দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা- মাস্যাসুসেট, মিশিগান এবং ক্যানাডা সফরপর্ব- বাইশ
ক্যানাডা হতে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান
প্রত্যাবর্তনঃ
২৩ জুলাই ২০১৬ সাল। আজ আমরা আমেরিকার ডেট্রয়েট
ফিরে যাবো। সকালে বোনের বাসায় নানা পদের নাস্তা হয়। ভাগনা ভাগনিরা আমাদেরকে
চাইনিজে নিয়ে যায়। আমরা বাসার সবাই একটি পরিপাঠি চাইনিজ রেস্তোরায় যাই। এখানে সেফ
ও পরিবেশক সবাই চীনা লোকজন। আপেল রাইস, সুইট মসলা চিকেন, ঝাল স্যুপ, অন্তুন ইত্যাদি।
এক ধরনের বিস্কুট পরিবেশন করা হয় যার নাম Fortune Cookies বা ভাগ্য বিস্কুট।
এই বিস্কট খাওয়া শেষ হলে কাগজে লেখা একটি ভবিষ্যতবানী বেরিয়ে আসে। চাইনিজ হতে বের
হয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্যের বৃহত্তম নগরী ডেট্রেয়েটের দিকে যাত্রা
শুরু করি। গাড়িতে আমরা তিনজন ছাড়াও ভাগনা রুহুল, বৌমা সিদ্রাত, নাতি রাদি এবং
নাতিন সুহা। সেভেন সিটার গাড়িতে আমরা যাত্রি সাতজন। ভাগনা রুহুল বলল, আসার পথে নয় আমরা
ভিন্ন এক নতুন পথে ডেট্রয়েট ফিরব। তাহলে নতুন জায়গা দেখা যাবে। শতশত পাহাড়, গ্রাম, ক্ষেত, হ্রদ একে একে পার
হয়ে লেক হুরন এবং লেক ইরির সংযোগ নদীর ওপারের নগর উইন্ডসর প্রবেশ করি। শহরের
প্রবেশপথে লিখা এই শহরের লোকসংখ্যা ২,১৭,০০০ জন। ভাবলাম এই
লোকদের একজন ছিলেন গোলশান হলি আর্টসান হোটেলে হামলার মাস্টার মাইন্ড তামিম চৌধুরী।
এবার আমেরিকায় প্রবেশের জন্য লেইকতলা দিয়ে নির্মিত সুড়ঙ্গপথে প্রবেশ করি। জলতলার
৬/৭ মাইল লম্বা টিউব সড়কটি আমেরিকার ডেট্রয়েট সিটিকে কানাডার উইন্ডসর শহরের সাথে
সংযুক্ত করেছে। চারলেনের সুড়ঙ্গপথটি অসংখ্য বিদ্যুৎ বাতির আলোয় আলোকিত। বিশ/বাইশ
মিনিটে লেকতলার ট্যানেল পার হয়ে আমরা ক্যানাডা হতে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট শহরে
বেরিয়ে আসি। কিছুক্ষনের মধ্যে ছোটমামার বাসা তালবট পৌঁছে যাই।
২৪ জুলাই ২০১৬ সাল। আলম ভাই গাড়ি চালিয়ে
তার বাসায় নিয়ে যান। সিমসাম হোটেল স্যুটের মত বাসা। আমার মামাতো বোন সুফা এবং
একমাত্র পুত্র মেরাজকে নিয়ে তার সংসার। এখানে ডিনার করি আরবী খাবার।
২৪ জুলাই ২০১৬ সাল। ফকুমামা আমার মায়ের
মামাতো ভাই। আমার চেয়ে দুইতিন বছরে বড় ও তিনি আমার মামা হলেও ছেলেবেলার খেলার
সাথী। তার বাড়ি কুলাউড়ার ঘাঘটিয়া সাহেববাড়ি। তিনি নানাবাড়ি থেকে কিছুদিন রতউলি
মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে বাংলাদেশে জীবন সংগ্রামে তার টিকে
থাকা বেশ কঠিন হত। অথচ এখানে তিনি সুপ্রতিষ্টিত। মামামামি দুইজনই কর্মঠ। মামার
শ্বাশুর নেই। শ্বাশুড়ির একমাত্র কন্যা পলিন চৌধুরী তার সহধর্মিনী। শ্বাশুড়িকেও
নিয়ে এসেছেন আমেরিকায়। তিনি সংসারের মুরব্বী লক্ষী হয়ে সারাটা পরিবারকে আলগে
রেখেছেন। ফকুমামা খুবই ভাগ্যবান। তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যার জনক। মুখে ফেন্সীকাট
সুন্নতি দাড়ি, প্রসাদুদ্যোম বাড়ি, দামী একাধিক গাড়ী, মূল্যবান আসবাব ও
পন্য সামগ্রীতে বাসা ঠাসা। ফকুমামা দুপুরে আমাদেরকে নিয়ে ডেট্রয়েট শহরের পর্যটন
এলাকা Vale Island নিয়ে যান। লেকের মাঝের দ্বীপটি এক
সুদীর্ঘ্য সেতু দিয়ে ডেট্রয়েট শহরের সাথে সংযুক্ত। এখানে আছে অসংখ্য সিংহ
ভাস্কর্য্য। এই ভাস্কর্য্য জুড়ে নয়নাভিরাম পানির ফোয়ারা। ভেলে দ্বীপের তীর বাঁধাই
করা ও বৃক্ষলতা সজ্জিত। সব সময় লেক হতে দ্বীপে শীতল বাতাস বয়। ভেলেদ্বীপের
মধ্যভাগেও রয়েছে এক বিশাল জলাশয়। এখানে সৌকিন মৎস শিকারীরা বরশি বেয়ে মাছ ধরে।
ফকুমামা আমাকে নিয়ে যান চাচাত ভাই দিলদার
আহমদ কচির বাসায়। কচি দীর্ঘ্যকাল দক্ষিন সুরমার দাউদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান
ছিলেন। দুই পুত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আসেন, এখানে আরেক কন্যার
জন্ম হয়। কচি কাজে থাকায় তার সাথে দেখা হলনা। কচির স্ত্রী আমার সহধর্মিনীর আত্মীয়।
আমাদেরকে পেয়ে তিনি খুশিয়ে আটকানা।
এবার এলাম চাচাতো ভাই হেমায়েত চৌধুরীর
বাসায়। তিনি এক কন্যাকে নিয়ে ডেট্রয়েট আছেন। তার আর দুই ছেলেমেয়ে সপরিবারে কানাডার
টরেন্টোতে বসবাস করেন। কচি ও হেমায়েত ভাই সুন্দর ঘরবাড়ি করে এখানেই সুখ
স্বাচ্ছন্দে জীবন পার করছেন। হেমায়েত ভাইয়ের পত্নী রুমানা চৌধুরীও আমার চাচাত বোন।
তিনি লন্ডনে থাকায় তার সাথে আমার দেখা হলনা।
এবার ফকুমামা আমদেরকে গাড়ি করে তার
ওয়ারেনের রাজপ্রসাদে নিয়ে যান। এই সুরম্য প্রাসাদে অনেক আত্মীয় স্বজনের দেখা পাই।
ফকুমামা তার দুই ভাতিজাকে আমেরিকা নিয়ে যান। এখানে আমার ছোটমামা ও মামাতো
ভাইবোনেরা সপরিবারে এসে সমবেত হন। ফুলবাড়িরও কিছু আত্মীয়কে পাই তারা ক্যানাডা হতে
এসেছেন। এই বাসায় দুইটি করে ড্রয়িং রোম ও ডাইনিং রোম। পারিবারিক অনুস্টানে বড়
ড্রয়িং ও ডাইনিং কক্ষ ব্যবহৃত হয়। এখানে আড্ডা, স্মৃতিচারন, কৌতুক চলল
অনেকক্ষন। হাসি তামাসায় আড্ডা জমজমাট।
পলিন মামী বললেন আজকের এই অনুষ্টান আমার
ভাগনা ও বৌমার আগমন উপলক্ষে উৎসর্গ। প্রায় পঞ্চাশ-ষাট জন আত্মীয়স্বজনের সমাবেশে
ফকুমামা ও মামী আমাদেরকে এক রাজভোগ ও রাজকীয় সম্বোর্ধনা দেন। নিঃসন্দেহে আমরা
সেদিনের সেই অনুষ্টানের ভি আই পি ছিলাম।
আরবী, টার্কি, আমেরিকান নানাপদের
নাম নাজানা খাবারদাবারে টেবিল ভরে ঊঠে। এভোগেডো ফলের চাটনি ভাতের সাথে খেতে বেশ
ভাল লেগেছে। পারসিমন নামের এক ধরনের চীনা ফল খাই। পারসিমন দেখতে টমেটোর মত, ডাটা সবুজ বাকিটা
কমলা রঙের। বহিরাবরন কমলা হলেও ভিতর হলুদ। পারসিমনের স্বাদ সুমিষ্ট পেঁপে ও আমের
মিশ্রন মনে হয়।
ফকুমামার বাসা হতে মেহমানরা বের হয়ে ৭/৮
টি গাড়ি স্টার্ট দেন। গভীর রাতে সবাই ফিরে যান নিজ নিজ বাসায়। আমরাও ফিরে আসি মামা
শহীদ চৌধুরীর বাসায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন