বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০২০

মালয়েশিয়ার ডায়রী পর্ব- দুই


মালয়েশিয়ার ডায়রী পর্ব- দুই

৯ জুলাই ২০১৩ সাল, মঙ্গলবার। সকালের খাবার খেয়ে কুয়ালামপুরের একটি রাস্থা বরাবর হাঁটতে থাকি। রাস্থার একদিকে ট্রেনের ঊড়াল পথ, অন্যপাশে ওবিসি ব্যাংক। ব্যাংকটি পরিদর্শনে ডুকে যাই। দুইজন হাফপ্যান্ট পরা চীনা মেয়ে দরজার সামনে বসে আছে। I am a bank manager and came from Bangladesh, I want to visit your bank বলতেই তারা আমাকে ভিতরে নিয়ে যায়। ভিতরে অনেকগুলো এটিএম বুথ বসানো কিন্তু নগদ লেনদেনের কোন ক্যাশ কাউন্টার নেই। কাস্টমাররা এটিএমের মাধ্যমে নিজেরাই সব লেনদেন সম্পন্ন করছেন। ব্যাংকে এই দুই মেয়ে ছাড়া তেমন কোন কর্মচারি নেই। বুফে খাবারের মত এখানে সেলফ সার্ভিস। এটিএম বুথে ডুকে কাস্টমারগন নিজেরা নিজেদের সব ব্যাংকিং কাজ সম্পন্ন করে নিচ্ছেন। অফিসের লোকজনের দরকার নেই, সব কাজ অটোমেটেড সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে। ঋনবিভাগে আমাদের মত এত কাগজপত্রের জটিলতা নেই। সেদিন বুঝলাম ডিজিটাল হতে আমাদের ব্যাংককে আর অনেক পথ পারি দিতে হবে।

তারপর আমরা একটি প্রাগৈতিহাসিক পাহাড়ি বাটুগোহা পরিদর্শন করি। বাটুগোহার সামনে পাহাড়ের পাদদেশের মঞ্চে প্রায় পনের ফুট প্রশস্ত পঞ্চাশ ফুট উচ্চ একটি বিশাল দেবমূর্তি রয়েছে। বাটুগোহার অবস্থান কুয়ালালামপুরের সন্নিকটে। গুনেগুনে ১৭২টি সিড়ি বেয়ে আমরা গোহার সামনের খোলা চত্বরে যাই। এই চত্বরে হকাররা পানি, চকলেট ও বিস্কুট বিক্রি করছেন। এই চত্বর হতে সামনে এগিয়ে গিয়ে ৬/৭ সিড়ি নিচে নেমে শক্ত প্রাকৃতিক শিলার বাটুগোহায় প্রবেশ করি। গোহাটির আয়তন অনুমানিক ১০০ফুট x ১০০ফুট। গোহার খাদময় পাতুরে ছাদে প্রচুর পাখির বাসা, ভর দুপুরেও এখানে আধো আধো আলোছায়ার মায়া ছড়িয়ে আছে। এই গোহার শেষপ্রান্তে গিয়ে ১৪/১৫টি সিড়িবেয়ে উপরে উঠে আরও বৃহদাকার আরেকটি গোহায় প্রবেশ করি। এই গোহাটির আয়তন হবে অনুমানিক ১০০ফুট x ১৬০ফুট। এখানে রয়েছে মালয়ীদের প্রাচীন হিন্দু মন্দির বা রথ। এরথে স্থাপিত আছে অসংখ্য ছোট ছোট দেবদেবীর মূর্তি। এই গোহাটির উপরের ছাদে একটি বড় সুড়ঙ্গ। এই সুড়ংপথে দুপুরের ঝলমলে রোদ এসে গোহাটিকে সুন্দর আলোয় ভরে দিচ্ছে। ছাদের এই সুড়ঙ্গ না থাকলে গোহাটি হত ঘিসঘিসে অন্ধকার। প্রাচীন মালয়ীদের এই অপরূপ তীর্থস্থান দেখানোর জন্য বিধাতাকে প্রানভরে ধন্যবাদ জানাই। সময় নেই, নামতে হবে তাই নেমে আসি। বাটুগোহার উচ্চতা দেখে অনেকে সেখানে বেয়ে উঠতে সাহস পাননা এবং প্রাগৈতিহাসিক মানুষের আশ্রয়স্থল এবং তীর্থস্থান দেখার অভিঞ্জতা হতে চিরবঞ্চিত হন। 


ড্রাইভার সিবা একজন ভারতীয় তামিল। চীনা ড্রাইভার সীকের ইংরেজি ঞ্জান আকার ইঙ্গিতের মধ্যে সীমিত কিন্তু সিবা ইংলিশ ভাল বুঝেন ও বলতে পারেন। তিনি আমাদেরকে মালয়েশিয়া প্রবেশের দিন কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর হতে বুকিতবিনতাং তামিলহোটেলে পৌছে দিয়েছিলেন। তিনি দেখতে অনেকটা আমার চাচাতো ভাই পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী এম.আর.কুরেশী ওরফে মুরাদ ভাইয়ের মত, গায়ের রঙ্গ কালো অথচ চেহারা মায়াবী। তার কন্ঠস্বর স্পষ্ট ভারতীয় এবং কেমন যেন আপন মনে হচ্ছিলো। বিকাল ৫টায় তিনি আমাদেরকে মালয়েশিয়া ছাড়তে বিমানবন্দরে নিয়ে যান। তার ধারনা আমরা পুত্রজায়া দেখিনি। বিদেশী মেহমানরা তার দেশের অপরূপ সুন্দর শহর পুত্রজায়া না দেখে ফিরে যাবে তা তিনি মেনে নিতে পারলেন না। তাই তিনি আমাদেরকে বিনেখরচে পুত্রজায়া দেখিয়ে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। আবার পুত্রজায়া দেখার আনন্দে আমরা নিরব থাকি, বলতে যাইনি পুত্রজায়া আমাদের দেখা হয়ে গেছে। পুত্রজায়ার ভিতর ধীরগতিতে চক্কর মেরে তিনি একটি মহাসড়ক রিসোর্টে কার থামান। গাড়িতে আমি সিবার বামপাশে বসে খুশগল্প করি। আমি লেখালেখি করি জেনে তার উৎসাহ বেড়ে যায়। শোনান তার পারিবারিক কাহিনী- বউ তামিল গৃহবধু, পুত্র গ্র্যাজুয়েট এবং কন্যা উচ্চশিক্ষারতা। সিবা বললেন, পিতামহের জন্মস্থান ভারতের তামিলনাড়ু কখনও যাইনি, গিয়েছি একটিমাত্র দেশে তা পাশের দেশ সিঙ্গাপুর। আলাপে বুঝলাম সিবা কেবল তার দেশের মালয় উপদ্বীপের খবর রাখেন। বোর্নিও দ্বীপে অবস্থিত মালয়েশিয়ার বিশাল এলাকা সারাওয়াক সম্পর্কে তার কোন ধারনাই নেই। একসময় আমি সিবার কাছে মালয়েশিয়ার চীনা, মালয়ী এবং তামিলদের মধ্যে অন্তঃবিবাহ হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি জবাব দেন It is very very rare case’।বার সিবা তার জীবনের কাহিনী বলেন। তার শৈশবে মালয়েশিয়া এত উন্নত ছিলনা। মানুষ ছিল গরিব ও শতধা বিভক্ত। তারা সবসময় পরস্পর হানাহানি ও রক্তপাতে লিপ্ত ছিল। এমন সময় একজন মহান নেতা এলেন, যার পূর্বপুরুষরা কয়েক প্রজন্ম আগে বাংলাদেশ হতে এসে মালয়ে বসতি স্থাপন করেন। যিনি শতধা বিভক্ত মালয়েশিয়াবাসীকে একসুত্রে গেঁথে দেন। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, তামিল, চীনা, মালয়ী সব তার নেতৃত্বে এক ছাতার ছায়ায় আশ্রয় নেয়। তিনি মালয়েশিয়াকে আজকের এই উন্নতির স্বর্নশিখরে নিয়ে আসেন। সিবা বললেন, তিনি বিশ্বের একজন শ্রদ্ধাভাজন নেতা মহাতির মোহাম্মদ।

তামিল গাড়িচালক সিবা আমার মত একজন নগন্য লেখককে অতিগুরুত্ব দিয়ে গল্প বলে যাচ্ছেন, আর আমি শুনছি ধ্যানভরে। তিনি বলছেন-“Chinese people control economy and business. They are sincere and industrious. Maloyan muslim people control politics and administration. But Tamil hindus peoples are swimming in wine.”চালক সিবা খুব সংক্ষেপে মালয়েশিয়ার তিন জাতির বৈশিষ্ট বলে দেন এবং নিজ জাতির ব্যাপারে হতাশাই ব্যক্ত করেন।

সিবাকে বিদায় জানিয়ে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ঢুকে প্লেনে উঠার অপেক্ষা রই। রাত ৮টায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনের উড়ালযান সাড়ে তিনশত যাত্রি নিয়ে উড়াল দেয়। শতকরা নব্বই ভাগ যাত্রিই বাংলাদেশী। প্লেনের ভিতর প্রচুর হৈ-চৈ হট্টগোল, যেন বাংলাদেশের কোন এক গ্রাম্যবাজার। পাম তৈলে রান্না করা খাবার আসে। নতুন তেলের গন্ধ ভাল লাগেনি। তবুও নতুনত্বের স্বাদ নিতে সব খাবার চেখে দেখি। রাত ১১টায় ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে বের হয়েই সিলেটের বাস ধরি। ঢাকায় থাকা যাবেনা, কারন পরদিনই পবিত্র রমজান। ঠান্ডা বাসে চাদর মুড়ি দিয়ে গভীর ঘুমে রাত পার করে কদমতলী নেমে চারজন পর্যটক নিজনিজ বাসায় চলে যাই।

মালয়েশিয়ার আয়তন ১,২৭,০০০ বর্গমাইল, যা বাংলাদেশের চেয়ে ২.২৯ গুন বড়, অথচ দেশটির লোকসংখ্যা মাত্র ৩ কোটি। এই তিনকোটি লোকের মধ্যে বিদেশীদের সংখ্যা ১৬% অর্থাৎ ৪৮ লক্ষ। বিদেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আদমের দল বাংলাদেশী যারা সংখ্যায় পনের লক্ষ। মালয়েশিয়ায় ভারত পাকিস্তান নেপাল ও মিয়ানমারের লোকজনও রয়েছেন। মালয়েশিয়া আমাদের সোয়া দুইগুন বড় দেশ হলেও দেশটির জনসংখ্যা আমাদের চেয়ে অনেক কম, আমাদের জনসংখ্যার মাত্র ১৯%। তাই জনপ্রতি সম্পদের পরিমান আমাদের জনপ্রতি তুলনায় কয়েকগুন বেশী। মালয়েশিয়ার প্রধান ও বৃহৎ এলাকা মালয় উপদ্বীপের দক্ষিনাঞ্চল। এই উপদ্বীপের উত্তরাঞ্চল থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমারের অধিকারে রয়েছে। মালয়েশিয়ার আরেক এলাকা বোর্নিও দ্বীপের উত্তারঞ্চল, যা সারাওয়াক নামে পরিচিত। বোর্নিও দ্বীপ তিনটি দেশে বিভক্ত- ব্রুনাই, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া। আমরা সারাওয়াক, পেনাং কিংবা লাংতুরাই যাবার সময় পাইনি। আমাদের সফর কেবল মালয় উপদ্বীপের কুয়ালালামপুরের আশপাশে সীমাবদ্ধ ছিল।

আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাতির মোহাম্মদ সম্পর্কে খানিক আলোচনা করে এই সফরনামা সমাপ্ত করব। মাহাতির মোহাম্মদের পিতামহ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়নের ফুলগাজিপাড়া গ্রামের জাতক ছিলেন। তিনি জীবনের ডাকে দুই প্রজন্ম আগে বাংলাদেশ থেকে মালয়শিয়ায় পারি জমান। 

আধুনিক মালয়েশিয়ার দিকে তাকালে দেখা যায় বিশাল বিশাল উঁচু কারুকার্য্যময় অট্টালিকা, দুনিয়ার সেরা বিপনিবিতান। কি না আছে মালয়েশিয়ায় ? অথচ খুব বেশী সময় নয় যখন আর দশটা উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে খুব যে একটা এগিয়ে ছিল মালয়েশিয়া। একজন মাত্র মানুষের হাতে রূপকথার গল্পের মত মাহাথির মোহাম্মদ পালটে দিলেন গোটা মালয়েশিয়াকে। ১৯৫৭ সালে বৃটিশ শাসন হতে মুক্ত হয়ে মালয়েশিয়া ছিল দরিদ্রপীড়িত বৃক্ষমানবের দেশ। দারিদ্রের সঙ্গে ছিল নিরক্ষরতা। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী দেশটিতে রোপন করেন ঐক্যের বীজ। তিনি যে ধারার সূচনা করেন তা থেকে বিচ্যুত হননি তার উত্তরসূরী আব্দুর রাজ্জাক, টংকু ইসমাইল এবং ডাঃ মাহাথির বিন মোহাম্মদ। শেষোক্ত জন আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি ও রূপকার হিসাবে পৃথিবীতে নন্দিত এবং প্রশংসিত। তার হাত ধরে মালয়েশিয়া পৌঁছে গেছে উন্নত বিশ্বের তালিকায়। ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদকে বলা হয় এশিয়ার শ্রেষ্টতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার এবং মুসলিম বিশ্বের বিবেক।  মাহাথির ছিলেন তার দেশের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী। সত্য কখনও চাপা দিয়ে রাখা যায়না- একথাটাই তার কাজে ও কথায় ফুটে উঠেছে। ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদের জন্ম ১৯২৫ সালের ২০ ডিসেম্বর। তিনি ছিলেন পিতামাতার নয় সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ। তার পিতা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। মেধাবী ছাত্র হিসাবে তার পছন্দের বিষয় ছিল আইনবিদ্যা কিন্তু সরকার তাকে পরামর্শ দেয় ডাক্তার হবার। তাই তিনি সিঙ্গাপুরের কিংএডওয়ার্ড সেভেন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালের ৫ আগষ্ট তিনি বিয়ে করেন। কিছুদিন সরকারী চাকুরী করার পর তা ছেড়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে তার নিজ জন্মস্থান আলোরসেতার এলাকায় চলে আসেন। এখানে এসে তিনি বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডে অংশ নেন। ঐ এলাকায় তিনি একটি প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে তুলেন। এটাই ছিল এ এলাকায় কোন মালয় পরিচালিত প্রথম হাসপাতাল। মাহাতিরের রক্তে মিশে ছিল দেশপ্রেম আর রাজনীতি। তিনি ১৯৬৪ সালে তার এলাকা থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হলে কি হবে, তিনি তার দলের অনেক নীতির সঙ্গে একমত হতে পারেননি। ১৯৬৯ সামে তিনি একটি বই লিখেন, যার নাম-‘মালয়ীদের উভয়সংকট’। বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর তিনি তার পার্টির ভূলক্রুটির সমালোচনা করে দলীয় প্রেসিডেন্ট টেংকু আব্দুর রহমানের কাছে একটি চিঠি লিখেন। এরফলে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। তিনি এবার তার চিকিৎসা পেশায় ফিরে গেলেও অনেক ঘটনার পর ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ পার্টিতে আবার ফিরে আসেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৪ সালে এমপি নির্বাচিত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী হন। শিক্ষামন্ত্রী হয়ে তিনি ঘোষনা দেন তার নামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্টানের নামকরন করা যাবেনা। এইধারা তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েও অব্যাহত রাখেন। তার কোন ছবি শিক্ষা প্রতিষ্টানে কিংবা সরকারী অফিসে টাঙ্গানো যাবেনা বলেও তিনি নির্দেশ দেন। মালয়েশিয়াকে বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা সংস্কার হচ্ছে মাহাথিরের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। ১৯৭৫ সালে মাহাতির পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তুন হোসেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। ১৯৯১ সালের ১৬ আগষ্ট ৫৫ বছর বয়সে ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং একটানা ২২ বৎসর ক্ষমতায় থাকার পর ৭৭ বছর বয়সে ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবর স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ও রাজনীতি থেকে বিদায় নেন। তার সফল নেতৃত্ব, নির্ভেজাল দেশাত্মবোধ আর দূরদৃষ্টি পশ্চাৎপদ মালয়েশিয়াকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ আধুনিক মালয়েশিয়ায় পরিনত করেছে। সেইসাথে তার প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব ও সাহা তাকে বিশ্বনেতার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। সিবা ড্রাইভারের কাছে জানতে পারি তিনি বর্তমানে পুত্রজায়ায় অবসর জীবনযাপন করছেন।

মালয়েশিয়ার জনসংখ্যার ৬৯% মালয়ান। তারা মালয়েশিয়ার আদি ভূমিপুত্র। ২৩% চাইনিজ, ৭% ভারতীয় এবং ১% অন্যান্য। এখানে ধর্মের বিন্যাসও বিচিত্র। জনসংখ্যার ৬১% মুসলিম, ২০%বৌদ্ধ, ১০% খ্রীস্টান, ৭% হিন্দু এবং ২% অন্যান্য। ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির তিনটি নৃতাত্বিক জনগোষ্টির দেশ মালয়েশিয়াকে মাহাথির মোহাম্মদ এক সম্মিলিত মানব বাগানে পরিনত করেন।

মাহাথির মোহাম্মদ মুসলিম বিশ্বের একমাত্র নেতা যিনি আজীবন নির্বাচিত হতেন ও ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতার লোভে অন্ধ হননি এবং স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হতে অবসর নেন। সিরিয়ার হাফিজ আল আসাদদের মত ক্ষমতার লোভে দেশে রক্তগঙ্গা প্রবাহিত করেননি। তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মালয়েশিয়া সফরের ইতিকথা সমাপ্ত করলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন