বংশ পরিচিতি, বলো হে বটবৃক্ষ তোমার কি পরিচয়ঃ
পিতৃকুলঃ
আমি একটি বৃহৎ ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করি যার নাম “শাহজালাল(রঃ)
ও শাহদাউদ কুরেশী(রঃ)”। বইটি ২০১২
সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের তৃতীয় খন্ডে
আমি প্রাচীন পারিবারিক কুষ্টিনামা ও দলিল দস্তাবেজ ঘেটে
স্বগোত্র দাউদপুর চৌধূরীগোষ্টির বিস্তারিত ইতিহাস প্রণয়ন করি।
সেখানে আমার বিস্তারিত বংশ ইতিহাস থাকায় এই আত্মজীবনীতে আমি সুদীর্ঘ আলোচনা
পরিহার করলাম। আমাদের পারিবারিক কুষ্টিনামায় আমি বিগত প্রায় আটশত বৎসরের আমার
পূর্বপুরুষগণের এক ধারাবাহিক বিবরণ পাই।
এদেশে ইসলাম
প্রচারের মধ্যমনি বিখ্যাত দরবেশ হজরত শাহজালাল(র:)
১৩০৩ সালে সিলেট বিজয় করেন। তিনি আরব
উপদ্বীপ হতে বের হলে সেখান হতে তাঁর
সঙ্গী হন বারজন ধর্মপ্রচারক দরবেশ। তাঁদের একজন
পবিত্র মক্কানগরীর হজরত শাহদাউদ কুরেশী(র:)।
তিনি তার গুরু হজরত শাহজালালের(রঃ) নির্দেশে ইসলাম প্রচারের জন্য সিলেট শহরের দশ
কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে বর্তমান দক্ষিণসুরমা
উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামে
বসতি স্থাপন করেন। এখানে তার মাধ্যমে পবিত্র ইসলাম ধর্ম প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত
হয়। এই গ্রামে এক পুতঃপবিত্র পরিবেশে হজরত শাহদাউদ কুরেশী(রহঃ), তাঁর ধার্মিকা
সহধর্মিনী ও একমাত্র পুত্র হজরত রহিম দাউদ কুরেশীর(রঃ) পাশাপাশি চিরনিদ্রায় শায়িত
মাজার বিদ্যমান। তাঁর পবিত্র
নামেই গ্রামটির নামকরণ হয় দাউদপুর।
নছবনামা
অনুযায়ী আমি হজরত শাহদাউদ কুরেশীর(র:)
১৭তম বংশধর। ক্রমানুসারে এই তালিকায় ১) শাহদাউদ
কুরেশী(র:) ২) রহিম
দাউদ কুরেশী(র:) ৩) মিয়া
মালিক(র:) ৪) শাহ
মালিক(র:) ৫) পীর
মালিক ওরফে ইখতিয়ার খান(রঃ) ৬) ওসমান
খান(রঃ) ৭) ইব্রাহীম খান(রঃ) ৮) জান
মোহাম্মদ(রঃ) ৯) মোহাম্মদ হায়াত(রঃ) ১০) আব্দুল
মজিদ(রঃ) ১১) আব্দুর রাজ্জাক চৌধূরী ১২) আব্দুর
রউফ চৌধূরী ১৩) আব্দুল গফুর চৌধুরী ১৪) আবু
নসর চৌধুরী ১৫) মোহাম্মদ মোফজ্জিল চৌধুরী ১৬) সফিকুর
রহমান চৌধুরী ১৭) চৌধুরী ইসফাকুর রহমান কুরেশী ১৮) চৌধুরী
জেফার রহমান কুরেশী।
এই নসবনামায়
বাংলার ইতিহাসের বিগত ধারাবাহিক সুলতানি, পাঠান,
মোগল, বৃটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশ এই ছয়টি
যুগের মানবগণ রয়েছেন। সুলতানি আমলের প্রথম চার প্রজন্ম সামন্ত ভূমিপতি, আলেম ও আধ্যাত্মিক সত্বা। পঞ্চম প্রজন্ম
পীর মালিক একজন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি পাঠান আমলে সরকারের তরফ হতে ‘ইখতিয়ার
খান’ উপাধি পান। তাঁর আমলে বংশের প্রভাব প্রতিপত্তি ও ঐশ্যর্য
প্রভূত পরিমাণে বর্ধিত হয়, যাহা পরবর্তী কয়েক
প্রজন্ম অব্যাহত থাকে। একাদশ প্রজন্মে ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় আব্দুর
রাজ্জাক চৌধুরী ও আব্দুর রহমান চৌধুরীর
নামে নং- ৪৮৩০/৪ জমিদারী তালুক বরাদ্ধ হয়। এই আব্দুর
রাজ্জাক চৌধুরী হতে পুর্ববাড়ির সূচনা হয়।
আমার পিতামহ
মোঃ মোফজ্জিল চৌধুরীরা ছিলেন চার ভাই। এক ভাই আবুল বশর
চৌধুরীর পত্নী এই বংশের কোনারবাড়ির আব্দুল মোজাফফর চৌধুরী ও ফজিরা বানুর কন্যা ছফর
চান্দ খাতুন দাউদপুর মাদ্রাসায় বিন্নাকান্দি মৌজায় অবস্থিত ২১ একর ১০ ডেসিমেল জমি ১৫ জানুয়ারি ১৯২১ সালে মায়ের সাথে এক ওয়াকফ রেজিষ্টিমূলে দান করেন।
আবুল বশর চৌধুরী- ছফরচান্দ
দম্পতির একমাত্র কন্যার হাফিজা খাতুনের বিয়ে হয় এই বংশের মাঝের বাড়ির রহমানুর রাজা
চৌধুরীর সাথে। আমার পিতামহের
অন্যভ্রাতা মোহাম্মদ মোজাম্মেল
চৌধুরী সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য পাই নি।
তবে দাদার
আরেক ভ্রাতা আবুল মুবাশ্বার চৌধুরীর তিন পুত্র ওয়াছির আলী চৌধুরী, ওয়াতিল আলী
চৌধুরী, ওয়াছিল আলী চৌধুরী ও তিন কন্যা, মাহফুজা খানম
(জজে মফজিল আলী চৌধুরী, কানিশাইল, ঢাকাদক্ষিণ),
খোদেজা খানম চৌধুরী জজে খন্দকার আমির উদ্দিন আহমদ গ্রাম আলাপুর
গওহরপুর এবং জোবেদা খাতুন চৌধুরী জজে ওয়াজেদ আলী চৌধুরী গ্রাম দুহাল,
চারখাই।
আমার পিতামহ
মোঃ মোফজ্জিল চৌধূরীও প্রচুর ভুমি মসজিদ, মাদ্রাসা,
বাজার, কবরগাহ ইত্যাদি স্থাপনে দান করে
দেন। আমার মাতামহী নজিবা খাতুন চৌধুরী ছিলেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার রানাফিং ফাজিলপুর
গ্রামের অধিবাসী। পিতামহ মোঃ মোফজ্জিল চৌধূরী ১৯৩৯ সালে নব্বই বৎসর বয়সে দাউদপুরে
পরলোকগমন করেন।
আমার দাদা ও
দাদি দু’জনই আমার জন্মের অনেক আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তাই তাদের স্নেহমায়া কি
জিনিস তা আর অনুভব করার সুযোগ আমার হয় নি।
এবার আমার
চাচা ও ফুফুদের একটা বিবরণ পেশ করব। তারা ছয়
ভাই ও পাঁচ বোন। চাচারা হলেন ১) তৈয়বুর
রহমান চৌধুরী পত্নী- সফিকুন্নেছা চৌধুরী, ফাজিলপুর ২) মহিবুর
রহমান চৌধুরী পত্নী- আজিমা খাতুন রানি, করনশী,
ওসমানীনগর ৩) মখলিছুর রহমান চৌধুরী বিপত্নীক ৪) রইছুর
রহমান চৌধুরী তরুণ বয়সে বিপত্নীক অবস্থায় মারা যান। ৫) খলিলুর
রহমান চৌধুরী পত্নী-সায়রা খানম চৌধুরী, মাটিকাটা, বিয়ানীবাজার ৬) সফিকুর
রহমান চৌধুরী পত্নী-আসমতুন্নেছা চৌধুরী, দক্ষিণভাগ,
পাতারিয়া। ফুফুরা হলেন ১) লতিফা
খাতুন জজে- আব্দুল হাফিজ চৌধুরী, গাংকুল, পাতারিয়া, বড়লেখা ২) আফিয়া খাতুন জজে-
মুফতি সিরাজ উদ্দীন, দরগামহল্লা, সিলেট। ৩) আজিজুন্নেছা জজে- আব্দুল বারী চৌধুরী,
হাজিপুর, কানিহাটি ৪) ছফিয়া খাতুন চৌধুরী জজে- সাদউদ্দিন চৌধুরী, ফুলবাড়ি,
গোলাপগঞ্জ ৬) আম্বিয়া খাতুন চৌধুরী জজে-আব্দুর রকিব চৌধুরী, ফাজিলপুর, রানাফিং।
আপন পাঁচ
ফুফু এবং চার চাচাচাচিকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়। তবে তাঁদের জীবনের শেষ দিনগুলোর
আমি সাক্ষি হয়ে আছি। মাত্র একজন ফুফাকে আমি তাঁর শেষ বয়সে
দেখেছি, তিনি ফুলবাড়ি গ্রামের ডঃ সদরুদ্দিন চৌধুরীর পিতা সাদউদ্দিন চৌধুরী। তিনি
খুব ফর্সা সুদর্শন ভরাট দাড়িওয়ালা লোক ছিলেন।
আমার জন্মকালে
এই বংশের দাউদপুর গ্রামের আট চৌধুরীবাড়ির মধ্যে পুর্ববাড়ি
শাখায় আমার জন্ম হয়। পুর্বকালে সামন্ত কৃষি অর্থনীতির যুগে সুলতানি,
পাঠান, মোগল, বৃটিশসহ বিভিন্ন আমলে
জমিদারী নবায়ন ও ধারণ করে এই বংশের লোকজন নিজেদের অস্থিত্ব অব্যাহত রাখেন।
লোকমুখে
বৃদ্ধ মুরব্বিগণের কাছে শুনতাম যে আগের জামানায় এই
বাড়িগুলোর সুনাম ও প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল অপরিসীম। রেঙ্গা পরগনায়
কোন গ্রামে লোকজনের মধ্যে মারদাঙ্গা হলে এই সাতঘর চৌধুরীদের দোহাই দিলে সাথে সাথে
সংঘর্ষ বন্ধ হয়ে যেত। সর্বত্র ন্যায়বিচার ছিল।
এসব জমিদার বাড়িগুলার বাংলোয় অবস্থান করে অনেক তালবা ও ছাত্র ফ্রি লেখাপড়া করতেন, জমিদারীর কাজ পরিচালনায় লোকজন সদা সেথায় কর্মব্যস্থ থাকত। অনেক ধর্মীয় হুজুর ও পীরমজ্জুবরাও বাংলোয় জীবনভর অবস্থান করে আধ্যাত্মিক সাধনা করতেন। পূর্ববাড়ি ও পশ্চিমবাড়িতে তাদের দু’টি মাজার এখনও বিদ্যমান রয়েছে। সুদূর আফগানিস্তান হতে আসা কাবুলিওয়ালারাও এসব বাংলোয় অতিথি হতেন।
মাতৃকুলঃ আমার নানাবাড়ি বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের দক্ষিণভাগ গ্রামে। এই অঞ্চলটি প্রাচীন পাতারিয়া পরগনায় অবস্থিত। মাতামহের নাম দেওয়ান খলিলুর রহমান চৌধুরী। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত আলেম ও সুফি। তাঁর জন্ম দক্ষিণভাগ গ্রামে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে এবং ১৯৬৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সেখানেই তিনি দেহত্যাগ করেন। বৃটিশ আমলে জাহাজে চড়ে তিনি সাগরপথে মক্কাশরিফ গিয়ে পবিত্র হজ্জপালন করেন। চট্টগ্রাম বন্দর হতে জাহাজটি জেদ্দা বন্দরে পৌঁছতে এবং ফিরে আসতে একটানা ত্রিশ দিন করে সময় লেগে যায়। মায়ের কাছে শুনেছি, জাহাজযাত্রা করে হজ্জ সেরে চট্টগ্রাম ফিরে আসতে পাক্কা তিন মাস পার হয়। নানারা ছিলেন চার ভাই। একজনের নাম জয়াদুর রহমান চৌধুরী, অন্য দুইজনের নাম জানা সম্ভব হয়নি।
মাতামহের
চারভাই তিনটি বড়বড় বাড়ির মালিক ছিলেন। নানা তার
পিতার ছোট সন্তান হিসাবে মসজিদ ও দিঘিওয়ালা
প্রায় ৩০ বিঘা আয়তনের পৈত্রিক মধ্য বাড়িটির অধিকারী হন। এই বাড়িকে সবাই বলতেন পুরানবাড়ি। বাড়িটির ভিতর জমিদারী যুগে
বাইশ ঘর নানকার জনতা বসবাস করতেন। বৃটিশ শাসনামলের শেষ অথবা পাকিস্থান আমলের প্রথমদিকে
মাতামহ গ্রামের পূর্বদিকে নিচু ও সমতল টিলায় এই বাইশ ঘর লোকজনকে ঘর নির্মাণ করে দেন। প্রথমে তাঁরা যেতে চায়নি, এজন্য নানাকে মামলারও আশ্রয় নিতে হয়েছিল। কিন্তু পুরানবাড়ির ঘিঞ্জি ছেড়ে নতুন খোলামেলা পরিবেশে এসে তাঁরা খুবই খুশি হয়। পরবর্তীকালে বাইশ ঘর মানুষের সাথে নানাবাড়ির সম্পর্ক ছিল খুবই মধুর। নানাবাড়ির
দক্ষিণের ধামাই চাবাগান ঘেরা বড় হাওরের জমি এসব লোকজন চাষাবাদ করতেন।
মায়ের চাচা জয়াদুর
রহমান চৌধুরী ছিলেন পুর্ববাড়িব অধিকারী। এই বাড়িটিও খুব বড় এবং নানার
দিঘির পুর্বপারে অবস্থিত। এই জয়াদুর রহমান চৌধুরীর একমাত্র পূত্র তুতুউর রহমান
চৌধুরীকে (তুতই) আমরা পুর্ববাড়ির মামা নামে
ডাকতাম। শৈশবে ও কৌশরের দিনগুলোতে আমরা এই মামার প্রচুর আপত্যস্নেহ পাই।
তুতই মামার বোন ছলুখালার বিয়ে হয় রণকেলী গ্রামের নাতাই
টিলায়। তার একমাত্র পুত্র আমিন আহমদ চৌধুরী (জামু) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে
সাংবাদিকতায় অনার্সসহ মাস্টার্স করে “দি ডেইলি স্টার”
পত্রিকার সম্পাদক ও ভয়েস আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি হন। প্রতিভাবান জামুভাই মাত্র
উনচল্লিশ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মারা যান।আমাদের বাড়িতে নিত্য পঠিত দৈনিক ইত্তেফাক
পত্রিকায় তাঁর জানাজার নামাজের ছবি দেখে আব্বা বলেন কে একজন সাংবাদিক মারা গেছেন।
আমি পড়ে সবাইকে জানাই এই সাংবাদিক তো আমাদের জামু ভাই।
নানার নাম
না জানা অন্য দুই ভাইয়ের একজনের একমাত্র কন্যা খোদেজা খানমের সাথে অন্য ভাইয়ের
একমাত্র পুত্র ইমু মিয়া চৌধুরীর বিয়ে হয়। এই দম্পতির
ঘরে হকি খানম নামক একজন মাত্র কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ
করেন। এই বড়বাড়িটি নানাবাড়ির খানিকটা দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে অবস্থিত। বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর পরগণার
গোঘাগ্রামের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মাহতাব চৌধুরীর সাথে আমার মায়ের ভাতিজি এই হকি
খানমের বিয়ে হয়। এই বিয়েতে মাহতাব চৌধুরী যৌতুক
পান পঞ্চাশ হাল মিরাশ। তারপরও মাহতাব চৌধুরী তার শ্বাশুড়ি জীবিতাবস্থায় বাড়িটি নিজনামে লিখে নেন এবং ১৯৪৭ সালে
পাকিস্তান সৃষ্টির পর ভারত হতে আগত আখদ্দস আলী লস্করের কাছে শ্বাশুড়ির সম্মতি ছাড়াই বিক্রি করে দেন। নিজের শখের সুন্দর বাড়ি হারিয়ে হকি খানম ভীষণ মনঃক্ষুন্ন হন এবং তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে তাঁর শেষজীবন আমার নানাবাড়িতে কাটিতে এখানেই মারা যান।আম্মার দুইচাচার এই বৃহৎ বাড়িটি পরে লসকরের বাড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে।
আমার নানি
রফিকুন্নেছা চৌধুরী। তিনি ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে
কুলাউড়া শহরের সন্নিকটে অবস্থিত ঘাগটিয়া গ্রামের
সাহেববাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন
ছিলেন। বড় দিঘিওয়ালা বাড়িটির সামনে নানির প্রপিতামহ
১৮৫৭ সালে একটি মসজিদ ও পরে একটি
পাঠশালা নির্মাণ করেন। এই দিঘিরপারের মসজিদের সামনে
সাহেববাড়ির পারিবারিক সমাধিও রয়েছে।
এখন আমি আমার
মামা ও খালাদের একটি বিবরণ দিব। আমার
জননীরাও পাঁচ ভাই এবং ছয় বোন। মামারা হলেন- ১) মাহমুদুর রহমান চৌধুরী মামই,
বিপত্নীক ২) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী পত্নী- জায়েদা খানম বালাউট, জকিগঞ্জ ৩)
আব্দুর রহমান চৌধুরী সাদ্দিক পত্নী- সৈয়দা হালিমুন্নেছা কুরছি, মোস্তফাপুর,
মৌলভীবাজার ৪) ফজলুর রহমান চৌধুরী পত্নী- কহিনুর চৌধুরী, দুর্লভপুর, নবীগঞ্জ ৫) শহিদুর
রহমান চৌধুরী পত্নী- শাহেদা বেগম চৌধুরী সেবন, লঘাটি, দাশেরবাজার, বড়লেখা। আমার
খালারা হলেন ১) জোবেদা খাতুন চৌধুরী জজে- ফিরোজ বখত চৌধুরী, রণকেলী, গোলাপগঞ্জ ২)
জায়দা খাতুন চৌধুরী জজে- আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ভাদেশ্বর পুর্বভাগ, সিলেট। ৩) আবেদা
খাতুন চৌধুরী জবা জজে- উবেদুর রহমান চৌধুরী, ভাদেশ্বর পশ্চিমভাগ ৪) আসমতুন্নেছা চৌধুরী জজে- সফিকুর রহমান
চৌধুরী, দাউদপুর, রেঙ্গা, দক্ষিণসুরমা ৫) মরিয়মুন্নেছা চৌধুরী জজে- আখলাকুস সামাদ
চৌধুরী, কানিশাইল, ঢাকাদক্ষিণ।
৬) জমজমুন্নেছা চৌধুরী যিনি শৈশবে মারা যান।
আমার নানাবাড়ির
কোন নসবনামা নেই। ছোটখালা মরিয়মুন্নেছা চৌধুরীর কাছে জানলাম
নানা দেওয়ান খলিলুর রহমান চৌধুরী আমার
মায়ের নামটি তার নিজ মায়ের নামে রাখেন। তাই আমার মাতা
ও তার দাদি দুজনেরই নাম
আসমতুন্নেছা চৌধুরী। আমার নানা
খলিলুর রহমান চৌধুরী তার বাবার নামে তৃতীয় ছেলের নাম আব্দুর রহমান চৌধুরী
এবং দাদার নামে চতুর্থ পুত্রের নাম ফজলুর রহমান চৌধুরী রাখেন।
আমার মাতা আসমতুন্নেছা চৌধুরী শৈশবে তাঁর বৃদ্ধা দাদি আসমতুন্নেছাকে দেখেছেন। নানা সবার ছোট হিসাবে তাঁর পৈত্রিক বাড়ির মালিকানা পান। এখানে তিনি স্বামীভিটায় কনিষ্ঠ পুত্র খলিলুর রহমান চৌধুরীর পরিবারের সাথে অবস্থান করতেন মায়ের দাদি আসমতুন্নেছা। তবে তাঁর চারপুত্রের চার বাড়ি থেকে দাদির জন্য তিনবেলা প্রচুর খাবার আসত। তিনি খানিকটা খেয়ে বাকি সব খাবার গরিব দুঃখী লোকজনকে খাইয়ে দিতেন।
প্রিয় পাঠকগন। পিতৃগোষ্টি এবং মাতৃগোষ্টি। এই দুই মানব পক্ষের সদস্য আপনারা সবাই। এই জোড় জালের চক্রে মানবজাতি বন্দী হয়ে আছে যুগযুগ ধরে। এই জোড়া জালের বন্ধন ছেড়ে পালাবার কোন পথ মানুষের কাছে আজও জানা নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন