দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা- মাস্যাসুসেট, মিশিগান এবং ক্যানাডা সফরপর্ব- চব্বিশ
ক্যানাডায় যুক্তরাষ্ট্রের মত সমকামিতা
বৈধ। এখানে অনেক সমকামি নারী ও সমকামি পুরুষ জোড় বেঁধে প্রকাশ্যে দাম্পত্য জীবন
পরিচালনা করেন। এই ব্যাপারটা আমাদের মনে ঘেন্যা সৃষ্টি করে। ছিঃ ছিঃ কেন এই
প্রকৃতি বিরোধী বিকৃত যৌনাচার?এসব আমার কাছে
পশ্চিমাদের এক ধরনের মানসিক বিকৃতি ও মনোবৈকল্যই মনে হয়। তারা জীবনকে অবাধে ভোগ
করতে করতে এমনই উশৃংখল হয় যে উপভোগ ও কামাচারের অনেক অনেক কলাকৌশল আবিস্কার করে
এবং তা সবই বিশুদ্ধ মনে করে। এসব কলাকৌশলের জালে তাদের অনেকেই চিরদিনের জন্য বন্দি
হয়ে যায়।
কানাডার ধর্মীয় জীবনও যুক্তরাষ্ট্রের
অনুরূপ। পশ্চিমারা ধর্মকে তেমন গুরুত্ব দেয়না। এখানে বর্ন সাম্প্রদায়িকতা থাকলেও
ধর্ম সাম্প্রদায়িকতা নেই। তাদের ধারনা ধর্ম হল প্রাচীন সেকেলে রীতি নীতি, আচার অনুস্টান ও
বিশ্বাস। বেহেশত, দোযখ, পরকাল এসব তারা
কল্পনার ফানুসই মনে করে। পশ্চিমারা যুক্তিবাদ ও আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানকে অধিক
প্রাধান্য দেয়। তারা ধর্মকে মানবসৃষ্ট বিষয় বলে মনে করে। তাদের রাজনীতিতে এবং
জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমে ধর্মের কোন গুরুত্ব নেই। ধর্ম এদেশে গির্জার বাসিন্দা।
পশ্চিমারা ধর্মবিশ্বাসের চেয়ে যুক্তিবাদ ও মানবিক বিবেকবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়। ক্যানাডা
ও যুক্তরাষ্ট্র আয়তনে মুসলিম বিশ্বের সমান। এই রাষ্ট্রগুলো মানবচুক্তির মাধ্যমে
সৃষ্টি হয়েছে এবং মানুষের তৈরী আইনেই চলছে। নিঃসন্দেহে এই মানবসৃষ্ট রাষ্ট্রগুলো
সুশৃংখল, উন্নত ও সমৃদ্ধ।
কানাডার নৈতিকতার উৎস মানবপ্রেম ও বিবেকবোধ। এখানে জাতি ধর্ম বর্ন ভাষা নির্বিশেষে সব মানুষকে সমান চোখে দেখা হয় এবং সবাই সমমর্যাদা ভোগ করে। এদেশে এই কয়দিন বিচরন করে আমি মধ্যযুগের কবি কালিদাসের মত বলছি, “শুনো হে মানুষ ভাই, ক্যানাডায় সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে নাই।”
এখানে আমরা মুসলমানরা কিন্তু ধর্মপরায়ন।
মসজিদ ভরা থাকে লোকজনে। তারা সবাই সদ্য আসা অভিবাসী মুসলিম। এই বিশ্বাসী মুসলিমরা
পরিশ্রমী ও শান্তিপ্রিয়। তারা সুনামের সাথে এদেশে টিকে আছেন।
ক্যানাডা পৃথিবীর প্রথম সারির অপরাধমুক্ত
দেশগুলোর একটি। এখানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই নেই।
খুনখারাবী বিরল ঘটনা। এখানে নারীরা নগ্নভাবে চলাফেরা করলেও কোন ধরনের ইভটিজিং
কিংবা ধর্ষনের শিকার হয়না। খুবসম্ভব যৌনজীবন অবাধ থাকায় লোকের মধ্যে যৌনতাড়না
সৃষ্টি হয়না। ফলে ইভটিজিং ও ধর্ষনের মত অপরাধ এদেশে নেই বললেই চলে। এদেশে
মৃত্যুদন্ডের বিধান নেই, সর্বোচ্চ শাস্তি কেবল আমৃত্যু কারাদন্ড।
একজন হুজুরকে বললাম, এরা বেদ্বীন এবং
অবিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ কেন তাদেরকে এত জ্ঞান, ঐশ্যর্য, সুখ শান্তিও নিরাপত্তা
দিয়েছেন। হুজুর জবাব দেন এদের পরকাল নেই। তারা দোযখে যাবে তাই আল্লাহ তাদেরকে
দুনিয়া দিয়েছেন। হুজুরের কথাবার্তায় বুঝলাম, নরকের জ্বালানী
কাট বানানোর জন্য এই এত সৎ ও ভাল বেদ্বীন মানুষদেরে আল্লাহ পাক পৃথিবীতে এত
জ্ঞানগরিমা, ধন-ঐশ্যর্য, সুখ-শান্তি
দিয়েছেন। নইলে এসব কিছুই দিতেন না। আমাদের মত গরিবী ও অশান্তির মাঝে রেখে দিতেন।
বাংলাদেশ হতে আসা অল্পশিক্ষিত লোকজনও তাই
বিশ্বাস করেন। কিন্তু আমার মনে প্রশ্ন জাগে তাহলে মুসলমানদের স্বর্নযুগে আল্লাহ
পাক মুসলমানদেরকে দোযখে পাঠানোর জন্য কি এত পার্তিব উন্নতি দিয়েছিলেন এবং সে যুগের
বেদ্বীনদেরে কি স্বর্গে পাঠানোর জন্য দারিদ্রতা ও অজ্ঞানতার মধ্যে ডুবিয়ে
রেখেছিলেন।
ক্যানাডা প্রবাসী কবি আব্দুল কুদ্দুস
চৌধুরী তার ‘শুকতারা’ কাব্যের একটি কবিতায় কানাডার একটি সুন্দর
বিবরন দিয়েছেন। কবিতাটি এখানে উদ্ধৃত করিলাম-
“আজব দেশ
কোন দেশেতে এলাম আমি কি বলিব ভাই,
মেয়েদের গরম বেশী ছেলেদের নাই।
অর্ধনগ্ন হয়ে তারা হাটে মাটে ঘুরে,
বুড়ীদের কাপড় থাকে সর্বাঙ্গ জুড়ে।
বয়ফ্রেন্ডের সাথে তারা থাকে রাত্রিকালে,
সমাজ তা মেনে নেয় ‘লিভ টুগেদার’ বলে।
বিয়ের আগে সন্থান আসে মায়ের উদরে,
ধূমে ধামে তখন তারা বেবী শাওয়ার করে।
স্বামী বদল করে তারা অতি ঘন ঘন,
পাউন্ড ডলার থাকলে তাদের বাঁধা নেই কোন।
বড় হলে ছেলে মেয়ে চলে যায় দূরে,
বৎসরে একবার তারা মাতৃদিবস করে।
লেকের ধারে গ্রীষ্মকালে বিবস্ত্র প্রায়,
জোড়ায় জোড়ায় একসাথে মাটিতে গড়ায়।
এরূপেতে সারাদিন সূর্যস্নান করে,
লাজলজ্জা কিছুনেই তাদের অন্তরে।
পুরুষেরা বিয়ে করে অন্য পুরুষেরে,
স্বীকৃত তারা সবে গে নাম ধরে।
বেশীদিন বাকি নেই ফিরবে আদিম কালে,
সভ্যতার শেষ ধাপে এসে গেছে বলে।”
একমাস ধরে আমরা আমেরিকা ও ক্যানাডায় অনবরত ঘুরে বেড়াই। এখন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে বিদায় দেয়ার পালা। খুবভোরে মামাতো বোন জেরিন বড় গাড়ি ড্রাইভ করে আমাদেরকে ডেট্রয়েট বিমানবন্দর নিয়ে যায়। ২৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র হতে যাত্রা শুরু করে ২৭ জুলাই ২০১৬ তারিখে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করি। স্বদেশের মাটিতে পা রেখে মনে হল বিদেশের একমাস যেন স্বপ্নের ঘুরের মধ্যে দ্রুত কেটে গেছে।(সমাপ্ত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন