বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৬

তাদের হাতে রাষ্ট্র নিরাপদ নয়


তাদের হাতে রাষ্ট্র নিরাপদ নয়
চৌধুরী ইসফাকুর রহমান কোরেশী (সেফাক)

ডঃ খন্দকার মোশারফ হোসেন সাবেক বিএনপি সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও বর্তমান বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক নেতা। তাঁর বক্তব্য হচ্ছে “ঋণখেলাপী ও বিলখেলাপীদের নির্বাচনের অংশ গ্রহনে বাঁধাপ্রদান আমি নীতিগত ভাবে সমর্থন করিনা, এগুলো উদ্ধারের দায়িত্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের, নির্বাচনকে সামনে রেখে এগুলোা উদ্ধারে দায়িত্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের, নির্বাচনকে সামনে রেখে এগুলো উদ্ধারের তৎপরতা আমার কাম্য নয়।” তার এই বক্তব্যে আমি বিস্মিত হয়েছি, সম্ভবত সারা দেশের প্রতিটি মানুষই বিস্মিত হবে। ব্যাংকের টাকার মালিক ব্যাংক নয়, দেশের জনগণ। লক্ষ লক্ষ মানুষের বিন্দু বিন্দু সঞ্চয় একত্রিত হয়ে এক সময় ব্যাংকের বিশাল ডিপোজিট ভান্ডার গড়ে ওঠে। ব্যাংক হচ্ছে আমানতকারী, আর এই আমানতের হেফাজতকারী সরকারও। মানুষের টাকা যখন তার মানিব্যাগে পড়ে থাকে তখন উক্ত টাকা রাষ্ট্রের কোন কাজে আসেনা, আর যখনই ব্যাংক হিসাবে চলে আসে তখনই রাষ্ট্রের পুঁজিতে পরিণত হয়। এই টাকা দিয়ে গড়ে উঠে শিল্প কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আমদানী-রপ্তানী ব্যবসা ও সেবা প্রতিষ্ঠান, দূরীভূত হয় দারিদ্র ও বেকারত্ব। মানুষের এই টাকা যিনি আত্মসাত করে বসে আছেন তিনি নির্বাচিত হলে তার হাতে জনগণের স্বার্থ কিভাবে রক্ষিত হবে। ঋণখেলাপীরা হচ্ছে দেউলিয়া লোক, দেউলিয়া লোকের হাতে কোন দায়িত্ব অর্পণ মোটেও নিরাপদ নয়। দেউলিয়া লোক তার দেউলিয়াত্বের কারণে সে সুযোগ পেলেই রাষ্ট্রিয় সহায় সম্পদ গিলে ফেলতে পারে। তাছাড়া একজন ঋণখেলাপী লোক শর্ত ভঙ্গকারী ব্যক্তি। তিনি অসংখ্য শর্ত মেনে নিয়ে চুক্তিপত্রে সই করে ঋণ নেন। যেমন এই ধরণের শর্তও থাকে যে ঋণ গ্রহণকারী ঋণের টাকা নিদৃষ্ট ব্যবসা ব্যতিত অন্য কোন কাজে ব্যবহার করিবেন না, অথচ তিনি ঋণের টাকা উক্ত ব্যবসায়ে ব্যবহার না করে বাড়ি গাড়ি ক্রয়ে, কিংবা বিলাস বসনে অথবা জুয়া-মদে খরচ করে দিলেন, আর এধরণের লোকেরাই এক সময় ঋণখেলাপীতে পরিণত হয়। একজন চুক্তি বরখেলাপকারী লোক কোনক্রমেই একজন সৎলোক হতে পারেননা। বাংলাদেশ নামক গরীব রাষ্ট্রটির সর্বাধিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধাভোগকারী একজন লোক হচ্ছেন ডঃ মোশাররফ হোসেন। রাষ্ট্রের স্বার্থের প্রতি তার এই কটাক্ষপূর্ণ বক্তব্য অত্যন্ত হীন ও নীচ মনমানসিকতার পরিচয় বহন করে। এক সময়ের এই প্রভাবশালী বিএনপি মন্ত্রী ১/১১ এর পর দীর্ঘদিন দুর্নীতির অভিযোগে জেলে অন্তরীণ থেকে বের হয়ে দলের হাল ধরেন। দীর্ঘদিন জেল খেটেও মনে হচ্ছে তার কোন পরিবর্তন হয়নি।

বিলখেলাপী কারা হন, আমাদের মত সাধারণ মানুষের বিলখোলাপী হবার কোন রাস্তা নেই। তিন মাস বিদ্যুৎবিল পরিশোধ না হলেই লাইন কেটে ফেলা হয়, আর টেলিফোল বিল বাসায় আসেনা, টিএন্ডটি অফিস হতে অনেক কষ্ট করে তৈরি করে নিয়ে এসে পরিশোধ করতে হয়। টিন্ডটি অফিস হতে বিল না আসার কারণে ভুলবসতঃ একবার তিন মাসের বিল পরিশোধ না হওয়ায় লাইন কেটে দেওয়া হয়। অথচ আমার অফিস পূবারী ব্যাংক লিমিটেড শাহী ঈদগাহ শাখা আমার টেলিফোন বিল পরিশোধ করে থাকে । সাধারণত: বড় বড় প্রতিষ্ঠনের মালিকরাই বিলখেলাপী হন। এরা লক্ষ লক্ষ টাকার বিল খেলাপী হলেও কারও সাধ্য নেই লইন কেটে ফেলার অথবা বিল আদায় করার। এদের খুঁটির জোর এত শক্ত যে এদের সাথে ঘাঁটাঘাঁটি করলে চাকুরী থাকবেনা অথবা দূরে কোথায়ও বদলি হয়ে চলে যেতে হবে। এরা ভোটে  নির্বাচিত হলে আনাদায়ী আরও বাড়বে, কিছুতেই কমবেনা। যারা রাষ্ট্রের পাওনা পরিশোধ করেনা-তাদের হাতে রাষ্ট্রের ও জনগণের স্বার্থ কোন ক্রমেই নিরাপদ নয়।
ডঃ খন্দকার মোশাররফ হোসেনের হয়ত অনেক ঋণখেলাপী ও বিল খেলাপী বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় অথবা মনোনয়ন বতিল হওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে এই মন্তব্য করেছে। ডঃ খন্দকার মোশাররফ হোসেন এদেশের একজন প্রভাবশালী আমলা ছিলেন, মন্ত্রী হয়েছেন। এই রাষ্ট্র তাকে অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়েছে, অথচ বিল খেলাপী ও ঋণ খেলাপীদের প্রতি তার এ ধরণের সহানভূতি রাষ্ট্রের প্রতি একধরণের বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর। বিল খেলাপী ও ঋণখেলাপীদের প্রতি যেকোন ধরণের সহায়নুভূতি প্রদর্শন দেশে লুটেরা ও দুষ্টলোকদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে এবং দুর্নীতি বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

[প্রকাশ কাল: দৈনিক সিলেটের ডাক, ২৪ ডিসেম্বর, ২০০৮ইং]



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন