শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৬

শ্রীহট্টে বিজয়ীর বেশে শাহজালাল ও মুসলিম বাহিনী

কবি, লেখক ও ব্লগার ইসফাক কুরেশী ও তাঁর পত্নী ডাঃ নুরজাহান বেগম চৌধুরী
১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে তথা ৭০৩ হিজরির ২৬শে শাওয়াল তারিখে শাহজালাল(রঃ)  তাঁর মুসলিম বাহিনী বিজয়ীর বেশে হজরতের আধ্যাত্মিক শক্তিবলে সুরমা নদী পার হয়ে শ্রীহট্ট শহরে প্রবেশ করেন সেই থেকে ২৬শে শাওয়াল প্রতি বৎসর সিলেট বিজয় উৎসব পালিত হয়ে আসছে। সিলেট বিজয় উৎসব পাঠান মোঘল আমলে সিলেটের ফৌজদারগন কতৃক যথাযত সম্মানের সহিত পালন করতেন মোঘল ফৌজদার ফরহাদ খার আমলে মহা আয়োজনে সিলেট বিজয় উৎসব বা উরস পালন করা হত। 
সিলেটের দ্বিতীয় ইংলিশ রেসিডেন্স লিন্ডসের আত্মজীবনী হতে জানা যায় বৃটিশ আমলে বিজাতীয় ইংরেজ  রেসিডেন্সগন দিনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন 
শাহজালাল তাঁর ৩৬০ আউলিয়া মুসলিম বাহিনী নিয়ে নদী পার হয়ে যে ঘাট দিয়ে সিলেটে প্রবেশ করেন তাহা আজও শেখঘাট নামে পরিচিত সিলেটের প্রবেশপথে শেষ বাধা হিসাবে রাজা গৌড়গোবিন্দ বড় বড় পাথর ফেলে প্রতিরোধ গড়তে চাইলেন শাহজালাল তাঁর হাতের লাটি দিয়ে পাতরে আঘাত করে বললেন সিল হট, পাতর সরে গেল ধারনা করা হয় এই 'সিলহট' শব্দ হতে সিলেট নামের উৎপত্তি হয়েছে
মুসলিম আক্রমনে হিন্দু রাজশক্তির পতনে রাজা গৌড়গোবিন্দের দেবগৃহের শিব-বিগ্রহাদি ইতিপূর্বে স্থানান্তরিত হয়  রাজপ্রসাদ জনশূন্য হয়ে যায় 
সিলেটে প্রবেশ করে শাহজালাল(রঃ) একটানা তিনদিন আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করেন তিনি প্রথমে বর্তমান চৌহাট্টা সংলগ্ন মিনারের টিলায় অবস্থিত রাজবাড়ি আক্রমনের আদেশ দেন আদেশ তখনই পালিত হয় মিনারের উচ্চ টিলার উপরে নির্মিত প্রাচীন রাজপ্রসাদ ও রাজমন্দির বিদ্ধস্ত হয় কথিত আছে যে হজরতের নির্দেশে তার শিষ্য শাহনুর আজান দিলে সাত-তলা সুউচ্চ ভবন আজান ধ্বনীর প্রতিঘাতে ভেঙ্গে পড়ে সেই টিলা এখনও মিনারার টিলা নামে পরিচিত সিলেটের জনপ্রিয় লোকসঙ্গীতে বিষয়টির বিবরন এসেছে এভাবেসিলেট পরথম আজান ধ্বনী বাবায় দিয়াছে, সেই আজানে পাতর গইলা পানি হইয়াছে
অতঃপর মুসলিম বাহিনী আম্বরখানার উত্তরে রাজা গৌড়গোবিন্দের গড়দোয়ার দুর্গ প্রসাদ আক্রমন করেন এই দুর্গ প্রাসাদ ইতিপূর্বে জনশূন্য হয়ে পড়ায় বাঁধা দিবার মত কোন শাস্ত্রি সিপাই ছিল না গৌড়গোবিন্দের ধনভান্ডার সহ  দুর্গ প্রসাদ মুসলমানদের অধিকারে চলে গেল লোক কবির ভাষায়উঠিলো জয়ধ্বনী আকাশ বাতাস ছাইয়া / দোয়া কর মোরে হজরত শাহজালাল আউলিয়া 
এভাবে বিনাযুদ্ধে বিনা রক্তপাতে বঙ্গেশ্বর শামস উদ্দিন ফিরুজের আমলে ৭০৩ হিজরি সনের ২৬শে শাওয়াল শাহজালালের আধ্যাত্মিক শক্তিবলে সেনাপতি সিকান্দর শাহ গাজির সেনানায়কত্বে শ্রীহট্টে প্রথম ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হল ১২০২ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির লক্ষনাবতি তথা পশ্চিম-উত্তর বঙ্গ জয়ের ১০১ বৎসর পর ১৩০৩ খ্রিস্টব্দে বাংলার পূর্ব সীমান্তের ঈশান কোনে সিলেটে মুসলিম বিজয় সুচিত হয়। এই বিজয়ের মাধ্যমে মুসলমানদের সারাটা বাঙ্গালা অঞ্চল বিজয় সমাপন হয়। 
প্রত্ন সূত্রঃ ১৫১২ সালের প্রাচীন শিলালিপি ঢাকা জাদুঘরে সংরক্ষিত।
সূত্রগ্রন্থঃ 'শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত" অচ্যুত চরন চৌধুরী প্রকাশঃ ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ। "হজরত শাহজালাল(রঃ)" আব্দুল মালিক চৌধুরী প্রকাশঃ ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ। "জালালাবাদের কথা" দেওয়ান নুরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রকাশঃ ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন