয়ে জানুয়ারি হতে আতংকিত দিন যাপন করছি। করোনা ভাইরাস হতে বাচতে
বাংলাদেশের জনগন মসজিদে মন্দিরে প্রার্থনা করে সময় পার করছেন, আল্লাহ যেন এই
মারাত্মক গজব হতে আমাদেরকে রক্ষা করেন। ধনী দেশসমূহে লকডাউন করে জনতাকে ঘরে বসিয়ে
খাবার দিচ্ছে, কিন্তু আমাদের মত জনভারে ন্যুজ হয়ে থাকা গরিব দেশে তা কি সম্ভব হবে।
দেশের বুদ্ধিজীবী, জনগণ ও সরকার তাই চোখের সামনে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেখতে পান।
কিছু মানুষ ও ধর্মীয় হুজুর
ফেসবুক ও ওয়াজে গজবতত্ত্ব প্রচার করলেন, করোনা মানুষের পাপের শাস্তি, ঐশ্বরিক গজব।
তাদের ধারণা এই গজবে বিধর্মীরা মরবে ও মুসলমানেরা বেঁচে যাবে। কিন্তু কিছুদিনের
মধ্যেই দেখা গেল করোনা ভাইরাস মুসলিম/ অমুসলিম চেনেনা, সব ধর্ম বর্ণ ও জাতির লোকজনকে
একই তালে সবাইকে আক্রমণ করছে। করোনা হয়ে দুষ্টলোকরা যেমন মরছে, ভাল মানুষরাও তেমনই
মারা যাচ্ছে। লোকের ভূল ভাঙল। তারা বুঝলো কভিড-১৯ রোগটি প্রাকৃতিক
ব্যাপার, আর দশটি প্রাকৃতিক রোগের মতই এর আচরণ, করোনার কাছে মুমিন কিংবা কমিন বলে
আলাদা কিছু নেই।
একসময় জানা গেল আমাদের কাছের দেশ
শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানে কবিদ-১৯ এসে গেছে। রোগটা যেন আমাদের দরজায় কড়া
নাড়াচ্ছে। ৮ মার্চ ২০২০ সাল। বিদেশ হতে আগত তিনজন বাংলাদেশীর শরীরে করোনা ভাইরাস
ধরা পড়ে। তাদের দুইজন ইটালি ফেরত বাংলাদেশী। সরকার বিদেশ ফেরতদেরে কোয়ারেন্টিনে
পাঠানোর পরও দুইচার জন করে রোগী বাড়তেই থাকে। চার সাপ্তাহ পর রোগীসংখ্যা ১০০ জন
পার হয়। ১৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম একজন করোনা রোগী মারা যান।
মার্চের তৃতীয় সাপ্তাহে
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়। এতদিন আক্রান্তদের উৎস রোগীর
সন্ধান পাওয়া গেলেও এখন রোগী বলতে পারছে না সে কিভাবে, কোথা হতে সংক্রমিত হয়েছে।
রোগীরা অধিকাংশই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সংক্রমিত হচ্ছে।
২২ মার্চ সিলেটে পরিবারের সাথে
আলাপ করে আমি সিলেট চলে যাবার সিন্ধান্ত নেই। ঐদিন ধানমন্ডির বাসা তালা মেরে আমি ও
আমার বাবুর্চি সুমন দুইজন সিলেটের আস্তানায় রওয়ানা হলাম। মানুষের মধ্যে এত আতংক
দেখে মনে হল, আল্লাহ না করুক, আমরা ঢাকায় করোনা আক্রান্ত হলে কেঊ এগিয়ে আসবে কিনা
সন্দেহ। তাছাড়া রোগতো কেবল এই ঢাকায় ছড়াচ্ছে। বাসার সামনে লেকপারের পার্কে
প্রতিদিন প্রচুর মানুষের ভীড় লেগে থাকে। হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম, গল্পগোজব, খেলাধূলায়
মানুষ মগ্ন থাকেন। সেদিন অফিসের গাড়ি ধরতে সকালে কলাবাগান যাবার পথে দেখলাম
লেকপারের বাগান একেবারে জনশূন্য। মানুষ নেই, এক ছিমছাম নীরবতা।
বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে কয়েকজন
পুলিশ ছাড়া আর কেউ নেই। আমার দেখা জনশূন্য ধানমন্ডি লেকপার্কের কয়েকটি ছবি মোবাইলে
তুলে নেই। ২৩ মার্চ ২টায় আমি পুবালী ব্যাংকের ১১ তলার অফিস হতে বের হই। কমলাপুর রেলস্টেশনের
কাছে টিটিপাড়ায় ইউনিক বাসের টার্মিনালে যাই। সামনের দুইটি গাড়িতে সিট খালি নেই।
৪টার গাড়িতে পিছনের দিকে একটি সিট পাই ও বেশ রাত করে সিলেট পৌঁছি। আমার গিন্নী ও
পুত্র আমাকে কারে করে চন্ডীপুল হতে জেফার ভবনে নিয়ে যান। ঐদিন সিলেটে না গেলে আমরা
নিশ্চিত ঢাকায় আটকা পড়তাম, কারন পরদিন ঢাকা হতে বেরিয়ে যেতে এত ভীড় জমে যে গাড়ি পাওয়া
সম্ভব হতনা। ২৫ মার্চ হতে সরকার সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করে। বাংলাদেশের বাস পথ,
ট্রেন, নৌ ও বিমানপথ আড়াইমাসের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এমন কি জেলাশহর হতে উপজেলায় বাস
চলাচলও হয়নি। ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের আন্দোলনের সময়ও এত দীর্ঘ সময়ের
জন্য বাংলাদেশ অচল থাকেনি। স্বাধীনতার পর এই প্রথম করোনা মহামারির কারণে ২৬শে
মার্চ স্বাধীনতা দিবসের কোন অনুষ্ঠান কিংবা আনুষ্ঠানিকতা দেশে পালিত হয়নি। বিদেশী
মেহমানরা করোনার কারণে ঢাকায় না আসায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের বহু প্রতিক্ষার
সরকারি আয়োজনও ভেস্তে যায়।
সিলেটের জেফার ভবনে পৌছে আমি
কোয়ারেন্টিনে ঢুকলাম বাসার অগ্নিকোনের বাথযুক্ত কক্ষে। আমার চিকিৎসক গিন্নী একটি
বালতিতে সাবান পানি রাখেন। আমার পরনের সমুদয় কাপড় সাবান-পানিতে ভিজিয়ে রাখি
আধাঘন্টা, তারপর ধোইলাম ও স্নান করলাম। আলাদা থালাবাসন কাপ গ্লাসে আমার খাবার চলল।
আমার ল্যাপটপ সেই কক্ষে নিয়ে গেলাম। একটি চেয়ার আমার জন্য ঠিক হল, যেটিতে বসে টিভি
দেখতাম। দুই সাপ্তাহ এই কোঠায় কুয়ারেন্টাইনে কাটাই। মনে হল আমি যেন রমজানের শেষ
দশদিন এতেকাফ করতে মসজিদে ঢুকেছি। আলাদা কক্ষে বন্দি হয়ে এক ভিন্নধর্মী জীবনের
স্বাদ নিলাম।
আমি কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে খবর
আসে আমার কানাডার দোলাভাই আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। শুনেই
আমার গিন্নী কয়েকটি মোরগ লিল্লাহ দেন। পরে ফেসবুকে খবর আসে তিনি হাসপাতালে
আইসিইউতে আছেন। আমরা দিনরাত খতম পড়ে দোয়া করতে থাকি। তার বয়স প্রায় পছাত্তুর, তাই
আমরা তাকে নিয়ে শঙ্কিত। আল্লাহপাকের অপার মেহেরবানিতে আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরীকে
মৃত্যুর দরজা হতে ফিরে আসেন। কানাডায় আমার মেঝবোন সেহার করোনা হলেও তিনি দ্রুত ভাল
হন। মিশিগানে আমার ছোটমামা শহিদ চৌধুরী করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেলেও সেরে
উঠেন। পরেই জানতে পারি আমার এমসি কলেজের সহপাঠী ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল
ওয়াদুদ চৌধুরী ও শওকত আলী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা এমসি কলেজের সহপাঠীরা
দু’জনের জন্য প্রার্থনা করতে থাকি। ডাঃ ওয়াদুদ আল্লাহের অশেষ মেহেরবানিতে সেরে
উঠেন কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে মাস্টার্স তাজপুর কলেজের অধ্যক্ষ
শওকত আলী কানাডায় মাত্র চৌয়ান্ন বছর বয়সে মারা যান। হঠাৎ ফেসবুকে দেখতে পাই, পূবালী
ব্যাংক হেডঅফিসে আমার বস উপমহাব্যবস্থাপক জগত চন্দ্র সাহা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
তার বয়সও ষাটের কাছাকাছি। তাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত হই। কিন্তু তিনিও হাসপাতালে গিয়ে
অক্সিজেন গ্রহণ করে ভাল হন।
কয়েক বছর আগে হলিউডের কল্পকাহিনির
একটি ছবিতে এমনই একটি ভাইরাসের কাহিনি ছিল। অতি ছোঁয়াচে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে
মেরে ফেলছে পৃথিবীর সব মানুষ। আমি অনলাইনে এই ছবি দেখে কেউ ভাবতে পারেনি বাস্তবে
এমনটা ঘটতে পারে। অথচ করোনা ভাইরাসের মাধ্যমে সেই হলিউড ছবির কল্পকাহিনি যেন
পৃথিবীতে বাস্তবে পরিণত হলো।
২০২০ সালের আগমন ঘটে করোনার অশুভ
যন্ত্রণা নিয়ে। কভিড উনিশের যন্ত্রণা হতে আমিও রেহাই পাইনি। আমি মার্চে যুক্তরাষ্ট্র
ও তুরস্ক সফরের জন্য টিকেট কাটি বেশ সস্তায়। ভাবলাম করোনা ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের
মত উচ্চ প্রযুক্তির দেশে ঢুকে কিছুই করতে পারবেনা। এখানে এসে হয়ত করোনা মহামারীর
কবর রচিত হবে। তাই নির্ভাবনায় টার্কিস এয়ারলাইন্সের তিনটি টিকেট বুকিং করি। অথচ
কিছুদিনের মধ্যে ইঙ্গিত পেলাম যুক্তরাষ্ট্র ও টার্কির অবস্থা ভাল নয়, তারা আমাদের আগেই
করোনায় বিপদগ্রস্ত দেশে পরিণত হয়ে যায়। আমি খুব চিন্তায় পড়ে যাই, কারণ ২০২০ সালের
১৯ জুনের ভিতর আমাকে গ্রিনকার্ডের মেয়াদ বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতেই হবে। আমার
ফ্লাইট ছিল ২৪ মে, অথচ পৃথিবীর আকাশ যোগাযোগ ব্যবস্থা তখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
টার্কিশ এয়ারলাইনস আমাদের
আমেরিকায় যাবার ফ্লাইট বাতিল করে দেয়। ঢাকা হতে আন্তর্জাতিক সব রুটে ফ্লাইট বন্ধ
থাকায় আমাদের আমেরিকা ও ইস্তম্বুল সফরের স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হলনা। এসময়
যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। আমেরিকায় লকডাউন চলছে। কভিদ উনিশে হাজার
হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। আমেরিকার অবস্থা এখন বাংলাদেশের চেয়েও করুণ। তুরস্কের
অবস্থাও তাই। মড়কের সময় বিদেশে সপরিবারে ঘুরাঘুরি খুবই বিপদজনক, তাছাড়া আমেরিকায়
আমরা কোথায় থাকব? হোটেল, মোটেল, বাসা সবকিছু লকডাউনে বন্ধ আছে। যুক্তরাষ্ট্রে
গেলেও বিপদ হবে, ফিরে আসা কবে হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। আমার পত্নীর তিনভাই
থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে, প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ঠিকানা হয় তাদের বাসায় কিংবা
আমার মামাদের বাসায়। এই মহামারীর বেকার সময়ে কারো বাসায় গিয়ে উঠে তাদেরকে কষ্টে ও
ঝুঁকিতে ফেলা কি আমাদের উচিত হবে। এতকিছু ভেবে ব্যাপারটা নিয়তির হাতে ছেড়ে দেই।
অনলাইন ঘেটে দেখি রিএন্ট্রির জন্য আবেদন করার সুযোগ আছে। ভাবলাম, যাক রিএন্ট্রির
জন্য অনলাইনে আবেদন করে দেখবো ভাগ্যে কি ঘটে।
২৫ এপ্রিল ২০২০ সাল। দিনটি ছিল
পহেলা রমজান ১৪৪১ হিজরি। জীবনে এই প্রথম আমরা একটি ভিন্ন ধরনের অনন্য রোজা মাস
প্রত্যক্ষ করি। ধর্মমন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেন, মসজিদের স্টাফ ছাড়া আর মাত্র দশ/বার
জন মুছল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবেন তাও আবার মাক্স পরে পরস্পর তিনফুট
দূরত্বে দাঁড়িয়ে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে। এই রমজানে তাই মসজিদে মসজিদে মুছল্লিদের ভীড়
নেই। জনশূন্য মসজিদ মন্দিরে কেবল হুজুর ও পুরোহিতরা ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করে যান।
শাহজালালের(রঃ) দরগায় সাত শত বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ৭০১তম উরুস অনুষ্ঠান বাতিল
করা হয়। এমন কি মক্কা ও মদিনা মসজিদেও সীমিত আকারে কম সংখ্যক লোক নিয়েই নামাজের
জামাত হয়। উমরা পালনও সাময়িক বন্ধ থাকে। এবছর কোন বিদেশীকে সৌদি আরবে হজ্জ পালনের
ভিসা দেওয়া হয়নি। সৌদি আরবের সীমিত লোকজন হজ্জ সমাপনের সুযোগ পান।
জেফার ভবন হতে বাহিরে তাকিয়ে
দেখি সড়কে তেমন লোকজন নেই। সামনের দোকান খোলা আছে তবে ক্রেতাশূন্য। সর্বত্র
করোনাভীতি মানুষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আমাদের বাসার গেটও বন্ধ করে দেই। কাজের
মহিলাকে প্রথমে ছুটি দেই, তারপর প্রতি তিনদিনে একবার আসার অনুমতি দেয়া হয়। ডাঃ
নুরজাহান বেগমের চেম্বারে প্রথমদিকে মাক্স পরে সাবধানে রোগী দেখা হলেও পরে সংক্রমণ
বেড়ে গেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আত্মীয়স্বজনদের বাসায় যাতায়াত বন্ধ থাকে। পুবালী
ব্যাংকে চাকুরি করতে গিয়ে বিগত চার বৎসর ধরে আমি সিলেট হতে বাহিরে নির্বাসিত জীবনযাপন
করছি। করোনা মহামারীতে এত আতংক ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও একটি লাভ হল, তা এবছরের
মাহে-রামজানসহ একটানা আড়াই মাস সিলেটে নিজ পরিবারের সাথে থাকার সুযোগ পাই।
পত্রিকায় করে করোনা ভাইরাস আসার সম্ভাবনায় মানুষ পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দেয়।
মহামারীতে তাই মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুনিয়ার যতসব খবর সংগ্রহে
লেগে যায়। এই খবরের ১০% ঠিক খবর, ১০% ভূয়া খবর, ১০% বাগাড়ম্বর, ২০% গোজব, ২০%
তর্কবিতর্ক ও বাকি ৩০% করোনা নিয়ে নানান উপদেশ, লেখালেখি ও ভিডিও।
টেলিভিশন অন করলেই কেবল করোনা
ভাইরাসের ছবি ও খবর। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়
প্রতিদিন বিকেল আড়াইটায় আগের দিনে দেশের সংক্রমন, মৃত্যু এবং সুস্থ্য হওয়া রোগীর
সংখ্যা জানিয়ে দিত। রমজানে আমাদের বাড়ির দেশ বিদেশের সবাই প্রচুর টাকা পাঠান
গ্রামে সাহায্যের জন্য। প্রতিটি পরিবারের দশদিন চলার মত খাবার দাউদপুরের প্রায় তিন
শতাধিক পরিবারে আমরা পৌছে দিলাম।
ডাঃ নুরজাহান বেগম গত রমজানে
আমাদের বাসায় মহিলা তারাবির আয়োজন করেন। করোনার কারণে এবার দুইজন হাফেজের সাথে
চুক্তি করা মহিলা তারাবির জামাতের আয়োজন পন্ড হয়ে গেল।
দেশবিদেশ হতে একটার পর একটা
করোনায় মৃত্যুর করুণ কাহিনির বিবরণ আসতে থাকে। করোনায় বাংলাদেশে প্রথম যে চিকিৎসক
মারা গেলেন তিনি সিলেট মেডিকেলের মেডিসিনের অধ্যাপক মইনুদ্দিন। অল্প বয়সে এমডি ও
এফসিপিএস করা মইনুদ্দিন দুই ছোট্ট পুত্রসন্থান ও তরুণী চিকিৎসক পত্নী রেখে অকালে
চলে যান। তার সাথে ডাঃ নুরজাহান ও আমার দেখা হয়েছিল পপুলার ডায়গনেস্টিকের গত বছরের
ইফতার পার্টির এক সেমিনারে। তিনি সেখানে রমজানে ডায়বেটিস রোগীর করণীয় বিষয়ে ক্লাস
নেন। করোনা মহামারি এসময় কেড়ে নেয় সিলেটের সাবেক মেয়র আওয়ামী লিগ নেতা বদরউদ্দিন আহমদ
কামরান, মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, যমুনা গ্রুপের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুল সহ অনেক
নামিদামি লোক।
আমি এবং আমার বেগম খুব ব্যস্ত
মানুষ। হঠাৎ কাজকর্মহীন হয়ে পড়ায় অলস সময় কাটানো বেশ অসহনীয় হয়ে পড়ে। তাছাড়া এই
ছোঁয়াচে মহামারিকালে কারো বাসায় গিয়ে আড্ডা মারারও অবকাশ নেই। বেগম সাহেবা
রান্না-বান্না, আল্লাহ বন্ধনা, কলকাতার জি-বাংলা চ্যানেল ও ফেসবুকে মগ্ন হয়ে যান।
জেফার অনলাইনে মেডিক্যালের ক্লাস, ভিডিও ও করোনার খবর নিয়ে ব্যস্ত হয়। আমি ব্যস্ত
হই আমার ব্লগের লেখালেখি ও ইবুক সংশোধন নিয়ে। একটার পর একটি লেখা পরিশোধন করি, ফেসবুকের
মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করে ছড়িয়ে দেই।
পত্রিকা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন চার-পাঁচ
শত পাঠক “ইসফাক কুরেশী- Ishfaq Qurashi” নামক ব্লগ ও ইবুকে ঢুকতে
থাকেন। এই আড়াই মাসে আমার ব্লগ ও ইবুকে কয়েক হাজার পাঠকের শুভাগমন ঘটে। এই হাজার
হাজার পাঠকের সাথে আমার খুব ভালই সময় কেটে যায়। বহুদিন পর সিলেটের এই আড়াই মাস
আমার সৃজনশীল কাজের মধ্যে কাটানোর সুযোগ পাই। চাকুরি ও চাকুরির কারণে দুরদূরান্তে
বদলি বিগত ছয়বছর ধরে আমার প্রচুর মূল্যবান সময়কে একেবারে নিঃশেষ করে দেয়। মাঝে
মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করি, আমার জন্ম কি এই অকর্মা সুদের কাজে দেহমন খাটানোর জন্য?
তাও আবার শেষবেলায় এসে উন্নতিহীন স্থবির এক অলক্ষি চাকুরী জীবন। এখানে তেমন কোন
সুযোগ সুবিধা নেই, তারপরও চালিয়ে যেতে হবে। চাকুরি ছেড়ে এসে সৃজনশীল কাজ করে কি
পেঠে ভাত জুটবে। আমার সৃজনশীল কাজ যে আমাকে মানুষের কাছে কতটুকু স্মরণীয় করে রাখবে
তা নিয়েও আমার সন্দেহের কোন শেষ নেই। চাকুরী ছাড়ার পর যদি আমার অবস্থা হয় না
এস্পার, না ওস্পার। তখন দেখা যাবে রিজিক গেল, শিল্পও পাতলা ডালের পানি। আজ আমি এমন
এক জটিল অবস্থায় আছি যে চাকুরি, লেখালেখি, ব্যবসা ও আমেরিকা, এই চারের মধ্যে কোনটিই স্বেচ্ছায় ছাড়ার কোন উপায় নেই। সবকিছু চালিয়ে যেতে হবে শক্ত হাতে, শক্ত
কদমে। ধরুন একসাথে স্থলপথ, রেলপথ, নৌপথ ও বিমানপথ দিয়ে চলতে হবে আমাকে। একসাথে চার
ধরনের পথ চারটি বাহন দিয়ে পরিভ্রমণ করা যতই বন্ধুর হউক না কেন তাই আমাকে করে যেতে
হবে বেঁচে থাকলে আর সাড়ে পাঁচ বছর।
আমার জীবনকালে কখনও মহামারী
আসেনি, তাই মহামারী দেখিনি। কেবল গ্রামের বুড়ো লোকদের কাছে কলেরা ও গুটিবসন্তের
গল্প শুনতাম। এসব রোগের ভূত (তারা বলত ‘বলা’) দেখার গল্পও তারা বেশ রসিয়ে রসিয়ে
শুনাতো। এসব গল্পে তাঁরা তাদের সাহস ও বীরত্বের প্রকাশ ঘটাতো। কলেরা কিংবা বসন্ত
দেখা দিলে লোক ঘর হতে বের হতনা, খুব প্রয়োজনে হলে তারা ঘরের পিছনের লুকানো দরজা
দিয়ে চুপে চুপে বের হত যাতে এসব রোগের ভূত (বলা) তাদেরকে দেখতে না পায় এবং রাতে
তারা এসব রোগের ভূত তাড়ানোর জন্য দলবেঁধে জিকির করে সারা গ্রাম প্রদক্ষিন করত।
রোগীদের বাড়ির আশপাশে কেউ ভূলেও পা মাড়াতো না। মহামারীতে মৃতদের দাফন কাফনে খুব
সাহসী দুইচার জন লোক মাত্র শরিক হত।
এবার এমন এক মড়ক এসেছে দলবেঁধে
আল্লাহের কাছে প্রার্থনা করারও কোন উপায় নেই। নোয়াখালীতে একজন পীর সাহেব প্রচুর
মুরিদ জমায়েত করে করোনা হতে বাঁচতে সম্মিলিত দোয়ার আয়োজন করে বিপদে পড়েন। খবর ফেসবুকে
ভাইরাল হলে সরকার ও জনতার কোপানলে পড়েন পীর সাহেব। তেমনই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন ধর্মীয়
নেতার জানাজায় অজস্র হুজুর ও তালবারা সমবেত হলে অনেকগুলো গ্রাম লকডাউন করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারকে লোকসমাগম আটকাতে ব্যর্থ হওয়ায় স্ট্যান্ড রিলিজ করা
হয়।
সিলেট ইস্ট আঞ্চলিক অফিসে
কিছুদিন আগে ঢাকা হতে বদলি হয়ে আসেন সহকারী মহাব্যবস্থাপক তোফাজ্জল হোসেন। তার
পরিবার ঢাকায় ব্যাংকের মগবাজারের অফিস কলোনিতে থাকেন। তিনি সিলেটে এসেই হৃদরোগে
আক্রান্ত হন। ছুটি নিয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। আমি মানবসম্পদ বিভাগ প্রধান
আহমদ এনায়েত মঞ্জুর মহাব্যবস্থাপকের কাছে ফোন করে আমাকে করোনা মহামারীর এই
দুর্যোগপূর্ন সময়ের জন্য সিলেট ইস্টে এজিএম তোফাজ্জল হোসেনের চেয়ারে কাজ করার
সুযোগ করে দেবার জন্য অনুরোধ করি এবং তোফাজ্জল হোসেনকে কতৃপক্ষ ভাল মনে করলে এই
সময় ঢাকায় আমার চেয়ারে বসাতে পারে। আহমদ এনায়েত মঞ্জুর বললেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক
স্যারের সাথে আলাপ করুন। দেখেন তিনি কি সিন্ধান্ত দেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল
হালিম চৌধুরীকে এক রাতে ফোন করি। আলাপে মনে হল আমি সফল হব।
২রা জুন ২০২০ সাল। করোনার ভীতি ও
তান্ডব তখন তুঙ্গে। সোয়া দুই মাস আগে ঢাকা ছেড়ে এসেছি। তিনদিন আগে আমার বস
মহাব্যবস্থাপক আবু হাবিব খায়রুল কবিরকে ফোন করে জানতে চাই আমি এই অবস্থায় ঢাকা আসব
কিনা। জবাব পাই আসুন। ১লা জুন সিলেট রেলস্টেশনে ট্রেনের কভিডের নিয়মানুযায়ী মাস্ক
পরে অনেকক্ষণ লাইনে দাড়িয়েও টিকেট পাইনি। তাই কদমতলি হতে ২রা জুন ইউনিক বাসের
টিকেট করে বাসা ফিরি। ঢাকা আসার পর অফিসে ঢুকেই শঙ্কায় পড়ি, আমার সাধারণ সেবা ও
উন্নয়ন বিভাগে ডিজিএম জগত চন্দ্র সাহা করোনা আক্তান্ত, এজিএম ফাহমিদা আক্তারের
স্বামী করোনা আক্রান্ত, তাকে নিয়েও সন্দেহ, আমার বিভাগের প্রধান জিএম আবু হাবিব
খায়রুল কবির করোনা টেস্ট করেছেন, তিনিও পজিটিভ। আর শুনি আমাদের সরাসরি নিচতলায়
আইসিটি বিভাগে ছয় সাত জন করোনাক্রান্ত, অনেকের উপসর্গ নেই অথচ তারা করোনা রোগী।
এসব জেনে মনে হল সিলেট থেকে ঢাকা
এসে আমি যেন করোনা মহামারি পল্লীতে ঢুকে গেছি। বাথরুমের টেপ, এসির সুইচ, ফোন রিসিভার
ইত্যাদি কিছু স্পর্শ করলেই মনে হত এই বুঝি করোনা ভাইরাস ছুঁয়ে ফেলেছি। অনবরতঃ
হেন্ড সেনিটাইজার ও সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতে থাকি। মুখে মাস্ক ও চোখে গ্লাস দিয়ে
নিজেকে একদম সুরক্ষিত করে নেই। তারপরও দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়েনা। ব্যাংকের অন্য
অফিসে কর্মীরা রোস্টার ডিউটি করছে। এক সাপ্তাহ অফিস এবং এক সাপ্তাহ ছুটি এভাবে কাজ
করছেন। কিন্তু আমার অফিসে তিনজন এজিএম ফাহমিদা আক্তার, সালমা শাফি, ফারুক হোসেন ও
একজন ডিজিএম জগত চন্দ্র সাহা নাই। তারা সবাই ছুটিতে। সিলেটে অনেকে উপদেশ দেন, চাকুরি
ফেলে আসুন, আগে প্রাণ বাঁচান, তারপর না চাকুরি।
এবার আমার ব্যবস্থাপনা পরিচালক
আব্দুল হালিম চৌধুরীর অফিসে গেলাম, আমাকে এই করোনার সময়ে সিলেটে বদলির ব্যাপারে
জানতে। বললাম, ধানমন্ডির বাসার কাজের লোক সুমন করোনা ভয়ে বাড়ি চলে গেছে। সে
আসছেনা, ফলে খাবারের কোন ব্যবস্থা আমার নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য তার কাছে
আমাকে শুনতে হল, আমি আট হাজার কর্মচারী নিয়ে কাজ করি, কারো ব্যক্তিগত কিছু শুনা বা
দেখার কোন অবকাশ নেই আমার। একবার মনে হল শুনাই আমি আট হাজার কর্মীর একজন আমি নই,
আমি এসেছি আত্মীয় হিসাবে, তার অনুজ ডাঃ ওয়াদুদের সহপাঠী হিসাবে সামান্য সহানুভূতি
পেতে। তিনি বললেন, আমি নিজেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অফিসে আসতে বাধ্য হচ্ছি।
আর একটি কথা তার মুখে শুনলাম যা
বলতেই হয়, আপনি যদি চাকুরি ছেড়ে চলে যান তাহলে চিরদিনের জন্য সিলেট চলে যেতে
পারবেন। একটা এপ্লিকেশন দেন আমি স্থায়ীভাবে সিলেট গমনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। শেষে
বললাম আমি ছুটির দরখাস্ত পাঠাচ্ছি। এই ভয়ঙ্কর করোনাপল্লী ঢাকা হতে কিছুদিনের জন্য
মুক্তি চাই। আমি তিন সাপ্তাহের জন্য ছুটি চেয়ে মানবসম্পদ বিভাগে পাঠিয়ে দিলাম। ভয়ে
ভয়ে পাঁচদিন অফিস করে আবার পঁচিশ দিনের জন্য সাধারণ ছুটি নিয়ে সিলেট ফিরে গেলাম।
আবার ফেসবুকে ঢু মেরে বিচিত্র
বিচিত্র ধরনের কাহিনির দেখা সাক্ষাৎ পাই। করোনা রোগীদের হাসপাতাল থেকে পলায়ন,
পুলিশ আবার পাকড়াও করে ধরে নিয়ে আসা। বিদেশ হতে আগতরা কোয়ারেন্টিনে না থেকে ঘুরে
বেড়াচ্ছে। হাসপাতালে কিংবা পথেঘাটে সন্দেহজনক করোনা রোগী বৃদ্ধ মা-বাবা ফেলে
সন্থানরা উদাও। এমন কি লাশ ফেলেও আত্মীয়রা উদাও হবার ঘটনা ঘটে। অবশ্য লাশ দাফনের
জন্য সব জায়গায় স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়ম মেনে কাজ করে যান। ঢাকায় মারা যাওয়া করোনা রোগী
একজন ব্যাংকারকে নোয়াখালীর কোন এক গ্রামে দাফন করতে গ্রামবাসীরা বাঁধা দেয়।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরিচয় গোপন করা করোনা রোগীর চিকিৎসা করে আক্রান্ত হয়ে
কোয়ারেন্টিনে যান। বিভিন্ন ধরনের রোগীরা হাসপাতালে ঘুরাঘুরি করেও চিকিৎসা পাচ্ছে
না। পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থায় কিছুটা অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়।
করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে
মাস্ক, চশমা, হ্যান্ডগ্লাভস, সাবান ও সেনেটাইজারের দারূণ ব্যবসা জমে উঠে। ঢাকার
ফুটপাত করোনা পণ্যে ভরে যায়। এর মাঝে করোনার প্রচুর ভূয়া ও দুইনম্বরী পণ্যসামগ্রীতে
বাজার ছেয়ে যায়।
ছুটি শেষ হলে ২৮ জুন আবার ঢাকা
এসে অফিসে যোগদান করি। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পুবালী ব্যাংকে রোস্টার ডিঊটি
চলছে। অর্ধেক কর্মি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, অর্ধেক অবসরে আছে। সিলেটে খবর নিয়ে জানলাম
পূবালী ব্যাংকের কর্মীরা এক সাপ্তাহ কাজ করছে, এক সাপ্তাহ দম নিচ্ছে। ঢাকার হেড
অফিস ও সিলেটের বড় অফিসসমূহের এজিএম রা এক সাপ্তাহ কাজ করে এক সাপ্তাহ ছুটির মত
আছেন। আমিও এই ধারনা নিয়ে আসি এক সাপ্তাহ ঢাকায় কাজ করব ও এক সাপ্তাহ সিলেটে কাটাবো।
কিন্তু এখানে এসে দেখি অফিস-প্রধান মহাব্যবস্থাপক এবিএম খায়রুল কবির ছাড়া সবাই
ছুটিতে। তাই রোস্টার ডিঊটির সুযোগ আমার ভাগ্যে আর জুটলনা।
ডাঃ নুরজাহান বেগম চৌধুরী আমাকে
ঢাকায় দিতে চান নি। তিনি বার বার বললেন, চাকুরী ছেড়ে দিলে কেমন হয়। আমাদের তো চলার
মত ব্যবস্থা আছে। সিলেটে বদলি হতে না পারলে চাকুরি ছেড়ে দাও। আমি তাকে বলে আসি
ঢাকায় সাবধানে থাকব এবং ঢাকায় পাঁচদিন কাজ করে সিলেটে ফিরে এসে নয় দিন থাকব।
কিন্তু আমি ফিরে এলাম একমাস পর ২৩ জুলাই কুরবানি ঈদের আগ মূহুর্তে। আমার বাবুর্চি
সুমন তিন মাস পর ঢাকায় ফিরে আসে। তাই ঢাকায় খাবারদাবারে কোন অসুবিধা অনুভব করিনি।
এসময় ঢাকায় করোনা নিয়ে জালিয়াতি
ও অবৈধ ব্যবসা করতে গিয়ে কাজি সাহেদ নামক এক ঠগবাজ ধরা পড়ে। সে ঢাকার রিজেন্ট
হাসপাতালের মালিক। সাতক্ষিরার লোক সাহেদ তার রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখায়
করোনার জাল সার্টিফিকেট বিক্রি ও করোনা চিকিৎসার নামে রোগীর গলাকাটা বিল আদায়ের
ব্যবসা শুরু করে। সাবরিনা চৌধুরী নামধারী একজন সুন্দরী হৃদরোগ চিকিৎসক ও সরকারি
চাকুরীজীবী করোনার জাল সার্টিফিকেট বিক্রির ব্যবসা করে জনতার আটদশ কোটি টাকা
হাতিয়ে নিয়ে তার সহযোগী স্বামী আরিফসহ ধরা খায়। প্রণোদনা আদায়, ছুটি পাওয়া, বিদেশ
যাত্রা ইত্যাদি কাজে করোনা সার্টিফিকেটের প্রয়োজন থাকায় লোকে প্রচুর অর্থের
বিনিময়ে এসব জাল করোনা-সনদ কিনে নেয়। কিন্তু এই জাল সার্টিফিকেটধারীদের শরীরে
বিদেশে গিয়ে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে। ইটালির রোম হতে একটি ফ্লাইটের কয়েক শত যাত্রী
একারণে ইটালি ঢুকতে না পেরে ফেরত আসেন। তখন এই করোনা সার্টিফিকেট জালিয়াতি
প্রকাশ্যে আসে। ঠগ সাহেদকে র্যাব গ্রেপ্তার করলে এসএসসি পাস ধূর্ত সাহেদের আর
অনেক প্রতারণা ও ধান্ধাবাজি ধরা পড়ে। সে অবৈধ ব্যাংক খোলে মানুষের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ
করে। এমন কি তার বাড়িতে ইবায়া ও জাল নোট ব্যবসার সব প্রমাণ বেরিয়ে আসে। সে পুলিশের
আইজি, র্যাবপ্রধান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, এমন কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রণব
মুখার্য্যির সাথে ছবি তুলে সেইসব ছবি প্রতারণা কাজে ব্যবহার করে। কিছুদিন আগে সে
সরকারি দল আওয়ামী লীগে ঢুকে দলের বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদও দখল করে বসে।
করোনাকালে প্রচুর আত্মত্যাগী
মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণ কাজে ও মানুষের সেবায় এগিয়ে আসেন। বসুন্ধরা গ্রুপ
ঢাকায় একটি বিশাল অস্থায়ী করোনা হাসপাতাল নির্মাণ করে। অনেক শিল্পপতি করোনা
রোগীদের জন্য হাসপাতালে অক্সিজেন চেম্বার ও আইসিইউ নির্মাণ করে দেন। অনেক ধনী লোক
মানুষকে প্রচুর খাবার ও নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহ করেন। পুলিশ, সেনাবাহিনী,
র্যাব এবং স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কভিড-১৯ রোগীর সেবা,
চিকিৎসা ও মৃতদের দাফন কাফনে এগিয়ে আসেন এবং অনেকে নিজেরা আক্রান্ত হয়ে প্রাণও
বিসর্জন দেন। কিছু নরপিশাসের দল করোনা নিয়ে নানা প্রতারণা ও ঠগবাজিতে লিপ্ত হলেও
সিংহভাগ মানুষই দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য নিজনিজ সাধ্যমত কাজ করে যান।
২৫ মার্চ সিলেটে গমনকালে আমার
সহকর্মী সহকারী মহাব্যবস্থাপক ফারূক হাসানকে অফিসে রেখে সিলেটে যাই। ৬ আগষ্ট ২০২০
তিনি অবসরে যাবেন। অফিসে ফিরে একদিন ফোন করলে বললেন আমি কতৃপক্ষকে বুঝিয়ে আমার
অবসর পর্যন্ত ছূটি নিয়ে ফেলেছি। প্রায় পাঁচ মাসের ছুটি। কোরেশী সাহেব, তাই আমাকে
আর কখনও অফিসে পাবেন না। মনে করেন আমি অবসরে চলে গেছি। ফারুক হাসেন সহজ সরল লোক।
কারো সাথেও নেই, পাছেও নেই। অফিসিয়াল ঝুট ঝামেলা সামাল দেবার মত ধৈর্য্য ও জ্ঞান-বুদ্ধি
তেমন নেই। কম্পিউটার কি জিনিস তা তার একদম অজানা। বিএ পাস করে তিনি ১৯৮৭ সালে
সিনিয়র অফিসার হিসাবে ব্যাংকে যোগ দেন, সাথীরা ডিজিএম/ জিএম হলেও তিনি এজিএম
হিসাবে অবসরে যান। এনিয়ে তার কোন আক্ষেপ ছিলনা। বলতেন প্রমোশন পেতে হলে শাখা ও
অঞ্চলপ্রধান হতে হয়। নানান অশান্তি ও ঝামেলা পোহাতে হয়। কোন দুর্ঘটনায় পড়ে গেলে
সার্ভিস বেনিফিট খোয়াতে হয়, মানসম্মান যায়। কাজেই আমার প্রমোশনের কোন দরকার নেই।
আমি যেমন আছি তেমনই ভাল আছি। আমরা অফিসের গাড়িতে একসাথে বাসায় আসা যাওয়া করতাম।
ফারুক সাহেব প্রচুর দশ টাকার নোট নিয়ে গাড়ির সামনের সিটে বসতেন। প্রতিটি পয়েন্টে
গাড়ি থামামাত্র ভিক্ষুকরা এসে হাত পাতে, ফারুক সাহেব কোন ভিক্ষুককে খালি হাতে ফেরত
দিতেন না। প্রতিটি হাতে দশটাকার একটি নোট গুজে দিতেন। তিনি বিকলাঙ্গ ভিক্ষুকদেরে
আবার প্রাধান্য দিতেন বেশি। বলতেন যাদের আয় রোজগারের কোন ক্ষমতা নেই তাদেরকে দান
করলে আল্লাহ বেশি খুশী হন।
ফারুক হাসান গাড়ির সামনের সিটে
সবসময় বসতেন। একদিন চালক মোহাম্মদ আলী সামনের একটি গাড়িকে ধাক্কা মেরে দিলে তিনি
পরদিন সামনের সিটে বসতে ভয় পেয়ে যান এবং পিছনের সিটে চলে আসার চিন্তাভাবনা করেন। আমরা ধনাত্মক বুঝালে সাহস করে শেষ পর্যন্ত সামনে রয়ে যান। তিনি
চালকদেরকে এত উপদেশ দেওয়া শুরু করতেন যে, তারা বিভ্রান্ত হয়ে যেত। একবার চালক
মোহাম্মদ আলী বিরক্ত হয়ে বলল, স্যার আমি নেমে যাই, আপনিই গাড়ি
চালান, নইলে দয়া করে চুপচাপ বসে থাকুন।
মাঝে মাঝে আমাদের অফিসে মালের পাহাড় জমে যেত। তার চেম্বারে অফিসের কোন মালামাল
রাখতে চাইলে তিনি রাজি হতেন না। বাহিরে গিয়ে কোন অন্য কোন এক জায়গা দেখিয়ে বলতেন এইতো
জায়গা আছে, এখানে রাখুন।
আমাদের এই অফিসে ফারুক আহমদ নামে
আরেক জন প্রিন্সিপাল অফিসার ছিলেন। তার চাকুরি আছে এখনও ছয়মাস। অথচ একদিন তিনি
চাকুরি হতে পদত্যাগের একটি আবেদন পত্র নিয়ে আমার চেম্বারে হাজির হন। আমি বললাম
ছুটি নিয়ে কোনমতে ছয় মাস পার করে দেন। বললেন কতৃপক্ষ ছুটি দেবেনা, তার চেয়ে ছয়মাস
আগেই চলে যাই। ছয়মাস চাকুরি করতে গিয়ে যদি ঢাকায় করোনা হয়ে মারা যাই, আবার করোনায়
ব্যাংকের যে দুরাবস্থা ঘটতে যাচ্ছে তাতে যদি সার্ভিস বেনিফিট না পাই। তারচেয়ে
ছয়মাস আগেই চলে যাবো।
এবার ফারুক আহমদ পি ও বললেন,
আমার বাড়ি ময়মনসিংহের গ্রামে। আমার কয়েকটি পুকুরের একটি লাভজনক মাছের খামার আছে।
এই খামার লিজ দিয়ে প্রচুর টাকা পাই। এই মৎস্যখামার নিজে পরিচালনা করার জন্য আমি
এবছর লিজচুক্তি নবায়ন করি নি। এখনি চলে গেলে এই খামারের কাজে লেগে যাব। বললাম, যাক
আপনার অবসর সময় খামারের কাজে ভালই কাটবে। তারপর বিনা বাক্যে তার চাকুরির ইস্তোফা
পত্র ফরোয়ার্ড করে দেই। পদত্যাগপত্রটি মানবসম্পদ বিভাগে গেলে মহাব্যবস্থাপক আহমদ
এনায়েত মঞ্জুর তাকে ছুটি নিয়ে ছয়মাস পার করার পরামর্শ দেন, কিন্তু ফারুক আহমদ রাজি
হন নি। চাকুরি জীবন সবাই যেখানে বাড়াতে চায়, প্রিন্সিপাল অফিসার ফারুক আহমদ তার
উল্টোটা করে চাকুরির ছয়মাস ফেলে রেখে অবসরে চলে যান। তার কথা হল, আমি কেন চাকুরির
শেষবেলা ছুটিতে গিয়ে সুবিধা নেবো, ছয়মাস বেতন নাইবা পেলাম।
করোনায় সিলেটে অবস্থানকালে ঘরবন্দী
ছিলাম দীর্ঘ সময়। এসময় বের হইনি, তাই সেভ করাও হত অল্পস্বল্প। এসময় আরবি সাট ছাগলী
দাড়ি রেখে দেই। আমার জীবনের এই প্রথম দাড়ি রাখা। এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে এমসি কলেজে
ভর্তি হলে ঠুটে ও গালে পাতলা দাড়িমুচের রেখা ফুটে। যৌবনে সেই দাড়ি গজানো মাত্রই
সেভ করা শুরু হয়। দুই এক দিন পর পর সেই দাড়ি-মুচ সেভ করা জীবনে কখনও বন্ধ হয়নি। অফিসের
সবাই সদ্য দাড়িধারী আমার এই অদ্ভুদ বেশ দেখে অন্যচোখে তাকালেন।
সায়েম, সায়েদ ও তরিক বলল স্যারকে
ভাল লাগছে, কেউ বলল বড়লোক লাগছে। আমি বলি আমাকে বাংলা ছবির খলনায়ক লাগছে না তো?
জগত চন্দ্র স্যার বললেন, আপনি
দাড়ি রাখছেন কেন? বলেই শুধরে নেন, এটা আপনার ব্যাপার, আমি কিছু বলা ঠিক না।
কেবল নীলা বলল, স্যারকে দাড়িতে
মানাচ্ছেনা। বুড়ো বুড়ো লাগছে।
দাড়ি রেখে খানিক আরাম পেলাম। সেভ
করার কাজ ও ঝামেলা অর্ধেক কমে গেল। দাড়ি ও মুচ যেন পাখির পালকের মত মুখ ও ঠুটের
কিছু প্রান্ত ছেয়ে আছে। মনে হল দাড়ি আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক জিনিস, যা মুখমন্ডলে
এক অনাবিল আরাম দেয়। নারী ও পুরুষের মধ্যকার বৈশিষ্টের একটি প্রার্থক্য প্রাচীর
তৈরি করে দেয় দাড়ি। দাড়ি রবিঠাকুর রাখেন, নজরুল ইসলাম কাটেন। প্রাচীন ও মধ্যযুগে
সবাই দাড়ি রাখতো, এযুগে তেমন কেউ রাখেনা। সেযুগে সেভ করার ভাল যন্ত্রপাতি ছিলনা,
তাই গাল কেটে রক্তাক্ত হত। কোন কোন রাজা দাড়ি অঙ্গারে পুড়িয়ে ছাটতেন। তারা ভয়
পেতেন নাপিত যদি দুশমনের ঘুষ খেয়ে দাড়ির বদলে গলায় ক্ষুর চালিয়ে দেয়। তাই দাড়ি
বাতিল করার উপায় ছিলনা। নারীরও বলার সাহস ছিলনা, দাড়ির জঙ্গলে ডাকা তোমার সুন্দর
মুখখানি আমার ভাল লাগছে না। একেতো দাড়ি কাটতে বলা মহাপাপ, তদুপরি যে নারী যার
অধিভুক্ত ধন, সেই অধিকর্তাকে বলার কি অধিকার আছে তার, দাড়ি কাটার।
মুসলমানরা রসুলের সুন্নত হিসাবে
দাড়ি রাখেন, কেউ বলেন সুন্নত, আবার কেউ বলেন ওয়াজেব। শিখরা যৌবনে গজানো দাড়ি জীবনে
কখনও কাটেনা। অতি লম্বা হবার পর কম্বলের মত চুল-দাড়ি ভাজ করে ফিতা দিয়ে বেঁধে
সামলে রাখেন।
এই বছর করোনা ভাইরাসের। এই
ভাইরাস নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলার শেষ নাই। পৃথিবীর অসংখ্য দেশ, অসংখ্য
কোম্পানি, অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা আবিস্কারে ব্যস্ত।
মাসে পর মাস টিকা নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা চলছে। মানুষ অধির আগ্রহে অস্কফোর্ডের
ল্যাবের দিকে তাকিয়ে আছে। একদিন রাশিয়া খবর দিল তারা টিকা বানানোর শেষপ্রান্তে।
পরদিনই বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অভিযোগ করলেন রাশিয়া তাদের টিকা বানানোর
ফর্মূলা চুরি করেছে। আর কিছুদিন পর চীন ঘোষণা করল তারাও টিকা প্রায় বানিয়ে ফেলেছে।
বাংলাদেশের মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে পরীক্ষা করবে। এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ডুনাল্ট ট্র্যাম্প এক জনসবায় বললেন, চীন তাদের টিকা তৈরির তথ্য কম্পিউটার হেক করে
চুরি করেছে।
কিন্তু রাশিয়া ও চীন তাদের
বিরূদ্ধে আনীত চৌর্য্যবৃত্তির অভিযোগ সম্পূর্ণ আস্বীকার করে।
কুরবানীর ঈদে সিলেট যাই। এবার বাংলাদেশ হতে কোন লোক হজ্ব করতে যাননি। কুরবানী হবে কভিড উনিশের নিয়মকানুন মেনে। মানুষ কুরবানির পশু কিনতে আনুষ্ঠানিকতা বর্জন করে
এবং কুরবানি দেয় সীমিত পরিসরে। অন্যান্য ব্যবসার মত এবছর পশু ব্যবসায়ও বিপর্যয়
ঘটে। সিলেট গিয়ে আমি ‘ইসফাক কুরেশী’ ব্লগ নিয়ে ব্যস্ত হই। ঈদের ছুটি কাটিয়ে
ধানমন্ডি ফিরে আসি।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সর্বজৈষ্ট্য ভ্রাতা শামসুদ্দোহা চৌধুরী
শহিদ হওয়ায় আমাদের প্রজন্মের জীবিত জৈষ্ট্য ভ্রাতা ছিলেন
গোলাম এহিয়া কুরেশী। অনেক বছর আগে ডাক বিভাগের
মৌলভীবাজার জেলাপ্রধান হতে অবসর নিয়ে জন্মভূমি দাউদপুর গ্রামে চলে আসেন এহিয়া
ভাই ও ভাবী শাহানা আক্তার। বাড়িতে নির্মাণ
করেন মনোরম পাকাভবন। আমরা সিলেট থেকে বাড়িতে গেলে তাদের ঘরে মজার নাস্তা হত। বাড়ির
পুকুরপারে শিশুদের জন্য মক্তব সমেত তিনি একটি মসজিদও নির্মাণ করেন। ফুলবাড়ি কন্যে শাহানা ভাবী ডায়বেটিস জটিলতার চিকিৎসা করাতে
ঢাকায় মেয়ে রিমার বাসায় যান। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে তিনি ঢাকায় দেহান্তরিত হন।
তাদের বড়কন্যা রুবা লন্ডন হতে এসে এহিয়া ভাইকে মৌলভীবাজার
তাদের বাসায় নিয়ে যায়। ১৭ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার। আমার পত্নী ফেসবুক হতে খবর পান এহিয়া ভাই মৌলভীবাজার শহরে তার কন্যা রুবার বাসায়
বেড়াতে গিয়ে মারা গেছেন। মাত্র চার সাপ্তাহের ব্যবধানে আমার এই দুইজন শুভাকাঙ্খি
গুরুজন এভাবেই হারিয়ে যান। তাদের দুইজনকেই মৃত্যুর পরদিন দাউদপুর পারিবারিক কবরগায়
দাফন করা হয়। সিলেটে থাকায় ১৮ জানুয়ারি বাদ মাগরেব এহিয়া
ভাইয়ের দাফনে শরিক হবার সৌভাগ্য হয় আমার। সৌভাগ্য বললাম একারণে যে ঢাকায় বদলি হয়ে যাওয়ায় সিলেটে অনেক প্রিয়জনের মৃত্যু সংবাদ
পেয়েও শেষবিদায়ে অংশ নেওয়া আর সম্ভব হয়না। সেদিন আমার সব প্রিয় ভাতিজা রিপন ও ভাতিজি রুবা-রিমাদের সাথে অনেক দিন
পর একত্রে দেখা হয়। ভাতিজা রিপন জানাজার নামাজের পর মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখে
তাঁর আব্বার জন্য সবার কাছে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করে।
এই করোনার বছরে চাচাতো ভাই আব্দুস
সোবহান চৌধুরী (মছরু মিয়া) ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২রা
সেপ্টেম্বর পৃথিবী হতে বিদায় নেন। তার মৃত্যুর দুইতিন দিন আগে আমি সিলেটে ছিলাম।
বাড়ি থেকে তার মেয়ে ফোন করে জেফারের আম্মাকে জানালো তিনি কয়েকদিন ধরে
জ্বরাক্রান্ত। আমরা মনে করলাম সামান্য জ্বর, নিশ্চয় কিছুদিনের মধ্যে সেরে যাবে।
ঢাকায় আমি অফিসে বসা। হঠাৎ ভাতিজা রিপনের ফোন পাই, মছরু চাচা
পৃথিবীতে নেই। আমার ছোটভাই নিশাত বাড়িতে ছুটে গিয়ে দাফনের সব খবর জানায়।
তার জানাজায় প্রচুর মানুষের ঢল নামে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল সাতাত্তুর বছর। আমার জনম হতেই দাউদপুর বাড়িতে থেকে সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তাকে চাকুরি করতে
দেখি। তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী একজন নির্ভেজাল ভাল মানুষ। তার
একমাত্র পূত্র মাহফুজ চৌধুরী গাজি টিভিতে চাকুরি করে, কিছুদিন
আগে একজন মার্কিন সিটিজেন মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয়। আমি ঢাকায়
থাকায় মাহফুজের বিয়ে অনুষ্ঠান মিস করি।
কিছুদিন আগে কন্যার
বিয়ে সমাপন করে আমার দরগামহল্লার ফুফুতো ভাই মুফতি কমরুদ্দিন কয়সর করোনা
আক্রান্ত হয়ে বাহাত্তুর বছর বয়সে মারা যান। আমি ঢাকায় আসার টিকেট কাটতে গিয়ে শাহজালালের দরগা মাদ্রাসার একপ্রান্তে তাকে
দাঁড়ানো দেখি। পরে অনুশোচনা করি এজন্য যে ব্যস্ততার কারণে সেদিন তার সাথে কোন কথা বলতে পারি নি। এই দেখাই
ছিল তার সাথে আমার শেষ দেখা। কয়সর ভাই প্রাইমারি শিক্ষকতা ও
দরগার খাদেমি করে দরগামহল্লায় শান্তিময়
জীবন পার করেন। তাঁর অন্য তিনভাই বেশ অসুস্থ হলেও সুস্থ্য সবল কয়সর ভাই সবার আগেই
চলে যান।
এই একই দিনে একই মহামারিতে মাত্র
সাতান্ন বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান আমার চাচাতো এহিয়া ভাইয়ের
মেয়ে রিমার স্বামী গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বদরুল আলম চৌধুরী।
তার জন্ম ১৯৬২ সালে, পিতা আতাউর রহমান চৌধুরী ছিলেন সিলেট
সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার। আমি সিলেট শাখায় থাকাকালে আতাউর
রহমান চৌধুরীর সাথে প্রায়ই অফিসে দেখা হত। বিয়ানীবাজারের সাজিনাপুর গ্রামের
জাতক বদরুল আলম চৌধুরী ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। ঢাকার নিকুঞ্জ
আবাসিক এলাকার মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে মসজিদপাশের কবরগায়
তাকে দাফন করা হয়। তার সাথে আমার শেষ দেখা হয় তাদের নিকুঞ্জের বাসায়, প্রায় ছয় মাস
আগে ভাগ্নী পলিকে নিয়ে যখন গিয়েছিলাম। চারতলা মিলে এক সুরম্য বাসা,
অন্ডারগ্রাউন্ডে বাসার চারজন বাসিন্দার জন্য চারটি দামি গাড়ি রাখা। সেদিন তাকে বেশ
প্রশান্ত দেখায়। তিনি ছেলে আদিব ও মেয়ে
আদিবাকে লন্ডনে লেখাপড়া করান এবং দেশে এনে গার্মেন্টস
ব্যবসায় লাগিয়ে দেন। বললেন, আমি তাদেরে সবকিছু বুঝিয়ে দেই
এবং ওরাই ব্যবসা চালায়। তিনি ছিলেন বেশ বুদ্ধিমান এবং যে কোন
কাজ নিখুঁতভাবে করতে পারতেন। তাঁর অকালমৃত্যু আমাকে কেমন যেন হতভম্ব করে দেয়।
১০ নভেম্বর ২০২০। যে বসের হাতে
এই অফিসে যোগদান করে দুই বছর একসাথে কাজ করি সেই মহান ব্যক্তিত্ব মহাব্যবস্থাপক
আবু হাবিব খায়রুল কবির অবসরে চলে যান। কিছুদিন আগে খায়রুল কবির স্যার কভিড-১৯
আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ্য হন। অত্যন্ত ব্যক্তিত্ববান খায়রুল কবির স্যারের
বিদায়ে অফিসের সবাই শোকে ম্রিয়মান হন। সাধারণ সেবা ও উন্নয়ন বিভাগ হতে এবছর অবসর
নেয়া ফারুক হোসেন এজিএম ও ফারুক আহমদ পিও তিনজনকে একসাথে আমরা বিদায় সম্বর্ধনা
দেয়ার সিন্ধান্ত নেই। এমডি ও এএমমডি মহোদয়গণকে বিদায়-সভায় আসার জন্য আমরা আমন্ত্রণ
জানাই। এমডি আব্দুল হালিম চৌধুরী ব্যস্ততায় অপারগ হলেও দুইজন এএমডি শফিউল আলম খান
চৌধুরী এবং মোহাম্মদ আলী যোগদান করেন। এএমডি মোহাম্মদ আলীর পরামর্শে বিদায়সভা
দুইপর্বে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম পর্বে সকাল ১১টায় জিএসডিডি
অফিসে একই নামের দুইজন ফারুক সাহেবের জন্য আমরা বিদায়সভা করি। ফারুক হোসেন এজিএম
আসেননি, ফলে সবাই বেশ মনঃক্ষুন্ন হন। ভাগ্যবান ফারুক আহমদ পিও একাই সবার বিদায়ী
ভালবাসা গ্রহণ করেন। ছোটখাট ফারুক আহমদ দুইজন উচ্চশিক্ষিতা কন্যার বাবা, ময়মনসিংহ
জেলার কোন এক গ্রামে পৈত্রিক নিবাসে তাঁর মাছের খামার রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন পূবালী
ব্যাংক ময়মনসিংহ অঞ্চলের ইউনিয়নের নেতা ছিলেন।
বিকেল ২ঘটিকায় ঋণ বিভাগের
সম্মেলন কক্ষে মহাব্যবস্থাপক আবু হাবিব খায়রুল কবিরের বিদায়সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুইজন
এএমডি ছাড়াও কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক এই সভায় আসেন, তাঁরা জিএসডিডির সদ্য
দায়িত্বপ্রাপ্ত দিলীপ কুমার পাল, আহমদ এনায়েত মঞ্জুর, আব্দুহু রুহুল মাসিহ, মোহাম্মদ
ঈসা, দেওয়ান রুহুল আহসান, দেওয়ান জামিল মাসুদ, শাহনেওয়াজ চৌধুরী এবং এবিএম আব্দুস
সাত্তার। আমাদের উপমহাব্যবস্থাপক জগত চন্দ্র সাহা বেশ সুন্দরভাবে সভা পরিচালনা
করেন। নীলা সুলতানা চোখের জল ফেলে বক্তব্য রাখেন। আমিও খায়রুল স্যারের স্মৃতিচারণে
নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রাখি। এএমডি শফিউল আলম খান চৌধুরী বললেন, আমার বদলি হয়ে ফেলে
আসা শাখা ও আঞ্চলিক অফিসগুলোয় খায়রুল কবির অতীতে অফিস প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছে।
আমি তাঁর পিতৃ ও মাতৃ দুইকোল চিনি, এই দুই দিকেই তিনি কুলীন বংশের লোক। এএমডি মোহাম্মদ
আলী বিদায়ী স্যারকে অবসর জীবন চালনার কিছু দিক নির্দেশনা দান করেন। আবু হাবিব খায়রুল
কবির স্যার সেই সভায় তাঁর তেত্রিশ বছরের সুদীর্ঘ চাকুরি জীবনের অনেক স্মৃতিচারণ
করেন।
একটি বিষয় আমাকে বেশ পীড়া দেয়। এবছর সিলেটি মহাব্যবস্থাপক সিরাজুল হক চৌধুরীর চাকুরি একসাথে
তিন বছর বাড়িয়ে দেন এমডি আব্দুল হালিম চৌধুরী। আবু হাবিব খায়রুল
কবির স্যারের ছেলেরা এখনও শিক্ষারত, তাঁর চাকুরি দুই এক বছর বাড়ানো হলে পুরো
পরিবার উপকৃত হত। তাঁর লেখাপড়া, বিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা ঔ ডিগ্রি পাস জিএমের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। পূবালী ব্যাংকে দুই বছর অন্তর অন্তর
পদোন্নতি দেয়া হয়। মাত্র চার-পাঁচ জন ডিজিএমকে পদোন্নতি দিয়ে জিএম করা হয়। একজন
মহাব্যবস্থাপকের অবসরের পর তিন বছরের জন্য তাঁর চাকুরি বৃদ্ধি করার কারণে তিনবছর
অন্য একজন লোক মহাব্যবস্থাপকে পদোন্নতি হতে বঞ্চিত হবেন। মহাব্যবস্থাপকের নিচে
অন্ততঃ দুইজন উপমহাব্যবস্থাপক এবং তিন-চার জন সহকারী মহাব্যবস্থাপকও একই কারণে
পদোন্নতি পাবেন না। পিরামিড আকৃতির ব্যাংক প্রশাসনে এর প্রতিক্রিয়া অনেক নিচতলা
পর্যন্ত চলে যায়।
এমডি আব্দুল হালিম চৌধুরীর
যুক্তি নাকি এই স্পেশাল জি এম ছাড়া ব্যাংক চলবে না। পূবালী ব্যাংক দশ হাজার কর্মীবাহিনীর
এক বিশাল প্রাইভেট ব্যাংক। আমার চাকুরি জীবনে কত লোককে এখানে আগমন নির্গমন হতে দেখেছি কিন্তু কারও জন্য
পূবালী ব্যাংককে এক সেকেন্ডও থেমে যেতে দেখি নি। এমন কি
দেশবরেণ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, স্বনামধন্য ব্যবস্থাপনা
পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী চলে যাবার পরও ব্যাংক তাঁর নিজস্ব
গতিতেই চলেছে। আর ব্যাংকের একজন নগণ্য জিএম অবসরে চলে গেলে পূবালী ব্যাংক ভূপাতিত
হবে এমডি আব্দুল হালিম চৌধুরীর এইসব অপযুক্তি প্রদর্শন, অনেক লোককে বঞ্চিত করে
নিজের পছন্দের লোককে অন্যায়ভাবে সুবিধা প্রদান ছাড়া আর কিছু নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন