এক
জানিনা কেমন আছ তুমি,
হে জননী জন্মভুমি।
তোমার মাতৃক্রোড় ছেড়ে,
দূর হতে দূরে,
দেশ-দেশান্তরে,
আপনজন ফেলে,
আছি একা, একাকী এই বরফের দেশে,
হিমঠান্ডা শীতের প্রকোপে,
তোমার জন্য প্রাণ, কাঁদে বারে বারে,
দেখিনি, তোমারে আমি বহুযুগ ধরে।
তোমার মাতৃক্রোড় ছেড়ে,
দূর হতে দূরে,
দেশ-দেশান্তরে,
আপনজন ফেলে,
আছি একা, একাকী এই বরফের দেশে,
হিমঠান্ডা শীতের প্রকোপে,
তোমার জন্য প্রাণ, কাঁদে বারে বারে,
দেখিনি, তোমারে আমি বহুযুগ ধরে।
দুই
তোমার লাল হলুদ মৃত্তিকায়,
কাঁকর বিছানো রাস্তায়,
চরণচিহ্ন কত যে আমার,
কোলাহল নৃত্য করেছে কতবার,
মাটির সোঁদাল গন্ধ শুঁকে শুঁকে,
হিসেব রাখিনি যে তার।
চরণচিহ্ন কত যে আমার,
কোলাহল নৃত্য করেছে কতবার,
মাটির সোঁদাল গন্ধ শুঁকে শুঁকে,
হিসেব রাখিনি যে তার।
তিন
বেয়ে উঠেছি কত টিলার শিখরে,
বাতাসের গুন গুন প্রবাহ সুরে।
চা-বাগানে, রবার বনে,
ছায়াবৃক্ষের পাতা ঝরে।
নির্বাক থেমেছি কত,
বনানীর পুস্পকুঞ্জ পুরে।
আমাকে হাতছানি দিত
টিলা, ছড়া, ঘাস, বনফুল।
কত যে মেখেছি গায়ে
এই বাংলায় কাদা, মাটি, ধূল।
বেয়ে উঠেছি কত টিলার শিখরে,
বাতাসের গুন গুন প্রবাহ সুরে।
চা-বাগানে, রবার বনে,
ছায়াবৃক্ষের পাতা ঝরে।
নির্বাক থেমেছি কত,
বনানীর পুস্পকুঞ্জ পুরে।
আমাকে হাতছানি দিত
টিলা, ছড়া, ঘাস, বনফুল।
কত যে মেখেছি গায়ে
এই বাংলায় কাদা, মাটি, ধূল।

চার
চৈত্রসংক্রান্তি কালে,যেতাম পূজোর মেলায়।
জ্বলন্ত অঙ্গারে পুরোহিত হেঁটে যায়,
পীঠে বরশী গাঁথে চড়ক পুজায়,
সাহসী পুজারীরা শুন্যে দোল খায়।
আমরাও উল্লাসে দোল খেতাম,
কাটের নাগরদোলায়।
ঝুনঝুনি, ফরফরি, বাঁশের বাঁশি
কত কি যে কেনা হত হায়।
দানবীর বাবার টাকায়,
শোধ করা হয়নি, আজও তাঁর দ্বায়।
পাঁচ
শীতের কুয়াশা ভেজা নিস্তেজ বাতাসে,
রঙ্গীন ঘুড়ি উড়ায়ে আকাশে,
ছুটিতাম ধানহীন ন্যাড়া ভরা মাঠে।
কাঁচের গুড়ো বেলমের আটায়,
মাখিয়ে সারাটা সুতায়,
মেতে উঠতাম ঘুড়ি নিয়ে,
সূতা কাটা-কাটি খেলায়,
দিগন্থহীন হাওর তল্লাটে।
রঙ্গীন ঘুড়ি উড়ায়ে আকাশে,
ছুটিতাম ধানহীন ন্যাড়া ভরা মাঠে।
কাঁচের গুড়ো বেলমের আটায়,
মাখিয়ে সারাটা সুতায়,
মেতে উঠতাম ঘুড়ি নিয়ে,
সূতা কাটা-কাটি খেলায়,
দিগন্থহীন হাওর তল্লাটে।
ছয়
পাইন, আঙ্গুরলতা, চেরিগাছ ভূলে,
আজও মনে পড়ে,
ঝাঁকুনি খেয়ে পাকাকূল ঝরে।
শিশুরা কুড়ায়ে কুল,
শর্ষেতেল মশলা লবণ দিয়ে,
ঘুটনীতে ঘুটে খায়,
মজার চাটনি করে।
পাইন, আঙ্গুরলতা, চেরিগাছ ভূলে,
আজও মনে পড়ে,
ঝাঁকুনি খেয়ে পাকাকূল ঝরে।
শিশুরা কুড়ায়ে কুল,
শর্ষেতেল মশলা লবণ দিয়ে,
ঘুটনীতে ঘুটে খায়,
মজার চাটনি করে।
সাত
ভূলি নাই, এয়ারগান নিয়ে,
পাখি শিকারে গিয়ে,
দেখেছি, টিলার ফাঁকে ফাঁকে,
ঝরিতেছে কত কালোজাম,
উপত্যকায় লাল লাল আম।
উড়ছে শিমুল তুলা,
বসন্তের নরম বাতাসে,
ডালে ডালে থোকা থোকা লটকন হাসে।
ভূলি নাই, এয়ারগান নিয়ে,
পাখি শিকারে গিয়ে,
দেখেছি, টিলার ফাঁকে ফাঁকে,
ঝরিতেছে কত কালোজাম,
উপত্যকায় লাল লাল আম।
উড়ছে শিমুল তুলা,
বসন্তের নরম বাতাসে,
ডালে ডালে থোকা থোকা লটকন হাসে।
আট
আমাকে সুদূর নির্বাসনে রেখে,
কত বসন্ত বাংলায়, এলো আর গেল,
আহা, শুনিনি কুকিলের কুহুকুহু ডাক,
বহুকাল বহু বসন্ত ধরে।
অথচ একদিন বাংলার মধুভরা বুকে,
কুকিলের ডাক শুনে শুনে।
মনটা কত যে হারিয়ে যেত,
কমলালেবু সাতকরা আগরের বনে,
টিয়ে ভরা চিরসবুজ চায়ের বাগানে।
আমাকে সুদূর নির্বাসনে রেখে,
কত বসন্ত বাংলায়, এলো আর গেল,
আহা, শুনিনি কুকিলের কুহুকুহু ডাক,
বহুকাল বহু বসন্ত ধরে।
অথচ একদিন বাংলার মধুভরা বুকে,
কুকিলের ডাক শুনে শুনে।
মনটা কত যে হারিয়ে যেত,
কমলালেবু সাতকরা আগরের বনে,
টিয়ে ভরা চিরসবুজ চায়ের বাগানে।
চৌধুরী ইসফাকুর রহমান কুরেশি
কবি লেখক ব্লগার ও পূবালী ব্যাংকার
রচনাকালঃ ১৩ আগস্ট ২০২০
রচনাস্থানঃ জেফার ভবন, সিলেট
কাব্যগ্রন্থঃ হৃদয়ে বাংলাদেশ
কাব্যগ্রন্থঃ হৃদয়ে বাংলাদেশ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন