দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা- মাস্যাসুসেট, মিশিগান এবং ক্যানাডা সফরপর্ব- তেইশ
গতবছর যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর দেশটি নিয়ে
অনেক লিখেছি। এবারের যাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রে ছয়দিন ও ক্যানাডায় আটার দিন অবস্থান
করি। তাই যুক্তরাষ্ট্র নয়, কেবল ক্যানাডা নিয়েই আলোচনা করে লেখার
ইতি টানবো। ক্যানাডায় সরকারি সুযোগ সুবিধা যেমন বেশী, টেক্সও তেমন বেশী।
ক্যানাডা শান্তি ও নিরাপত্তার দেশ হওয়া সত্ত্বেও অভিবাসীরা কানাডার চেয়ে
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্বকে পছন্দ করে বেশী। খুব সম্ভব
যুক্তরাষ্ট্রের সীমাহীন শক্তিমত্তা, প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক ক্ষমতা
ও সম্ভাবনা মানুষকে আকৃষ্ট করে। ক্যানাডা হীম ঠান্ডা দেশ, কিন্তু
যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বৈচিত্রময় আবহাওয়া ও সিড়ি বেয়ে অনেক উপরে উঠার উজ্জ্বল
সম্ভাবনা। সে তুলনায় কানাডার ক্ষেত্র অনেক সীমিত। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরেখা
বরাবর সিংহভাগ কানাডাবাসী বসবাস করেন। কানাডার ৮০% ভূমি সারাবছর বরফে ঢাকা থাকে।
এই কৃস্টাল কানাডাকে বাদ দিলে মানব বাসপোযোগী ভূমির পরিমান অল্প। শীতকালে
ক্যানাডায় তাপমাত্রা যখন হিমাঙ্কের ৩০/৪০ ডিগ্রী নিচে নেমে আসে তখন উচ্চ
প্রযুক্তির কৃত্রিম তাপের মাধ্যমেই ঘরে বাহিরে টিকে থাকতে হয়।
কানাডায় জন্ম নেয়া সাদাদের তেমন সম্পদ
নেই। এদের সম্পদ সঞ্চয়ের অভ্যাসও নেই। তারা যা আয় করে, তা খরচ করে উড়িয়ে
দেয়। অথচ গরীব দেশের লোকজন এসে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সহজেই গাড়ী বাড়ির মালিক হয়ে
যায়। ১৯৮১ সালে চারখাইয়ের সাচান হতে আসা একজন লোক হেমিংটন শহরে ৪৫টি বাড়ির মালিক।
রুহুলের কাছে একজন সংগ্রামী তামিল যুবকের গল্প শুনি। সে মাথাকাটা পাসপোর্টে এসে
টরেন্টো বিমানবন্দরের ওয়াসরুমে ঢুকে পাসপোর্ট, টিকেট সব টুকরো
টুকরো করে কমোডে ফেলে দেয়। তারপর ইমিগ্রশন অফিসারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে শ্রীলঙ্কায়
তার কোন নিরাপত্তা নেই। সে তামিল সিংহলী গৃহযুদ্ধের শিকার। শ্রীলঙ্কা সরকার তাকে
মেরে ফেলবে তাই প্রান বাঁচাতে এসেছে। আত্মীয়রা তাকে প্রানে বাঁচাতে এখানে কিভাবে
পাঠিয়েছে কিছুই সে জানেনা। এভাবে সে সহজেই কানাডার এন্ট্রি পেয়ে যায়। প্রতিদিন
বিশঘন্টা শ্রম দিতে অভ্যস্থ এই তামিল যুবক এখন ৩/৪ টি বাড়ি গাড়ি ও প্রতিষ্টিত
ব্যবসার মালিক। সে ঝুঁকি নিতে জানে। রুহুল তাকে ঝুঁকি নিতে বারন করলে সে বলতো-
অনেক ঝুঁকি নিয়ে শুন্যহাতে এই বডিটা নিয়ে ক্যানাডায় এসেছি। আজ কয়েক কোটি টাকার
সম্পদের মালিক হয়েছি। আমার সব হারিয়ে গেলেও এই বডিটা তো হারবেনা। এই বডিটা ঠিক
থাকলে আর চিন্তার কোন কারন নেই। অপার সম্ভাবনার দেশ ক্যানাডা। এখানে পরিশ্রমী
লোকজনের শূন্য ঝুড়ি সহজেই ধন-ঐশ্বর্য্যে ভরে যায়।
কানাডায় আয়করদাতার ফাইল সরকার ভালভাবে
পরীক্ষা করে দেখে। ভুলবশতঃ অতিরিক্ত টেক্স প্রদান করা হয়ে গেলে তা ফেরত দেয়। যে সব
লোকজনের আয় কম অথচ খরচ বেশী তাদেরকে আয়কর ফেরত দেয়। এমন কি উল্টো গরীব মানুষকে
ভর্তুকি প্রদান করে।
টরেন্টোয় অনেক বাংলা পত্রিকা বের হয়।
সাপ্তাহিক এই পত্রিকাগুলো বিনামূল্যে বিতরন করা হয়। ক্যানাডা সরকার এসব পত্রিকা
প্রকাশের জন্য প্রচুর অর্থ অনুদান প্রদান করে। এসব পত্রিকা জুড়ে দোকান, আইনজীবী, চিকিৎসক, বাসাবাড়ি ও গাড়ির
দালালদের বিজ্ঞাপনে পূর্ন থাকে। বিভিন্ন বাংলাদেশী অনুষ্টান, সভা, পিকনিক পার্টি
ইত্যাদিরও খবর এবং বিজ্ঞাপন রয়েছে। বাংলাদেশের সবধরনের খবরাখবর কপি পেইস্ট করে এসব
পত্রিকায় ডুকানো হয়। কানাডার প্রচুর প্রতিভাবান বাংলাদেশী লেখক রয়েছেন। ভিতর
পৃষ্টায় তাদের লেখা কলাম ও প্রবন্ধ আমার কাছে বেশ উচ্চ মানসম্পন্ন মনে হয়েছে।
কানাডার বিয়ে ও যৌনজীবন যুক্তরাষ্ট্রের
মত। এখানেও নরনারী পরস্পরের সম্মতি নিয়ে ইচ্ছেমত যৌন জীবন উপভোগ করে। বিবাহ বন্ধনে
আবদ্ধ হলে অনেক আইনি বাঁধাধরায় পড়তে হয়। তাই বিবাহ ছাড়াই তারা দাম্পত্য জীবন
পরিচালনায় অধিক সাচ্ছন্ধ্যবোধ করে থাকে। বিবাহ ছাড়া বাচ্চা উৎপাদনেও কোন বাঁধা নেই, কোন অন্যায় নেই।
এক প্রবীন দম্পতির মজার কাহিনী শুনলাম। বুড়ো বয়সে বৃদ্ধ তার পত্নীকে বললেন, হে শুনছো, এখনও যে আমাদের
বিয়ে হয় নাই। বুড়ি অবাক হয়ে বললেন, কি বলছো এখনও
আমাদের বিয়ে হয়নি। দাম্পত্য জীবনের অর্ধশত বছর পার হয়ে গেছে অথচ এখনও বিয়ে ছাড়াই
আছি।
পাশে দাঁড়ানো ছেলের কানের খবরটা গেলে সে তার সব ভাইবোন, আত্নীয় স্বজনদেরে দাওয়াত করে বাবামাকে গীর্জায় নিয়ে যায়। তারা আনন্দস্ফূর্তি করে বাবা-মায়ের বিবাহ অনুস্টান উপভোগ করে।(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন